সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সাহিত্য রাজনীতির মিল বন্ধন

রাজনীতি এবং সাহিত্য দু’টি ভিন্ন শব্দ। কিন্তু শব্দ দুটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের মধ্যে আন্তঃ সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে। রাজনীতির সম্পর্ক দেশ-মটি-মানুষের সাথে সাহিত্যও তেমনি। সাহিত্য মানুষের দুঃখ-দুর্দশা-অভাব-অভিযোগ, সংগ্রাম-সাহসের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরে। সার্থক সাহিত্যে সমসাময়িক সমাজ জীবনের চালচিত্র শ্রেনী-বৈষম্য, আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থার ধারনা থাকে। সাহিত্য মানুষের সমস্যা চিহ্নিত করে তুলে ধরে আর রাজনীতি সে সমস্যা সমাধানের জন্য লড়াই করে। রাজনীতি এবং সাহিত্য উভয়েরি লক্ষ্য দেশ-মাটি মানুষের কল্যান সাাধন। এ অর্থে রাজনীতি এবং সাহিত্যের নিবীড় সর্ম্পকের যথার্থতার প্রমান পাওয়া যায়।
সাহিত্য রাজনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করতে পারে। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায় রাজনীতির প্রসংগ উঠে আসতে পারে। গল্প কবিতা উপন্যাস নাটক সিনেমায় রাজনীতির প্রেক্ষাপটকে তুলে ধরা যায়। সাহিত্যিকরা সাহিত্য রচনার মাধ্যমে সমাজের চিত্র তুলে ধরে যা চলমান রাজনীতিতে গতি সঞ্চার করতে সক্ষম হয়।
বিশ্ব সাহিত্যাংগনের অনেক সাহিত্য রাজনীতিকে গতিশীল করার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করেছে। আমাদের বাংলা সাহিত্যের অনেক লেখক-সাহিত্যিকের লেখায় বাংলাদেশের রাজনীতির পরিচয় মেলে।
খ্যাতিমান লেখক ম্যক্সিম গোর্কির বিখ্যাত ”মা” উপন্যাসটির রাজনৈতিক গুরুত্ব তুলে ধরে লেনিন বলেছিলেন-এটি একটি দরকারী বই। বহু মজুর বিপ্লবী আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল অবচেতন ও স্বতঃস্ফ’র্তভাবে। এবার ’মা’ পড়ে তাদের বহু উপকার হবে। এছাড়াও লেনিন সাহিত্যকে পর্টির আদর্শ বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসাবেও দেখেছেন।
চীনের কমরেড মাও সেতুংও রাজনৈতিক সংগ্রামের হাতিয়ার হিসেবে সাহিত্যের ভূমিকা সর্বদা গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
আমাদের বাংলা সাহিত্যও রাজনীতিতে বিশেষ অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে বলে আমরা মনে করি। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস শুরু অনেক আগে হলেও ৭ম ৮ম ৯ম শতাব্দীর মুসলিম শাসনামলেই বাংলা সহিত্য প্রকৃত উত্থান বলা চলে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে মুসলমান শাসন পতনের পর অষ্টাদশ-উনবিংশ শতকে ইংরেজ আমলে বাংলা সাহিত্য নবরুপে প্রকাশ পায়। ইংরেজ শাসনামলে বাংলা সাহিত্য পাশ্চাত্য সাহিত্য থেকে উপাদান সংগ্রহ করে নতুন আংগিকে চলতে শুরু করে। পূর্বের সাহিত্য রীতি-বিষয়বস্তুর ক্রমশ পরিবর্তন ঘটে। সেকালের সাহিত্যের বিষয় ছিল প্রধানত ধর্র্ম বা ইতিহাস ভিত্তিক। প্রকৃত জীবন ঘনিষ্ট সাহিত্য রচনার শুরু প্রায় উনিশ তথা বিংশ শতাব্দীর বিশ্ব যুদ্ধের ভয়াবহতা-দুর্ভিক্ষে অর্জিত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়েই।
রাজনীতি এবং সাহিত্য প্রসংগে আলোচনা করতে গিয়ে স্বাভাবিকভাবেই উঠে আসে সাহিত্য বলতে কি বোঝান হয়। আমরা সাহিত্য বলতে প্রধানতঃ কবিতা, গল্প, ছোটগল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটককে ধরে নিতে পারি। সাহিত্য বলতে প্রথমেই কবিতার কথা বলতে হয়। কবিতার মধ্য দিয়ে মানুষের সাহিত্য সৃষ্টির প্রথম প্রয়াস। মানুষের জীবনের সুখ-দঃখ, আনন্দ-অভিব্যক্তিগুলি কবিতার শব্দ দিয়ে প্রকাশিত হয়। আধুনিক কবিতা মানুষের অনুভূতিতে বিপ্লব এনেছে-গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভংগিকে জোরালো করেছে এবং পৃথিবীকে নতুন বিস্ময় এবং বিশ্বাসে দেখার সুযোগ দিয়েছে। আমাদের গাঢ় অনুভূতিতে আমাদের দেহ মনে বিপ্লবের বোধের জন্ম দিয়েছে কবিতা। কবিতা রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছে। বিদ্রোহী কবি খ্যাত কবি নজরুল এর কবিতা পরাধীনতার শৃংখল ভেংগে পরাধীন জাতির রাজনীতিকে উদ্দীপ্ত বিদ্রোহাত্বক আর বিপ্লবী চেতনায় উদ্ধুদ্ধ করেছিল। ফলে রাজনীতি হয়েছিল বেগবান গতিশীল আর সংগ্রামী। পাকিস্তান আমলের শুরুতে ধর্মীয় বিশ্বাস ঐতিহ্য অবলন্বনে কবিতা রচিত হলেও ক্রমাগত রাজনৈতিক বৈরি পরিবেশে কবিরা কবিতা লিখে রাজনীতিকে গতিশীল করেছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে মুক্তিযুদ্ধ আমাদেরকে নিজস্ব ভূখন্ড,স্বাধীনতা, মানচিত্র পতাকা এবং জাতি হিসাবে বাঙ্গালীর আত্ম-মর্যাদা এনে দিয়েছে বাংলাদেশের কবিতায়ও মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রভাব স্বতন্ত্র মাত্রা সূচিত করেছে।
স্বাধীনতা পরবর্তী কবিতায় কবিরা দেশ-মাটি-মানুষের বাস্তবতায় কবিতা লিখেছেন। কবি ফররুখ আহমদ এর মতো অনেক কবির কবিতায় রাজনৈতিক চিন্তধারা পরিচয় পাওয়া যায়। খ্যাতিমান কবি শামছুর রাহমানের কবিতায় বিপ্লব আছে মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা আছে তার বিখ্যাত কবিতা-’…হে স্বাধীনতা, তোমাকে পাওযার জন্য-আর কতবার /ভাসতে হবে রক্ত গঙ্গা?……তুমি আসবে বলে । হে স্বাধীনতা..
এসবি দেশ বাস্তবতার নিরিখে রচিত। স্বাধীনতা উত্তর ১৯৭২-৭৫ বাংলাদেশের কবিতায় উঠে এসেছিল বাংলাদেশের বাস্তব চিত্র। সেই সময়কে ধারন করে স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে পল্টনের ছড়াকার খ্যাত আবু সালেহ লিখেন-ধরা যাবে না ছোঁয়া যাবে না বলা যাবে না কথা/রক্ত দিয়ে পেলাম শালার এমন স্বাধীনতা!……
রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে ওঠেনি বললেই চলে। কিন্তু স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী তথা সরকার বিরোধী কিন্তু স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী তথা সরকার বিরোধী গণ আন্দোলনের কারনে প্রচুর রাজনৈতিক কবিতা রচিত হয়েছে।
স্বৈরাচার এরশাদের দুঃশাসনে অতিষ্ট হয়ে মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান লেখেন- বুকের মধ্যে জ্বলছে আগুন/ঘৃনার এবং প্রেমের আগুন/স্বপ্ন এবং স্মৃতির আগুন…
সমকালীন বাংলা সাহিত্যের আরেক স্বনাম খ্যাত কবি আল মাহমুদ এর কবিতায়ও সমকালীন সমাজ সচেতনতার আবেগ আছে। কবি নির্মলেন্দু গুন, আল মুজাহিদী, রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ কিংবা বাপী শাহরিয়ারের কবিতা ছড়া গুলোও রাজনীতি সম্পৃক্ত।
এবার আসা যাক ছোটগল্প-উপন্যাস প্রসংগে। উপন্যাস-ছোটগল্প ও ব্যক্তি জীবন সমাজ জীবনের বিষয়বস্তু নিয়ে রচিত হয়। পাকিস্তান আমলে অনেক ছোট গল্পে সমসাময়িক রাজনৈতিক দ্বন্ধ সংঘাত সংগ্রামের কথা ছিল। লেখক গল্প-উপন্যাসে রাজনৈতিক সমস্যার প্রতিচ্ছবি নায়ক-নায়িকা পাত্র পাত্রীর কাহিনী তথা তাদের ক্রীয়াকলাপ-কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে প্রতিফলন ঘটিয়েছিল।
একালের অন্যতম জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক প্রয়াত হুমায়ুন আহমদ বাঙালী মধ্যবিত্ত জীবন আর তার মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিকায় রচনা করেছেন অনেক গল্প উপন্যাস । তার অনেক কালজয়ী রচনা সমকালীন রাজনীতি-রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের উদ্ধুদ্ধ করেছে।
সাহিত্যের এ শাখায় প্রবন্ধের কথা বলা যায়। বর্তমানে প্রবন্ধ লেখার ব্যাপকতা বেড়েছে। পাঠকরা এর প্রতি আগ্রহ দেখাচেছ। স্বাধীনতা পরবর্তী রাজনৈতিক অংগন থেকে বর্তমান রাজনৈতিক অংগনেও এর বিশাল প্রভাব লক্ষ্য করা যাচেছ। সত্যি বলতে কি সাহিত্যের অন্যান্য শাখার তুলনায় প্রবন্ধ বর্তমানে সবচেয়ে বেশি রাজনীতিকে প্রভাবিত করছে। আমরা সবাই কবি নজরুলকে বিদ্রোহী-বিপ্লবের কবি হিসাবেই জানি এবং মানি। কিন্তু কবি নজরুল শুধু কবি ছিলেন না ছিলেন দেশপ্রেমিক প্রবন্ধ রচয়িতাও। নজরুল ’ধুমকেতুর পথ’ প্রবন্ধে ”ধুমকেতু” পত্রিকায় ভারতের জন্য পূর্ণ স্বাধীনতার দাবী করেছিলেন ১৯২২ সালে। উল্লেখ্য ১৯২১ খ্রী. পূর্ব পর্যন্ত ভারতের জন্য পূর্ন স্বাধীনতার দাবি কোন রাজনৈতিক দল প্রকাশ্যভাবে উত্থাপিত করেনি। নজরুলের সেই ঐতিহাসিক ঘোষনার প্রবন্ধটি ছিল-
” সর্বপ্রথম ’ধুমকেতু’ ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা চায়,স্বরাজ-টরাজ বুঝি না। কেননা, ও-কথাটার মানে এক এক মাহরথী এক এক রকম ক’রে থাকেন। ভারতবর্ষের এক পরমাণু অংশও বিদেশীর অধীনে থাকবে না। ভারতবর্ষের সম্পূর্ণ দায়িত্ব সম্পূর্ণ স্বাধীনতা রক্ষা, শাসনভার সমস্ত থাকবে ভারতীয়দের হাতে। তাতে কোনো বিদেশীর মোড়লী করবার অধিকারটুকু পর্যন্ত থাকবে না, যাঁরা এখন রাজা বা শাসক হয়ে এ-দেশে মোড়লী করে দেশকে শ্নশ্নান ভূমিতে পরিণত করছেন তাঁদের পাত্তাড়ি গুঁড়িয়ে বোঁচকা-পুঁটলি বেঁধে সাগর পাড়ে পাড়ি দিতে হবে। প্রার্থনা বা আবেদন নিবেদন করলে তাঁরা শুনবে না…. পূর্ণ স্বাধীনতা পেতে হলে সকলের আগে আমাদের বিদ্রোহ করতে হবে, সকল-কিছূ নিয়মকানুন বাঁধন-শৃঙ্খল মানা নিষেধের বিরুদ্ধে।” রাজনৈতিক অংগনে প্রবন্ধের গুরুত্ব সহজভাবে বোঝানের জন্য নজরুলের প্রবন্ধটির কথা উল্লেখ করা হলো।
স্বাধীন বাংলাদেশে জনপ্রিয় প্রবন্ধকার আহমদ ছফাসহ খ্যাতিমান অনেকের প্রবন্ধে বাংলাদেশের অভ্যুদয় সামাজীকিকরন ও রাজনৈতিক পটভূমিকার কথা ছিল। বর্তমান সময়ে রাজনৈতিক প্রবন্ধ এর সংখ্যা অনেকগুন বেড়ে গেছে। ইদানিং পত্রিকাসমূহের সবচেয়ে পাঠকপ্রিয় সাহিত্য প্রবন্ধ রচনা। অবশ্যই তার সিংহভাগ লেখালেখি চলমান রাজনীতি সংক্রান্ত। মজার ব্যাপার হলো আজকাল রাজনীতির প্রতি আগ্রহ কমলেও রাজনৈতিক প্রবন্ধ পাঠকের সংখ্যা আশ্চর্যজনক বাড়ছে।
রাজনীতি এবং সাহিত্য নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সুযোগ রয়েছে। প্রশ্ন উঠতে পারে রাজনীতির সাহিত্য না সাহিত্যের রাজনীতি কিংবা রাজনীতির জন্য সাহিত্য না সাহিত্যের জন্য রাজনীতি। এর বাইরে যদি করা হয় রাজনীতি কি প্রভাবিত করতে পারে সাহিত্যকে। সেক্ষেত্রে বলা যায় হ্যাঁ রাজনীতি সাহিত্যকে প্রভাবিত করতে পারে। রাজনীতির দ্বারা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সাহিত্য প্রভাবিত হতে পারে। আলোচনা সমালোচনার মূল্যায়ন করে নির্দ্ধিদায় বলা যায় রাজনীতিতে সাহিত্যের অবদান অনন্য। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ঈশ্বর চন্দ্র গুপ্ত, কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা বৃটিশ-পাকিস্তান আমলে পরাধীন জাতির রাজনীতিতে অবিস্মরনীয় ভূমিকা রেখেছিল। আর স্বাধীনতা পরবর্তীতেও বাংগালী লেখক-সাহিত্যিকদের সাহিত্য রচনা চলমান রাজনীতিকে গতিশীল করছে। রাজনীতিকে স্বচ্ছ-কার্যকর করতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে সাহিত্য এ সত্য অস্বীকার করার জো নেই। সাহিত্য সমাজ প্রগতিতে তথা প্রগতিশীল রাজনীতিকে বেগবান করেছে অর্থাৎ একবাক্যে বলা যায় রাজনীতির সাথে সাহিত্যের একটা সম্পর্ক আছে। আর সে সম্পর্কটা অবশ্যই সুসম্পর্ক।

লিখা--


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাউল সাধক চান মিয়া এবং আমার কিছু উপলব্ধি

"রজনী হইসনা অবসান  আজ নিশিতে আসতে পারেবন্ধু কালাচাঁন।। কত নিশি পোহাইলোমনের আশা মনে রইলো রে কেন বন্ধু আসিলোনা জুড়ায়না পরান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। বাসর সাজাই আসার আশেআসবে বন্ধু নিশি শেষে দারূন পিরিতের বিষে ধরিল উজান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। মেঘে ঢাকা আঁধার রাতে কেমনে থাকি একা ঘরে সাধক চাঁনমিয়া কয় কানতে কানতে হইলাম পেরেশান আজ নিশিতে আসতে বন্দু কালাচাঁন।"    গভীর নিশিতে ধ্যান মগ্ন হয়ে কালাচাঁনের অপেক্ষা করছেন সাধক।  সাধক চান মিয়ার শিষ্য বাউল সিরাজউদ্দিনের মতে এটি একটি রাই বিচ্ছেদ। কৃষ্ণের অপেক্ষায় রাধা নিশি বা রাতকে অনুরোধ করছেন 'রাত' যেন না পোহায়  কারণ তার কালা চান যে কোন সময় আসতে পারে। শব্দগুচ্ছ গুলো থেকে সহজেই উপলব্ধি হয় সাধক নিজ দেহকে রাধা আর আত্মাকে কৃষ্ণের সাথে তুলনা করেছেন। দেহ আত্মার মিলন ঘটানোই ছিল সাধকের সাধনা।        বাউল সাধক চান মিয়া উপরোক্ত গানটি রচনা করেছেন। নেত্রকোনা জেলার খাটপুরা গ্রামে ১৩২৫ বঙ্গাব্দে সাধক চান মিয়ার জন্ম। পুরো নাম চান্দেজ্জামান আকন্দ হলেও বা...

বাউল, বাউলতত্ব এবং কিছু কথা

একজন ভদ্র বন্ধু বরের সাথে বাউল সম্প্রদায় নিয়ে বেশ তর্ক হলো রাতে। তর্কের সূত্রপাত ছিল বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী। ভাবলাম "বাউলতত্ত্ব"র আলোকে বাউলরা ভাববাদী নাকি বস্তুবাদী তা নিয়ে যৌক্তিক আলোচনা আবশ্যম্ভাবী। কয়েকটি ধারাবাহিক পর্ব লিখে নিজের মনোভাব বোঝানোর চেষ্টা করব।  শুরুতেই শক্তিনাথ ঝাঁ এর বস্তুবাদী বাউল বই থেকে কিছু কথা লিখতে চাই; বাস্তব জগত ও জীবনকে এরা কোন আনুমানিক যুক্তি বা আলৌকিক যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে নারাজ। জৈব রাসায়নিক ব্যাখায় এরা নারীর রজঃ এবং পুরুষের বিজে জীবন ও জগত সৃষ্টিকে ব্যাখা করে এবং চার ভূতকে প্রাকৃতিক সৃষ্টি মনে করে। এভাবে মানুষে, প্রকৃতিতে তৈরি করে প্রাণ, প্রাণী। অনুমান ভিত্তিক স্বর্গ, নরক, পরলোক, পুনর্জন্মাদি প্রত্যক্ষ প্রমাণাভাবে বাউল আগ্রাহ্য করে। মানুষ ব্যাতিরিক্ত ঈশ্বরও এরা মানে না। সৃষ্টির নিয়মকে জেনে যিনি নিজেকে পরিচালনা করতে শিখেছেন- তিনিই সাঁই। সুস্থ নিরোগ দীর্ঘজীবন এবং আনন্দকে অনুভব করার বাউল সাধনা এক আনন্দমার্গ।।  বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী এর অনেক সূক্ষ বিশ্লেষণ শক্তিনাথের বস্তুবাদী বাউল বইটির মধ্যে আলকপাত করা হয়েছে। সাধারণ সমাজে এ ধা...

ভাইবে রাধারমণ

তখন কলেজের ছাত্র। বাংলা বিভাগের প্রভাষক শ্রদ্ধেয় রেজা স্যারের সাথে খুবই ভালো সম্পর্ক। কলেজের প্রথম দিনই স্যারকে খুব পছন্দ। তারপর স্যারের সাথে গল্প, সমাজ, রাজনীতি, সাহিত্য নিয়ে আলোচনা। রীতিমত ফিজিক্স, বায়োলোজি ক্লাস ফাঁকি দিলেও বাংলা ক্লাস কখনই ফাঁকি দিতাম না। খুব উপভোগ করতাম স্যারের ক্লাস। হোস্টেল সুপার হিসেবে স্যার ( ওহী আলম রেজা) আমাদের সাথেই থাকতেন। আমরা আসার প্রায় নয় মাস পর স্যার এলেন সুপার হিসেবে। প্রতিদিন রাতে খাবার পরেই স্যারের রুমে গিয়ে আড্ডা হত, গানের আসর হত। স্যারের পিসিতে প্রায়ই গান শুনতাম আমরা। একদিন হঠাৎ করেই একটি গান স্যার প্লে করলেন 'আমার বন্ধু দয়াময় তোমারে দেখিবার মনে লয়। তোমারে না দেখলে রাধার জীবন কেমনে রয় বন্ধুরে।। কদম ডালে বইসারে বন্ধু ভাঙ্গ কদম্বের আগা। শিশুকালে প্রেম শিখাইয়া যৌবনকালে দাগা রে।। তমাল ডালে বইসারে বন্ধু বাজাও রঙের বাশি। সুর শুনিয়া রাধার মন হইলো যে উদাসি রে।। ভাইবে রাধা রমন বলে মনেতে ভাবিয়া। নিভা ছিল মনের আগুন কে দিলাই জ্বালাইয়া রে।' গানের কথাগুলো বেশ ভালো লেগে গেলো। পুর গানটি শুনে বুঝলাম গানটি সাধক রাধারম...