সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ভ্রমণ হাকালুকি

ছুটি পেলেই এখন ঘুরতে বেরোচ্ছে মানুষ। ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে তো কথাই নেই। এবার ঈদেও তার ব্যতিক্রম হবে না। ইতোমধ্যে ঘুরাঘুরির পরিকল্পনা করে ফেলেছেন ভ্রমণপিয়াসীরা।

এবার ঈদ বর্ষা মৌসুমে। বর্ষায় পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ হতে পারে সিলেটের হাওরগুলো। দেশের বৃহত্তম হাওর হাকালুকি হতে পারে এই ছুটিতে পর্যটকদের পছন্দের স্থান। বর্ষায় ভরা যৌবনা হাকালুকি তার রূপ নিয়ে অপেক্ষায় আছে পর্যটকদের।

হাকালুকি হাওর, সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলায় অবস্থিত। হাওরটি ৫টি উপজেলা ও ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে বিস্তৃত। হাওরের ৪০% বড়লেখা, ৩০% কুলাউড়া, ১৫% ফেঞ্চুগঞ্জ, ১০% গোলাপগঞ্জ এবং ৫% বিয়ানীবাজার উপজেলার অন্তর্গত। এই হাওরের আয়তন ২০,৪০০ হেক্টর। ২৩৬টি বিল নিয়ে এই হাকালুকি হাওর। বিলগুলোতে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। বর্ষাকালে এই হাওর এক অনন্য রূপ ধারণ করে। চারদিকে শুধু পানি আর পানির খেলা। সে এক অপরুপ দৃশ্য।

হাওরের বিলগুলোতে র‌য়েছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। তার মধ্যে রয়েছে, আইড়, চিতল, বাউশ, পাবদা, মাগুর, শিং, কৈসহ আরও নানা প্রজাতির।

হাকালুকি হাওরের নামকরণ নিয়ে নানা জনশ্রুতি রয়েছে। কথিত আছে, বহু বছর পূর্বে ত্রিপুরার মহারাজা অমর মানিক্যের সেনাবাহিনীর ভয়ে বড়লেখার কুকি দলপতি হাঙ্গর সিং জঙ্গলপূর্ণ ও কর্দমাক্ত এক বিস্তীর্ণ এলাকায় ‘লুকি দেয়’ অর্থাৎ লুকিয়ে থাকে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে কালক্রমে ওই এলাকার নাম হয় ‘হাঙ্গর লুকি বা হাকালুকি। এও বলা হয় যে, প্রায় দুই হাজার বছর আগে প্রচন্ড এক ভূমিকম্পে ‘আকা’ নামে এক নৃপতি ও তাঁর রাজত্ব মাটির নিচে তলিয়ে যায়। কালক্রমে এই তলিয়ে যাওয়া নিম্নভূমির নাম হয় ‘আকালুকি বা হাকালুকি’। আরও শোনা যায় যে,এক সময় বড়লেখা উপজেলার পশ্চিমাংশে হেংকেল নামে একটি উপজাতি বাস করত। হেংকেলদের বসবাস এলাকার নাম ছিল ‘হেংকেলুকি’। পরবর্তীতে এই হেংকেলুকিই ‘হাকালুকি’ নাম ধারন করে। অন্য একটি জনশ্রুতি মতে, এক সময় হাকালুকি হাওরের কাছাকাছি বসবাসরত কুকি ও নাগা উপজাতি তাদের ভাষায় এই হাওরের নামকরণ করে ‘হাকালুকি’। হাকালুকি অর্থ লুকানো সম্পদ।

সিলেটে পর্যটন সম্ভাবনার স্থান ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার তীরবর্তী ঘিলাছড়া জিরো পয়েন্ট। এখান থেকেই বিস্তৃত জলরাশির হাকালুকি হাওর দেখা যায়।

এদিকে ঈদ উল ফিতর উপলক্ষ্যে পর্যটকদের আনন্দ দিতে প্রস্তুত করা হয়েছে এ পর্যটন এলাকা।।

হাকালুকি হাওরের অন্যতম পর্যটন উদ্যোক্তা মুজিবুর রব চৌধুরী জানান, ঈদে যাতে পর্যটকরা হাওর বিলাস করতে পারে সেজন্য সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রমোদতরী হাওর বিলাসসহ বিলাসী সকল নৌযানকে নতুন করে সাজানো হয়েছে।

তিনি জানান , নিরাপত্তার জন্য সকল নৌযানের নিরাপত্তা চেকিং শেষ করে বাড়ানো হয়েছে উদ্ধারকারী জনবল,লাইফ জ্যাকেট, সাপোর্ট বোট। যেকোন দুর্ঘটনা মোকাবিলায় প্রস্তুত আছে উদ্ধারকারী জাহাজ ও প্রশিক্ষিত সাতারু। যদিও এখানে কখনোই অপ্রীতিকর কিছু শুনা যায় নি তার পরও এদিকে স্থানীয়দের উদ্যোগে বিশাল হাকালুকি হাওরে ভ্রমন পিপাসুরা যাতে নির্বিঘ্নে নির্মল আনন্দ করতে পারেন সেজন্য আছেন স্থানীয় সেচ্ছাসেবক ছাত্র ও যুব সমাজ।

এদিকে পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার ব্যাপারে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ রানা সিলেটটুডে টুয়েন্টিফোরকে জানান, এ ব্যাপারে সকল ব্যবস্থা নিতে ফেঞ্চুগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তিনি ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।

কিভাবে যাবেন-

রাজধানী ঢাকার কমলাপুর ও ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশন থেকে প্রতিদিন ৩টা ট্রেন ছাড়ে সিলেটের উদ্দেশে। ট্রেনের ভাড়াপ্রকারভেদে ১২০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত। আর সময় লাগবে ৭-৮ ঘণ্টা। ট্রেনে গেলে রাত ৯.৫০টার উপবন এক্সপ্রেসে যাওয়াটাই সব চেয়ে ভালো। এছাড়া বাসেও যাওয়া যাবে। বাসে যেতে চাইলে অনেক বাস আছে। এর মধ্যে শ্যামলি, হানিফ, সোহাগ, ইউনিক, উল্লেখযোগ্য। ভোর থেকে শুরু করে রাত ১২.৩০টা পর্যন্ত এসব বাস পাবেন। বাসে যেতে সময় লাগবে ৪ থেকে ৪ ঘন্টা ৩০ মিনিট। ননএসি ৩০০/৩৫০ টাকা। এসি ৯০০ টাকা পর্যন্ত।

সিলেট শহর থেকে প্রায় ৩০ কি.মি ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা অবস্থিত। সিলেট হুমায়ুন রশীদ চত্বর থেকে বাস, সিএনজি অথবা লেগুনা করে মাইজগাঁও বাজারে যেতে হবে। সেখান থেকে পুনরায় সিএনজি যোগে ঘিলাছড়া জিরো পয়েন্টে গেলেই হাকালুকি হাওর ভ্রমণ করা যাবে। ভাড়া জনপ্রতি ১০০ টাকার মত খরচ হবে।

লিখা- সম্রাট

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাউল সাধক চান মিয়া এবং আমার কিছু উপলব্ধি

"রজনী হইসনা অবসান  আজ নিশিতে আসতে পারেবন্ধু কালাচাঁন।। কত নিশি পোহাইলোমনের আশা মনে রইলো রে কেন বন্ধু আসিলোনা জুড়ায়না পরান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। বাসর সাজাই আসার আশেআসবে বন্ধু নিশি শেষে দারূন পিরিতের বিষে ধরিল উজান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। মেঘে ঢাকা আঁধার রাতে কেমনে থাকি একা ঘরে সাধক চাঁনমিয়া কয় কানতে কানতে হইলাম পেরেশান আজ নিশিতে আসতে বন্দু কালাচাঁন।"    গভীর নিশিতে ধ্যান মগ্ন হয়ে কালাচাঁনের অপেক্ষা করছেন সাধক।  সাধক চান মিয়ার শিষ্য বাউল সিরাজউদ্দিনের মতে এটি একটি রাই বিচ্ছেদ। কৃষ্ণের অপেক্ষায় রাধা নিশি বা রাতকে অনুরোধ করছেন 'রাত' যেন না পোহায়  কারণ তার কালা চান যে কোন সময় আসতে পারে। শব্দগুচ্ছ গুলো থেকে সহজেই উপলব্ধি হয় সাধক নিজ দেহকে রাধা আর আত্মাকে কৃষ্ণের সাথে তুলনা করেছেন। দেহ আত্মার মিলন ঘটানোই ছিল সাধকের সাধনা।        বাউল সাধক চান মিয়া উপরোক্ত গানটি রচনা করেছেন। নেত্রকোনা জেলার খাটপুরা গ্রামে ১৩২৫ বঙ্গাব্দে সাধক চান মিয়ার জন্ম। পুরো নাম চান্দেজ্জামান আকন্দ হলেও বা...

বাউল, বাউলতত্ব এবং কিছু কথা

একজন ভদ্র বন্ধু বরের সাথে বাউল সম্প্রদায় নিয়ে বেশ তর্ক হলো রাতে। তর্কের সূত্রপাত ছিল বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী। ভাবলাম "বাউলতত্ত্ব"র আলোকে বাউলরা ভাববাদী নাকি বস্তুবাদী তা নিয়ে যৌক্তিক আলোচনা আবশ্যম্ভাবী। কয়েকটি ধারাবাহিক পর্ব লিখে নিজের মনোভাব বোঝানোর চেষ্টা করব।  শুরুতেই শক্তিনাথ ঝাঁ এর বস্তুবাদী বাউল বই থেকে কিছু কথা লিখতে চাই; বাস্তব জগত ও জীবনকে এরা কোন আনুমানিক যুক্তি বা আলৌকিক যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে নারাজ। জৈব রাসায়নিক ব্যাখায় এরা নারীর রজঃ এবং পুরুষের বিজে জীবন ও জগত সৃষ্টিকে ব্যাখা করে এবং চার ভূতকে প্রাকৃতিক সৃষ্টি মনে করে। এভাবে মানুষে, প্রকৃতিতে তৈরি করে প্রাণ, প্রাণী। অনুমান ভিত্তিক স্বর্গ, নরক, পরলোক, পুনর্জন্মাদি প্রত্যক্ষ প্রমাণাভাবে বাউল আগ্রাহ্য করে। মানুষ ব্যাতিরিক্ত ঈশ্বরও এরা মানে না। সৃষ্টির নিয়মকে জেনে যিনি নিজেকে পরিচালনা করতে শিখেছেন- তিনিই সাঁই। সুস্থ নিরোগ দীর্ঘজীবন এবং আনন্দকে অনুভব করার বাউল সাধনা এক আনন্দমার্গ।।  বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী এর অনেক সূক্ষ বিশ্লেষণ শক্তিনাথের বস্তুবাদী বাউল বইটির মধ্যে আলকপাত করা হয়েছে। সাধারণ সমাজে এ ধা...

ভাইবে রাধারমণ

তখন কলেজের ছাত্র। বাংলা বিভাগের প্রভাষক শ্রদ্ধেয় রেজা স্যারের সাথে খুবই ভালো সম্পর্ক। কলেজের প্রথম দিনই স্যারকে খুব পছন্দ। তারপর স্যারের সাথে গল্প, সমাজ, রাজনীতি, সাহিত্য নিয়ে আলোচনা। রীতিমত ফিজিক্স, বায়োলোজি ক্লাস ফাঁকি দিলেও বাংলা ক্লাস কখনই ফাঁকি দিতাম না। খুব উপভোগ করতাম স্যারের ক্লাস। হোস্টেল সুপার হিসেবে স্যার ( ওহী আলম রেজা) আমাদের সাথেই থাকতেন। আমরা আসার প্রায় নয় মাস পর স্যার এলেন সুপার হিসেবে। প্রতিদিন রাতে খাবার পরেই স্যারের রুমে গিয়ে আড্ডা হত, গানের আসর হত। স্যারের পিসিতে প্রায়ই গান শুনতাম আমরা। একদিন হঠাৎ করেই একটি গান স্যার প্লে করলেন 'আমার বন্ধু দয়াময় তোমারে দেখিবার মনে লয়। তোমারে না দেখলে রাধার জীবন কেমনে রয় বন্ধুরে।। কদম ডালে বইসারে বন্ধু ভাঙ্গ কদম্বের আগা। শিশুকালে প্রেম শিখাইয়া যৌবনকালে দাগা রে।। তমাল ডালে বইসারে বন্ধু বাজাও রঙের বাশি। সুর শুনিয়া রাধার মন হইলো যে উদাসি রে।। ভাইবে রাধা রমন বলে মনেতে ভাবিয়া। নিভা ছিল মনের আগুন কে দিলাই জ্বালাইয়া রে।' গানের কথাগুলো বেশ ভালো লেগে গেলো। পুর গানটি শুনে বুঝলাম গানটি সাধক রাধারম...