সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বাচ্চাদের ব্যাগও সেদিন চেক করা হয়েছিল; সেই ২০০৫

সময়টা ২০০৫ সাল। দেশের ভয়ানক অবস্থা। দেশের অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে বাচ্চারা কোথাও খেলার জন্য প্র্যাকটিস করতে গেলে তাদের ব্যাগ, অথবা ব্যাডমিন্টন খেলার র‍্যাকেট প্যাকেট খুলে চেক করা হত। মানুষের মনে এতটাই আতঙ্ক ছিল যে পাবলিক বাসে বা ট্রেনে কোন দাড়িওয়ালা ভদ্রলোকের ব্যাগ বা ব্রিফকেস সাথে থাকলেই মানুষজন আতঙ্কে চোখ বাঁকা করে তাকাতো। গোটা বাংলাদেশ ছিল বোমায় প্রকম্পিত। বিএনপি জামায়াতের দুঃশাসন। জামাতুল মুজাহিদীন, হরকাতুল জিহাদ, আব্দুর রহমান, বাংলা ভাই, আতাউর রহমান সানি, মুফতি হান্নানের মত দুর্ধর্ষ জঙ্গীদের উত্থান। তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বাবর, খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান, মোসাদ্দেক ফালু, আরাফাত রহমান কোকরা তখন হাওয়া ভবনে এসির ঠান্ডা হাওয়া খাওয়া গিলাতে সদা ব্যস্ত।
২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছিলাম। দেশের ৬৩ তি জেলায় একযোগে সিরিজ বোমা হামলায় প্রকম্পিত বাংলাদেশ। কোর্ট, আদালত পাড়া, সরকারী অফিস, বাস ট্রাক টার্মিনাল, বাজার, মাজার কিছুই বাদ যায়নি সেদিন বোমা হামলার কবল থেকে। আজ সেই সিরিজ বোমা হামলার ১২ বছর অর্থাৎ ১ যুগ। সেদিন জামাতুল মুজাহিদিনের বোমা হামলায় নিহত হয়েছিলেন দুজ'ন, বোমার আঘাতে আহত হয়েছিলেন ৫০ এর বেশি মানুষ। আমার সবচেয়ে খারাপ লাগে যশোরের সাংবাদিক একুশে টেলিভিশনের খুলনা ব্যুরো চিফ মানিক সাহার কথা মনে পড়লে। ২০০৪ সালের ১৫ জানুয়ারি খুলনা প্রেস ক্লাবের সামনে বোমায় উড়ে যাওয়া তার মাথা, এবং অর্ধেক পড়ে থাকা দেহটা দেখলে এখনো গা শিরশির করে।

যাই হোক বলছিলাম, সিরিজ হামলার কথা। সেই হামলার মামলা নিয়ে কিছু কথা বলছি, দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলায় দায়েরকৃত ১৫৯টি মামলার মধ্যে ৯৩টির নিষ্পত্তি হয়েছে। এতে ৩৩৪ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়। বাকী ৫৬টি মামলা এখনো বিচারাধীন রয়েছে। এসব মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ৪শ’ জন। ১২ বছর আগে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট মুন্সিগঞ্জ ছাড়া দেশব্যাপী ৬৩টি জেলায় সংঘটিত এই সিরিজ বোমা হামলায় মোট ১৫৯টি মামলা দায়ের করা হয়।

১৪৯টি মামলার ১১০৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। বাকী ১০ মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। এই পর্যন্ত ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলার ২৭ জন আসামিকে অপর জঙ্গি সংশ্লিষ্ট মামলায় ফাঁসি দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৮ জনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে এসব মামলায় আনিত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ৩৪৯ জন অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে।

বলছি আমার বিভাগ সিলেটের- সিলেট মৌলভীবাজার হবিগঞ্জ এবং সুনামগঞ্জ জেলার কথা। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট আমাদের সিলেট বিভাগের ২৩ টি জায়গা বমায় কেঁপে উঠেছিল। সেদিন সকাল ১১ টা পনের, বোমা বিস্ফোরণ হল সিলেট কোর্টে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই খবর যাতায়াত করা নয়াসড়ক, কদমতলী বাস টার্মিনালসহ ১৩টি এলাকায় বোমা বিস্ফোরণ। কলেজের আডডা জীবনের জায়গা শাহী ঈদগাহও সেদিন বাদ যায়নি। সিলেটের অধিকাংশ মামলাই বর্তমানে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। সর্বশেষ সিরিজ বোমা হামলার মামলার অন্যতম আসামি হরকাতুল জিহাদের সদস্য লুতফর রহমানকে মৌলভীবাজার থেকে গত ১৭ জুন, ১৬ গ্রেপ্তার করা হয়। আমি যতটুকু জানি, এ হামলার ঘটনায় সিলেটে জেএমবির সদস্য আবদুল আজিজ হানিফ ও সায়েদুল ইসলাম হৃদয়, হবিগঞ্জের ৫ মামলায় আসামি জেএমবির সাইদুর রহমান, আবদুল আজিজ হানিফ ওরফে আজিজুল ইসলাম, সালাউদ্দিন, এ এইচ এম শামীম, বেলাল হোসেন তানিম, ওবায়দুল্লাহ ওরফে সুমন ওরফে হাফেজ হুজাইফা, সালাউদ্দিন ওরফে সালেহীন, মৌলভীবাজারে ৫ মামলার আসামি জেএমবির আবদুল্লাহ আল মুরাদ ও কামাল উদ্দিনের (বর্তমানে জামিনে) বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।

আদালত ও সংশ্লিষ্ট থানা সূত্রে পাওয়া তথ্য মতে, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট জেএমরি জঙ্গিরা সারাদেশের মতো সিলেটে ১৩টি, সুনামগঞ্জে পাঁচটি, হবিগঞ্জে পাঁচটি ও মৌলভীবাজারে পাঁচটিসহ মোট ২৯টি এলাকায় বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। বোমা বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে সিলেটের আদালতপাড়া, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ জণগুরুত্বপূর্ণ এলাকা। প্রতিটি বোমা হামলার ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতায় বিস্ফোরক আইনে পৃথক মামলা করে পুলিশ।

সুনামগঞ্জে দায়ের করা ছয় মামলার মধ্যে একটি মামলার রায়ে আদালত দুজন জেএমবির জঙ্গিকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন। অন্য মামলা এখনো বিচারাধীন বলে জানা গেছে।
হবিগঞ্জের পাঁচটি স্থানে বিস্ফোরণের ঘটনায় দায়ের করা মামলাগুলো হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২ এ বিচারাধীন আছে ।২০১৪ সালের ৩ জুন থেকে মামলাগুলোর বিচারকাজ শুরু হয়। ওই পাঁচটি মামলায় ইতোমধ্যে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত মামলার নির্ধারিত সাতটি তারিখ অতিবাহিত হয়েছে।

সিলেটের পিপি, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ একবার জানিয়েছিলেন, মামলা তদন্তে বিলম্ব ও মামলাগুলোর সাক্ষীরা ধার্যকৃত তারিখে অনুপস্থিত থাকছেন। এসব কারণে বিচার শেষ করতে সময় লাগছে।

আমার প্রশ্ন হচ্ছে কেন মামলা তদন্তে লেট হচ্ছে? ১ যুগ পরে বিএনপি জামাতের শাসন আমলের মত ত এখন বিচারক সংকটের অযুহাত থাকার কথা নয়। খালেদা জিয়ার সরকার ত বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার বিচারক সংকটের কথা বলে বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এক যুগ চলে গেল, এই হামলার বিচার শেষ হয়নি। দ্রুত এই হামলার মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হোক, এই দাবী আমার।

জঙ্গিবাদ নিপাত যাক, জঙ্গিবাদের আশ্রয় প্রশ্রয় দাতারাও নিপাত যাক । 
লেখক: মারূফ অমিত, অনলাইন এক্টিভিস্ট

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাউল সাধক চান মিয়া এবং আমার কিছু উপলব্ধি

"রজনী হইসনা অবসান  আজ নিশিতে আসতে পারেবন্ধু কালাচাঁন।। কত নিশি পোহাইলোমনের আশা মনে রইলো রে কেন বন্ধু আসিলোনা জুড়ায়না পরান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। বাসর সাজাই আসার আশেআসবে বন্ধু নিশি শেষে দারূন পিরিতের বিষে ধরিল উজান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। মেঘে ঢাকা আঁধার রাতে কেমনে থাকি একা ঘরে সাধক চাঁনমিয়া কয় কানতে কানতে হইলাম পেরেশান আজ নিশিতে আসতে বন্দু কালাচাঁন।"    গভীর নিশিতে ধ্যান মগ্ন হয়ে কালাচাঁনের অপেক্ষা করছেন সাধক।  সাধক চান মিয়ার শিষ্য বাউল সিরাজউদ্দিনের মতে এটি একটি রাই বিচ্ছেদ। কৃষ্ণের অপেক্ষায় রাধা নিশি বা রাতকে অনুরোধ করছেন 'রাত' যেন না পোহায়  কারণ তার কালা চান যে কোন সময় আসতে পারে। শব্দগুচ্ছ গুলো থেকে সহজেই উপলব্ধি হয় সাধক নিজ দেহকে রাধা আর আত্মাকে কৃষ্ণের সাথে তুলনা করেছেন। দেহ আত্মার মিলন ঘটানোই ছিল সাধকের সাধনা।        বাউল সাধক চান মিয়া উপরোক্ত গানটি রচনা করেছেন। নেত্রকোনা জেলার খাটপুরা গ্রামে ১৩২৫ বঙ্গাব্দে সাধক চান মিয়ার জন্ম। পুরো নাম চান্দেজ্জামান আকন্দ হলেও বা...

বাউল, বাউলতত্ব এবং কিছু কথা

একজন ভদ্র বন্ধু বরের সাথে বাউল সম্প্রদায় নিয়ে বেশ তর্ক হলো রাতে। তর্কের সূত্রপাত ছিল বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী। ভাবলাম "বাউলতত্ত্ব"র আলোকে বাউলরা ভাববাদী নাকি বস্তুবাদী তা নিয়ে যৌক্তিক আলোচনা আবশ্যম্ভাবী। কয়েকটি ধারাবাহিক পর্ব লিখে নিজের মনোভাব বোঝানোর চেষ্টা করব।  শুরুতেই শক্তিনাথ ঝাঁ এর বস্তুবাদী বাউল বই থেকে কিছু কথা লিখতে চাই; বাস্তব জগত ও জীবনকে এরা কোন আনুমানিক যুক্তি বা আলৌকিক যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে নারাজ। জৈব রাসায়নিক ব্যাখায় এরা নারীর রজঃ এবং পুরুষের বিজে জীবন ও জগত সৃষ্টিকে ব্যাখা করে এবং চার ভূতকে প্রাকৃতিক সৃষ্টি মনে করে। এভাবে মানুষে, প্রকৃতিতে তৈরি করে প্রাণ, প্রাণী। অনুমান ভিত্তিক স্বর্গ, নরক, পরলোক, পুনর্জন্মাদি প্রত্যক্ষ প্রমাণাভাবে বাউল আগ্রাহ্য করে। মানুষ ব্যাতিরিক্ত ঈশ্বরও এরা মানে না। সৃষ্টির নিয়মকে জেনে যিনি নিজেকে পরিচালনা করতে শিখেছেন- তিনিই সাঁই। সুস্থ নিরোগ দীর্ঘজীবন এবং আনন্দকে অনুভব করার বাউল সাধনা এক আনন্দমার্গ।।  বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী এর অনেক সূক্ষ বিশ্লেষণ শক্তিনাথের বস্তুবাদী বাউল বইটির মধ্যে আলকপাত করা হয়েছে। সাধারণ সমাজে এ ধা...

ভাইবে রাধারমণ

তখন কলেজের ছাত্র। বাংলা বিভাগের প্রভাষক শ্রদ্ধেয় রেজা স্যারের সাথে খুবই ভালো সম্পর্ক। কলেজের প্রথম দিনই স্যারকে খুব পছন্দ। তারপর স্যারের সাথে গল্প, সমাজ, রাজনীতি, সাহিত্য নিয়ে আলোচনা। রীতিমত ফিজিক্স, বায়োলোজি ক্লাস ফাঁকি দিলেও বাংলা ক্লাস কখনই ফাঁকি দিতাম না। খুব উপভোগ করতাম স্যারের ক্লাস। হোস্টেল সুপার হিসেবে স্যার ( ওহী আলম রেজা) আমাদের সাথেই থাকতেন। আমরা আসার প্রায় নয় মাস পর স্যার এলেন সুপার হিসেবে। প্রতিদিন রাতে খাবার পরেই স্যারের রুমে গিয়ে আড্ডা হত, গানের আসর হত। স্যারের পিসিতে প্রায়ই গান শুনতাম আমরা। একদিন হঠাৎ করেই একটি গান স্যার প্লে করলেন 'আমার বন্ধু দয়াময় তোমারে দেখিবার মনে লয়। তোমারে না দেখলে রাধার জীবন কেমনে রয় বন্ধুরে।। কদম ডালে বইসারে বন্ধু ভাঙ্গ কদম্বের আগা। শিশুকালে প্রেম শিখাইয়া যৌবনকালে দাগা রে।। তমাল ডালে বইসারে বন্ধু বাজাও রঙের বাশি। সুর শুনিয়া রাধার মন হইলো যে উদাসি রে।। ভাইবে রাধা রমন বলে মনেতে ভাবিয়া। নিভা ছিল মনের আগুন কে দিলাই জ্বালাইয়া রে।' গানের কথাগুলো বেশ ভালো লেগে গেলো। পুর গানটি শুনে বুঝলাম গানটি সাধক রাধারম...