কিছুক্ষণ পরে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। আমরা দুই ভাই বসে বসে দেশাত্মবোধক গান শুনছি। মুক্তিযুদ্ধের সেই সময়কার ইতিহাস নিয়ে ঘাটাছি। একটি প্রোগ্রামে শুনা একটি ঘটনা মনে পড়ল ---
"বেলা ১১ টার দিকে আমাদের বাসায় ঢুকে প্রথমে আমার বাবাকে হত্যা করে তারা৷ বাবা আমাদের বলেছিল খাটের তলার লুকিয়ে থাকতে৷ বাবা আমাদের ঘরের দরজা আগলে দাঁড়িয়েছিলেন৷ ওরা শাবল দিয়ে ব্রিটিশ আমলের সেই ভারি দরজা ভেঙে ফেলে৷ বাবার পেটে বেয়নেট চার্জ করলে বাবা ওখানেই শাহাদাৎ বরণ করেন৷
সেটা দেখে আমার মা খাটের নীচে থেকে চিৎকার করে বেরিয়ে আসেন৷ আমার মাকে টেনে হিচড়ে নিয়ে যেতে থাকে৷ দোতলার সিঁড়ি বারান্দায় নিয়ে গিয়ে আমার মা-কে বেয়নেট চার্জ করে৷ আমার মা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে যান৷ আমার মা চিৎকার করছিলেন আর বলছিলেন, ‘‘আমাকে মেরে ফেলো, আমার বাচ্চাদের মেরো না৷'' তারপরও তারা এক হেঁচকা টানে মায়ের শাড়িটা খুলে ফেলে৷ ওরা বঙ্গবন্ধুর নাম ধরে এবং ‘জয় বাংলা' স্লোগানের কথা তুলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছিল৷ এরপর তারা মাকে নিয়ে যায় আমার বাবার হাতে গড়া শখের বাগানে৷ সেখানে আহত অবস্থায় আমার মাকে জীবন্ত পুঁতে ফেলে তারা৷
মাকে নিয়ে যাওয়ার পর আমার বড় ও মেজো ভাই বেরিয়ে আসে৷ ওদেরকেও বেয়নেট চার্জ করা হয়৷ ওরা মনে করেছিল আমরা সবাই মরে গেছি৷ আমাকে বুট দিয়ে লাথি মেরেছিল, তাই আমার গায়েও রক্ত লেগেছিল৷ ওরা চলে যাওয়ার পর ভাই ডাকার পর ওরা জবাব দিয়েছিল৷ আড়াই বছর বয়সি ছোট বোনটাও বেঁচে গিয়েছিল৷ আমি তখন ছোট হলেও সেই অবস্থায় তিন ভাইকে রেলওয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাই৷ তিনদিন ওরা ওখানে বেঁচে ছিল৷ পরে যখন ঘাতকরা জেনেছে, তখন তাদের মিথ্যা কথা বলে বের করে নিয়ে গিয়ে পেছনের একটা গর্তে ফেলে জবাই করে মেরে ফেলে৷ স্বাধীনতার পরে আমরা এ ঘটনা জানতে পেরেছি৷ ৭১ সালে বিহারীরা অনেক বাঙালি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে রেলওয়ের যেখানে যন্ত্রপাতি বানানো হয়, সেই লোহা গলানোর ব্লাস্ট ফার্নেসে (৩৪০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটে) জীবন্ত ফেলে হত্যা করেছে৷ "
সাইদুর রহমান, একজন সংবাদ উপস্থাপক। একটি প্রোগ্রামে বলছিলেন ১৯৭১ সালে তার পরিবারের উপর পাকিস্তানী মেলেটারি এবং বিহারীদের চালানো নির্মম হত্যাযজ্ঞের কথা।
এখনো বাংলাদেশে অবাধে ঘুরে বেড়ায় রাজাকার আলবদরা। এখনো এদেশের কিছু ভ্রষ্ট পচা দুর্গন্ধযুক্ত রাজনীতিবিদ রাজাকার আলবদর এবং তাদের দল জামায়াত ইসলামী, ইসলামী ছাত্র শিবিরকে তাদের ছায়ায় জিইয়ে রেখেছে। একাত্তরে পাকিস্তানীদের যেভাবে মেলেটারিদের পথ চিনিয়ে দিয়েছিলো রাজাকার আলবদর বাহিনী। ৪৬ বছর পর সেই রাজাকার আলবদরদের রাজনীতির পথে হাটাচ্ছে এদেশেরই কিছু নষ্ট রাজনীতিবিদ এবং রাজনৈতিক দল।
এখনো নিষিদ্ধ করা হয়নি জামায়াত শিবিরের যুদ্ধাপরাধী দল। এখনো তাদের বিচারে, নিষিদ্ধে কিউ খোঁজা হয়। ৪৬ বছর এভাবেই পার হয়েছে, হচ্ছে ।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ (১৪ ডিসেম্বর) । বিনম্র শ্রদ্ধা রইল জাতির সূর্য সন্তানদের প্রতি ।
লিখেছেন: মারূফ অমিত, সাংবাদকর্মী - অনলাইন এক্টিভিস্ট
"বেলা ১১ টার দিকে আমাদের বাসায় ঢুকে প্রথমে আমার বাবাকে হত্যা করে তারা৷ বাবা আমাদের বলেছিল খাটের তলার লুকিয়ে থাকতে৷ বাবা আমাদের ঘরের দরজা আগলে দাঁড়িয়েছিলেন৷ ওরা শাবল দিয়ে ব্রিটিশ আমলের সেই ভারি দরজা ভেঙে ফেলে৷ বাবার পেটে বেয়নেট চার্জ করলে বাবা ওখানেই শাহাদাৎ বরণ করেন৷
সেটা দেখে আমার মা খাটের নীচে থেকে চিৎকার করে বেরিয়ে আসেন৷ আমার মাকে টেনে হিচড়ে নিয়ে যেতে থাকে৷ দোতলার সিঁড়ি বারান্দায় নিয়ে গিয়ে আমার মা-কে বেয়নেট চার্জ করে৷ আমার মা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে যান৷ আমার মা চিৎকার করছিলেন আর বলছিলেন, ‘‘আমাকে মেরে ফেলো, আমার বাচ্চাদের মেরো না৷'' তারপরও তারা এক হেঁচকা টানে মায়ের শাড়িটা খুলে ফেলে৷ ওরা বঙ্গবন্ধুর নাম ধরে এবং ‘জয় বাংলা' স্লোগানের কথা তুলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছিল৷ এরপর তারা মাকে নিয়ে যায় আমার বাবার হাতে গড়া শখের বাগানে৷ সেখানে আহত অবস্থায় আমার মাকে জীবন্ত পুঁতে ফেলে তারা৷
মাকে নিয়ে যাওয়ার পর আমার বড় ও মেজো ভাই বেরিয়ে আসে৷ ওদেরকেও বেয়নেট চার্জ করা হয়৷ ওরা মনে করেছিল আমরা সবাই মরে গেছি৷ আমাকে বুট দিয়ে লাথি মেরেছিল, তাই আমার গায়েও রক্ত লেগেছিল৷ ওরা চলে যাওয়ার পর ভাই ডাকার পর ওরা জবাব দিয়েছিল৷ আড়াই বছর বয়সি ছোট বোনটাও বেঁচে গিয়েছিল৷ আমি তখন ছোট হলেও সেই অবস্থায় তিন ভাইকে রেলওয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাই৷ তিনদিন ওরা ওখানে বেঁচে ছিল৷ পরে যখন ঘাতকরা জেনেছে, তখন তাদের মিথ্যা কথা বলে বের করে নিয়ে গিয়ে পেছনের একটা গর্তে ফেলে জবাই করে মেরে ফেলে৷ স্বাধীনতার পরে আমরা এ ঘটনা জানতে পেরেছি৷ ৭১ সালে বিহারীরা অনেক বাঙালি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে রেলওয়ের যেখানে যন্ত্রপাতি বানানো হয়, সেই লোহা গলানোর ব্লাস্ট ফার্নেসে (৩৪০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটে) জীবন্ত ফেলে হত্যা করেছে৷ "
সাইদুর রহমান, একজন সংবাদ উপস্থাপক। একটি প্রোগ্রামে বলছিলেন ১৯৭১ সালে তার পরিবারের উপর পাকিস্তানী মেলেটারি এবং বিহারীদের চালানো নির্মম হত্যাযজ্ঞের কথা।
এখনো বাংলাদেশে অবাধে ঘুরে বেড়ায় রাজাকার আলবদরা। এখনো এদেশের কিছু ভ্রষ্ট পচা দুর্গন্ধযুক্ত রাজনীতিবিদ রাজাকার আলবদর এবং তাদের দল জামায়াত ইসলামী, ইসলামী ছাত্র শিবিরকে তাদের ছায়ায় জিইয়ে রেখেছে। একাত্তরে পাকিস্তানীদের যেভাবে মেলেটারিদের পথ চিনিয়ে দিয়েছিলো রাজাকার আলবদর বাহিনী। ৪৬ বছর পর সেই রাজাকার আলবদরদের রাজনীতির পথে হাটাচ্ছে এদেশেরই কিছু নষ্ট রাজনীতিবিদ এবং রাজনৈতিক দল।
এখনো নিষিদ্ধ করা হয়নি জামায়াত শিবিরের যুদ্ধাপরাধী দল। এখনো তাদের বিচারে, নিষিদ্ধে কিউ খোঁজা হয়। ৪৬ বছর এভাবেই পার হয়েছে, হচ্ছে ।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ (১৪ ডিসেম্বর) । বিনম্র শ্রদ্ধা রইল জাতির সূর্য সন্তানদের প্রতি ।
লিখেছেন: মারূফ অমিত, সাংবাদকর্মী - অনলাইন এক্টিভিস্ট
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন