তখন জুন মাস। সন্ধ্যের পর পড়তে বসতাম বাহিরের ঘরে। আমাদের বাসা ঠিক বড় রোডের পাশে। হঠাৎ করেই শুনতাম শ্লোগান- নৌকা নৌকা, জোরছে বল নৌকা। ও চাচিজান নৌকা, ও খালা জান নৌকা। আবার যখন বিএনপির মিছিল যেত তখন শুনতাম আমার শিষ তোমার শিষ ধানের শীষ , ধানের শীষ ইত্যাদি ইত্যাদি। সন্ধ্যা বেলায় পড়তে বসে ওঁত পেতে থাকতাম। কখন মিছিল আসবে। জানালার লোহার শিকের ফাঁক দিয়ে কোন মতে বের হয়ে যাব।
৯৬ সালের নির্বাচন। একটি ঘটনা খুব মনে আছে। বাবা আওয়ামীলীগ করে। নৌকার মিছিলে যাবে । বাসার স্টোর ঘরে বেশ কিছু ব্যানার রাখা। তখন আজকের দিনের মত ডিজিটাল পিভিসি ব্যানার ছিল না। কাপড়ের উপর রঙ দিয়ে লিখা ব্যানার। কালো কাপড়ের উপর সাদা রঙ দিয়ে লিখা কিছু ব্যানার বাসায় এনে রেখেছিলেন বাবা। লিখা ছিল- নৌকা মার্কায় ভোট দিন। আমি তখন ছোট। যেখানেই যা পেতাম আর্ট করা শুরু করতাম। সাদা চক দিয়ে কোন ফাঁকে ঐ সব ব্যানারে চক দিয়ে নিজের নাম লিখে ফেলেছি। দু তিন পর বাবা সেগুলো কোথায় যেন টানিয়ে দেবার জন্য নিয়ে যাবেন। হঠাৎ খেয়াল করলেন ব্যানার কয়েকটা আউলানো। খুলে দেখেন চক দিয়ে অই সব ব্যানারের নিচে আমার নাম লিখে রাখছি। বাবা রেগে আগুন। স্পষ্ট এখনো মনে আছে ওসব লেখা দেখে বলেছিলেন -- " ডিম ফুটা বাচ্চা ব্যানারে নিজের নাম লিখে দিসে"। তখন বোঝতাম না। এখন এসব স্মৃতি মনে পড়লে হাসি পায়। কি ফাজিল না ছিলাম।
আরেকটা ঘটনা মনে আছে, একবার মিছিল যাচ্ছে। নৌকা নৌকা বলে চিৎকার। মা ভেতরের ঘরে। কোন মতে বের হয়ে গেছি জানালার শিকের ফাঁক দিয়ে। গিয়েই মিছিলের ভীড়ে। ছোট মানুষ ছিলাম। মানুষের ধাক্কা ধাক্কিতে গরুর গোবরে স্লিপ খেয়ে পড়লাম। সাদা গেঞ্জিতে গোবর। বাসায় এসে নিশ্চিত মায়ের কেলানি। কোন মতে চুপচাপ আবার জানালা দিয়ে ঢুকলাম। মা যেতে গোবর লাগানো গেঞ্জি না দেখে সেটি লুকিয়ে রাখলাম সোফার পিছনে। কিন্তু বিধিবাম মা দেখে ফেললেন। কি মাইরটা খেলাম ঝাঁড়ু দিয়ে। মিছিলে যাবার শখ শেষ।
এখন দেয়াল লিখন হয় না। ছোটবেলা দেখতাম রাত জেগে বাবা চাদর গায়ে দিয়ে চলে যেতেন এলাকার চাচাদের সাথে। ঘুম থেকে উঠে স্কুলে যাবার সময় দেখতাম, স্কুলের দেয়ালে দেয়াল লিখন। বাবা যখন উনার সাথে করে বাজার করতে নিয়ে যেতেন তখন বলতেন "ঐদেখ আমরা লিখেছি এসব"।
ভোটের দিন পাড়ায় দেখতাম অজস্র ক্যানভাসের সারি, বুথ। নির্বাচনের আগে থেকে বিভিন্ন প্রার্থীদের পোস্টার সংগ্রহ করে রাখতাম। স্থানীয় নির্বাচনে হরিণ মার্কা, তালা মার্কা, ডাব মার্কা ইত্যাদি প্রতীক ছিল।
এখন সময় পাল্টেছে। মানুষ ডিজিটালাইড। মানুষ অনলাইনে প্রচারমুখী। ইন্টারনেট মুখী। প্রচার প্রচারণা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশি। কিন্তু সেইসব দিনগুলো স্মৃতি, মধুময়। নির্বাচনের মৌসুম। অনেক কিছুই, অনেক স্মৃতিই মনে পড়ছে। লেখনীর মাধ্যমে বলতে গেলে অনেক সময় লাগবে, তবুও সংক্ষিপ্ত কিছু মনের কথা তুলে ধরলাম। সামনে নির্বাচন। সুষ্ঠু সুন্দর দিনের অপেক্ষায় আমরা আছি। তবে বাংলাদেশ এখন চমৎকার সময় পার করছে। মানুষ আপডেট, সিস্টেম আপডেট। এটা অনেক ভালো, মঙ্গলময়।
(লেখাটি কোন রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, লেখকের নিজের স্মৃতি)
লেখক: মারূফ অমিত, সাংবাদিক
৯৬ সালের নির্বাচন। একটি ঘটনা খুব মনে আছে। বাবা আওয়ামীলীগ করে। নৌকার মিছিলে যাবে । বাসার স্টোর ঘরে বেশ কিছু ব্যানার রাখা। তখন আজকের দিনের মত ডিজিটাল পিভিসি ব্যানার ছিল না। কাপড়ের উপর রঙ দিয়ে লিখা ব্যানার। কালো কাপড়ের উপর সাদা রঙ দিয়ে লিখা কিছু ব্যানার বাসায় এনে রেখেছিলেন বাবা। লিখা ছিল- নৌকা মার্কায় ভোট দিন। আমি তখন ছোট। যেখানেই যা পেতাম আর্ট করা শুরু করতাম। সাদা চক দিয়ে কোন ফাঁকে ঐ সব ব্যানারে চক দিয়ে নিজের নাম লিখে ফেলেছি। দু তিন পর বাবা সেগুলো কোথায় যেন টানিয়ে দেবার জন্য নিয়ে যাবেন। হঠাৎ খেয়াল করলেন ব্যানার কয়েকটা আউলানো। খুলে দেখেন চক দিয়ে অই সব ব্যানারের নিচে আমার নাম লিখে রাখছি। বাবা রেগে আগুন। স্পষ্ট এখনো মনে আছে ওসব লেখা দেখে বলেছিলেন -- " ডিম ফুটা বাচ্চা ব্যানারে নিজের নাম লিখে দিসে"। তখন বোঝতাম না। এখন এসব স্মৃতি মনে পড়লে হাসি পায়। কি ফাজিল না ছিলাম।
আরেকটা ঘটনা মনে আছে, একবার মিছিল যাচ্ছে। নৌকা নৌকা বলে চিৎকার। মা ভেতরের ঘরে। কোন মতে বের হয়ে গেছি জানালার শিকের ফাঁক দিয়ে। গিয়েই মিছিলের ভীড়ে। ছোট মানুষ ছিলাম। মানুষের ধাক্কা ধাক্কিতে গরুর গোবরে স্লিপ খেয়ে পড়লাম। সাদা গেঞ্জিতে গোবর। বাসায় এসে নিশ্চিত মায়ের কেলানি। কোন মতে চুপচাপ আবার জানালা দিয়ে ঢুকলাম। মা যেতে গোবর লাগানো গেঞ্জি না দেখে সেটি লুকিয়ে রাখলাম সোফার পিছনে। কিন্তু বিধিবাম মা দেখে ফেললেন। কি মাইরটা খেলাম ঝাঁড়ু দিয়ে। মিছিলে যাবার শখ শেষ।
এখন দেয়াল লিখন হয় না। ছোটবেলা দেখতাম রাত জেগে বাবা চাদর গায়ে দিয়ে চলে যেতেন এলাকার চাচাদের সাথে। ঘুম থেকে উঠে স্কুলে যাবার সময় দেখতাম, স্কুলের দেয়ালে দেয়াল লিখন। বাবা যখন উনার সাথে করে বাজার করতে নিয়ে যেতেন তখন বলতেন "ঐদেখ আমরা লিখেছি এসব"।
ভোটের দিন পাড়ায় দেখতাম অজস্র ক্যানভাসের সারি, বুথ। নির্বাচনের আগে থেকে বিভিন্ন প্রার্থীদের পোস্টার সংগ্রহ করে রাখতাম। স্থানীয় নির্বাচনে হরিণ মার্কা, তালা মার্কা, ডাব মার্কা ইত্যাদি প্রতীক ছিল।
এখন সময় পাল্টেছে। মানুষ ডিজিটালাইড। মানুষ অনলাইনে প্রচারমুখী। ইন্টারনেট মুখী। প্রচার প্রচারণা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশি। কিন্তু সেইসব দিনগুলো স্মৃতি, মধুময়। নির্বাচনের মৌসুম। অনেক কিছুই, অনেক স্মৃতিই মনে পড়ছে। লেখনীর মাধ্যমে বলতে গেলে অনেক সময় লাগবে, তবুও সংক্ষিপ্ত কিছু মনের কথা তুলে ধরলাম। সামনে নির্বাচন। সুষ্ঠু সুন্দর দিনের অপেক্ষায় আমরা আছি। তবে বাংলাদেশ এখন চমৎকার সময় পার করছে। মানুষ আপডেট, সিস্টেম আপডেট। এটা অনেক ভালো, মঙ্গলময়।
(লেখাটি কোন রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, লেখকের নিজের স্মৃতি)
লেখক: মারূফ অমিত, সাংবাদিক
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন