পনেরো বিশ দিন আগে থেকেই শুরু হতো নাম সংগ্রহ করা। কারা কারা দেয়ালিকায় কাজ করবে। দু একদিনের মধ্যে সবকিছু ঠিকঠাক করে দিতেন আমাদের সাহিত্য সংস্কৃতির শিক্ষক। শুরু হয়ে যেতো মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা উপলক্ষে দিবস দেয়াল পত্রিকা প্রকাশ করার কাজ। আমাদের স্কুলের শিক্ষক মিলনায়তন কেন্দ্রের পাশে ছিল সাংস্কৃতিক কক্ষ। ওখানেই চলতো কাজ। বিভিন্ন ক্লাসে গিয়ে দেয়ালিকায় কাজ করা শিক্ষার্থীরা লেখা আহ্বান করতেন। নির্দিষ্ট দিনে সংগ্রহ করা হতো লিখা। তারপর চলতো লেখা বাছাই এর কাজ। গল্প, কবিতা, ছড়া, বাণী সমগ্র, কার্টুন ইত্যাদি দিয়ে সাজানো হতো দেয়ালিকা। ২০ তারিখেই সব প্রস্তুত। ২১ শে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরেই সেটিকে উন্মুক্ত করা হতো সবাই দেখার জন্য। আমাদের স্কুলের শহীদ মিনারের প্রবেশ গেইটের কিনারায় টাঙ্গিয়ে রাখা হতো। থাকতো ২১ শে ফেব্রুয়ারির পুরো ২৪ ঘন্টা। পরবর্তীতে সেটিকে নিয়ে রাখা হতো সাংস্কৃতিক কক্ষে।
স্কুলের বিএনসিসি এবং স্কাউট কক্ষের সামনে লম্বা বারান্দা ছিল। বিএনসিসি সদস্যরা সেখানে প্রশিক্ষণ করতেন। পুষ্পার্ঘ অর্পণের প্রশিক্ষণ নিতো সামরিক কায়দায়। বিএনসিসি শিক্ষক তাদের প্রশিক্ষণ দিতেন। ২০ তারিখের মধ্যে তারা সম্পূর্ণ প্রস্তুত। স্কাউট শিক্ষার্থীরা সাজাতো স্কুলের শহীদ মিনার।
২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহর। স্কুলের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বেজেই চলছে একুশের গান। আমি বিএনসিসি করতাম। বিএনসিসি'র পোষাক পরে রাত ১০ টার মধ্যেই স্কুলে। ঠিক ১২ টা ১ মিনিটে হতো পুষ্পার্ঘ অর্পণ। স্কুলের বিভিন্ন শিক্ষক, আগত অতিথিরা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখতেন। সবকিছু শেষ করে রাত দুইটা নাগাদ বাসায়।
ঘুম ভেঙ্গে যেতো সেই সকাল ৫ টা নাগাদ। উঠেই রেডি। স্কুল ড্রেস পরে সকাল ৬ টা নাগাদ স্কুলে। প্রভাত ফেরী শুরু। গল্প নাটক কবিতা এবং বিভিন্ন আয়োজনে সারা দিন ই থাকা হতো স্কুলে। সাথে কালো ব্যাচ ধারণ।
একটি স্মৃতি এখনো মনে আছে। কোন ক্লাসে পড়তাম সঠিক মনে নাই। তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। মাকে ধরলাম একুশে ফেব্রুয়ারির গান শিখাতে হবে। মা বললেন আমি বলে দিচ্ছি তুই আগে কাগজে লিখ। লিখতে গিয়ে অনেক বানান ভুল করলাম। মা বলা শেষে কাগজ নিয়ে পড়ে দেখলেন অনেক বানান ভুল, দিলেন বকা। সেই বকা শোনার পর ভালো করে শিখেছিলাম "আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি,আমি কি ভুলিতে পারি" গানটি।
সবই স্কুল জীবনের মহান একুশে ফেব্রুয়ারী কেন্দ্রিক স্মৃতি। প্রথাগুলো এখনো আছে, থাকবেও। যতদিন বাংলাদেশ আছে, প্রজন্ম আছে থাকবে এসব প্রথা। থাকবে ভাষার জন্য জীবন দেওয়া সালাম রফিক শফিক বরকতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো। স্কুল জীবনের এসব স্মৃতি মনে পড়লেই চোখের কোণায় আবেগে জল জমে। বিশেষ করে দেয়ালিকায় কাজ করার সেই স্মৃতি গুলো।
মহান মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রথম প্রহরে ভাষাশহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ।
লিখেছেন- মারূফ অমিত, সাংবাদিক
স্কুলের বিএনসিসি এবং স্কাউট কক্ষের সামনে লম্বা বারান্দা ছিল। বিএনসিসি সদস্যরা সেখানে প্রশিক্ষণ করতেন। পুষ্পার্ঘ অর্পণের প্রশিক্ষণ নিতো সামরিক কায়দায়। বিএনসিসি শিক্ষক তাদের প্রশিক্ষণ দিতেন। ২০ তারিখের মধ্যে তারা সম্পূর্ণ প্রস্তুত। স্কাউট শিক্ষার্থীরা সাজাতো স্কুলের শহীদ মিনার।
২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহর। স্কুলের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বেজেই চলছে একুশের গান। আমি বিএনসিসি করতাম। বিএনসিসি'র পোষাক পরে রাত ১০ টার মধ্যেই স্কুলে। ঠিক ১২ টা ১ মিনিটে হতো পুষ্পার্ঘ অর্পণ। স্কুলের বিভিন্ন শিক্ষক, আগত অতিথিরা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখতেন। সবকিছু শেষ করে রাত দুইটা নাগাদ বাসায়।
ঘুম ভেঙ্গে যেতো সেই সকাল ৫ টা নাগাদ। উঠেই রেডি। স্কুল ড্রেস পরে সকাল ৬ টা নাগাদ স্কুলে। প্রভাত ফেরী শুরু। গল্প নাটক কবিতা এবং বিভিন্ন আয়োজনে সারা দিন ই থাকা হতো স্কুলে। সাথে কালো ব্যাচ ধারণ।
একটি স্মৃতি এখনো মনে আছে। কোন ক্লাসে পড়তাম সঠিক মনে নাই। তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। মাকে ধরলাম একুশে ফেব্রুয়ারির গান শিখাতে হবে। মা বললেন আমি বলে দিচ্ছি তুই আগে কাগজে লিখ। লিখতে গিয়ে অনেক বানান ভুল করলাম। মা বলা শেষে কাগজ নিয়ে পড়ে দেখলেন অনেক বানান ভুল, দিলেন বকা। সেই বকা শোনার পর ভালো করে শিখেছিলাম "আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি,আমি কি ভুলিতে পারি" গানটি।
সবই স্কুল জীবনের মহান একুশে ফেব্রুয়ারী কেন্দ্রিক স্মৃতি। প্রথাগুলো এখনো আছে, থাকবেও। যতদিন বাংলাদেশ আছে, প্রজন্ম আছে থাকবে এসব প্রথা। থাকবে ভাষার জন্য জীবন দেওয়া সালাম রফিক শফিক বরকতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো। স্কুল জীবনের এসব স্মৃতি মনে পড়লেই চোখের কোণায় আবেগে জল জমে। বিশেষ করে দেয়ালিকায় কাজ করার সেই স্মৃতি গুলো।
মহান মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রথম প্রহরে ভাষাশহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ।
লিখেছেন- মারূফ অমিত, সাংবাদিক
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন