সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বুয়েট ছাত্র হত্যাকান্ড এবং সমসাময়িক রাজনীতি

ছাত্রলীগ এর গ্রুপিং বা হামলায় অমুক আহত বা নিহত এসব নিউজ প্রায়ই সংবাদপত্রের পাতায় দেখি। অনেকের মুখে ছাত্রলীগ মানেই হানাহানি বা মারামারির সংগঠন। এদের এসব কথার সাথে আমি সম্পূর্ণ দ্বিমত এবং এসব কথা প্রটেস্ট করি। আবার অনেকে ছাত্রলীগের অতি সাফাই গেয়ে বলেন 'বড় ঘর' ঝামেলা ত হবেই। এটাও প্রটেস্ট করি। বড় ঘর হলে সেই ঘরের অভিভাবক ও কড়া হতে হবে বেশি।  ছাত্রলীগের ভালো কাজ গুলো তিলে তিলে নষ্ট হয়ে যায় এসব হাইলাইটেড কিছু নেক্কার জনক ঘটনার জন্য। আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডের কথাই তুলে ধরলাম। কি নৃশংস ভাবে ছেলেটাকে হত্যা করা হলো। বুয়েটের মত মেধাবীদের এমন জায়গায় এসব ঘটনা কোন ভাবেই মেনে নেওয়া যায়না। শুধু বুয়েট কেন বাংলাদেশের কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা ছাত্রাবাসে এমন ঘটনা কারোর কাম্য নয়। ছাত্রলীগ কেন যেই হোক না কেন এদের বিচার হওয়া উচিত। শুধু বিচার কেন এদের প্রকাশ্যে বিচার হওয়া উচিত।  এখানে বেশ কয়েকটি কারণ আছে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের এমন বেপরোয়া মনোভাবের। প্রথম কথা হচ্ছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে কিছু বেপরোয়া মনোভাবের ছাত্ররা সংগঠনের স্টিকার কাজে লাগিয়ে যা মন চায় তা করে৷ এর এই 'যা মন চায় তা' মনোভাব গড়ে উঠেছে তিলে তিলে। কারণ,  কেন্দ্রীয় নেতারা কোন ভাবেই এদের মনিটরিং করেন না। আর করলেও তাদের গ্রুপিং রাজনীতি চাঙ্গা করার জন্য কিছু বলেননা। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, এখানে জবাবদিহিতার চর্চা খুব কম। ইদানিং বিশেষ করে লাস্ট টার্ম আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনা নিজে মনিটরিং করছেন বলে কিছুটা লাগাম টেনে ধরেছেন,  কিন্ত দীর্ঘ দিনের এই চর্চা মুছে ফেলা কি এতই সহজ!

পরের কথায় আসি, এসব কর্মকান্ডের জন্য কেউ কেউ দেখলাম আওয়ামীলীগ  এন্টিজম কাজে লাগিয়ে নগ্ন ভাবে আবার শেখ হাসিনা বা আওয়ামীলীগকে দোষারোপ করছেন। এটাই যদি হয় তবে, বিএনপির আমলের সাবেকুন নাহার সানির কথা মনে করিয়ে দিতে চাই। সেই হত্যার দোষ কি খালেদা জিয়ার ছিল? মনে করুন, আমি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রলীগের সভাপতি। এখন আমি আপনার মাথা ফাটিয়ে দিলাম, বা স্টেপিং করে বসলাম! এখন এটাকে শেখ হাসিনা বা সংগঠন আমাকে শিখিয়ে দিয়েছে?  না, এই দোষ আমার, এখানে বিচার হবে আমার, দোষী আমি।

তৃতীয় কথা হচ্ছে, শুধু আবরার নয়, তনু হত্যা হয়েছে, নুসরাত হত্যা হয়েছে, অভিজিৎ হত্যা হয়েছে, অনন্ত হত্যা হয়েছে, গত কাল আজ নাম না জানা কেউ বা কেউ হত্যা হয়েছেন কিন্তু আমরা কি মানুষ হিসেবে তাদের হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়েছি? নাকি সুবিধা মত বিচার চেয়েছি, সুবিধা মত মুখে কস্টেপ লাগিয়ে দিয়েছি। আবরার হত্যার বিচারের দাবীতে যেমন রোড ব্লক তেমনি অনন্ত হত্যার দাবীতেও রোড ব্লক হবার কথা ছিল! কিন্তু আমরা বা আমি সেই মানবিক নিউট্রাল জায়গা কি ধরে রাখতে পেরেছিলাম! উদাহরণ স্বরূপ সিলেটের কথা বলি, সিলেটে ছাত্রলীগের গ্রুপিং এ গত ৮ বছরে ১২ জন খুন হয়েছেন। আবরারের মত এরাও ত কোন না কোন মায়ের সন্তান ছিলেন, এদের জন্য আমি কতখানি সোচ্চার ছিলাম!

ব্যক্তিগত ভাবে কাহিনী তুলে ধরলাম তিনটি কারণে, প্রথমত হচ্ছে খুন মানে খুন, বিচার হতেই হবে। অপরাধী যে হোক যে দলের হোক বা মতের হোক। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, আমরা ব্যাক্তিগত ভাবে যেন মানবিক জায়গা থেকে বিচারের দাবী জানাই। মানুষ হিসেবে মানুষের নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই নিজের সুবিধার জায়গা থেকে নয়। তৃতীয় কথা নিজের সবচেয়ে ব্যাক্তিগত কথা, ছাত্রলীগের লাগাম টেনে ধরা হোক। যেহেতু এই সংগঠন শৈশব, কৈশরের ভালোবাসা, পরিবার সূত্রে প্রাপ্তি সেই সংগঠন এভাবে বেপরোয়া হিসেবে মেনে নেওয়া যায়না। সবশেষে, প্রত্যেক ছাত্র হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। কোন খুনের পক্ষে আমি নই। আওয়ামীলীগ বা শেখ হাসিনার বিরোধীতা কেউ করতেই পারেন! যেমন, আমি নিজেই শেখ হাসিনার ফ্যান। কিন্তু আমার সামনে উনার বিরোধীতা করলে আমি কি বাড়ি দিয়ে মাথা ফাঁটিয়ে দেব? না, একদম তা নয়,ভালো না লাগলে তাকে যুক্তি দিয়ে বোঝাতে হবে। আর সেটিও ভালো না লাগলে সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা করে দিন। কিন্তু মেরে ফেলা বা খুন করার অধিকার কে দিলো! প্রতিটি ছাত্র হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই, অবশ্যই চাই।

(উপরের কথাগুলো আমার সম্পূর্ণ নিজস্ব মতামত। পাঠকের সাথে ঐক্যমত হতে পারে আবার না'ও হতে পারে। হলে ধন্যবাদ,  না হলেও ধন্যবাদ)

#Justice_for_Abrar_Fahad

লেখক--
মারূফ অমিত (Chowdhury Maruf), সাংবাদিক এবং ব্লগার


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাউল সাধক চান মিয়া এবং আমার কিছু উপলব্ধি

"রজনী হইসনা অবসান  আজ নিশিতে আসতে পারেবন্ধু কালাচাঁন।। কত নিশি পোহাইলোমনের আশা মনে রইলো রে কেন বন্ধু আসিলোনা জুড়ায়না পরান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। বাসর সাজাই আসার আশেআসবে বন্ধু নিশি শেষে দারূন পিরিতের বিষে ধরিল উজান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। মেঘে ঢাকা আঁধার রাতে কেমনে থাকি একা ঘরে সাধক চাঁনমিয়া কয় কানতে কানতে হইলাম পেরেশান আজ নিশিতে আসতে বন্দু কালাচাঁন।"    গভীর নিশিতে ধ্যান মগ্ন হয়ে কালাচাঁনের অপেক্ষা করছেন সাধক।  সাধক চান মিয়ার শিষ্য বাউল সিরাজউদ্দিনের মতে এটি একটি রাই বিচ্ছেদ। কৃষ্ণের অপেক্ষায় রাধা নিশি বা রাতকে অনুরোধ করছেন 'রাত' যেন না পোহায়  কারণ তার কালা চান যে কোন সময় আসতে পারে। শব্দগুচ্ছ গুলো থেকে সহজেই উপলব্ধি হয় সাধক নিজ দেহকে রাধা আর আত্মাকে কৃষ্ণের সাথে তুলনা করেছেন। দেহ আত্মার মিলন ঘটানোই ছিল সাধকের সাধনা।        বাউল সাধক চান মিয়া উপরোক্ত গানটি রচনা করেছেন। নেত্রকোনা জেলার খাটপুরা গ্রামে ১৩২৫ বঙ্গাব্দে সাধক চান মিয়ার জন্ম। পুরো নাম চান্দেজ্জামান আকন্দ হলেও বা...

বাউল, বাউলতত্ব এবং কিছু কথা

একজন ভদ্র বন্ধু বরের সাথে বাউল সম্প্রদায় নিয়ে বেশ তর্ক হলো রাতে। তর্কের সূত্রপাত ছিল বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী। ভাবলাম "বাউলতত্ত্ব"র আলোকে বাউলরা ভাববাদী নাকি বস্তুবাদী তা নিয়ে যৌক্তিক আলোচনা আবশ্যম্ভাবী। কয়েকটি ধারাবাহিক পর্ব লিখে নিজের মনোভাব বোঝানোর চেষ্টা করব।  শুরুতেই শক্তিনাথ ঝাঁ এর বস্তুবাদী বাউল বই থেকে কিছু কথা লিখতে চাই; বাস্তব জগত ও জীবনকে এরা কোন আনুমানিক যুক্তি বা আলৌকিক যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে নারাজ। জৈব রাসায়নিক ব্যাখায় এরা নারীর রজঃ এবং পুরুষের বিজে জীবন ও জগত সৃষ্টিকে ব্যাখা করে এবং চার ভূতকে প্রাকৃতিক সৃষ্টি মনে করে। এভাবে মানুষে, প্রকৃতিতে তৈরি করে প্রাণ, প্রাণী। অনুমান ভিত্তিক স্বর্গ, নরক, পরলোক, পুনর্জন্মাদি প্রত্যক্ষ প্রমাণাভাবে বাউল আগ্রাহ্য করে। মানুষ ব্যাতিরিক্ত ঈশ্বরও এরা মানে না। সৃষ্টির নিয়মকে জেনে যিনি নিজেকে পরিচালনা করতে শিখেছেন- তিনিই সাঁই। সুস্থ নিরোগ দীর্ঘজীবন এবং আনন্দকে অনুভব করার বাউল সাধনা এক আনন্দমার্গ।।  বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী এর অনেক সূক্ষ বিশ্লেষণ শক্তিনাথের বস্তুবাদী বাউল বইটির মধ্যে আলকপাত করা হয়েছে। সাধারণ সমাজে এ ধা...

ভাইবে রাধারমণ

তখন কলেজের ছাত্র। বাংলা বিভাগের প্রভাষক শ্রদ্ধেয় রেজা স্যারের সাথে খুবই ভালো সম্পর্ক। কলেজের প্রথম দিনই স্যারকে খুব পছন্দ। তারপর স্যারের সাথে গল্প, সমাজ, রাজনীতি, সাহিত্য নিয়ে আলোচনা। রীতিমত ফিজিক্স, বায়োলোজি ক্লাস ফাঁকি দিলেও বাংলা ক্লাস কখনই ফাঁকি দিতাম না। খুব উপভোগ করতাম স্যারের ক্লাস। হোস্টেল সুপার হিসেবে স্যার ( ওহী আলম রেজা) আমাদের সাথেই থাকতেন। আমরা আসার প্রায় নয় মাস পর স্যার এলেন সুপার হিসেবে। প্রতিদিন রাতে খাবার পরেই স্যারের রুমে গিয়ে আড্ডা হত, গানের আসর হত। স্যারের পিসিতে প্রায়ই গান শুনতাম আমরা। একদিন হঠাৎ করেই একটি গান স্যার প্লে করলেন 'আমার বন্ধু দয়াময় তোমারে দেখিবার মনে লয়। তোমারে না দেখলে রাধার জীবন কেমনে রয় বন্ধুরে।। কদম ডালে বইসারে বন্ধু ভাঙ্গ কদম্বের আগা। শিশুকালে প্রেম শিখাইয়া যৌবনকালে দাগা রে।। তমাল ডালে বইসারে বন্ধু বাজাও রঙের বাশি। সুর শুনিয়া রাধার মন হইলো যে উদাসি রে।। ভাইবে রাধা রমন বলে মনেতে ভাবিয়া। নিভা ছিল মনের আগুন কে দিলাই জ্বালাইয়া রে।' গানের কথাগুলো বেশ ভালো লেগে গেলো। পুর গানটি শুনে বুঝলাম গানটি সাধক রাধারম...