সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কেন জামানত হারাচ্ছে আওয়ামীলীগ?

 কেন আওয়ামীলীগ জামানত হারাচ্ছ! এ প্রশ্নের উত্তর কখনই একলাইনে লিখা সম্ভব নয়। স্থানীয় নির্বাচন চলছে বাংলাদেশে ধাপে ধাপে৷ বর্তমানে চলছে পৌরসভা নির্বাচন।  কিন্তু দেশের বিভিন্ন পৌরসভায় চলমান নির্বাচনগুলোতে বিদ্রোহীতে ধরাশায়ী আওয়ামীলীগ।  দীর্ঘ একযুগ জুড়ে ক্ষমতায় থাকা ক্ষমতাসীনরা কতখানি রাজনৈতিক ভাবে সফল, এ প্রশ্ন শুধু আমার নয় অনেকের৷ ভূমিকা না দিয়ে সোজা বিশ্লেষণ করে ফেলি।

গত ১৬ জানুয়ারি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস লিখেছিলাম। 

\\ একজন আন্টির সাথে কথা বললাম মাধবপুরের। পরে ভাগিনার সাথে। উনারা আওয়ামীলীগ বিদ্রোহী ভোটার এর পক্ষে ছিলেন। উনার কথা থেকে যতখানি বোঝলাম, আওয়ামীলীগ প্রার্থী হিন্দু ধর্মের লোক ছিলেন। এখানে ধর্মতত্ত্বের বিশ্বাসে তিনি গৌল খেয়েছেন একটা৷ স্বভাবত ভোট রাজনীতির ফ্যাক্টে বাংলাদেশের ভোটের জন্য বড় একটা ফ্যাক্ট এটি। অপরদিকে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা আওয়ামীলীগ বিভাগীয় শীর্ষ লিডাররা তৃণমূল বিচ্ছিন্ন হবার কারণে বিএনপির প্রার্থী স্বভাবতই মাঠ পর্যায়ে এগিয়ে ছিল। অপর দিকে হিন্দু কমিউনিটি থেকে যারা ভোটার ছিলেন তারাও ঐ ধর্মতাত্ত্বিক হিসেবে ঐ বিদ্রোহী প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন, ভোটের হিসেব এটাই বলছে। বিদ্রোহী প্রার্থী পংকজ কুমার ৪ হাজার ১৮৫ ভোট পেয়েছেন সেই ভোট টা নৌকার ভাগের ই ছিল, কিন্তু সেখানেও নৌকা প্রতীক আরেকটক গৌল খেলো। মানে বলির পাঠা নৌকার শ্রীধাম।  হিন্দু মৌলবাদী, মুসলমান কট্টরবাদী আমার মতে কেউই নৌকা প্রতীকে ভোট দেন নি। আর রাজনীতির মারপ্যাচে ত আর ধানের শীষের সাথে তিনি হালই ধরতে পারেননি। \\

আওয়ামীলীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হবিগঞ্জের মাধবপুর পৌরসভা নির্বাচনে জামানত হারালো আওয়ামীলীগ। শুধু তাই নয় সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলা জুড়ে ভরাডুবি নৌকা প্রতীকের, এমনকি সরকারপন্থী কাউন্সিলরদের। গতকালও সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলা জুড়ে একই অবস্থা। বিদ্রোহীর গোলে দফায় দফায় বিধ্বস্ত, কিন্তু কেন? 

প্রথমত,  রাজনৈতিক সমীকরণে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে আশপাশ থেকে জাল বুনে অনেকেই হাজিরা দিচ্ছেন আওয়ামীলীগের খাতায়। স্থানীয় নেতাদেরকে খুশি করতে অহরহ গড়ে উঠা আওয়ামীলীগাররা তৃণমূল বিচ্ছিন্ন। কেন তৃণমূল বিচ্ছিন্ন? সোজা উত্তর 'নেতা ভজতেই ভজন শেষ'। সেই তৃণমূল বিচ্ছিন্ন হবার কারণে যোগ্যপ্রার্থীরা মনোনয়ন পাচ্ছেন না, লড়ছেন বিদ্রোহীতে। এজন্য ভোট হয়ে যাচ্ছে ভাগ। এই ভাগ থেকে ভাগশেষই থাকছে নৌকার একাউন্টে ।  ফলাফল জামানত শেষ।

দ্বিতীয়ত, এই অহরহ গড়ে উঠা আওয়ামীলীগদের মনিটরিং নেই। রাতারাতি যোগ দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ছবি প্রোফাইলে বা ফেস্টুন দিয়ে হয়ে যাচ্ছেন ইউনিয়ন বা ওয়ার্ড বা পৌরসভার নেতা। উদ্দেশ্য রাজনৈতিক ব্যবসা। সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে মাঠ পর্যায়ের রাজনীতির কোন খবর নেই। সুতরাং সাধারণ মানুষের প্রার্থী চাহিদার গুরুত্ব সেখানে হেরে যাচ্ছে। 

তৃতীয়ত, প্রার্থী বাছাইয়ে কাউন্সিলিং সিস্টেম নেই। স্থানীয় নির্বাচনে তৃণমূল থেকে কাউন্সিলিং সিস্টেম খুবই দরকার। একজন ওয়ার্ডের কর্মীর ইচ্ছা এবং ইচ্ছার কারণ এর প্রতিফলন হওয়া দরকার প্রার্থী বাছাইয়ে, সেটি নেই বর্তমান সময়ে আওয়ামীলীগের।

চতুর্থত,  সোজা বাংলায় ২০০৮ সাল পরবর্তী সময় থেকে আংগুল ফুলে কলা গাছ হয়ে যাওয়া ব্যক্তিরা বা তাদের লবিং এ পছন্দের ব্যক্তিরা মনোনয়ন কিনে নিচ্ছেন। এ দায় হচ্ছে কেন্দ্রের কতিপয় সিন্ডিকেট এর জন্য। একটি ওয়ার্ডের খবর কেন্দ্র কতখানি রাখতে পারছে এটা ত বর্তমান সময়ে স্বাভাবিক ভাবেই আমরা বোঝতে পারছি। 

পঞ্চমত, প্রার্থীর জনগন বিচ্যুতি।  বর্তমান আওয়ামীলীগের প্রার্থীগণ স্থানীয় পর্যায়ে খুবই মোটা দাগে জনগণের সাথে গ্যাপ রেখে চলেন। এক সময় একসারিতে যেখানে দাওয়াত নিমন্ত্রণ খেতেন আওয়ামীলীগের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এখন এরকমটা করলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এই ভাইরালের মানে কি দাঁড়ালও? এই ভাইরালের মানে দাঁড়ালো 'হঠাৎ ঘটে যাওয়া বিশেষ কিছু!'। অথচ একটি সময় এসব ছিল খুবই স্বাভাবিক আওয়ামীলীগের জন্য, যা এখন নয়। এই বিচ্যুতি বড় একটি ফ্যাক্ট। 

ষষ্ঠত, ভাই ভাই রাজনীতি। গোষ্ঠী বংশ এসব কারণ উপজেলা পৌরসভা গুলোতে আওয়ামীলীগের প্রার্থীদের কাল হয়ে দাঁড়ায়। ব্যক্তিগত ভাবে এমন ও দেখেছি, কোন কলেজের ছাত্রলীগের সভাপতি, অন্য কলেজের শিবির বা বিএনপির সাথে আন্ডারগ্রাউন্ড মিটিং এ ছক আঁকছেন কিভাবে তালতো ভাইকে পাশ করানো যায়। আর এই তালতো ভাইকে পাশ করাতে গিয়ে দলীয় প্রতীকের ধার ধারছেন না।

৬ দফা দাবী গুলো পছন্দ, তাই মোটা দাগে ৬ টি পয়েন্ট ই তোলে ধরলাম। এছাড়া ধর্মীয়গত কারণ ত আছেই। আছে বড় বড় বাজেট দিয়ে প্রতীক কেনার মহারথীদের মহাদৌড়। জাতীয় এবং স্থানীয় নির্বাচন সম্পূর্ণ আলাদা ইস্যু কিন্তু রাজনীতির বায়োমিটার বা মৌলিকতা হিসাব করতে গেলে স্থানীয় পর্যায় থেকেই সতর্ক বার্তা পাওয়া যায়। 

এবার আসুন সাংসদ জনপ্রতিনিধিদের কল্যাণ একটু দেখে নেই। একজন সাংসদ অনেক দিক খেয়াল রাখুন। মনে করুন কলিম সাহেব একজন সাংসদ। যাকে উপজেলা পরিষদ থেকে ইউনিয়নের স্যানেটারি বিতরণ সবই খেয়াল রাখতে হয়। কিন্তু এই খেয়ালের মাঝে আছেন আরো কয়েক ডজন প্রতিনিধি, যারা উপজেলা পরিষদ,  ইউনিয়ন বা ওয়ার্ড এর। কিন্তু এদের কাজে কিছু হলে বা কোন স্ক্যান্ডাল হলে চলে যায় সাংসদের উপর। সুতরাং অনেক সময় দেখা যায় 'কলিম সাহেব' কোনমতে সব কিছু মেনেইজ করে দায় সেরে বাঁচতে চান। অন্যদিকে একই এলাকায় যদি কলিম সাহেবের সাথে রহিম সাহেব সাংসদ হবার বাসনা দেখে বসেন তখনত কলিম সাহেবের কোন কথাই নেই গ্রুপিং রাজনীতি থেকে বাঁচতে পুরোপুরি চুপচাপ।  এই চুপচাপের তিতা ফল ভোগ করেন স্থানীয় মেয়র বা চেয়ারম্যান পদে লড়া নৌকার কান্ডারিরা। মোটা দাগে চলমান ঘটনা এসব, তাও আবার তুলে ধরলাম সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত মতামতে। 



লেখকঃ চৌধুরী মারূফ, সাংবাদিক 




মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাউল সাধক চান মিয়া এবং আমার কিছু উপলব্ধি

"রজনী হইসনা অবসান  আজ নিশিতে আসতে পারেবন্ধু কালাচাঁন।। কত নিশি পোহাইলোমনের আশা মনে রইলো রে কেন বন্ধু আসিলোনা জুড়ায়না পরান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। বাসর সাজাই আসার আশেআসবে বন্ধু নিশি শেষে দারূন পিরিতের বিষে ধরিল উজান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। মেঘে ঢাকা আঁধার রাতে কেমনে থাকি একা ঘরে সাধক চাঁনমিয়া কয় কানতে কানতে হইলাম পেরেশান আজ নিশিতে আসতে বন্দু কালাচাঁন।"    গভীর নিশিতে ধ্যান মগ্ন হয়ে কালাচাঁনের অপেক্ষা করছেন সাধক।  সাধক চান মিয়ার শিষ্য বাউল সিরাজউদ্দিনের মতে এটি একটি রাই বিচ্ছেদ। কৃষ্ণের অপেক্ষায় রাধা নিশি বা রাতকে অনুরোধ করছেন 'রাত' যেন না পোহায়  কারণ তার কালা চান যে কোন সময় আসতে পারে। শব্দগুচ্ছ গুলো থেকে সহজেই উপলব্ধি হয় সাধক নিজ দেহকে রাধা আর আত্মাকে কৃষ্ণের সাথে তুলনা করেছেন। দেহ আত্মার মিলন ঘটানোই ছিল সাধকের সাধনা।        বাউল সাধক চান মিয়া উপরোক্ত গানটি রচনা করেছেন। নেত্রকোনা জেলার খাটপুরা গ্রামে ১৩২৫ বঙ্গাব্দে সাধক চান মিয়ার জন্ম। পুরো নাম চান্দেজ্জামান আকন্দ হলেও বা...

বাউল, বাউলতত্ব এবং কিছু কথা

একজন ভদ্র বন্ধু বরের সাথে বাউল সম্প্রদায় নিয়ে বেশ তর্ক হলো রাতে। তর্কের সূত্রপাত ছিল বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী। ভাবলাম "বাউলতত্ত্ব"র আলোকে বাউলরা ভাববাদী নাকি বস্তুবাদী তা নিয়ে যৌক্তিক আলোচনা আবশ্যম্ভাবী। কয়েকটি ধারাবাহিক পর্ব লিখে নিজের মনোভাব বোঝানোর চেষ্টা করব।  শুরুতেই শক্তিনাথ ঝাঁ এর বস্তুবাদী বাউল বই থেকে কিছু কথা লিখতে চাই; বাস্তব জগত ও জীবনকে এরা কোন আনুমানিক যুক্তি বা আলৌকিক যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে নারাজ। জৈব রাসায়নিক ব্যাখায় এরা নারীর রজঃ এবং পুরুষের বিজে জীবন ও জগত সৃষ্টিকে ব্যাখা করে এবং চার ভূতকে প্রাকৃতিক সৃষ্টি মনে করে। এভাবে মানুষে, প্রকৃতিতে তৈরি করে প্রাণ, প্রাণী। অনুমান ভিত্তিক স্বর্গ, নরক, পরলোক, পুনর্জন্মাদি প্রত্যক্ষ প্রমাণাভাবে বাউল আগ্রাহ্য করে। মানুষ ব্যাতিরিক্ত ঈশ্বরও এরা মানে না। সৃষ্টির নিয়মকে জেনে যিনি নিজেকে পরিচালনা করতে শিখেছেন- তিনিই সাঁই। সুস্থ নিরোগ দীর্ঘজীবন এবং আনন্দকে অনুভব করার বাউল সাধনা এক আনন্দমার্গ।।  বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী এর অনেক সূক্ষ বিশ্লেষণ শক্তিনাথের বস্তুবাদী বাউল বইটির মধ্যে আলকপাত করা হয়েছে। সাধারণ সমাজে এ ধা...

ভাইবে রাধারমণ

তখন কলেজের ছাত্র। বাংলা বিভাগের প্রভাষক শ্রদ্ধেয় রেজা স্যারের সাথে খুবই ভালো সম্পর্ক। কলেজের প্রথম দিনই স্যারকে খুব পছন্দ। তারপর স্যারের সাথে গল্প, সমাজ, রাজনীতি, সাহিত্য নিয়ে আলোচনা। রীতিমত ফিজিক্স, বায়োলোজি ক্লাস ফাঁকি দিলেও বাংলা ক্লাস কখনই ফাঁকি দিতাম না। খুব উপভোগ করতাম স্যারের ক্লাস। হোস্টেল সুপার হিসেবে স্যার ( ওহী আলম রেজা) আমাদের সাথেই থাকতেন। আমরা আসার প্রায় নয় মাস পর স্যার এলেন সুপার হিসেবে। প্রতিদিন রাতে খাবার পরেই স্যারের রুমে গিয়ে আড্ডা হত, গানের আসর হত। স্যারের পিসিতে প্রায়ই গান শুনতাম আমরা। একদিন হঠাৎ করেই একটি গান স্যার প্লে করলেন 'আমার বন্ধু দয়াময় তোমারে দেখিবার মনে লয়। তোমারে না দেখলে রাধার জীবন কেমনে রয় বন্ধুরে।। কদম ডালে বইসারে বন্ধু ভাঙ্গ কদম্বের আগা। শিশুকালে প্রেম শিখাইয়া যৌবনকালে দাগা রে।। তমাল ডালে বইসারে বন্ধু বাজাও রঙের বাশি। সুর শুনিয়া রাধার মন হইলো যে উদাসি রে।। ভাইবে রাধা রমন বলে মনেতে ভাবিয়া। নিভা ছিল মনের আগুন কে দিলাই জ্বালাইয়া রে।' গানের কথাগুলো বেশ ভালো লেগে গেলো। পুর গানটি শুনে বুঝলাম গানটি সাধক রাধারম...