তবে এখানে যে সব ঠিকঠাক তা নয়। বিশেষ করে ধর্মীয় উৎসব গুলোর ছুটি নিয়ে৷ এখানে নয়েলে (ক্রিসমাসে) বন্ধ থাকলেও মুসলমানদের ঈদ, হিন্দুদের পূজা বা ইহুদিদের লাগ বি'ওম উৎসবে ছুটি দেয়া হয়না সরকারী ভাবে। মোটা দাগে এই অংশে আমার ধর্মনিরপেক্ষতার প্রমাণ পাইনা ফ্রান্সে।
যাই হোক যা বলতে চাচ্ছিলাম, আমার ঈমান এত দুর্বল নয় যে আরেকজনের মূর্তি ভেংগে প্রমাণ করতে হবে আমি আমার ধর্ম বিশ্বাসে পাকাপোক্ত। বারবার একটি কথা মনে পড়ে গেলো খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি রহমতুল্লাহ আলাইহির ' যে বিপদে মানুষকে সাহায্যের সময় ধর্ম বর্ণের পার্থক্য খোঁজবেনা'। অথচ আমাদের বিশ্বাসের মাত্রা এই মহান সাধক থেকে একটুও বেশি নয় কিন্তু তারা ভাঙ্গাভাঙ্গিতে কতখানি না এগিয়ে। যারা এসব কাজ করেছেন অহরহ।
প্রথম থেকেই বলছি এটা রাজনৈতিক একটি চাল ছিল। নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ে কোন ভাবে যদি একটি দাঙ্গা বাঁধানো যায়, তবেই ত হলো। এখানে রাজনৈতিক দুই পরাশক্তি আওয়ামীলীগ এবং বিএনপি স্পষ্টত ভাবে একে অপরকে দোষারোপ করছেন৷ অথচ উচিৎ ছিল সম্মিলিত ভাবে এই সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসকে মোকাবেলা করা।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে আমার কথাই বলছি, সম্ভ্রান্ত মুসলামান পরিবারে জন্ম নেয়া আমি সব সময় সম্প্রীতির শিক্ষা পেয়েছি। নামাজ রোজা পালন করে ইফতারের সময় পাশের হিন্দু প্রতিবেশীর বাসায় ইফতার পাঠানো আমার দেখা ২৯ বছরের প্রথা। আমার ঈমান আমার কাছে, আমি যেখানে সেজদা করি, যাকে সেজদা করি সেটা আমার অন্তর আত্মার হিসেব দিতে। আমার কাজে কর্মের হিসেব দিতে। এই সেজদায় আল্লাহ ছাড়া কেউ সামিল থাকার প্রশ্নই আসেনা। আমার এই সেজদা আমাকে এই শিক্ষা দেয়নি যে পাশের বাসার তুলসি বেদী ভেঙ্গে চুরমার করে দাও। আমাকে আমার সেজদা শিক্ষা দিয়েছে - 'সেল্ফ কন্ট্রল, সেল্ফ কন্ট্রল, বি সেল্ফ কন্ট্রল'।
বিগত এই তিন দিন যা ঘটে গেলো, আবারও বলছি এটা সম্পূর্ণ সাজানো রাজনৈতিক একটি খেলা। আর এই সুযোগটা নিচ্ছে স্থানীয় কিছু নষ্ট পচা রাজনীতিবিদ, যারা চেয়ারম্যান মেম্বার উপজেলা চেয়ারম্যান আর ঠিকাদার হতে মত্ত। ১৯৭১ এর আগ থেকে এ পর্যন্ত বারবার কয়েক হাজার বার এমন ঘটনা ঘটেছে। ৫ মে হেফাজতের তাণ্ডবের আগে আমাদের ব্লগার লেখক কলামিস্টদের এভাবেই ব্লগার শব্দের অপর নাম নাম নাস্তিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে দিনে দুপুরে চাপাতি দিতে মস্তক ছিন্নবিন্ন করার ব্যবস্থা করে দিয়েছে স্থানীয় কিছু নষ্ট পলিটিশিয়ান। সত্য বলতে গেলে বিভিন্ন দল থেকে ছুটে আসা আওয়ামীলীগে হিজরত করা এই ভ্রষ্টরাই এসব কাজ করেছে৷ উদাহরণ স্বরূপ বলতে গেলে, আমার পিছনেও লেগেছিল। কিন্তু রাজনৈতিক কৌশলে তারা আর পেরে ওঠেনি আমার সাথে৷ এটা শুধু আমার কথা নয়, হাজার হাজার এমন মানুষ তাদের দ্বারা আক্রান্ত। আর তাদের উসকানির মূল টার্গেট হচ্ছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষ।
শেষমেষ মনসুর হাল্লাজের 'আনাল হক' এর ঘটনা আমরা সবাই জানি। কুকুর কে পানি খাইয়ে বেহেশতে যাওয়া নারীর গল্প সবাই বলি, কিন্তু মানুষের রক্ত ঝরতে দেখলে আমাদের হৃদয় কাঁপে না। এত ঠুনকো ঈমান আমার নয়, যে পাশের বাড়ির লোক মেরে, তার চোখের জ্বলে আমার ঈমান তাজা করব। আমার ঈমান জায়নামাজের সেজদায়, অন্য ধর্মের প্রতিবেশীর মূর্তি ভাংগায় নয়। সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত কথা, এটাই আমার ঈমান।
লিখেছেন : চৌধুরী মারূফ অমিত, সাংবাদিক
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন