বছর বিদায় নিলো। মনে হয় ঐ দিন'ই ত শুরু হয়েছিলো দুই হাজার একুশ সাল। কিন্তু গুণে গুণে ৩৬৫ দিন শেষ, আজ রাত পোহালে যে আলো ফুটবে সেই দিনের সূর্যের বিদায়ে বছরের বিদায়। কথাগুলো একটি রবীন্দ্রময় হচ্ছে, প্রমথ বাংলায় বললে আজকেই বছরের শেষ দিন।
বছরের প্রথম দিন মা'কে বলেছিলাম একটু দোয়া কর বছরটা যেন ভালো যায়। বাবাকে বললাম তোমার জায়নামাজের হাতে আমার নামটা মনে রেখো। শুরু হয়ে গেলো বছর। এক দু মাস করে করে সময় গেলো। কাজের মধ্যে, করোনা মহামারির সঙ্কট পেছনে ফেলে চলছিলো দিন। হঠাৎ ডাক পড়লো মিনিস্ট্রি থেকে, পেপার্স রেসিড্যান্স পারমিট পাবার অপেক্ষায়। মানসিক ভাবে শক্ত ছিলাম। একের পর এক বন্ধুদের সাথে আলোচনা। বিন্দু পরিমান জায়গা বাদ রাখিনি, গুণে গুণে, দেখে দেখ, বোঝে শুনে প্রত্যেকটি ডকুমেন্টস রেডি করলাম। তুলোধুনো করলেন ইন্টারভিউতে অফিসার । সাড়ে তিন ঘন্টার উপর প্রায় ৩ ঘন্টা ৪০ মিনিট সুদীর্ঘ বিরতিহীন ইন্টারভিউ। শক্ত করে যুক্তিগত ভাবে প্রতিটি প্রশ্নর উত্তর দিয়ে যাচ্ছিলাম। মনে হচ্ছিলো কখনো ইয়োরকার, কখনো লেগ সুইং বা কখনো অফ সুইং। থেমে যাইনি। সুন্দর করে সব টেকেল দিলাম। ফুলটস পেয়েছি বেশ কয়েকটা, ছাড় দেইনি ইমিগ্রেশন অফিসারকে, সিক্স টু সিক্স। কিছুদিন পর হুটাহাট চিঠি এসে গেলো। পার্মানেন্ট হয়ে গেলাম ফ্রান্সের। বছরের মাঝ সময়টা বেশ চমৎকার গেলো। ইশকের কাছে বারবার শোকরিয়া জানালাম এবং জানাই। মটিভ ঘুরে গেলো জীবনের।
বছরটা আসলে একদম খারাপ যায়নি। এখানে আমার কোন পার্মানেন্ট সোসিয়াল এসিস্টেন্ট বা সামাজিক সুরক্ষা সহযোগী নেই। সব কাজ আমি আমার ভাবে সম্পাদন করি। সব কিছু নিজে নিজে। শুধু মাত্র একবারে যখন আইডিয়া বা জ্ঞানের বাইরে চলে যায় ব্যাপার তখন কোন টেম্পরারি সোসিয়াল এসিস্টেন্ট অফিসারের কাছে যাই, নতুবা না। বাসাটাও দৌড়াদৌড়ি করে ম্যানেইজ করে নিলাম নিজের নামে। বলা যায় ব্যক্তিগত লাইফ ভালোই চলেছে এই বছর।
সুখের পর দুঃখ আসে , দুঃখের পর সুখ। কিন্তু না এক সাথেই ছিলো। বিদেশ বিভূই এ থেকে প্রিয়জন হারানোর বেদনা ছিলো অনেক। অনেক শুভাকাঙ্ক্ষীর আপনজন হারিয়েছেন, তাদের সাথে আমি ব্যথিত ছিলাম। বছরের শেষ প্রান্তে এসে হঠাৎ হারালাম প্রিয় নানীকে। খুব শকড ছিলাম। এই লম্বা এবং সংক্ষিপ্ত সময়ে চিনেছি মানুষজন। আপন পর বিদেশের মাটি চিনিয়ে দেয়। নিজেও জেনেছি, চিনেছি।
রাজনৈতিক ভাবে কোন কিছুই মন্দ যায়নি। তবে হারিয়েছি অনেক প্রিয় প্রিয় রাজনীতিবিদদের। বাবার জব এ বছর শেষ। তাই স্থানীয় রাজনীতি থেকে ইচ্ছাকৃত ভাবেই একটু উনাকে দূরে নিয়ে এসেছি। জব শেষ হবার পরই সামগ্রিক অন্য রাজনৈতিক প্লাটফর্মে উনাকে প্রার্থী করার ইচ্ছা আছে। সুস্থ থাকলে সেটি হয়ে যাবে। স্থানীয় রাজনীতিতে দেখা যায় ঘুরেফিরে সবাই কোন কোন দিল থেকে প্রিয়জন বা নিকট আত্মীয়। বাবার কথা হচ্ছে শেষ বছরে রাজনৈতিক ভাবে কারও বিরাগভাজন হয়ে অন্য কারো আস্থাভাজন বা অন্যের আস্থাভাজন হয়ে কারোর বিরাগভাজন হবেন না। উনার কথাকে আমরা দুইভাই এক কথায় স্বাগত জানালাম। শেষ বছর মিলেমিশে সবার ভালোবাসা নিয়ে বিদায় নিয়ে, আগামীর প্লাটফর্মের জন্য প্রস্তুত হওয়া। এই ছিল বছরের রাজনীতি। আগামীতে নতুন কোন ভাবনা নিয়ে প্রস্তুত করছি বাবাকে। মিলেমিশে এলাকার সবাই নিয়ে আমরা ভালো ছিলাম। সবাই ছিলো, আশা করি থাকবেও।
সব শেষে দিন ভালো গেলো, আগামীর দিনে আলো বেশি আলো ফুটুক। জীবন থেকে একটি বছর কমলো। বেহেশত বলি আর স্বর্গ বলি, সেখানে যাবার জন্য সিঁড়িটা আরো একধাপ উপর থেকে কমে গেলো। এই ত বছর।..
লেখকঃ চৌধুরী মারূফ অমিত, সাংবাদিক
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন