রগকাটা বাহিনী, পায়ের রগ কেটে দেয় এই রকম বহু ঘটনার স্বীকার বাংলাদেশের হাজারো মানুষ। একটি বর্বর নির্মম ঘটনার উদাহরণ দেই। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস। রংপুর কারমাইকেল কলেজের ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোশাররফ হোসেনের বর্বর হামলা চালায় ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী তথা বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধীতাকারী জামায়াত ইসলামের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীরা। ধারালো দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মোশাররফ হোসেনের হাত এবং পায়ের রগ কেটে দেয় ছাত্রশিবিরের সন্ত্রাসীরা। সিলেট সরকারী ছাত্রলীগ নেতা অসীম কান্তি করের কথা মনে আছে আমাদের সবার। অসীম কান্তি কর এর সাথে আমার বেশ কয়েকবার আলোচনা হয়েছে এ নিয়ে। সিলেটের বালুচরে তার বাসায় কিভাবে হামলা চালিয়ে পায়ের রগ কেটে, কুপিয়ে জখম করেছিলো স্থানীয় জামায়াত শিবিরের কর্মীরা। আর আমি ত নির্মম ঘটনার সরাসরি স্বাক্ষী আমার বাংলা বিভাগের শিক্ষক অহী আলম রেজার উপর শিবির কর্মীদের নির্মম দেশীয় অস্ত্রের হামলা। সেদিন আমি স্যারের সাথেই ছিলাম। বিকেলে ফেরার পর স্যারের উপর এমন নেক্কারজনক হামলা। সেই দিনের বীভৎস ঘটনা আমি মনে করতে চাই না, কিন্তু মনে হলে আমি শিউরে উঠি স্যারের সেই রক্তাক্ত শরীরের কথা মনে করে। তুলে ধরি দেশের দক্ষিণের কক্সবাজারের কথা। কক্সবাজারের তারেক আজিজ সিদ্দিকি ছাত্রশিবিরের এমন এক ভয়ংকর নেতার নাম। ছাত্রলীগ নেতাদের ‘রগ কাটা’ যেন তারেক আজিজ সিদ্দিকির জন্য একটি নেশা। মানুষের রগ কাটার মতো জঘন্য অপরাধ বারবার সংগঠিত করলেও ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোন ব্যবস্থা কখনো গ্রহণ করা হয়নি। বরং প্রতিবার নৃশংস অপরাধের পর তারেক আজিজ সিদ্দিকিকে সংগঠন থেকে করা হয়েছে পুরষ্কৃত। ২০১৫ সালের ৩ নভেম্বর কক্সবাজার সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের তৎকালীন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাজিবুল ইসলামকে জামায়াতে ইসলামীর জেলা কার্যালয়ে তুলে নিয়ে দুই পায়ের রগ কেটে দেয় তারেক আজিজ সিদ্দিকিসহ শিবিরের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় তারেক আজিজ সহ তৎকালিন কক্সবাজার শহর ও কলেজ শাখা ছাত্রশিবিরের ২৪ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়। এ ঘটনার কিছুদিন পর কক্সবাজার সরকারী কলেজ ছাত্রশিবিরের কমিটিতে সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হয় তারেক আজিজ সিদ্দিকি। ২০১৬ ও ২০১৭ সালে ছাত্রলীগের আরো বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে গুপ্ত হামলা করার পর কক্সবাজার সরকারী কলেজ ছাত্রশিবিরে সভাপতির দায়িত্ব লাভ করে তারেক আজিজ সিদ্দিকি।
ইদানিং মনে হচ্ছে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী, দালাল, রাজাকার পাকিস্তানী মেলেটারিদের দোসর কুখ্যাত রাজাকার গোলাম আজম, মতিউর রহমান নিজামী, রাজাকার দেলোওয়া হোসেন সাঈদীর উত্তরসূড়িরা আবার মাথা ঝাড়া দিয়ে উঠার চেষ্টায়। আন্ডারগ্রাউন্ডে জামায়াত শিবিরের তৎপরতা সবসময় সক্রিয়। এসব দেখেও দেখার কেউ নেই। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দল, বিশেষ করে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের হাইফোরামের নেতাদের জামায়াত শিবিরের উত্থান রুখে দেবার কথা। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য, স্থানীয় সংসদরা যারা জেলা পর্যায়ে আওয়ামীলীগকে লিড করতে চান তাদের কতজন, বা কয়জন'ই বা জামায়াতকে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত হয়ে থাকেন। আসলেই কি সেই প্রস্তুতি উনাদের আছে। কোন ভদ্র মহিলা বা মহোদয়কে ব্যক্তিগত ভাবে নিশানায় না দাঁড় করিয়ে সামগ্রিকভাবে চিন্তা করলে কতখানি সক্ষম মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রধান, সর্ববৃহৎ এই রাজনৈতিক সংগঠনের জেলার নেতাদের। গতদুদিন আগে সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের কোন দুজন নেতার সাথে কথা। উনাদের প্রশ্ন করেছিলাম, জেলার উপরের দিকে হাইভল্টেজ নেতারা কি বলেন বা বলতে চান বর্তমান জামায়াত শিবিরের অবস্থান নিয়ে। উনাদের সোজা উত্তর ছিল- "গ্রুপিং মাইর সামলাইবানা ইতা দেখবা"। গ্রুপিং মারামারি, নেতার গুণকীর্তন জপাতে আসলে উপজেলা গুলোতে আওয়ামীলীগ তাদের ভাব মতাদর্শের সেকেন্ড সারির নেতারা ব্যস্ত। ২০০২ বা ২০০৩ সালে জামায়াত শিবিরকে যেভাবে মোকাবেলা করা হতো সেখানে দুই পার্সেন্ট অবস্থান ও আজকে নেই। অন্যান্য মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোতে যারা আছেন, তাদের জনবলের অভাব, তৃণমূলের বিস্তারে সেই ক্ষমতা আজকের অবস্থানে নেই বলে আমার লিখার মধ্যে বারবার আওয়ামীলীগের কথাই টানতে হলো। কিন্তু এটাও শক্ত সত্য, এবং অবলীলায় বলা যায়, বিগত দিনে জামায়াত শিবিরের নিকৃষ্ট রাজনীতি, ইসলামের ইজমের সফট দিকগুলোকে ব্যবহার করে জামায়াতের যে রাজনৈতিক কৌশলে পাকাপোক্ত ছিল তা একমাত্র মোকাবেলা করছে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং জামায়াত ইসলামের নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন বাতিলের জন্য এই আওয়ামীলীগের ভূমিকা অস্বীকার করা যাবে না।
ইদানিং জামায়াতের কয়েকটি রাজনৈতিক কন্টেন্ট এ আসি। গতকালের কথা, সিলেটের বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলায় জামায়াত সমর্থিত তিন ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজিরা দিয়ে জামিন আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ভারপ্রাপ্ত বিচারক মো. ইব্রাহিম। এই তিনজন হলেন,সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার লাউতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও জামায়াত নেতা মো. দেলওয়ার হোসেন, মুড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মো. ফরিদ আহমদ (ফরিদ আল মামুন) এবং গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাদেপাশা ইউনিয়নের জামায়াত সমর্থিত চেয়ারম্যান জাহিদ হোসেন। জেলা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, গত ২৯ ডিসেম্বর সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসার পাঠাগারে ‘গোপন সম্মেলনের’ আয়োজন করে জামায়াতে ইসলামের ছাত্রসংগঠন ছাত্রশিবির। খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালায়। এ সময় শিবিরের তিন কর্মীকে গ্রেফতার করে সিলেট কোতোয়ালি থানা পুলিশ।
গত ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ সালে জামায়াত ইসলামের আমির শফিকুর রহমান রাজশাহীতে তাদের রাজনৈতিক প্রোগ্রাম করেছেন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রাজশাহী অঞ্চল কর্তৃক আয়োজিত উপজেলা ও থানা আমির শিক্ষা শিবির অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত ও ছিলেন। গতকাল রাজধানীতে জামায়াত ইসলাম এবং ইসলামী ছাত্র শিবিরের ঝটিকা মিছিল হলো। সিলেটে ওসমানী মেডিকেল কলেজ ছাত্রাবাস একরকম দখল করেই রেখেছে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা। একজন ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিযোগ করেই বসেছেন, বর্তমান ছাত্রলীগের সভাপতি (ওসমানী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট) নাকি সাবেক শিবির কর্মী ছিলেন, এই অভিযোগের সত্য মিথ্যা জানিনা, তবে যিনি ক্ষোভ নিয়ে এরকম তথ্য দিয়েছেন, তিনিও ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন।
গোয়েন্দা বাহিনীর তথ্য থেকে, গ্রেফতার ও সরকারের নজরদারি এড়াতে এ কৌশলে গোপনে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে জামায়াত ইসলাম। এ'ত গেলো গোয়েন্দা তথ্য। সরেজমিনে আমার ব্যক্তিগত জরিপেও দেখলাম, স্বতন্ত্র প্রতীকের মোড়কে স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা অংশ নেয়। সারা দেশে অর্ধশতাধিক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তাদের প্রার্থী জয়লাভও করে। এটা নিশ্চিত আগামী সংসদ নির্বাচন ঘিরে প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত শিবির নামক মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী এই সংগঠন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের সাথে যারা বিরোধীতা করেছে, স্বাধীন বাংলাদেশ যারা মেনে নিতে পারেনি, সেইসব মানুষ যাকে আমি বলি কপাল পোড়া এবং তাদের সংগঠনের এদেশের রাজনীতি করার নুন্যতম সুযোগ দেয়ার প্রশ্নই আসেনা। আওয়ামীলীগ, বিএনপি জাতীয়পার্টি, বামপন্থী বা অন্যান্য ছোট দলগুলো রাজনীতির মাঠে আলোচনা সমালোচনায় উত্তাল থাকবে, কিন্তু জামায়াত শিবির নামক রগকাটা বাহিনী দেশের শত্রু। উপরের গুটিকয়েক কার্যক্রম তুলে ধরলাম জামায়াতের, কিন্তু বিভিন্ন অথেনটিক তথ্য থেকেই বলছি, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাথাঝাড়া দিয়ে অবস্থান নিশ্চিত করছে ১৯৭১ সালের পাকিস্তানের দোসর তথা জামায়াত ইসলাম এবং ইসলামী ছাত্র শিবির নামক দেশদ্রোহী সংগঠন।
লেখকঃ চৌধুরী মারূফ অমিত, সাংবাদিক
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন