সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি এবং কিছু আলোচনা

 আমরা সবসময়'ই বলি পুণ্যভূমি সিলেট। আসলে কতখানি পুণ্যের কাজ করি। অনেকেই হয়তো ভাবছেন নামাজ রোজা পূজা পালন ইত্যাদি। না, আমি এসব ধর্মীয় রীতি পালনের কথা বলছিনা। আমি বলছি আমরা আমাদের মাটির জন্য কতখানি ভালো এবং সুফলদায়ক কাজ করি যেটা মঙ্গলজনক। সিলেটে নদীগুলো আজ বিপন্ন। শুধু বিপন্ন নয় মহা বিপন্ন নাব্যতা নেই। আমাদের চলমান জীবনের যত ময়লা আছে, পলিথিন আছে সবই নদীতে। সুরমা নদীর তীরে আমার ঠিকানারে এই কথাটি শুনে আমরা সুরের তালে গানের মাতমে শুনে হাত তালি দেই কিন্তু নেইনা সেই নদীর খোঁজ। নদীতে নাব্যতা নেই, অবৈধ ড্রেজারে বালু তোলা ঠিকাদারদের একধরনের আফিমের নেশা বলা বলা যায়। পান চিবিয়ে মুখের লাল রস গুলো দিয়ে ক্যানভাস করে ফেলি নগরের স্কুলের দেয়াল, মার্কেটের দেয়ালে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা ত নেই'ই, এর মধ্যে লোক দেখানো বা যা মনে হলো সেটা ভেবেই এখানে সেখানে খুঁড়াখুঁড়ি ।  সিলেট শহরের কালীঘাট থেকে টুকের বাজার, কালীঘাট থেকে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কুচাই এলাকা পর্যন্ত সর্বত্রই আবর্জনার ভাগাড়। একইভাবে সুনামগঞ্জ শহর এলাকায় সুরমা নদীর তীর এখন ময়লার ভাগাড়, আবর্জনার স্তূপ। সুনামগঞ্জ পৌর শহরের সাহেববাড়ি সেলুঘাট, উত্তর আরপিননগর, পশ্চিমবাজার, মধ্যবাজার, চাঁদনীঘাট, সুরমা হকার্স মার্কেট, জগন্নাথবাড়ি, প্রধান মাছ বাজার এলাকা, জেলরোড ফেরিঘাট এলাকা, লঞ্চঘাট এলাকা, উকিলপাড়া এলাকা, ষোলঘর এলাকায় নদীতীরে স্থানীয় লোকজন নিয়মিত হোটেল-রেস্তোরাঁর পচা ও উচ্ছিষ্ট খাবারসহ নানা রকমের বর্জ্য ফেলছেন। 

সিলেট বিভাগে বন্যার ভয়াবহতা দেখেছি শেষ কয়েকদিন। বিশেষ করে সুনামগঞ্জ এবং সিলেট শহর এবং এর আশপাশের এলাকা। বলতে গেলে দিনের দুইভাগ অংশই খোঁজ খবর এবং সবার সাথে যোগাযোগ করছিলাম বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে। ২০০৪ সালের দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কথাও আমার মনে আছে। তবে সে বন্যায় আক্রান্ত মানুষদের জন্য কোন ভূমিকাই আমার ছিলো না। কিন্তু এবারের বন্যায় চেষ্টা করেছি সাধ্যমত, একজনের'ও যদি উপকার হয় আমার মাধ্যমে।  সিলেটে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি, আশ্রয় কেন্দ্রে মানুষের আর্তনাদ এখানে লিখে কখনই উপলব্ধি করাটে পারবো না আমি, এটা সম্ভব নয়। বিশেষ করে এই পানির ঢলে প্রিয়জনের সাথে কোনভাবে মোবাইল ফোনে বা ইন্টারনেট কলে না পাওয়া গেলে কি কষ্ট হয় সেটা আমি দূর দেশে বসে খুব ভালো ভাবে জানি। এই বন্যাকালীন সময়ে বেশ কিছু পরিস্থিতি আমার চোখে লেগেছে। যেগুলো না বলে থাকতে পারছিনা। 

পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথেই এবার গণমাধ্যমের সংবাদের মাধ্যমে সতর্ক বার্তা ছিলো বেশ। জাতীয় কিছু পত্রিকা , টেলিভিশন এবং সিলেটের প্রায় সকল অনলাইন সংবাদমাধ্যম প্রথম থেকেই বারবার শিরোনাম সংবাদ বা লিড নিউজে পানি বৃদ্ধির খবর প্রকাশ করেছেন, প্রচার করেছেন। মানুষের কাছে সংবাদ পৌছে দেয়াটা খুবইন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু এই ব্যবস্থায় সবচেয়ে বড় সমস্যা তৈরি করেছে কিছু ফেসবুক পেইজ এবং ভুয়া , সাংবাদিকতার নিয়ম না মানা, সংবাদ সম্পর্কে জ্ঞান না থাকা কিছু অনলাইন মাধ্যম যেগুলো আতঙ্ক ছড়িয়েছে । পুরোনো স্থির চিত্র, ভিডিও ফুটেজ দিয়ে জনমনে আতঙ্ক ছড়ানো আমার কাছে অপরাধ সমান বিষয়। কারণ সমস্যা বা বিপদ এগিয়ে এলে মানুষ ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন, এটা স্বাভাবিক বিপদ এলে মানুষের দিশেহারা হয়ে যাওয়াটা। এতে যদি আরও উস্কে দেওয়া হয় তবে সেটা একধরনের  অপপ্রচারের ন্যায় অপরাধ।

আমরা অনেক সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেগেটিভ পয়েন্টই তুলে ধরি। কিন্তু ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ এবার এগিয়ে এসেছেন এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে। বিশেষ করে পানিবন্দি মানুষদের যে মোবাইল সেবা দেবার আহ্বান জানিয়েছেন বিভিন্ন শুকনো এলাকা থেকে তা আসলেই হৃদয় ছুঁয়ে গেলো। ইন্টারনেট ডাটা, এবং মোবাইল ব্যালেন্স দিয়ে যারা এই অভিনব সাহায্য করেছেন তাদেরকে স্যালুট দিতে আমার কোন কমতি নেই। বিপদে যিনি একআনা নিয়ে পাশে দাঁড়াবেন মানুষের তিনি মহান, তিনি মহান'ই।  এই সেবা এবং সাহায্যে অনেকে প্রতিযোগিতাও করেছেন। অনেকেই বলছেন হয়ত এটা শ'অফ। আমি এই কথার সাথে একদম দ্বিমত। ভালো কাজে প্রতিযোগিতা, এমনকি শ'অফ করেও যদি একজন মানুষের বা একজনের পরিবার স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে তবে হোক সেই প্রতিযোগিতা, তা'ও মানুষের যদি উপকার হয়। সেটাই ত এই বিপদে শ্রেয় ছিল। 

স্যালুট দিতে হবে জাতির উজ্জ্বল সন্তানদের, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, ডুবুরি দল এবং সিভিল ডিফেন্সকে। এই দুর্যোগে বা মহাপ্লাবনে এরাই আমাদের আশার আলো দেখান। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী হচ্ছে আমাদের আশার আশ্রয়স্থল।  সেনাবাহিনীর ১০ প্লাটুন, ৬টি মেডিকেল টিম, নৌবাহিনীর ৯৫ সদস্য,  ক্রুজ ও হেলিকপ্টার নিয়ে প্রায় দুই জেলা সিলেট এবং সুনামগঞ্জের ৪০ লাখ মানুষকে উদ্ধারের মহাপবিত্র কাজে লেগে আছেন এখনো এই মুহুর্ত অব্দি। সিলেট কুমারগাঁও বিদ্যুৎকেন্দ্রে পানি ওঠে বিদ্যুৎ সরবরাহ হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়া সুনামগঞ্জের বেশ কয়েকটি খাদ্য গুদাম হুমকিতে রয়েছে। এগুলো রক্ষায়ও সেনা সদস্যরা কাজ করেছেন।  সেনাবাহিনী নিজস্ব নৌকা দিয়ে পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধার করছে। ঢাকা ও কুমিল্লা থেকে আরও ‘রেসকিউ বোট’ আনা হচ্ছে। এছাড়া স্থানীয় লোকজনের নৌকাগুলোও উদ্ধার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। তারা অবিরাম পরিশ্রম করছেন  সদর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ জেলার সদর, দিরাই, ছাতক, দোয়ারাবাজার ও জামালগঞ্জ।

ত্রাণ বিতরণ কাজে এগিয়ে আসছেন অনেকেই। ব্যক্তি পর্যায়, সামাজিক সংগঠন এবং রাজনৈতিক সংগঠনগুলো এবং প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকেও ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়েছে ইতোমধ্যে। এখানে একটি কথা না বললেই নয়- কেউ যদি এক প্যাকেট বিস্কুট ও বিতরণ করেন, তবে তাকে নিয়ে কেন হাস্যরস করা হবে। কোন ভালো কাজে বারবার প্রশ্নকরা, খুঁত খোঁজে বেড়ানো, আমাকে ডাকা হয়নি কেন ইত্যাদি ইত্যাদি বলা বেশ কিছু মানুষজন চোখে পড়েছে ইদানিং। আমার কাছে এদেরকে মানসিক রোগী বলে মনে হয়। অথবা মনে হয় তাদের কিছু করার ক্ষমতা নেই বলেই অন্যের দোষ ধরতেই তিনি মগ্ন। এই দোষ খোঁজে বেড়ানেও কাজটিই উনাদের দ্বারা সম্ভব বলে মনে হয় আমার, এই কাজটি তারা পারেন। অন্য কিছু নয়।  কে দিলো, কোন দল দিচ্ছে, কোন সংগঠন দিচ্ছে, সে কে এসব দেখার সময় এখন নয়। এখন একমাত্র সময় হচ্ছে মানুষকে কিভাবে বাঁচানো যায় সেটা।  কিন্তু এ কথাটা আবার জনপ্রতিনিধিদের জন্য বেমানান। যে উনারা দুইবস্তা চাল দিয়ে দায় সেরে ফেলবেন । একজন মেয়র, একজন সংসদ সদস্য এবং একজন উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান একটি সংসদীয় আসন বা সিটি কর্পোরেশনের কাছে দায়বদ্ধ। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল উনাদের কাজ কর্মই বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সাধারণ লোকের পছন্দ হয় না। সিলেট শহরের একজন মানুষ হিসেবে বন্যা কবলিত এলাকার সিটির মেয়র যদি আরিফুল হক চৌধুরীর কথা আমাকে জিজ্ঞেস কর হয়, তাহলে বলব আমি নাখোশ। এই মেয়রের অযথা খুঁড়াখুঁড়ি, বিভিন্ন কার্যকলাপ, বন্যায় এখানে সেখানে উনার লোক নিয়ে সেলফিবাজী আমার ব্যক্তিগত ভাবে একদম পছন্দ নয়। সেলফি তোলার প্রসঙ্গটা এই কারণে আনলাম, গতকাল ই একটি ভিডিওতে দেখলাম ত্রাণ বিতরণের সময় কিভাবে উনার লোকজন অন্যদের বিরক্ত করছে। আবার সংসদ সদস্যরা যখন কোন আশ্রইয়কেন্দ্রে যান তখন দেখা যায় উনাদের সাথে উনাদের অনুসারীরা ছবি তুলার জন্য ধাক্কাধাক্কি করে পাশে দাঁড়িয়ে আছে। এক বাটি খিচুড়ি বা রান্না করা খাবার বিতরণ করতে কেন ৯জনের হাত এগিয়ে ছবি তুলতে হবে! এটা আমার কাছে রীতিমত একটি রাজনীতির নামে মশকরা মনে হয়। হ্যাঁ, আশেপাশে হয়ত চার পাঁচজন, অথবা আরো বেশি দাঁড়ালেন কিন্তু কেন এতগুলো হাত এক বাটি খাবার বিতরণে থাকবে! নির্বাচন এলেই যখন বিভিন্ন দলের মনোনয়ন এবং সংসদ সদস্য হওয়ার বাসনায় অনেকেই ঘোর স্বপ্নে থাকেন এদের অনেককেই এই বন্যা পরিস্থিতিতে কোন সাহায্যে চোখেই পড়েনি। আমার এলাকা যদি সিলেট ৩ আসন বলি তবে বর্তমান সংসদ সদস্য এদিক ওদিক ছুটছেন কিন্তু এর বাইরে একজনও এখন পর্যন্ত আসেননি। আবার বর্তমান সংসদ সদস্যের অনুসারীরা অনেকেই বেশি উৎসাহী। প্রয়োজনীয় সংবাদ বা  তথ্য প্রচার না করে শুধু নেতার ছবিটি ঢালাও ভাবে প্রচার করতে থাকেন। এটাও একধরনের রাজনৈতিক কৌশল।     

এই বন্যা পরিস্থিতে ফেসবুক গুজব কারণে অনেকে হয়রানি হয়েছেন বেশি। সুস্থ মানুষ অসুস্থ হয়েছেন এই গুজবের রাতে। পানি নামার আগে মসজিদের মাইক ব্যবহার করে ছড়িয়ে দেওয়া হলো সিলেটে ডাকাত আতঙ্ক। আসলে মসজিদের মাইক ব্যবহারে অবশ্যই নীতিমালা দরকার।  "মসজিদ থেকে বলছি--" এই কথা গুলো আমাদের ধর্মপ্রাণ মানুষ সহজেই বিশ্বাস করেন কোন যুক্তি ছাড়া। কিন্তু যিনি এই ঘোষণা করেন, তিনি একজনের টেলিফোন পেয়েই শুরু করে দেন মাইক অন করে ঘোষণা। কোন ভাবেই সেটাকে তিনি ভেরিফাই করেন না। এমনকি স্থানীয় কোন জনপ্রতিনিধি যেমন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অথবা সদস্য কারো সাথেই কিছু আলোচনা না করে শুরু করে দেন। বিগত দিন এই মসজিদের মাইক ব্যবহারে ভুয়া আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এবং সেই মাইকের সাথে আরও সুযোগ নেই ভুয়া ফেসবুক পেইজ গুলো যারা দাবী করে তারা সংবাদ মাধ্যম । 

কিছু ব্যাপারে আমাদের সূক্ষ্ম নজর রাখা উচিৎ। বন্যার্তদের প্রয়োজনে – খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, ঔষধ এবং কাপড় – চোপড় প্রদান অব্যাহত রাখা।  অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা। বন্যা কবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির অভাবে ডায়রিয়া, আমাশয়, টাইফয়েড , হেপাটাইটিস এবং মশাবাহিত রোগ ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। সাহায্য ও ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে নারী ও বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধীদের অগ্রাধিকার দেওয়া।  

এই বন্যার সময়ে সবচেয়ে খারাপ দিক ছিলো কিছু ব্যবসায়ীর অসাধু কার্যক্রম। এই পরিস্থিতে হাজার টাকা নৌকার ভাড়া তারা ৫০ হাজারে নিয়েছে, ৫ টাকার মোমবাতি ৫ শ টাকা বিক্রি করেছে এদেরকে স্রেফ জেলে রেখে দেওয়া উচিৎ মিনিমাম ১ বছর। হ্যাঁ মনে হতে পারে আমি কর্কশ ভাবে বলছি, কিন্তু বলতেই হচ্ছে এই দুর্যোগের দিনে যারা এ ধরনের সিন্ডেকেট গড়ে তুলেন এদেরকে এলাকা থেকে এলাকায় বয়কট করে ফেলা উচিৎ। কারণ পানি থাকবেনা কিছু দিন পর, তবে সুস্থ হয়ে যাবার পর পরিস্থিতি বয়ক্টের মাধ্যমে এদেরকে বোঝিয়ে দেওয়া উচিৎ , যে তারা ব্যবসা করার যোগ্য নন। 

লেখকঃ চৌধুরী মারূফ অমিত, সাংবাদিক



 


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাউল সাধক চান মিয়া এবং আমার কিছু উপলব্ধি

"রজনী হইসনা অবসান  আজ নিশিতে আসতে পারেবন্ধু কালাচাঁন।। কত নিশি পোহাইলোমনের আশা মনে রইলো রে কেন বন্ধু আসিলোনা জুড়ায়না পরান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। বাসর সাজাই আসার আশেআসবে বন্ধু নিশি শেষে দারূন পিরিতের বিষে ধরিল উজান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। মেঘে ঢাকা আঁধার রাতে কেমনে থাকি একা ঘরে সাধক চাঁনমিয়া কয় কানতে কানতে হইলাম পেরেশান আজ নিশিতে আসতে বন্দু কালাচাঁন।"    গভীর নিশিতে ধ্যান মগ্ন হয়ে কালাচাঁনের অপেক্ষা করছেন সাধক।  সাধক চান মিয়ার শিষ্য বাউল সিরাজউদ্দিনের মতে এটি একটি রাই বিচ্ছেদ। কৃষ্ণের অপেক্ষায় রাধা নিশি বা রাতকে অনুরোধ করছেন 'রাত' যেন না পোহায়  কারণ তার কালা চান যে কোন সময় আসতে পারে। শব্দগুচ্ছ গুলো থেকে সহজেই উপলব্ধি হয় সাধক নিজ দেহকে রাধা আর আত্মাকে কৃষ্ণের সাথে তুলনা করেছেন। দেহ আত্মার মিলন ঘটানোই ছিল সাধকের সাধনা।        বাউল সাধক চান মিয়া উপরোক্ত গানটি রচনা করেছেন। নেত্রকোনা জেলার খাটপুরা গ্রামে ১৩২৫ বঙ্গাব্দে সাধক চান মিয়ার জন্ম। পুরো নাম চান্দেজ্জামান আকন্দ হলেও বা...

বাউল, বাউলতত্ব এবং কিছু কথা

একজন ভদ্র বন্ধু বরের সাথে বাউল সম্প্রদায় নিয়ে বেশ তর্ক হলো রাতে। তর্কের সূত্রপাত ছিল বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী। ভাবলাম "বাউলতত্ত্ব"র আলোকে বাউলরা ভাববাদী নাকি বস্তুবাদী তা নিয়ে যৌক্তিক আলোচনা আবশ্যম্ভাবী। কয়েকটি ধারাবাহিক পর্ব লিখে নিজের মনোভাব বোঝানোর চেষ্টা করব।  শুরুতেই শক্তিনাথ ঝাঁ এর বস্তুবাদী বাউল বই থেকে কিছু কথা লিখতে চাই; বাস্তব জগত ও জীবনকে এরা কোন আনুমানিক যুক্তি বা আলৌকিক যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে নারাজ। জৈব রাসায়নিক ব্যাখায় এরা নারীর রজঃ এবং পুরুষের বিজে জীবন ও জগত সৃষ্টিকে ব্যাখা করে এবং চার ভূতকে প্রাকৃতিক সৃষ্টি মনে করে। এভাবে মানুষে, প্রকৃতিতে তৈরি করে প্রাণ, প্রাণী। অনুমান ভিত্তিক স্বর্গ, নরক, পরলোক, পুনর্জন্মাদি প্রত্যক্ষ প্রমাণাভাবে বাউল আগ্রাহ্য করে। মানুষ ব্যাতিরিক্ত ঈশ্বরও এরা মানে না। সৃষ্টির নিয়মকে জেনে যিনি নিজেকে পরিচালনা করতে শিখেছেন- তিনিই সাঁই। সুস্থ নিরোগ দীর্ঘজীবন এবং আনন্দকে অনুভব করার বাউল সাধনা এক আনন্দমার্গ।।  বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী এর অনেক সূক্ষ বিশ্লেষণ শক্তিনাথের বস্তুবাদী বাউল বইটির মধ্যে আলকপাত করা হয়েছে। সাধারণ সমাজে এ ধা...

ভাইবে রাধারমণ

তখন কলেজের ছাত্র। বাংলা বিভাগের প্রভাষক শ্রদ্ধেয় রেজা স্যারের সাথে খুবই ভালো সম্পর্ক। কলেজের প্রথম দিনই স্যারকে খুব পছন্দ। তারপর স্যারের সাথে গল্প, সমাজ, রাজনীতি, সাহিত্য নিয়ে আলোচনা। রীতিমত ফিজিক্স, বায়োলোজি ক্লাস ফাঁকি দিলেও বাংলা ক্লাস কখনই ফাঁকি দিতাম না। খুব উপভোগ করতাম স্যারের ক্লাস। হোস্টেল সুপার হিসেবে স্যার ( ওহী আলম রেজা) আমাদের সাথেই থাকতেন। আমরা আসার প্রায় নয় মাস পর স্যার এলেন সুপার হিসেবে। প্রতিদিন রাতে খাবার পরেই স্যারের রুমে গিয়ে আড্ডা হত, গানের আসর হত। স্যারের পিসিতে প্রায়ই গান শুনতাম আমরা। একদিন হঠাৎ করেই একটি গান স্যার প্লে করলেন 'আমার বন্ধু দয়াময় তোমারে দেখিবার মনে লয়। তোমারে না দেখলে রাধার জীবন কেমনে রয় বন্ধুরে।। কদম ডালে বইসারে বন্ধু ভাঙ্গ কদম্বের আগা। শিশুকালে প্রেম শিখাইয়া যৌবনকালে দাগা রে।। তমাল ডালে বইসারে বন্ধু বাজাও রঙের বাশি। সুর শুনিয়া রাধার মন হইলো যে উদাসি রে।। ভাইবে রাধা রমন বলে মনেতে ভাবিয়া। নিভা ছিল মনের আগুন কে দিলাই জ্বালাইয়া রে।' গানের কথাগুলো বেশ ভালো লেগে গেলো। পুর গানটি শুনে বুঝলাম গানটি সাধক রাধারম...