সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মুক্তিযোদ্ধা আরফান আলীর নামে সড়ক দাবী দৌহিত্র নাজিমুলের

আজ ১০ রমজান আমার দাদার ৪১তম মৃত্যু বার্ষিকী।

মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি  মরহুম মো:আরফান আলী (চেয়ারম্যান)৪১ তম মৃত্যু বার্ষিকী এই  রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের জন্ম ১৯০২সালে ঘিলাছড়ার যুধিষ্ঠিরপুর  গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে,উনার বাবার নাম আহমদ উল্লাহ মাতার নাম তৈমুছা বিবি।

মরহুম আরফান আলী ছোট বেলা থেকেই খুব মেধাবী ছিলেন আর ছিলেন খুব বিচক্ষণ। উনি উনার শৈশবের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন উনার নানার বাড়িতে

উনি ভাদেশ্বর কোন এক প্রতিষ্ঠান থেকে এন্ট্রান্স পাস করেন ( প্রতিষ্ঠান এর নাম জানা সম্ভব হয় নি) । এর পরে তিনি কর্ম জীবনে প্রথমে কলকাতায় জাহাজ কোম্পানিতে দীর্ঘ দিন চাকুরী করেন এবং রাজনীতির সাথে নিজেকে জড়িত রাখেন। তখন প্রথমে মুসলিম লীগ এবং পরে আওয়ামী মুসলিম লীগ করেন। এর পরে যখন আওয়ামীলীগ প্রতিষ্ঠা হয় তখন তিনি জাতির জনকের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে উনার নেতাকর্মী দের নিয়ে আওয়ামীলীগ এ যোগদান করেন এবং ফেঞ্চুগঞ্জ এ আওয়ামীলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। উনি তখন প্রতিষ্টা আওয়ামীলীগ কমিটির সভাপতি এবং উনার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহচর উনার অনুজ মরহুম আব্দুল লতিফ সাহেব সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

তখনকার সময় উনার ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন মরহুম আব্দুল লতিফ,মরহুম মইজউদ্দিন আহমদ, স্বর্গীয় ডা: আর কে দাস,মরহুম ডা:দেওয়ান নুরুল হোসেন চঞ্চল, মরহুম হাজি তজম্মুল আলী(ঘিলাছড়া), মরহুম তজমুল আলী চেয়ারম্যান (পালবাড়ি), মরহুম আব্দুল মছব্বির মগই মিয়া,মরহুম মো:আব্দুল আলী, মরহুম বশির আলী, মরহুম মো:ফিরু মিয়া, মরহুম আব্দার মিয়া, শাহ আজিজ আহমদ (মৌলভীবাজার),  শাহ আজিজুর রহমান (সাবেক সংসদ সদস্য) ,এডভোকেট লুতফুর রহমান (চেয়ারম্যান সিলেট জেলা পরিষদ) সহ নাম না জানা অনেকে।

১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা ছিল অবিস্মরনীয়! ১৯৬৯ সালে ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর কারারুদ্ধ হওয়ার প্রতিবাদে গণ-আন্দোলনে তাঁর অগ্রণী ভূমিকা ছিল অবিস্মরনীয়! ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বচনে তিনি বাঙ্গালী জাতির গর্ব, বাঙ্গালী জাতির প্রতিনিধিত্বকারী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা কর্নেল এম,এ, জি ওসমানির (পরবর্তীকালে জেনারেল পদে উন্নীত) জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে প্রধান পরামর্শক, পরিচালক ও প্রধান সমন্বয়কের গুরুদায়িত্ব অত্যন্ত সফলতার সাথেই পালন করেন!

মরহুম আরফান আলী চেয়ারম্যান সিলেট জেলা আওয়ামীলীগ এর প্রতিষ্ঠাকালীন সিনিয়র সহ সভাপতি ছিলেন।উনি ছিলেন একজন সৎ সাহসী এবং নির্লোভ , নিরহংকারী ব্যক্তি,উনি ছিলেন অত্যন্ত স্পষ্টবাদী, ন্যায় বিচারক।

উনি উনার সময়ে অনেক বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসা ঘড়ে তুলেন, অনেক রাস্তাঘাট উনার আমলেই তৈরি হয় কিন্তু একটিতেও উনার নাম ফলক নেই, আওয়ামী সরকারের আমলেও এই মহান নেতার নামে একটিও রাস্তার নাম করন করা হয় নি। জানা যায়, জাতির জনক যখন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী ছিলেন তখন মরহুম আরফান আলী সাহেবের নেতৃত্বে ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে চাঁদা কালেকশন হত মামলার খরচের জন্য।

স্বাধীনতার পূর্বেকার সময় তিনি গোবিনপুর এ বর্ডার আনসারের কমান্ডার এর দায়িত্ব পালন করেন এবং পরে ফেঞ্চুগঞ্জ এর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। উনি ছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংঘটক, মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি দলিয় নেতাকর্মীর নির্দেশে ভারতে অবস্থান করেন এবং ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ এবং গোলাপগঞ্জ থানার কো অর্ডিনেটারের দায়িত্ব পালন করেন, ট্রেনিং শেষে উক্ত এলাকা গুলার মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচয় পত্র দান করতেন মরহুম আরফান আলী সাহেব। এই সময় উনার সাথে ছিলেন উনার ছেলে পাকিস্তান আর্মী থেকে যুদ্ধের সময় পালিয়ে আসা ফখরুল ইসলাম ফখন , তখন উনার সাথে ছিলেন দলিয় অনেক নেতাকর্মী যাদের নাম জানা যায় নি শুধু এডভোকেট লুতফুর রহমান ব্যতীত।

এর পরে যুদ্ধের পরে উনি আবার দেশে ফিরে আসেন এবং রাজনীতিতে সক্রিয় হোন,এবং উনার একাকার উন্নয়নে কাজ শুরু করেন,উনার মাধ্যমেই প্রতিষ্টা হয় ঘিলাছড়া দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, উনি ঘিলাছড়া উচ্চ বিদ্যালয় এর ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছিলেন,ছিলেন ঘিলাছড়া হাফিজিয়া মাদ্রাসার সভাপতি। উনি সিলেট জেলা জুরিবোর্ড এর সম্মানিত সদস্য ছিলেন।জাতির জনক যখন কাসিম আলী মাঠে আসেন তখন মরহুম আরফান আলী যাতায়াতের দুরবস্থার কারণে আসতে দেরি হলে জাতির জনক মঞ্চে উঠেন নি,তখন জাতির জনককে ঘিরে রেখে নিরাপত্তা দিয়েছিলেন মরহুম বশির আলী। জাতির  জনকের নৃশংস হত্যার পরে উনি অনেকটা ভেঙ্গে পড়েন। উনি বাকশক্তি অনেক টা হারিয়ে ফেলেন। সারাদেশব্যপী ১৪৪ দ্বারা জারি থাকা অবস্থায় তিনি সারকারখানা বাজারে উনার সহযোগীদের নিয়ে তিনি জাতির জনকের শিরনি করেন। তখন উনার সাথে ছিলেন মরহুম আব্দুল লতিফ সাহেব, মরহুম ডা: দেওয়ান নুরুল হোসেন চঞ্চল, মরহুম তজমুল আলী,ডা: আর কে দাস।  এই মহান নেতা উনার ৮ ছেলে ৩ মেয়ে নাতি, নাতনি এবং অসংখ্য শুভাকাঙ্ক্ষী রেখে পরপারে পাড়ি জমান,আমার দাদার স্মৃতি বুকে ধারন করে তার দেখানো পথে হাটার চেস্টা করি, আমার দাদা ছিলেন আমাদের পরিবারের রাজনীতি ও আদর্শের 

শিক্ষক,আপনারা  আমার দাদার জন্য দোয়া করবেন মহান রাব্বুল আলামিন যেন দাদাকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন, আমিন।

মরহুম জননেতা আরফান আলী চেয়ারম্যান সাহেবের নামে একটি রাস্তার নামকরণ করার জন্য মাননীয় সংসদ সদস্য জননেতা Habibur Rahman Habib MP মহোদয়ের নিকট আকুল আবেদন জানাচ্ছি।


লেখক: নাজিমুল ইসলাম নীরব, রাজনীতিবিদ



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাউল সাধক চান মিয়া এবং আমার কিছু উপলব্ধি

"রজনী হইসনা অবসান  আজ নিশিতে আসতে পারেবন্ধু কালাচাঁন।। কত নিশি পোহাইলোমনের আশা মনে রইলো রে কেন বন্ধু আসিলোনা জুড়ায়না পরান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। বাসর সাজাই আসার আশেআসবে বন্ধু নিশি শেষে দারূন পিরিতের বিষে ধরিল উজান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। মেঘে ঢাকা আঁধার রাতে কেমনে থাকি একা ঘরে সাধক চাঁনমিয়া কয় কানতে কানতে হইলাম পেরেশান আজ নিশিতে আসতে বন্দু কালাচাঁন।"    গভীর নিশিতে ধ্যান মগ্ন হয়ে কালাচাঁনের অপেক্ষা করছেন সাধক।  সাধক চান মিয়ার শিষ্য বাউল সিরাজউদ্দিনের মতে এটি একটি রাই বিচ্ছেদ। কৃষ্ণের অপেক্ষায় রাধা নিশি বা রাতকে অনুরোধ করছেন 'রাত' যেন না পোহায়  কারণ তার কালা চান যে কোন সময় আসতে পারে। শব্দগুচ্ছ গুলো থেকে সহজেই উপলব্ধি হয় সাধক নিজ দেহকে রাধা আর আত্মাকে কৃষ্ণের সাথে তুলনা করেছেন। দেহ আত্মার মিলন ঘটানোই ছিল সাধকের সাধনা।        বাউল সাধক চান মিয়া উপরোক্ত গানটি রচনা করেছেন। নেত্রকোনা জেলার খাটপুরা গ্রামে ১৩২৫ বঙ্গাব্দে সাধক চান মিয়ার জন্ম। পুরো নাম চান্দেজ্জামান আকন্দ হলেও বা...

বাউল, বাউলতত্ব এবং কিছু কথা

একজন ভদ্র বন্ধু বরের সাথে বাউল সম্প্রদায় নিয়ে বেশ তর্ক হলো রাতে। তর্কের সূত্রপাত ছিল বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী। ভাবলাম "বাউলতত্ত্ব"র আলোকে বাউলরা ভাববাদী নাকি বস্তুবাদী তা নিয়ে যৌক্তিক আলোচনা আবশ্যম্ভাবী। কয়েকটি ধারাবাহিক পর্ব লিখে নিজের মনোভাব বোঝানোর চেষ্টা করব।  শুরুতেই শক্তিনাথ ঝাঁ এর বস্তুবাদী বাউল বই থেকে কিছু কথা লিখতে চাই; বাস্তব জগত ও জীবনকে এরা কোন আনুমানিক যুক্তি বা আলৌকিক যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে নারাজ। জৈব রাসায়নিক ব্যাখায় এরা নারীর রজঃ এবং পুরুষের বিজে জীবন ও জগত সৃষ্টিকে ব্যাখা করে এবং চার ভূতকে প্রাকৃতিক সৃষ্টি মনে করে। এভাবে মানুষে, প্রকৃতিতে তৈরি করে প্রাণ, প্রাণী। অনুমান ভিত্তিক স্বর্গ, নরক, পরলোক, পুনর্জন্মাদি প্রত্যক্ষ প্রমাণাভাবে বাউল আগ্রাহ্য করে। মানুষ ব্যাতিরিক্ত ঈশ্বরও এরা মানে না। সৃষ্টির নিয়মকে জেনে যিনি নিজেকে পরিচালনা করতে শিখেছেন- তিনিই সাঁই। সুস্থ নিরোগ দীর্ঘজীবন এবং আনন্দকে অনুভব করার বাউল সাধনা এক আনন্দমার্গ।।  বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী এর অনেক সূক্ষ বিশ্লেষণ শক্তিনাথের বস্তুবাদী বাউল বইটির মধ্যে আলকপাত করা হয়েছে। সাধারণ সমাজে এ ধা...

ভাইবে রাধারমণ

তখন কলেজের ছাত্র। বাংলা বিভাগের প্রভাষক শ্রদ্ধেয় রেজা স্যারের সাথে খুবই ভালো সম্পর্ক। কলেজের প্রথম দিনই স্যারকে খুব পছন্দ। তারপর স্যারের সাথে গল্প, সমাজ, রাজনীতি, সাহিত্য নিয়ে আলোচনা। রীতিমত ফিজিক্স, বায়োলোজি ক্লাস ফাঁকি দিলেও বাংলা ক্লাস কখনই ফাঁকি দিতাম না। খুব উপভোগ করতাম স্যারের ক্লাস। হোস্টেল সুপার হিসেবে স্যার ( ওহী আলম রেজা) আমাদের সাথেই থাকতেন। আমরা আসার প্রায় নয় মাস পর স্যার এলেন সুপার হিসেবে। প্রতিদিন রাতে খাবার পরেই স্যারের রুমে গিয়ে আড্ডা হত, গানের আসর হত। স্যারের পিসিতে প্রায়ই গান শুনতাম আমরা। একদিন হঠাৎ করেই একটি গান স্যার প্লে করলেন 'আমার বন্ধু দয়াময় তোমারে দেখিবার মনে লয়। তোমারে না দেখলে রাধার জীবন কেমনে রয় বন্ধুরে।। কদম ডালে বইসারে বন্ধু ভাঙ্গ কদম্বের আগা। শিশুকালে প্রেম শিখাইয়া যৌবনকালে দাগা রে।। তমাল ডালে বইসারে বন্ধু বাজাও রঙের বাশি। সুর শুনিয়া রাধার মন হইলো যে উদাসি রে।। ভাইবে রাধা রমন বলে মনেতে ভাবিয়া। নিভা ছিল মনের আগুন কে দিলাই জ্বালাইয়া রে।' গানের কথাগুলো বেশ ভালো লেগে গেলো। পুর গানটি শুনে বুঝলাম গানটি সাধক রাধারম...