সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

শিক্ষকদের ‘সুপারম্যান’ হতে হবে

হারুন স্যার। আলোকিত মানুষ-স্বপ্নদ্রষ্টা। সিলেট অঞ্চলে এক পরিচিত নাম। শিক্ষকের শিক্ষক তিনি। এ অঞ্চরে প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানে তাঁর ছাত্ররা স্বমহিমায় ভাস্বর। প্রফেসর হারুনুর রশীদ মূলত শিক্ষক।
সিলেটের বিভিন্ন কলেজে প্রায় তিন যুগ পড়িয়েছেন। সাহিত্যের বিভিন্ন অনুসঙ্গ তাঁর চেনা। তিনি মনে করেন ক্লাসে পড়ানোটাই তাঁর জীবনের শ্রেষ্ট সময়। ২০১৬ সালের মার্চে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সিলেট অঞ্চলের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
জাতীয়করণের বিশাল কর্মযজ্ঞ তিনি সম্পন্ন করছেন। আর চার মাস পরে তিনি অবসরে যাচ্ছেন। অন্যান্য বিভাগে যেখানে শিক্ষকদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়েছে সিলেট অঞ্চলে প্রফেসর হারুনুর রশীদ ছিলেন শিক্ষকবান্ধব। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তদারকি করেছেন। অনিয়ম ধরে ভুল শোধরে দিচ্ছেন।
শিক্ষাক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া এলাকায় বিশেষ নজর দিয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন। ১ ফেবব্রুয়ারি শনিবার তিনি এসেছিলেন বালাগঞ্জ সরকারি কলেজ পরিদর্শনে। এ সময় আলাপচারিতায় তিনি জন্ম, শৈশব, পড়াশোনা, শিক্ষক হিসেবে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও সবশেষে প্রশাসনে কাজ করার অভিজ্ঞতার কথা জানান।
প্রফেসর হারুনুর রশীদ ১৯৬১ সালে মৌলভীবাজার সদর উপজেলাার আথানগিরি গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তিনি গ্রামের স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। ১৯৭৬ সালে দিনারপুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ১৯৭৯ সালে মৌলভীবাজার কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ১৯৮২ সালে এমসি কলেজ থেকে ইংরেজি বিষয়ে ¯স্নাতক ও ১৯৮৩ সালে চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৮৬ সালে চুনারুঘাট কলেজ থেকে অধ্যাপনা শুরু করেন। ১৯৯৩ সালে সিলেট সরকারি কলেজ, ২০০৫ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত এমসি কলেজে অধ্যাপনা করেন। ২০১২-২০১৩ সালে সুনামগঞ্জ সরকোরি কলেজে এবং ২০১৩ সালের জুলাই মাসে আবার এমসি কলেজে ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালের ৬ মার্চ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে সিলেট অঞ্চলের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।
দীর্ঘ শিক্ষক জীবনের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ক্লাসে পড়ানোর সময়টাই আমার জীবনের সেরা সময়। কখনো আমার ছাত্রদের ঠকানোর চিন্তা করিনি, ফাঁকি দেইনি। অবসর যাপনের পাশাপাশি সুযোগ পেলে তিনি আবারো শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করার আগ্রহের কথা জানান।
তিনি বলেন, শিক্ষকতা মহান পেশা, শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর। এইটা অনেকের কাছে ফাঁকা বুলি মনে হলেও- এটাই সত্য। মহান পেশার মর্যাদা ধরে রাখতে হবে। নৈতিকতার জায়গাটা ঠিক রাখতে হবে। নীতি আদর্শ ধরে রাখতে খুব কষ্ট করতে হয় না। একটু লোভ সংবরণ করতে পারলেই সম্ভব। আমাদের উদ্দেশ্য কি ? আলো ছড়ানো, সমাজকে আলোকিত করা। মূলত আমরা সবাই সত্যিকার অর্থে সমাজের জন্য কিছু করতে চাই।
আমাদের সময়ের শিক্ষকদের আর্থিক অবস্থা আরো খারাপ ছিল। খালি পায়ে, লুঙ্গি পড়ে আসতেন। একটি জামা দিয়ে সপ্তাহ পার করতেন। খেয়ে না খেয়ে থাকতেন। সারাদিন পড়িয়ে হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরতেন। তারপরও তারা নীতিবান ছিলেন। অন্যায়ের সাথে কখনো আপোস করেনন্ ি।
আমার শিক্ষকদের এখনো আমি খোঁজ নেই, তারাও আমার খোঁজ নেন। একজন আছেন কয়েক দিন পর পর আমার অফিসে চলে আসেন। না আসলে আমি খোঁজ নেই।
আমাদের শিক্ষকরা আমাদের তৈরি করেছেন। আমরা কি আমাদের ছাত্রদের তৈরি করতে পারছি ?। শিক্ষকদের ‘সুপারম্যান’ হতে হবে। ছাত্ররা শিক্ষককে আদর্শ মানবে। যে আদর্শ তাকে শীর্ষ থেকে শীর্ষে নিয়ে যাবে। মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতিতে শিক্ষার একটা বিরাট অবদান।
জজ বার্নার্ড শ’র ‘ম্যান এন্ড সুপারম্যান’ নাটকের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে অতিক্রম করার চেষ্টা করছে। এটাই চিরন্তন। আমরা চাই আমাদের সন্তানরা আরও মেধাবী হোক, আরও উন্নত জীবন যাপন করুক। তারা যদি কম মেধাবী হয় তাহলে দেশের উন্নয়ন থেমে যাবে, আমাদের মত মেধাবী হলে দেশ স্থিতিশীল থাকবে আর আমাদের চেয়ে বেশি মেধাবী করতে পারলে আর কিছু লাগবে না। দেশ এমনিতেই এগিয়ে যাবেক।
আমরা একটা প্রতিযোগিতামূলক সময়ে বাস করছি। এ প্রজন্ম যাতে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যেতে পারে তার জন্য সবাইকে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। 

লিখেছেন- অহী আলম রেজা, সাংবাদিক 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাউল সাধক চান মিয়া এবং আমার কিছু উপলব্ধি

"রজনী হইসনা অবসান  আজ নিশিতে আসতে পারেবন্ধু কালাচাঁন।। কত নিশি পোহাইলোমনের আশা মনে রইলো রে কেন বন্ধু আসিলোনা জুড়ায়না পরান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। বাসর সাজাই আসার আশেআসবে বন্ধু নিশি শেষে দারূন পিরিতের বিষে ধরিল উজান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। মেঘে ঢাকা আঁধার রাতে কেমনে থাকি একা ঘরে সাধক চাঁনমিয়া কয় কানতে কানতে হইলাম পেরেশান আজ নিশিতে আসতে বন্দু কালাচাঁন।"    গভীর নিশিতে ধ্যান মগ্ন হয়ে কালাচাঁনের অপেক্ষা করছেন সাধক।  সাধক চান মিয়ার শিষ্য বাউল সিরাজউদ্দিনের মতে এটি একটি রাই বিচ্ছেদ। কৃষ্ণের অপেক্ষায় রাধা নিশি বা রাতকে অনুরোধ করছেন 'রাত' যেন না পোহায়  কারণ তার কালা চান যে কোন সময় আসতে পারে। শব্দগুচ্ছ গুলো থেকে সহজেই উপলব্ধি হয় সাধক নিজ দেহকে রাধা আর আত্মাকে কৃষ্ণের সাথে তুলনা করেছেন। দেহ আত্মার মিলন ঘটানোই ছিল সাধকের সাধনা।        বাউল সাধক চান মিয়া উপরোক্ত গানটি রচনা করেছেন। নেত্রকোনা জেলার খাটপুরা গ্রামে ১৩২৫ বঙ্গাব্দে সাধক চান মিয়ার জন্ম। পুরো নাম চান্দেজ্জামান আকন্দ হলেও বা...

বাউল, বাউলতত্ব এবং কিছু কথা

একজন ভদ্র বন্ধু বরের সাথে বাউল সম্প্রদায় নিয়ে বেশ তর্ক হলো রাতে। তর্কের সূত্রপাত ছিল বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী। ভাবলাম "বাউলতত্ত্ব"র আলোকে বাউলরা ভাববাদী নাকি বস্তুবাদী তা নিয়ে যৌক্তিক আলোচনা আবশ্যম্ভাবী। কয়েকটি ধারাবাহিক পর্ব লিখে নিজের মনোভাব বোঝানোর চেষ্টা করব।  শুরুতেই শক্তিনাথ ঝাঁ এর বস্তুবাদী বাউল বই থেকে কিছু কথা লিখতে চাই; বাস্তব জগত ও জীবনকে এরা কোন আনুমানিক যুক্তি বা আলৌকিক যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে নারাজ। জৈব রাসায়নিক ব্যাখায় এরা নারীর রজঃ এবং পুরুষের বিজে জীবন ও জগত সৃষ্টিকে ব্যাখা করে এবং চার ভূতকে প্রাকৃতিক সৃষ্টি মনে করে। এভাবে মানুষে, প্রকৃতিতে তৈরি করে প্রাণ, প্রাণী। অনুমান ভিত্তিক স্বর্গ, নরক, পরলোক, পুনর্জন্মাদি প্রত্যক্ষ প্রমাণাভাবে বাউল আগ্রাহ্য করে। মানুষ ব্যাতিরিক্ত ঈশ্বরও এরা মানে না। সৃষ্টির নিয়মকে জেনে যিনি নিজেকে পরিচালনা করতে শিখেছেন- তিনিই সাঁই। সুস্থ নিরোগ দীর্ঘজীবন এবং আনন্দকে অনুভব করার বাউল সাধনা এক আনন্দমার্গ।।  বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী এর অনেক সূক্ষ বিশ্লেষণ শক্তিনাথের বস্তুবাদী বাউল বইটির মধ্যে আলকপাত করা হয়েছে। সাধারণ সমাজে এ ধা...

ভাইবে রাধারমণ

তখন কলেজের ছাত্র। বাংলা বিভাগের প্রভাষক শ্রদ্ধেয় রেজা স্যারের সাথে খুবই ভালো সম্পর্ক। কলেজের প্রথম দিনই স্যারকে খুব পছন্দ। তারপর স্যারের সাথে গল্প, সমাজ, রাজনীতি, সাহিত্য নিয়ে আলোচনা। রীতিমত ফিজিক্স, বায়োলোজি ক্লাস ফাঁকি দিলেও বাংলা ক্লাস কখনই ফাঁকি দিতাম না। খুব উপভোগ করতাম স্যারের ক্লাস। হোস্টেল সুপার হিসেবে স্যার ( ওহী আলম রেজা) আমাদের সাথেই থাকতেন। আমরা আসার প্রায় নয় মাস পর স্যার এলেন সুপার হিসেবে। প্রতিদিন রাতে খাবার পরেই স্যারের রুমে গিয়ে আড্ডা হত, গানের আসর হত। স্যারের পিসিতে প্রায়ই গান শুনতাম আমরা। একদিন হঠাৎ করেই একটি গান স্যার প্লে করলেন 'আমার বন্ধু দয়াময় তোমারে দেখিবার মনে লয়। তোমারে না দেখলে রাধার জীবন কেমনে রয় বন্ধুরে।। কদম ডালে বইসারে বন্ধু ভাঙ্গ কদম্বের আগা। শিশুকালে প্রেম শিখাইয়া যৌবনকালে দাগা রে।। তমাল ডালে বইসারে বন্ধু বাজাও রঙের বাশি। সুর শুনিয়া রাধার মন হইলো যে উদাসি রে।। ভাইবে রাধা রমন বলে মনেতে ভাবিয়া। নিভা ছিল মনের আগুন কে দিলাই জ্বালাইয়া রে।' গানের কথাগুলো বেশ ভালো লেগে গেলো। পুর গানটি শুনে বুঝলাম গানটি সাধক রাধারম...