মন ভালো নেই। চুপচাপ বসে আছি। ঘরের কোণায় পড়ে থাকা পুরনো স্পিকারে একের পর এক গান বেজে চলছে। অন্ধকার ঘরে বাহির থেকে এলিয়ে পড়া নীলাভ আলোগুলো ছড়িয়ে আছে রুমের মেঝেতে।, বিছানার আশেপাশে। বন্ধুর কলে হঠাৎ ঘোর কাটলো। এক মিনিট কয়েক সেকেন্ড কথা বলার পর কেটে দিতেই আবার আপনা আপনি গান প্লে হলো।
এই পৃথিবী যেমনি আছে তেমনি ঠিক রবে
সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে
সেই নগত তলব তাগিত পত্র নেমে আসবে যবে
সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে ।।
হোক না কেন যত বড় রাজা-জমিদার
পাকা-বাড়ি ঝুঁড়ি-গাড়ি ঘড়ি-ট্রেনজিষ্টার
তখন থাকবেনা আর কোন অধিকার বিষয়-বৈভয় ভবে ।।
চন্দ্র-সূর্য গ্রহ-তারা আকাশ-বাতাস জল
যেমন আছে তেমনি সবি রইবে অবিকল
মাত্র আমি আর রইব না কেবল জনপূর্ণ ভবে ।।
শব্দ-স্পর্শ রূপ-রস গন্ধ বন্ধ হলে যেন
এই পৃথিবীর অস্তিত্ববোধ রইবেনা আর হেন
পাগল বিজয় বলে সেই দিন যেন এসে পরবে কবে।।
বেশ ভালো লাগলো কথাগুলো। নির্মম হলেও স্বাভাবিক সত্য শব্দঝঙ্কার গুলো। জন্মিলেই চলে যেতে হবে। হারিয়ে যেতে হবে অসীম অন্ধকারে। জীবন আমাদের প্রবাহমান। কোথাও উত্থান আবার কোথাও বা পতন। এ উত্থান পতনের মধ্য দিয়েই আমাদের এগুতে হয় অন্ধকারের দিকে, অন্তিম শয্যায় শয্যাশায়ী হওয়ার দিকে। সেদিন বুঝব না কোন স্পর্শ, দেখব না কোন রূপ,পাব না কোন রস, শুনব না কোন শব্দ, নিতে পারব না কোন সুভাস বা গন্ধ। আর এই আসা যাওয়ার কথা গুলো, চির সত্য কথা গুলোকে মালায় বেঁধে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন যারা, তাঁদের একজনের নাম বিজয় সরকার।
বাউল বিজয় সরকার নামটি শুনলেই আজকের প্রজন্ম যদি বলে উঠে ইনি আবার কে? তাহলে অবাক হবার কিছুই নেই। আজ অনেকেই জানে না এই মহাত্মার নাম। এমনকি স্কুলের গন্ডী পাড়ি দেবার আগে আমি নিজেও জানতাম না এই পাগল বাউলের নাম। অথচ বাউল গানের ভক্ত সেই ছোট বেলা থেকেই। কবিয়াল, গীতিকার, সুরকার, শিল্পী বাউল বিজয় সরকার আধ্যাত্মিক, মরমী, বিচ্ছেদ, শোকগীতি, বাউল, শ্রী কৃষ্ণ, ইসলামী, কীর্তন, ধর্ম ভক্তি, দেশের গান সহ অসংখ্য গানের স্রষ্টা। প্রায় ২০০০ এর মতন গানের স্রষ্টা বিজয় সরকার ১৯০৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি (মতান্তরে ২০ ফেব্রুয়ারি) বাবা নব কৃষ্ণ বৈরাগী ও মাতা হিমালয়া বৈরাগীর অভাব অনটনের সংসারের বিধু হয়ে নড়াইলের সদর উপজেলার ডুমুদি নামক এক ছায়া ঘেরা সুনিবিড় শান্তির নীড় নামক স্থানে তাঁর আগমন হয়। তাঁর আসল নাম বিজয়কৃষ্ণ বৈরাগী। তাদের পূর্বপুরুষ বৈষ্ণব-গুরু নাটু বৈরাগী ও উদ্ধব বৈরাগী। জন্মনেওয়া পদবী বৈরাগী থেকে তিনি এক সময় হয়ে যান সরকার। নমশূদ্র সম্প্রদায়ের নবকৃষ্ণের নয়টি সন্তানের মধ্যে পাগল বিজয় সর্বকনিষ্ঠ। তিঁনি তার ভক্ত ও স্থানীয়দের কাছে ‘পাগল বিজয়’ হিসেবেই সমধিক পরিচিত।
ছোট বেলা থেকেই বিচ্ছেদী বিজয় ছিলেন সঙ্গীতের প্রতি অস্বাভাবিক এক অনুরাগী। চাচতো ভাই অভয় চন্দ্রের বাড়িতে হাতে খড়ি নেন তার শিক্ষা জীবনের। এর পর গ্রামের এক পাঠশালায় কিছুদিন শিক্ষা গ্রহণ করেন। এর পর যথাক্রমে হোগলা ডাঙ্গা ইউ পি স্কুল ও বাঁশ গ্রাম এম ই স্কুলে তিনি ভর্তি হন। সেইখানে কিছুদিন শিক্ষা নেবার পর আবারো তিনি ভর্তি হন সিঙ্গাশোল পুর কে পি ইন্সটিটিউটে। ১৯২৬ সালে জট বাঁধা কালো মেঘ ছেয়ে যায় বিজয় সরকারের জীবনের আকাশে, পিতা নব কৃষ্ণ বিদায় নেন পৃথিবী থেকে । পিতার মৃত্যুর পর প্রবল এক আর্থিক সংকটে পড়েন বাউল বিজয়ের পরিবার। অভাবের সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে 'বাউল বিজয়' বিজয় লাভ করতে পারেন নি, বন্ধ হয়ে যায় তার লেখা পড়া। ডাল ভাতের বন্দবস্ত করতে নামতে হয় কর্ম জীবনে। কর্মজীবন শুরু করেন টাবরা প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক হিসাবে। এর পর কিছুদিন গোপালপুর কাচারিতে নায়েবের দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু যার প্রতিটি শিরা উপশিরায় বয়ে চলে সঙ্গীত আর সুরের স্রোত সে কি আর নিজেকে শত অভাবের মাঝেও নির্দিষ্ট কোন গণ্ডিতে আবদ্ধ করে রাখতে পারে? পারে না। চাকরির অবসরে তিনি নানা ধরনের লোকসঙ্গীত চর্চা ও যাত্রাদলে অভিনয় করতেন। শৈশবে তিনি সঙ্গীতের তামিল নিয়েছেন স্থানীয় নেপাল পণ্ডিত এর কাছে। সেই সময় নেপাল পণ্ডিত কিশোর বিজয় সরকার সহ আরও চার জন কে নিয়ে একটি পালা গানের দল গঠন করেন। পর্যায়ক্রমে পালা দলটি দেশের বিভিন্ন স্থানে গান গেয়ে সুনাম সুখ্যাতি অর্জন করতে থাকে। বিজয় এর সঙ্গীত প্রেম আর গানের প্রতি আসক্ততা দেখে কবি পুলিন বিহারী ও পঞ্চানন বিশ্বাস তাকে কাছে টেনে নেন। পাঁচালী গানের দীক্ষা তিনি তাদের কাছ থেকেই গ্রহণ করেন ১৯২৫ সালে গোপালগঞ্জের বিখ্যাত কবিয়াল মনোহর সরকারের কবিগান শুনে তিনি তার প্রতি আকৃষ্ট হন এবং দুর্গাপুরে গুরুগৃহে থেকে সঙ্গীতে তালিম নেন। তিনি মনোহর সরকারের নিকট দুবছর এবং অপর কবিয়াল রাজেন্দ্রনাথ সরকারের নিকট এক বছর কবিগান শেখেন। পরে ১৯২৯ সালে নিজস্ব কবিদল গঠন করে কবিগানের চর্চা করেন এবং অল্প দিনেই কবিয়াল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পান।
এখানে কবিগান বিশ্লেষণ করলে এমনটিই বলা যায়, কবিগান হলও এক ধরনের প্রতিযোগিতামূলক গান। দুটি দলে ভাগ হয়ে গান করা হয় যেখানে দলের দলপতিকে বলে কবিয়াল বা সরকার। কবিয়ালের সঙ্গীদের নাম দোহার। যন্ত্রসঙ্গীতকারীদের মধ্যে ঢুলি মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এ গানের বেশ কয়েকটি অঙ্গ আছে, যেগুলি বিশেষ অনুক্রমে বিন্যস্ত। ডাক, মালসি, সখীসংবাদ, কবি, কবির টপ্পা, পাঁচালি ও ধুয়া এবং জোটের পাল্লা এগুলো হলো কবি গানের বিভিন্ন অঙ্গাদি। কবি হান নিয়ে পরবর্তীতে বিশদ আলোচনা করা যাবে।
১৯৩৫ সালে কলকাতার এ্যালবার্ট হলে কবি গানের এক আসর বসে। ওই আসরে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, পল্লী কবি জসীম উদ্দিন, কবি গোলাম মোস্তফা, কণ্ঠশিল্পী আব্বাস উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। তারা বিজয় সরকারের গান শুনে আবেগ আপ্লুত হোন। এর ঠিক্কয়েক বছর পরেই ১৯৩৭ সালে কলকাতার বিধান স্ট্রিটের রামকৃষ্ণ বাগচী লেনের এক দ্বিতল বাড়িতে কবি গোলাম মোস্তফা, কবি জসীম উদ্দিন ও গায়ক আব্বাস উদ্দিনের সাক্ষাৎ লাভ করেন। বিজয় সরকার ওই স্মরণীয় মুহূর্তে একটি বিচ্ছেদ গান পরিবেশন করে তাদেরকে অভিভূত করেছিলেন। গানটির হল- “সজনী ছুঁসনে আমারে-গৌররূপে নয়ন দিয়ে আমার জাত গিয়েছে,আমাকে স্পর্শ করিসনে যার কুল মানের ডর আছে”। এছাড়া কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথেও তিনি যোগাযোগ রক্ষা করতেন। পল্লী কবি কবি জসীমউদ্দীন ‘স্মৃতির পট’ পুস্তকে বিজয় সরকারের সঙ্গে তাঁর গভীর জানাশোনার কথা উল্লেখ পাওয়া যায়। ১৯৩৭ সালে ১ অক্টোবর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশুতোষ ভবনে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে কবিয়াল বিজয় সরকার কবি গান পরিবেশন করে খ্যাতিমান ছয়জন বরেণ্য পণ্ডিতের যুক্ত সনদ লাভ করেন।
সবার উপরেই মানুষ। মানুষ'ই ঈশ্বর,মানবতাই ধর্ম এটাই বাউলদের বিশ্বাস। জাত,বর্ণ, কুল তথা ধর্মীয় সামাজিক গোঁড়ামির বিরুদ্ধে সুরের মাধ্যমেই লড়ে গেছেন বাউল বিজয়। বর্ণ প্রথা বিরোধী বাউল বিজয়কে নিয়ে ভক্তদের কাছ থেকে একটি ছোট ঘটনা শোনা যায়, একবার বাগেরহাটের এক গ্রামে গান গাইতে গেলে এক পণ্ডিতের বাড়ীতে খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। পণ্ডিতমশাই কাঁসার গ্লাসে না দিয়ে পিতলের গ্লাসে জল দেয়ার কথা বলেন। তাঁর যুক্তি হচ্ছে, কাঁসা মিশ্র ধাতু, আর পিতল মৌলিক ধাতু। মৌলিক ধাতুতে জীবাণু ঢুকলে মাজলে চলে যায়। কিন্তু মিশ্র ধাতুর জীবাণূ দূর করতে হলে সেটা পোড়াতে হয়। বুদ্ধিমান বিজয়ের বুঝতে কষ্ট হয় না যে, আসল রোগ হচ্ছে বর্ণপ্রথা। তিনি প্রতিবাদ করে না খেয়েই উঠে যান। পরে পণ্ডিতমশাই ভুল স্বীকার করলে তবে ফেরেন। বিজয় তখন গেয়ে ওঠেন -‘আবাল্য কুসংস্কার যার জীবনসাহিত্যে,কৌণবৃত্তি ঘোচে না তার সহস্র পাণ্ডিত্যে।’ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে গান বাঁধেন-‘জাতি বলতে কী বুঝলেন পণ্ডিতমশাই,দেখি জগতে এক মানব দুই ভাগে বিভক্ত তাই॥ ব্রাহ্মণ ক্ষৈত্র বৈশ্য শূদ্র, কেহ বৃহৎ কেহ ক্ষুদ্র,আচরণে ইতর ভদ্র গুণ কর্ম অনুযায়ী,কেহ ওঠে বহু উচ্চে, কেহ পড়ে অনেক নীচে,গুণের মাত্র জাতি আছে, গুণীর কোনো জাতি নাই’।
বাউলরা স্বভাবতই প্রথা বিরোধী হোন। প্রচলিত সমাজের বিরুদ্ধে বিজয় সরকার বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন খুবই কৌশলে। তিনি বলেছেন- ‘প্রেম ভক্তি জ্ঞান যে গান গেয়ে জাগে হৃদয়তল। সে গান গেয়েই আমার প্রতিবাদ। সামাজিক অনাচার, জাতিভেদের বিরুদ্ধে আমি সাম্যের গান গাই।’ ধর্মীয় বিভেদ সম্পর্কে বলেছেন, ‘ধর্মে ধর্মে এতো বিভেদ আসলে মানুষেরই তৈরি। আসল জিনিস রেখে নকল নিয়ে মানুষ বেশি মাতামাতি করে বলেই এ অবস্থা।’বিজয় সরকার প্রথম জীবনে ভক্তিবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। এরপর কিছুদিন লোকনাথ ফকিরের ভাবে বিভোর ছিলেন। তারপর তিনি কবিয়াল-গুরু মনোহর সরকারের সঙ্গে মতুয়া সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দি গিয়ে ‘মতুয়া’ ধর্মে বিশ্বাস স্থাপন করেন। এক বিধবাকে নিজের এক ভক্তের সাথে বিয়ে দেওয়ার অপরাধে প্রচলিত সমাজ তাকে এক ঘরে করেও রেখেছিলো। বিজয় সরকার হিন্দুশাস্ত্র, পুরাণ, ভারতীয় দর্শন, ইসলাম-ইহুদী-খৃস্টান ধর্ম সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। এছাড়া ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞান, ছন্দ-অলঙ্কারের ওপরও তিনি পড়াশোনা করেছেন। সব শাস্ত্রের সারবস্তুটি গ্রহণ করতে পেরেছিলেন বলেই তিনি সর্বধর্ম সমন্বয়ের কবি। সব ধর্মীয় মত সম্পর্কেই তিনি উদার ও নিরপেক্ষ ধারণা পোষণ করতেন। শুধু গানের মধ্যেই নয়, তাঁর ব্যক্তিগত আচরণের মধ্যেও প্রকাশ পেয়েছে সব ধর্মের মানুষের প্রতি সমান ভালোবাসা।
বাউল হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি সংসার বিবাগী, উদাসী বা আখরাবাসী ছিলেন না। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের প্রায় তিন হাজার ভক্তবাদী নরনারীর আধ্যাত্মিক গুরু হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। জীবনের শেষদিকে লোকদের দীক্ষা দিয়ে সময় কাটাতেন। তবে দীক্ষার বিনিময়ে তিনি শিষ্য-শিষ্যাদের নিকট থেকে কোনো অর্থ গ্রহণ করতেন না। বিশ শতকের প্রথমার্ধে বাংলাদেশে কবিগানের উৎকর্ষ সাধন ও একে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে বিজয়ের অবদান অসাধারণ। কবিগানের সময় ভাটিয়ালি সুরে রচিত তাঁর ধুয়া গান তাঁকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে দেয়। সারা জীবনে তিনি মূলত দুটো ধারার গান পরিবেশন করেছেন-কবিগান ও রামায়ণ গান। মাঝেমধ্যে জারিয়ালদের সঙ্গে কবি-জারির পাল্লাও করেছেন। বাংলা সংগীত জগতে কবিয়াল বিজয় সরকার কবিগানকে বিশেষরূপে উপস্থাপন করেন। তাঁর কবিগান নিরপেক্ষ নবতর সংগীত হিসেবে শ্রোতাদের প্রাণে এক নব চেতনার উন্মেষ ঘটায়। এছাড়া বিজয়ের নিরপেক্ষ স্বরবৃত্ত ছন্দের অপূর্ব কবিগান সংগীতজগতে রেনেসাঁর সৃষ্টি করে। এ প্রসঙ্গে তাঁর একটি ভবানীবিষয়ক গানের অংশবিশেষ- ‘ওমা ব্রক্ষ্মময়ী তোর ব্রক্ষ্মান্ডে ধর্ম ফলে কর্মকান্ডেপ্রতি ভান্ডে অতি বিষ্ময়েরমানুষ স্বকর্মে করে কসুর, স্বভাবের মাঝে অসুরকর্মে মধুর সাজে নারী-নর’। ’পরে তিনি ভাটিয়ালী সুরের সঙ্গে বাউলসংগীতের অন্তর্ধর্ম মিশিয়ে এক নতুন ধরণের গান আমাদের উপহার দেন যা আমাদের লোকসংগীতের বিশাল বৈচিত্র্যময় আঙ্গিনায় একটি পৃথক ঘরানার সৃষ্টি করেছে। এই গানগুলোকে বিচ্ছেদ ভাটিয়ালী গান বলে ধরে নেওয়া হয়। বিজয়ের গানগুলো শিক্ষিত-অশিক্ষিত সব শ্রেণীর মানুষের হূদয়ষ্পর্শী। তাঁর রচিত গানের সংখ্যা প্রায় পৌনে চারশত। তিনি অসংখ্য রাধাবিচ্ছেদ, কৃষ্ণবিচ্ছেদ, বারাষিয়া, সারি, ধুয়া, অষ্টকগান, পদকীর্তন, ইসলামী গান, ডাকগান, সখি সংবাদ, গোষ্ঠগান রচনা করেছেন।
বাসুদেব গোলকার নামক জনৈক লেখক শ্রী শ্রী পাগল বিজয়ামৃত নামক পুস্তক থেকে জানা যায়- এক জনৈক বাঙ্গালী মুসলিম ভক্তের চোখ অন্ধ হয়ে গেলে বিজয় তাঁর নিজের চোখ দু'টো দান করে তাকে দৃষ্টিদান করেন এবং নিজে চিরকালের জন্যে অন্ধত্ববরণ করেছিলেন।
সবশেষে নিঃসন্দেহেই বলা যায় বাংলা গানের যেই ব্যপকতা সেই বিশদ বাংলা গানের ভাণ্ডার যে কয়েক জন গুণী সমৃদ্ধ করে গেছেন তাদের একজন কবিয়াল বিজয় সরকার। সঙ্গীত জগতের এই দার্শনিক একাশি বছর বয়সে ১৯৮৫ সালের ৪ ডিসেম্বর (বুধবা)র সবাইকে কাঁদিয়ে, রূপ,রস, গন্ধ ভুলে চলে যান না ফেরার দেশে। যাবার সময় চির সত্য এই কথা দুটো আমাদের মাঝেই রেখে যান;
//সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে
এই পৃথিবী যেমনি আছে তেমনি ঠিক রবে//
(তথ্য; বাউল বিজয় সরকারের জীবনী, বাংলা পিডিয়া, বাংলা অনলাইন গ্রন্থাগার, আনন্দবাজার পত্রিকা)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন