সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বিদেশীদের মুখে শোনা বঙ্গবন্ধু'র কথা

আজ খোকার ৯৯ তম জন্মদিন, ১৭ মার্চ। খোকাকে নিয়ে অনেক বিদেশীর মুখ থেকে অনেক কিছু শুনেছি। কিছুটা শেয়ার করলাম। বেশ আগের কথা। সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার জৈন্তা হিল রিসোর্টে এক কানাডা নাগরিকের সাথে পরিচয় হয়েছিল। যখন কথা বলছিলাম উনার সাথে তখন উনি বলছিলেন কিভাবে বাংলাদেশে আসলেন। উনি ইতিহাসের ছাত্র। ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেন। ঘুরে বেড়ান।  তিনি বলেছিলেন, সেই একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা। উনার নাকি খুব প্রিয় একজন মানুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমার এখনো মনে আছে তিনি বলেছিলেন, সিক্স ফিট ম্যান ইজ এন আইরন পলিটিশিয়ান। খুব ভালো লেগেছিলো উনার কথা গুলো। হ্যাঁ, যে খোকার ৯৯ তম জন্মদিনের কথা বলেছিলাম। তিনি আমাদের বঙ্গবন্ধু, আমাদের জাতির জনক, বিশ্বের একজন মহান নেতা। 

ফিলিপাইনের এক বন্ধুর সাথে পরিচয়। টুকটাক কথা হত মাঝে মাঝে। হটাৎ একদিন আমাকে নক দিলো। নকের শুরুতেই জিজ্ঞেস করলো, হ্যালো মিস্টার মুজিব পিপোল, হাও আর ইউ। অবাক আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, শেখ মুজিবের কথা কিভাবে জানলো। বলল আমার সাথে পরিচয় হবার পর নাকি গুগলে বাংলাদেশ নিয়ে অনেক ঘেঁটেছে। সেখানে নাকি সবজায়গায় বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই বঙ্গবন্ধুর নাম দেখে। তাই সে ইন্টারেস্ট নিয়ে উনাকে জেনেছে। যদিও বঙ্গবন্ধু উচ্চারণ তার শুদ্ধ হয় না। 

নেপালে অনেক বন্ধু বান্ধুব আছে। কাঠমান্ডু থাকে, ধাং সিটিতে থাকে, পোখ্রা সিটিতে থাকে। তাদের ভাষায় বঙ্গবন্ধু নাকি একজন বিগ ট্রি ম্যান বা বিশাল বৃক্ষ মানব। তাদেরকে যখন জিজ্ঞেস করি এ কথা তারা কেন ব্লে তখন উঠেই বলে, এই টল ফিগারের মানুষ নাকি সবার থেকে উপরে থাকেন, লুক আপ টাই অনেক বিশাল। 

আমার এলাকা ফেঞ্চুগঞ্জে অনেক চায়নিজ পিপোল আছে। যারা সারকারখানা, এবং তিনটি বিদ্যুৎ পাওয়ার প্লান্টে কাজ করে। একটা ছেলে প্রায়ই আমার বাসায় আসতো। তার রঙ চা, মুড়ি খুব পছন্দ। বাসায় আসত এসব খাবার জন্য, গল্প করত। বাসায় এসেই আমাদের বাসায় থাকা শেখ মুজিবের ছবির দিকে বারবার তাকেই বলত, গ্রেট লিডার বাংলাদেশ। 

কয়েকদিন আগের কথা, ভারতের ত্রিপুরার একজন আন্টির সাথে পরিচয়। মায়ের বয়সী। দিল্লীতে থাকা হোটেলের রিসিপশনে বসে নিকোটিন ফুঁক ছিলাম। উনি এসে পাশের সোফাতে বসাতে ফেলে দিলাম। তাকাচ্ছিলেন বারবার। হলুদ নীল কালারের কোম্বাইন্ড শাড়ি পরা। বেশ স্নিগ্ধ দেখাচ্ছিলো উনাকে। ফোন আসছিল বাংলাদেশ থেকে। বাংলায় কথা শুনে জিজ্ঞেস করলেন কলকাতার না শিলিগুড়ির। বললাম বাংলাদেশের। বাংলাদেশ শুনতে মিষ্টি হাসি। বললেন তোমাকে ত ভারতীদের মত মনে হয় মুখখানা দেখে, কোথায় থাকা হয় বাংলাদেশের। বললাম, সিলেট এ। কথায় কথা বাড়লো। পরিচিত হলাম। বললেন উনার একমাত্র মেয়ে আমার বয়সী। উনার বর অর্থাৎ আংকেলজী টুরিজম সেক্টরে কাজ করেন। গিয়েছেন চট্টগ্রাম, নোয়াখালি এবং কুমিল্লায়। এক পর্যায়ে বললেন, ৭১ এর মানুষকে খুব পছন্দ করেন। বলালাম ৭১ মানুষ মানে কি বোঝালেন। বললেন মুক্তিযোদ্ধাদের কথা বলছেন। আমি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছি উনার দিকে। কথায় কথা বলতে বললেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় নাকি ত্রিপুরায় তাদের জনগণ ছিল সাড়ে তের লাখ কিন্তু কিন্তু বাংলার শরণার্থী ছিল প্রায় ১৬ লাখ। মুখে মৃদু লেগে থাকা এই মায়ের বয়সী মানুষ বলে যাচ্ছিলেন সেই দিনের কিছু স্মৃতি। জানালেন, ৭১ এর সময় নাকি এ পারের (বাংলাদেশের) মানুষ জন তাদের কাছে শরনার্থী ছিলেন না, ছিলেন কিঞ্চিত সময়ে বিপদে পড়া অথিতি নারায়ণ। আমিও একটু কথা বাড়ালাম, বললাম আপনাদের মুখ্য মন্ত্রী মানিক সরকার খুব হোনেস্ট। হেসে দিলেন, বললেন ভারত বর্ষের টাকায় গরিব মুখ্যমন্ত্রী কিন্তু মন মানবতায় বিশাল। পরিবারের কথা জিজ্ঞেস করলেন। বললেন, তুমি মিষ্টি তোমার মা'ও হয়ত মিষ্টি। বাবা মাকে নমস্কার দিও। উঠে যাবার সময় বললেন, স্কুল জীবনে আমরা একটি গান প্রায়শই শুনতাম, এখনো শুনি প্রায়। জানো সেটা কি। বললাম কি'ই। বললেন, শুনো একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি........। ছাত্রী হোস্টেলের গানটা নাকি এখনো কানে বাজে, শুনেন মাঝে মাঝে। 

গত বছরের অর্থাৎ ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরের ২১ তারিখ, ভারতে ছিলাম। একটা টং দোকানে বসে চা খাচ্ছিলাম। পাশে একজন ইন্ডিয়ান সিং বসা। অনেক সময় থেকে ফলো করছেন আমাকে। বারবার চোখ আমার মোবাইলের দিকে। ভাবলাম কি হল! হঠাত ভদ্র লোক জিজ্ঞেস করলেন ' are u politicians?' বোঝলাম, আমার মোবাইলের স্কিনে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি দেখেই এমন বলছেন। হেসে উত্তরে বললাম why? আবার জিজ্ঞেস করলেন 'from Bangladesh? ' হেসে বললাম yes। আমি জিজ্ঞেস করলাম why u r asking me, m I politicians?। উনি বললেন your mobile display contains Sheikhs Pic। বললাম, no I am not politician. But Sheikh lives in my heart। তিনি বললেন, beta He (Sheikh) is ur identity। বললাম ' he is not only my identity, he is my Persistency।
আধো ভাংগা গলায় বলে উঠলেন জ্যায় বাংলা -Jay Bangla। 

আরো এক ঘটনা। দিল্লী থেকে কলকাতা আসছিলাম একই (২০১৭) বছরের সেপ্টেম্বরের শেষে। দুরন্ত এক্সপ্রেসে প্রায় ২৩ ঘন্টার জার্নি। আমার পাশে একজন মায়ের বয়সী নারী ছিলেন। মা'ই বলা যায়। চমৎকার মহিলা, অনেক বেশি গোছালো, শিক্ষক মানুষ। আসতে আসতে উনার সাথে কথা হচ্ছিল। কথার এক পর্যায়ে উনার সাথে রাজনীতির কথায় জড়িয়ে পড়ছিলাম। কথার প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশকে সেকুলার প্লাটফর্ম দাঁড় করিয়ে গেছেন শেখ মুজিব আর যদি তার মেয়ে শেখ হাসিনা যদি চান তবে অগ্রসর হতে পারবেন। আর যদি না চান মুখ থুবড়ে পড়বে বাংলাদেশ। আমার স্পষ্ট মনে আছে তিনি বলেছিলেন, একমাত্র শেখ সাহেব পেরেছিলেন হিন্দু মুসলিম ধর্মীয় বিভেদ ভুলে সবাইকে একসাথে লাইন আপ করতে, না হলে তোমাদের রেসকোর্সে এত মানুষ হতো না। বুঝেছিলাম, তিনি ঐতিহাসিক ৭ মার্চের জনসমাগমের কথা বলছিলেন।

আরো অনেক কাহিনী আছে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কিন্তু মনো পড়ছে না। মনে হলে অবশ্যই শেয়ার করব। বিদেশীদের মুখে আমাদের মহান নেতাকে নিয়ে এসব শুনতে অনেক ভালো লাগে। গর্ব হয়। বঙ্গবন্ধু ত বঙ্গবন্ধুই এই মহান মানুষকে নিয়ে লিখলে ত হাজার হাজার পৃষ্ঠা লেখা যাবে। যাই হোক, আজ জাতির জনক, প্রিয় নেতা, রাজনীতির কবি'র ৯৯ তম জন্মদিন। বিনম্র শ্রদ্ধা রইল এই মহান নেতার প্রতি। 

সবশেষে আরেকজন মহানায়কের উক্তি দিয়ে শেষ করছি। যার নাম ফ্রিদেল ক্যাস্ট্রো। বাংলার পরম বন্ধু বিগত বিংশ শতাব্দীর কিংবদন্তী কিউবার বিপ্লবী নেতা প্রয়াত ফিদেল ক্যাস্ট্রো বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখে বলেছিলেন, ‘আমি হিমালয়কে দেখেনি, তবে শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসে এই মানুষটি ছিলেন হিমালয় সমান। সুতরাং হিমালয় দেখার অভিজ্ঞতা আমি লাভ করেছি।’ ১৯৭৩ সালে আলজেরিয়ায় জোট-নিরপেক্ষ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ক্যাস্ট্রোর সাক্ষাত ঘটে। এই ছিলেন বঙ্গবন্ধু, আমাদের মহান নেতা, প্রবাদ পুরুষ। স্বাধীনতার স্থপতি, স্বাধীন বাংলাদেশের জনক।    

লিখেছেন: মারূফ অমিত, অনলাইন এক্টিভিস্ট



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাউল সাধক চান মিয়া এবং আমার কিছু উপলব্ধি

"রজনী হইসনা অবসান  আজ নিশিতে আসতে পারেবন্ধু কালাচাঁন।। কত নিশি পোহাইলোমনের আশা মনে রইলো রে কেন বন্ধু আসিলোনা জুড়ায়না পরান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। বাসর সাজাই আসার আশেআসবে বন্ধু নিশি শেষে দারূন পিরিতের বিষে ধরিল উজান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। মেঘে ঢাকা আঁধার রাতে কেমনে থাকি একা ঘরে সাধক চাঁনমিয়া কয় কানতে কানতে হইলাম পেরেশান আজ নিশিতে আসতে বন্দু কালাচাঁন।"    গভীর নিশিতে ধ্যান মগ্ন হয়ে কালাচাঁনের অপেক্ষা করছেন সাধক।  সাধক চান মিয়ার শিষ্য বাউল সিরাজউদ্দিনের মতে এটি একটি রাই বিচ্ছেদ। কৃষ্ণের অপেক্ষায় রাধা নিশি বা রাতকে অনুরোধ করছেন 'রাত' যেন না পোহায়  কারণ তার কালা চান যে কোন সময় আসতে পারে। শব্দগুচ্ছ গুলো থেকে সহজেই উপলব্ধি হয় সাধক নিজ দেহকে রাধা আর আত্মাকে কৃষ্ণের সাথে তুলনা করেছেন। দেহ আত্মার মিলন ঘটানোই ছিল সাধকের সাধনা।        বাউল সাধক চান মিয়া উপরোক্ত গানটি রচনা করেছেন। নেত্রকোনা জেলার খাটপুরা গ্রামে ১৩২৫ বঙ্গাব্দে সাধক চান মিয়ার জন্ম। পুরো নাম চান্দেজ্জামান আকন্দ হলেও বা...

বাউল, বাউলতত্ব এবং কিছু কথা

একজন ভদ্র বন্ধু বরের সাথে বাউল সম্প্রদায় নিয়ে বেশ তর্ক হলো রাতে। তর্কের সূত্রপাত ছিল বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী। ভাবলাম "বাউলতত্ত্ব"র আলোকে বাউলরা ভাববাদী নাকি বস্তুবাদী তা নিয়ে যৌক্তিক আলোচনা আবশ্যম্ভাবী। কয়েকটি ধারাবাহিক পর্ব লিখে নিজের মনোভাব বোঝানোর চেষ্টা করব।  শুরুতেই শক্তিনাথ ঝাঁ এর বস্তুবাদী বাউল বই থেকে কিছু কথা লিখতে চাই; বাস্তব জগত ও জীবনকে এরা কোন আনুমানিক যুক্তি বা আলৌকিক যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে নারাজ। জৈব রাসায়নিক ব্যাখায় এরা নারীর রজঃ এবং পুরুষের বিজে জীবন ও জগত সৃষ্টিকে ব্যাখা করে এবং চার ভূতকে প্রাকৃতিক সৃষ্টি মনে করে। এভাবে মানুষে, প্রকৃতিতে তৈরি করে প্রাণ, প্রাণী। অনুমান ভিত্তিক স্বর্গ, নরক, পরলোক, পুনর্জন্মাদি প্রত্যক্ষ প্রমাণাভাবে বাউল আগ্রাহ্য করে। মানুষ ব্যাতিরিক্ত ঈশ্বরও এরা মানে না। সৃষ্টির নিয়মকে জেনে যিনি নিজেকে পরিচালনা করতে শিখেছেন- তিনিই সাঁই। সুস্থ নিরোগ দীর্ঘজীবন এবং আনন্দকে অনুভব করার বাউল সাধনা এক আনন্দমার্গ।।  বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী এর অনেক সূক্ষ বিশ্লেষণ শক্তিনাথের বস্তুবাদী বাউল বইটির মধ্যে আলকপাত করা হয়েছে। সাধারণ সমাজে এ ধা...

ভাইবে রাধারমণ

তখন কলেজের ছাত্র। বাংলা বিভাগের প্রভাষক শ্রদ্ধেয় রেজা স্যারের সাথে খুবই ভালো সম্পর্ক। কলেজের প্রথম দিনই স্যারকে খুব পছন্দ। তারপর স্যারের সাথে গল্প, সমাজ, রাজনীতি, সাহিত্য নিয়ে আলোচনা। রীতিমত ফিজিক্স, বায়োলোজি ক্লাস ফাঁকি দিলেও বাংলা ক্লাস কখনই ফাঁকি দিতাম না। খুব উপভোগ করতাম স্যারের ক্লাস। হোস্টেল সুপার হিসেবে স্যার ( ওহী আলম রেজা) আমাদের সাথেই থাকতেন। আমরা আসার প্রায় নয় মাস পর স্যার এলেন সুপার হিসেবে। প্রতিদিন রাতে খাবার পরেই স্যারের রুমে গিয়ে আড্ডা হত, গানের আসর হত। স্যারের পিসিতে প্রায়ই গান শুনতাম আমরা। একদিন হঠাৎ করেই একটি গান স্যার প্লে করলেন 'আমার বন্ধু দয়াময় তোমারে দেখিবার মনে লয়। তোমারে না দেখলে রাধার জীবন কেমনে রয় বন্ধুরে।। কদম ডালে বইসারে বন্ধু ভাঙ্গ কদম্বের আগা। শিশুকালে প্রেম শিখাইয়া যৌবনকালে দাগা রে।। তমাল ডালে বইসারে বন্ধু বাজাও রঙের বাশি। সুর শুনিয়া রাধার মন হইলো যে উদাসি রে।। ভাইবে রাধা রমন বলে মনেতে ভাবিয়া। নিভা ছিল মনের আগুন কে দিলাই জ্বালাইয়া রে।' গানের কথাগুলো বেশ ভালো লেগে গেলো। পুর গানটি শুনে বুঝলাম গানটি সাধক রাধারম...