সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

যুগে যুগে শোষিত চা শ্রমিক


      

'সকাল বেলা উঠে আমাদের দম ফালানোর সময় নাই। খাইলাম কি না খাইলাম তার দিকে চউক যায় না। আটটার মধ্যে হাজিরা না দিলে বড় বাবু আমাদের ফিরিয়্যা দেয়, সারাদিনের হাজিরার টাকা যায়। তাই দৌড়াইয়া গিয়া হাজিরা দেই আগে।' এভাবেই দিনের শুরুর কথা বলছিলেন সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ট্রান্সকম গ্রুপের মনিপুর চা বাগানের চা শ্রমিক গংগা মনি।চা বাগানের বাজারকোণা লাইনে থাকা ৫০ উর্ধ বয়সী চা শ্রমিক গংগা মনি জানান, তাদের জীবন যাপন খুবই কষ্টের। লেবার লাইনেই আটকে আছে তাদের জীবন। দৈনিক ৮৫ টাকা মজুরি দিয়ে তাদের কিছুই হয় না। খাদ্য বাসস্থান চিকিৎসা কিছু ভালোভাবে হয়না তাদের জীবনে।গংগা মনি বলেন, বড় বাবুরা আরাম করে বাংলোয় ঘুমায়। আর আমরা এই চৌদ্দ হাত ঘরে ১৩ ১৪ জন একসাথে থাকি। পোলার বউ, পোলা একঘরে একসাথে থাকে। আমাদের লাজ লজ্জার মাথা কাটা গেছে। ঝড় তুফানের দিন আইছে। দুইদিন পানিতে ভিজছি। বারিশার দিন ত আছেই সামনে।চা বাগান ঘুরে দেখা যায় চা শ্রমিকদের বেশির ভাগ ঘরই ৮ বাই ১১ ফুট মাপের। যেখানে অন্তত তিনটি প্রজন্ম একসাথে বসবাস করে।অন্য এক চা শ্রমিক শুকদা রাণী জানান, একদিনে ৫ শ টাকার সিগারেট বড় বাবুরাই উড়িয়ে বেড়ান অথচ এক সপ্তাহে তারা ৫ শ টাকা পান যা দিয়ে তাদের কিছুই হয় না।
বাগানের লেবার নং - ১৫৯৭ এই নারী শ্রমিক বলেন, আমরা কাজ করি জঙ্গলে জঙ্গলে, সাপে কাটে, জোঁকে কাটে কিন্তু আমাদের দেখার কেউ নাই সাহেব। এক দাওয়াই খানা আছে, এই আছে আর কি! কোন চিকিৎসাই পাইনা। লেবার লাইনেই আমাদের জীবন। আমাদের বাচ্চা কাচ্চা হইতে কি কষ্ট হয় তা আমরাই জানি।হাসপাতালের ডাক্তারের কথা জানতে চাইলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'এক ডাক্তার আছে, মাঝে মাঝে দেখি হে বড় বাবুর গাড়িও চালায়। সাদা এক গোল্লা ছাড়া আর কিছুই দেয় না হাসপাতালে।'চা শ্রমিকদের সাথে কথা বলার সময় জানা গেল, মনিপুর চা বাগানে চা শ্রমিকদের জন্য স্বাস্থ্য সেবার জন্য একটি হাস্পাতাল আছে কিন্তু সেখানে নেই পর্যাপ্ত ডাক্তার এবং নার্স। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা যন্ত্রপাতি না থাকার কারণে জরুরী সময়ে খুবই দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাদের। চা শ্রমিকরা জানান, বাগান কোম্পানী একটি গাড়িও দেয়নি তাদেরকে। বিগত দিনগুলোতে সঠিক সময়ে হাসপাতালে না নেওয়াতে দুজন মানুষ মারাও গেছেন।











২০১৭ সালের পহেলা মে আমাদের মনিপুর চা বাগানের শ্রমিকদের সাথে আলাপচারিতায় তারা জানাচ্ছিলেন এসব দুর্বিষহ জীবনের কথা।
আজ মে ডে। আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস অথবা মে' ডে। সকাল বেলা উঠেই বললাম মা চা দাও। কোন মতে ফ্রেশ হয়ে চায়ের কাপে চুমুক। গেল আমার কথা। ব্যাচেলরদের সকাল টং দোকানের আর ডুয়েটদের বৌয়ের হাতের করা এই চা দিয়েই শুরু। মনে হচ্ছে সাহিত্য, তবে তা নয়। বললাম দিনের শুরুর কথা। মে ডে শুরু হয়ে গেল, নেতারা পারফিউম মেরে বের হয়ে গেলেন চা কাহিনী শেষ করে! আমি ভালো না তাই আমার কথা দিয়েই শুরু করলাম। তারপরেও একটু ভাবার চেষ্টায়।
আসি এবার চা পাতার কারিগর চা শ্রমিকদের কথা নিয়ে, করুণ জীবন যাদের। সেই শৈশব থেকেই চোখের সামনে এদের দেখে আসছি একি ধরনের জীবনযাত্রা। কোন পরিবর্তন নেই। চা গাছ ছেটে ছেটে ২৬ ইঞ্চির বেশি বাড়তে দেয় হয় না। তেমনি তাদের জীবনো ২৬ ইঞ্চির ভেতরেই। সকালে লবণ দিয়ে এক মগ চা আর সাথে দুমুঠো চাল ভাজা খেয়ে বাগানে যেতে হয়, তার উৎপাদিত চা ও দুধ চিনি দিয়ে খাওয়ার সামর্থও নেই তাদের। সারা দিন এক পায়ে দাড়িয়ে, মাইলের পর মাইল হেটে কঠোর পরিশ্রম করে পাতা তোলেন, ২৩ কেজি পাতা তুললেই কেবল দিনের নিরিখ পূরণ হয়, হাজিরা হিসেবে গণ্য হয়। এতেই শেষ নয় গাছ ছাটার কালে অন্তত ২৫০টা গাছ ছাটতে হয় দিনে। কিটনাশক ছিটালে অন্তত ১ একর জমিতে কীটনাশক ছিটালেই তবে নিরিখ পূরণ। দুপুরে এক ফাকে মরিচ আর চা পাতার চাটনি, সাথে মাঝে মাঝে মুড়ি, চানাচুর। একেকদিন হাত ফুলে যায়, পা ফুলে যায়, ঝোপালো চা গাছের মধ্যে কাজ করতে গিয়ে হাত পা কোমড় ছিলে যায়। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে সাপ বিচ্ছার কামড় খেয়ে কাজ করতে হয়। সন্তানের শিক্ষা মেলে না, চিকিৎসা মেলে না, যে ঘরটিতে প্রজন্মান্তরে তার বসবাস সে ঘরটিও তার হয় না, ঘরটি ধরে রাখতে হলে পরিবারের একজনকে অন্তত চা শ্রমিক হতেই হয়। আর এখনো তাদেরকে সুকৌশলে ডুবিয়ে রাখা ত হচ্ছেই পাহাড়ি মদ আর ভাং এর নেশায়। রাজনীতির মাঠে ত এরা এক দুই তিন সিসিমপুরের কার্টুন। কারর কাছে ভোট ব্যাংক, কারর কাছে শালার মালাউন পাড়া, আর কারর কাছে রাজনীতির আড়ালে ngo ব্যবসা চালানোর একমাত্র মক্কেল।
একটি ঘটনা স্পষ্ট মনে আছে, আমাদের মনিপুর চা বাগানের মন্দির লাইনের সামনে বসে চা খাচ্ছি কথার প্রসঙ্গে চলে আসলো বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অবস্থান নিয়ে। এক চা লেবার বলে উঠলো- দাদা দল ত দুইটাই, আমাদের নৌকা আর ওদের ধানের ছড়া। তারে আরও দুই তিনটা পার্টির নাম শুনাতে সে যেন আষাঢ়ের গল্প শুনলো। বলল এসব কোন দল নাকি!! আবার বললাম আপনাদের নৌকা? তাইলে নৌকার মাঝি ত খোঁজ নেয় না! বলল- দাদা কিছু করার নাই। বাপ দাদায় দিছে আমরাও দেই।

এটা রিয়েলিটি। আমি রাজনীতি মিশাচ্ছি না। বুঝে না বুঝে মানুষগুলো এভাবেই রাজনীতির পুতুল। ভোট এলেই অমুক মৃধা আমার ভাই, ভোট গেলে তুই বেটা কুলির চ্যালা। বারবার চা শ্রমিকদের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেয় জোট মহাজোটের বাইরের দলগুলো। কিন্তু কতখানি কাছে পৌছানো হয় তাদের। কাছ থেকেই ত দেখলাম দেখি। দয়াকরে কেউ কারর দলে পাঁক পেচাবেন না। ছোটবেলা থেকে যা দেখে আসছি তাই বলছি।
বাদ দিলাম রাজনীতি। চা বাগানের নিরীহ মানুশগুলো কতখানি খাদ্য বস্ত্র বাসস্থান চিকিৎসা শিক্ষা পাচ্ছে। কথায় কথায় যারা বলেন এদের জন্য এই করেছি সেই করেছি! কি করেছেন? ৬৯ টাকা ছিল দৈনিক মজুরী, এখন ৮৫ টাকা। সাপ্তাহে ৫ শ টাকা দিয়ে চলে ১২ ১৩ জনের ফ্যামেলি। ১ কাপ চা যেখানে শত টাকার উপরে হয় সেখানে একদিনের খাটনি ৪৫ টাকা। ১ শ বা দেড়শ টাকার সাত কালার চায়ে বিলাসিতা হয়, কিন্তু এই পাতা যারা করেছেন তাদের দুদিনের ঘাম ঝরা রোজগার। রিজার্ভ ব্যাংকে জমিয়ে লাভ !! ৩ কেজি রেশনের আটা, ১ সাপ্তাহ। চলে, কি ভাবেন আপনার বাসার চালের কেজি ৮৮ টাকা চিনিগুড়া। বাহাদুর সাহেব, হিসাব কিভাবে কি!
বাদ দিলাম খাবার, থাকার জায়গা কতখানি কি ?৮ বাই ১১ ফুট। লম্বায় ১৪ হাত পাশে ৭ হাত হবে। আমি আমার কথা বলি এ ঘরে আমি একা থাকলেই ত দম বন্ধ লাগছে , সেখানে ১২/১৩ জন মানুষ একসাথে থাকে। সরকারের জমি লিজ নেয়া বেসরকারী কোম্পানীগুলো কোটি কোটি টাকা ইনকাম করছে অথচ এক গুচ্ছ সুস্থ মানুষদের জন্য মোরগের খাঁচা। আবাসন, ত্রাণ, গনপূর্ত মশাইরা শুধু সূত্র আর লজিকেই বিচরণ তাদের। কোম্পানী গুলোর মালিক পক্ষের কথা ত বাদই দিলাম।
আসেন, চিকিৎসায়। চা বাগানে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে। হাউমাউ করে চিৎকারে একজন প্রসূতি মায়ের কষ্টে চা গাছ গুলো থম্থমে নীরব হয় কিন্তু বুক কেঁপে উঠে না মালিক কোম্পানিগুলোর। বাগানগুলোতে নেই কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। আধুনিক চিকিত্সা পদ্ধতির পরিবর্তে এখনও তারা অতিপ্রাকৃত শক্তির উপর নির্ভর চিকিত্সা পদ্ধতি ব্যবহার করে। আর তাই চা বাগানের শত শত শিশু অপুষ্টির শিকার। নারী শ্রমিকরা মাতৃত্বকালীন ছুটিও ঠিক ভাবে পায় না। আমরা ছোট বেলা অনেক শুনেছি, কর্মস্থলেই অনেক বাচ্চার জন্ম হয়েছে।
তবে আইন বলছে- ১৯৬২ সালের টি প্ল্যান্টেশন লেবার অর্ডিন্যান্স এবং ১৯৭৭ সালের প্ল্যান্টেশন রুলসে চা-বাগানগুলোতে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা মালিকের দায়িত্ব। কিন্তু বাংলাদেশের কোন চা বাগানে মালিক পক্ষ এমন দায়িত্ব পালন করে বলে মনে হয় না।
বাদবাকি দিন সমস্যা হলেও এদের কোন ছুটি নেই। শুক্রবারের বন্ধের দিনের পায়না মজুরি। অথচ ২০১৩ সালের সংশোধিত শ্রম আইনের ১০৩ (গ) ধারা অনুযায়ী, সকল শ্রমিকদের ছুটির দিনের মজুরি প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু সেই ছুটির দিনের টাকা মালিকের ভুঁড়িতেই জমা হচ্ছে।
এদিকে শ্রমিকদের নেই কোন পরিচয়পত্র ও নিয়োগপত্র। সার্ভিস বুকের ত প্রশ্নই আসে না। অথচ আইন বলছে শ্রম আইনের ২ (১০) ধারায় গ্রাচ্যুইটি, ৪ ধারায় চাকুরি স্থায়ী করা, ৫ ধারায় পরিচয়পত্র ও নিয়োগপত্র, ৬ ধারায় সার্ভিস বই, ১০৮ ধারায় অতিরিক্ত কাজের দ্বিগুণ মজুরি প্রদান করা বাধ্যতামূলক। আমি হয়ত আইনের গভীরের লোক নয়, কিন্তু আইন কতখানি কিভাবে এপ্লাইড সেটা শ্রমিকদের সাথে কথা বলে মুটোমুটী ভালই জানি।

শেষমেষ ছোট একটি ফান্ডের হিসাব দেই, সারাদেশের ২১ উপজেলায় ২০ হাজার চা শ্রমিকের জন্য ১০ কোটি টাকার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল গত বছর। এই ১০ কোটি টাকা কোন বাগানে কত ব্যায় হয়েছে তার কি কোন হিসেব আছে। আমি আমার ফেঞ্চুঞ্জের কথা বলি, ১৫০ চা শ্রমিকের বিপরীতে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছিল চা শ্রমিকদের জন্য। যেখানে অনেকে  দাবিদার ৫ হাজার টাকা করে পাননি জনপ্রতি। অনেকে দাবীদার পেয়েছেন। আমার কথা হচ্ছে এই ৭ লাখ টাকা দিয়ে কি দেড়শ পরিবার ( এক পরিবার থেকে এক জন শ্রমিক) খুব আয়েশে চলতে পেরেছে। আরে ভাই, চা পাতা তুলতে গিয়ে একবার কাউকে সাপে কাটলে ঔষধ বাবদ ৮ থেকে ৯ হাজার গেছে সেই শ্রমিকের। এই টাকা মালিক বা সরকার কেউই দেয়নাই সেখানে ৫ হাজার দিয়ে ভাগ্য পরিবর্তনের তালা চাবি খোঁজা কি বোকার স্বর্গে বসবাস নয়!
দীর্ঘ সময় অনেক কিছুই লিখলাম। আরও বলা যাবে অনেক ব্যাপারই আছে। কিন্তু আমার লিখা হয়ত লিখার মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে যাবে। তবে মন বলে একজন মানুষ হলেও এদের জন্য সোচ্চার হবে। চা বাগান দেখেই বড় হয়েছি। বাড়ি থেকে দশ কদম হাটলেই বিশাল চা বাগান। এদেরকে দেখি, জানি। টুকটাক হেল্প করি, কিন্তু তা ত আর চাহিদা পূরন হয়না কারো, শুধু মনের শান্তি। রাজনীতি বুঝি না, কৌশল বুঝি না। মানুষ হিসেবে এই মানুষদের পূর্ণ অধিকার চাই। আমি স্বপ্ন দেখি এসব মানুষেরা একদিন আকাশ চুম্বী হবে। আলো জ্বালাবে প্রিয় দেশে।
পাশ্ববর্তী দেশ শ্রীলঙ্কায় চা-শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৬৫০ রুপি, নেপালে ৪৫০ রুপি। অথচ আমাদের দেশে চা-শ্রমিকদের মজুরি মাত্র ৮৫ টাকা। এদের মজুরি ২৫০-৩০০ করা হোক আপাতত, পরে তা আরও বাড়াতে হবে। এটা এদের শুধু দাবী নয় অধিকার। আমি আছি এদের পক্ষে, এদের পক্ষেই আছে আমার সুর ... 

লিখেছেন- চৌধুরী মারূফ, সাংবাদিক 


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাউল সাধক চান মিয়া এবং আমার কিছু উপলব্ধি

"রজনী হইসনা অবসান  আজ নিশিতে আসতে পারেবন্ধু কালাচাঁন।। কত নিশি পোহাইলোমনের আশা মনে রইলো রে কেন বন্ধু আসিলোনা জুড়ায়না পরান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। বাসর সাজাই আসার আশেআসবে বন্ধু নিশি শেষে দারূন পিরিতের বিষে ধরিল উজান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। মেঘে ঢাকা আঁধার রাতে কেমনে থাকি একা ঘরে সাধক চাঁনমিয়া কয় কানতে কানতে হইলাম পেরেশান আজ নিশিতে আসতে বন্দু কালাচাঁন।"    গভীর নিশিতে ধ্যান মগ্ন হয়ে কালাচাঁনের অপেক্ষা করছেন সাধক।  সাধক চান মিয়ার শিষ্য বাউল সিরাজউদ্দিনের মতে এটি একটি রাই বিচ্ছেদ। কৃষ্ণের অপেক্ষায় রাধা নিশি বা রাতকে অনুরোধ করছেন 'রাত' যেন না পোহায়  কারণ তার কালা চান যে কোন সময় আসতে পারে। শব্দগুচ্ছ গুলো থেকে সহজেই উপলব্ধি হয় সাধক নিজ দেহকে রাধা আর আত্মাকে কৃষ্ণের সাথে তুলনা করেছেন। দেহ আত্মার মিলন ঘটানোই ছিল সাধকের সাধনা।        বাউল সাধক চান মিয়া উপরোক্ত গানটি রচনা করেছেন। নেত্রকোনা জেলার খাটপুরা গ্রামে ১৩২৫ বঙ্গাব্দে সাধক চান মিয়ার জন্ম। পুরো নাম চান্দেজ্জামান আকন্দ হলেও বা...

বাউল, বাউলতত্ব এবং কিছু কথা

একজন ভদ্র বন্ধু বরের সাথে বাউল সম্প্রদায় নিয়ে বেশ তর্ক হলো রাতে। তর্কের সূত্রপাত ছিল বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী। ভাবলাম "বাউলতত্ত্ব"র আলোকে বাউলরা ভাববাদী নাকি বস্তুবাদী তা নিয়ে যৌক্তিক আলোচনা আবশ্যম্ভাবী। কয়েকটি ধারাবাহিক পর্ব লিখে নিজের মনোভাব বোঝানোর চেষ্টা করব।  শুরুতেই শক্তিনাথ ঝাঁ এর বস্তুবাদী বাউল বই থেকে কিছু কথা লিখতে চাই; বাস্তব জগত ও জীবনকে এরা কোন আনুমানিক যুক্তি বা আলৌকিক যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে নারাজ। জৈব রাসায়নিক ব্যাখায় এরা নারীর রজঃ এবং পুরুষের বিজে জীবন ও জগত সৃষ্টিকে ব্যাখা করে এবং চার ভূতকে প্রাকৃতিক সৃষ্টি মনে করে। এভাবে মানুষে, প্রকৃতিতে তৈরি করে প্রাণ, প্রাণী। অনুমান ভিত্তিক স্বর্গ, নরক, পরলোক, পুনর্জন্মাদি প্রত্যক্ষ প্রমাণাভাবে বাউল আগ্রাহ্য করে। মানুষ ব্যাতিরিক্ত ঈশ্বরও এরা মানে না। সৃষ্টির নিয়মকে জেনে যিনি নিজেকে পরিচালনা করতে শিখেছেন- তিনিই সাঁই। সুস্থ নিরোগ দীর্ঘজীবন এবং আনন্দকে অনুভব করার বাউল সাধনা এক আনন্দমার্গ।।  বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী এর অনেক সূক্ষ বিশ্লেষণ শক্তিনাথের বস্তুবাদী বাউল বইটির মধ্যে আলকপাত করা হয়েছে। সাধারণ সমাজে এ ধা...

ভাইবে রাধারমণ

তখন কলেজের ছাত্র। বাংলা বিভাগের প্রভাষক শ্রদ্ধেয় রেজা স্যারের সাথে খুবই ভালো সম্পর্ক। কলেজের প্রথম দিনই স্যারকে খুব পছন্দ। তারপর স্যারের সাথে গল্প, সমাজ, রাজনীতি, সাহিত্য নিয়ে আলোচনা। রীতিমত ফিজিক্স, বায়োলোজি ক্লাস ফাঁকি দিলেও বাংলা ক্লাস কখনই ফাঁকি দিতাম না। খুব উপভোগ করতাম স্যারের ক্লাস। হোস্টেল সুপার হিসেবে স্যার ( ওহী আলম রেজা) আমাদের সাথেই থাকতেন। আমরা আসার প্রায় নয় মাস পর স্যার এলেন সুপার হিসেবে। প্রতিদিন রাতে খাবার পরেই স্যারের রুমে গিয়ে আড্ডা হত, গানের আসর হত। স্যারের পিসিতে প্রায়ই গান শুনতাম আমরা। একদিন হঠাৎ করেই একটি গান স্যার প্লে করলেন 'আমার বন্ধু দয়াময় তোমারে দেখিবার মনে লয়। তোমারে না দেখলে রাধার জীবন কেমনে রয় বন্ধুরে।। কদম ডালে বইসারে বন্ধু ভাঙ্গ কদম্বের আগা। শিশুকালে প্রেম শিখাইয়া যৌবনকালে দাগা রে।। তমাল ডালে বইসারে বন্ধু বাজাও রঙের বাশি। সুর শুনিয়া রাধার মন হইলো যে উদাসি রে।। ভাইবে রাধা রমন বলে মনেতে ভাবিয়া। নিভা ছিল মনের আগুন কে দিলাই জ্বালাইয়া রে।' গানের কথাগুলো বেশ ভালো লেগে গেলো। পুর গানটি শুনে বুঝলাম গানটি সাধক রাধারম...