"'' IPDC আমাদের গান "" এই স্টুডিওর গান নিয়ে মেহরিন আফরোজ শাওন এবং চঞ্চল চৌধুরী তুমি হও যমুনা রাঁধে নিয়ে বেশ সমালোচনা ছিল। গানটি নিয়ে কোন আলোচনা সমালোচনা করিনি কারণ আমার খুব একটা জানা নেই। কিন্তু গতকাল একই প্লাটফর্ম এ শিউলি সরকারের গাওয়া প্রয়াত শাহ আব্দুল করিমের লেখা এবং সুর করা 'সখী তোরা প্রেম করিও না' গানটা শুনলাম। বারবার ফেম ফেম বলা হচ্ছিলো। হোয়াট ইজ ফেম? খাম হইতে হয় প্রেমের উদয়? এটাকি খাম, লেটার বক্স? একদম নয়, এটা হচ্ছে কাম অর্থাৎ অতি নিকবর্তী- সঙ্গম। একটা অক্ষরের কারণে কি ভাবার্থ কি হয়ে যাচ্ছে!
বর্ণমালা 'ক' এর উচ্চারণ 'খ' করে এবং 'প' এর উচ্চারণ 'ফ' করলেই যে সিলেটি ধাচ এসে যাবে এমন কিন্তু নয়। সুনামগঞ্জ ভাঁটির সুর কিন্তু স্থানীয় সিলেটি উচ্চারণ থেকে ভিন্ন। দ্বিতীয়ত বাউল শাহ আব্দুল করিম তার কোন গানে 'হ হ হ হ_____' করে উঠেন নি। স্টুডিও গানের কথায় 'রইল না' বলেছেন এবং মূল গানে 'থাকেনা' ব্যবহার হয়েছে। থাকেনা মানে হচ্ছে একদম নেই ফিরে আসবে না এরূপ বোঝানো হয়। রইল না হচ্ছে এই মুহুর্তে নাই, এমনটা। মূলত বাউল ফকির সহজিয়া বা মরমী সাধকদের গানের কথায় হচ্ছে মূল।
তৃতীয়ত, বাউল শাহ আব্দুল করিমের শিষ্য বাবুল সরকারের নিজ কন্ঠে গাওয়া গানটি আমি শুনেছি। গানের শুরুটা হয় 'করছে যেজন জানে সেজন পিরিতের কি বেদনা" এবং উনার উচ্চারণ স্পষ্ট ছিল, ক এর উচ্চারণ কে খ এর মত, প এর উচ্চারণ ফ এর মত করেন নি। এখানে পুরো একটি অন্তরা বাদ দেওয়াও হয়েছে। //লাইলি মজনু শিরি ফরহাদ ওদের খবর রাখোনি, ইউসুফের প্রেমে জুলেখার হয় কত পেরেশানি। নবীর প্রেমে ওয়াছ কুরুনি, যার প্রেমের নাই তুলনা//।
বাউল শাহ আব্দুল করিমের বিখ্যাত এবং প্রচলিত গান 'আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম' এই গানের সুর বিকৃত করে করে, বিকৃত সুর এখন আমাদের কাছে উপস্থাপিত। 'আমি কূল হারা কলঙ্কিনী', 'গান গাই আমার মনরে বোঝাই', 'বসন্ত বাতাসে' গানের প্রচলিত সুরও বিকৃত। বসন্ত বাতাসে গানটির মূল সুর কিছুটা বিয়ের গীত ধরনের। কিন্তু বর্তমানে ধুম ধাড়াক্কা ইলেকট্রনিকস ড্রামে বাজিয়ে পুরোটাই নষ্ট। বাউলের গাওয়া আদি যে 'আকাশী' সুর সেই সুর আর নেই। আমাদের মাঝে প্রচলিত, তা বিকৃত, দর্শক নাচানোর ধাচ। বাউল শাহ আব্দুল করিমের শিষ্য শ্রদ্ধেয় আব্দুর রহমান ভাই, বশীর সরকার ভাই, রণেশ ঠাকুর দাদা,আমার এলাকার বাউল কালা মিয়া এদেরকে অনেক কাছ থেকে দেখেছি, তাদের কণ্ঠে কাছে বসে গান শুনেছি এভাবে বিকৃত ঢং এর গান শুনিনি। পুরোনো কালজয়ী গানগুলো নতুন করে প্রচার হচ্ছে এটা ভালো। কিন্তু অত্যাধুনিক যন্ত্র দিয়ে মূল সুর কথা বিকৃত হবে, গানের কথার শব্দ গুলো পরিবর্তন হয়ে যাবে এটা একদম কাম্য নয়।
সঙ্গীত ত ভাব দর্শন। সঙ্গীত সমাজের কথা বলে, জীবনের কথা বলে। বাউল সাধকরা ত আইনের মারপ্যাচে ছিলেন না, এসব ভাবেন ই নি। কিন্তু সময় যেদিকে গড়াচ্ছে সরকারী ভাবে বাউল সাধকদের গানের কথা এবং সুর কপিরাইট সিস্টেম করে দেওয়া উচিৎ। গাইলে শুদ্ধ কথায়, শুদ্ধ সুরে গাইতে হবে। নাইলে বাতিল। বাউল সাধকদের শিষ্য, তাদের সন্তানাদি নিয়ে এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ। দামী স্টুডিও হলেই যে গান পারফেক্ট হবে কোনভাবেই তা কিন্তু নয়।
সবশেষে আমি কোন বাউল গবেষক নই। তবে এই বাউল সাধকদের লিখা সুরকরা গানগুলো ধারণ করি মন থেকে। প্রতিটি গানের একটা সারমর্ম থাকে, প্রতিটি গানের একটি বার্তা থাকে। অন্তরা বাদ দিলে সেই গানের মূল মেসেজ হারিয়ে যায়, প্রেক্ষাপটের ইতিহাস লোপ পায়।
লেখকঃ চৌধুরী মারূফ, সাংবাদিক
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন