লিখেছেনঃ চৌধুরী মারূফ, সাংবাদিক
রিতা দেওয়ান, একজন বাউল শিল্পী। ফ্রান্সে বিভিন্ন নিউজ পেপার গুলোতে উনার সংবাদ এসেছে। বাউল গানের মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে নাকি তিনি আঘাত করেছেন।
রাজবাড়ির পাংশাতে, চুয়াডাঙ্গার জীবন নগরে বাউল শিল্পীদের দাঁড়ি গোঁফ কেটে দেওয়ার কথা কি মনে আছে আমাদের? আমার মনে আছে। শরীয়ত বয়াতির কথা কি আমাদের মনে আছে! মারফতি, মুর্শিদি, ভাববাদী, আল্লাহ তত্ত্ব, নবী তত্ত্ব এসেবের গানের কথার ভাব বোঝতে হয়। রূপক ভাবে অনেক কথাই এসব গানে বোঝানো হয়। কিন্তু এসবের কারণে একজনের বিরুদ্ধে মামলা ঠুঁকে দিয়ে তার কন্ঠ চেপে ধরতে হবে।
বিবিসির দেওয়া সাক্ষাৎকার অনুসারে,বাংলাদেশে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে টাঙ্গাইলের বাউল রিতা দেওয়ানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে বাংলাদেশ সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল। পালা গানের মাধ্যমে বাউল রিতা দেওয়ান আল্লাহকে নিয়ে 'অশালীন উক্তি' করে 'ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত' দিয়েছেন এমন অভিযোগে এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের হয়েছিল, যার মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের মামলায় বুধবার এই পরোয়ানা জারি হয়েছে। সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর নজরুল ইসলাম শামীম বিবিসিকে বলেছেন, ফেব্রুয়ারি মাসে দায়ের মামলার তদন্ত শেষে আদালত এই পরোয়ানা জারি করেছে। রিতা দেওয়ান বিবিসিকে বলেছেন, আইনের প্রতি সম্মান দেখিয়ে তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন। তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেছেন, ফেব্রুয়ারি মাসেই তিনি ওই ঘটনার জন্য ইউটিউবে ক্ষমা চেয়েছেন।'ঘটনার পর থেকে হুমকি আর হেনস্থার মধ্যেই আছি' মানিকগঞ্জের এই বাউল শিল্পী রিতা দেওয়ান বলছেন, এই বিতর্কের যখন শুরু অর্থাৎ জানুয়ারি মাসের শেষ থেকে এখন পর্যন্ত তাকে নানাভাবে হেনস্তা করা হয়েছে। তিনি বলেন যে ভিডিও নিয়ে এই বিতর্কের সূত্রপাত, সেই পালা গানের আসরে প্রতিপক্ষের আক্রমণের জবাব দিতে গিয়ে তার ভুল হয়েছে। রিতা দেওয়ান বলেছেন, "এজন্য আমি ক্ষমা চেয়েছি, ওই কথাটা আমার ভুল হয়েছে।" "আমি তো মুসলমান, আমি তো আল্লাহকে খারাপভাবে কিছু বলতে পারি না। ওটা গানের মঞ্চে প্রতিপক্ষ ছিলেন শাহআলম সরদার, তার আক্রমণের জবাব দিতে গিয়েই ভুলটা হয়েছে।"
তবে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলেও, ওই বিতর্কের কারণে রিতা দেওয়ান ও তার পরিবারকে হয়রানির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। তিনি বলেন, "বিশেষ করে সামাজিক মাধ্যমে নানা ধরণের গালিগালাজ করে, হুমকি দিয়ে ভিডিও বানানো হয়েছে। স্থানীয়ভাবেও আমাকে এসবের মুখোমুখি পড়তে হয়েছে।" এ কারণে রিতা দেওয়ান ও তার পরিবার ভয়ে ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, "ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এখন পর্যন্ত একদিনও মঞ্চে গান করিনি। যেসব জায়গায় এই পালা গানের আয়োজন করা হয়, আমার এই বিতর্কের কারণে আয়োজকেরা অনুমতি পায় না অনুষ্ঠান করার। এজন্য এখন আর তারা আমাকে অনুষ্ঠানে নিতে চান না।"৷
এই হলো একজন নির্যাতিত বাউলের জবান বন্দি। যেখানে মামুনুল হকের মত একজন কট্টরবাদী নেতা রাসুল সাল্লালাহু আলাইহিস সালামের ঠোঁট নাড়ানো নিয়ে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে ভঙ্গি করে যান যেখানে কিছু হয় না সেখানে একজন মারফতি ঘরনার সহজ মানুষকে মামলা ঠুঁকে জীবন হেয় করা হয় সেখানে আমাদের মতামত চর্চা শূণ্যের কোঠায়।
বর্তমান এ শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য, এর আগে জাতীয় সঙ্গীত, পহেলা বৈশাখ সব কিছুর উপর আক্রমণ হয়েছে। এখন সুকৌশলে তৃণমূলে থাকা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের ঘায়েল করা হচ্ছে। এই ঘায়েল শেষ মেষ বটম পর্যন্ত পৌছাবে৷ এটাই সামনে অপেক্ষমান, নিশ্চিত এবং এলার্মিং।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন