সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বাংলাদেশ আওয়ামীলীগঃ গ্রুপিং এবং ঐক্য দুটোই চর্চা

ভূমিকা না বলে মূল বিষয় শুরু করে দেই, আওয়ামীলীগ একটি বড় দল। মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী এই দল ২০০৮ সালের শেষ থেকে টানা ক্ষমতায়। এই দলের সহযোগী এবং অঙ্গসংগঠন মিলে অসংখ্য নেতা কর্মী সমর্থকদের পদচারণায় মুখর থাকে সংগঠনের কার্যালয় গুলো। ওয়ার্ড থেকে কেন্দ্র এখানে গ্রুপিং বলয় যেমন বেশি, তেমনি ঐক্য'ও বেশি। 

বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ, আগামী ২৩শে জুনে বাহাত্তর বছরের লম্বা সময়ে পা রাখছে গণমানুষের এই দলটি। অনেক চড়াও উতরাও পেরিয়ে দলটি আজ এই জায়গায়। মওলানা ভাসানী শামসুল হক, সোহরাওয়ার্দী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহনান, জাতীয় চারনেতা এবং পরবর্তীতে শেখ হাসিনা এবং জাতীয় চার নেতার পরিবারের সদস্যদের দ্বারা অক্লান্ত পরিশ্রমে বাংলাদেশ বৃহত্তম এই রাজনৈতিক প্লাটফর্ম আজ এই জায়গায়। এখানে হাজার হাজার বলয় এবং নেতা কর্মীদের গ্রুপিং রয়েছে৷ গ্রুপিং থাকার এইখানে নির্দিষ্ট কিছু কারণ রয়েছে। প্রথমত,এখানের তৃণমূল কর্মীরা মাঠ পর্যায়ে রাজনৈতিক চর্চা করে থাকেন। বছর সাত আঁট যাবার পর তাদের হাতেগড়া পরবর্তী কর্মীরা সৃষ্টি হয়। স্বভাবতই একটি বলয় এখানে গড়ে ওঠে৷ 

গ্রুপিং হওয়ার দ্বিতীয় কারণ হলো, এখানে রাজনৈতিক চর্চা উর্ধ্বমুখী। এটা ভালো দিক। রাজনীতির মগডাল এখানে সবাই দেখতে চান। এটা আওয়ামীলীগের সেই প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই। এই রাজনীতির এই মগডাল প্রেম না হলে ৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নিরঙ্কুশ জয় হতো না। এই চর্চাটা আওয়ামীলীগের জন্ম থেকেই। 

অন্য আরেকটি বিষয় হলো, এখানে পদ পদবীর জন্য কাজ করেন কর্মীরা। পজেটিভ ভাবে চিন্তা করলো সুনির্দিষ্ট একটি লক্ষ্য হচ্ছে এই 'পদ'। একটি চূড়া থাকার কারণে এখানে গ্রুপিং হয় স্বভাবতই।  আরেকটি বিষয় দেখার আছে এখানে। অনেকেই মনে করেন আওয়ামীলীগের অভ্যন্তরীণ ক্রোন্দল বেশি। এটা বেমানান কথাবার্তা। অভ্যন্তরীণ ক্রোন্দল যদি আসলেই থাকত তবে সুপ্রিম কমান্ড বলে কিছু থাকতো না। মতে অনৈক্য থাকার কারণটা অনেকেই ক্রোন্দল মনে করেন। কিন্তু এই অনৈক্য অসংখ্য মতামত প্রাধান্যের একটি চর্চা। সুতরাং ক্রোন্দল বলা যায়না গ্রুপিং কে। 

তবে বলা বাহুল্য, বারবার আধিপত্য বিস্তার বা ক্রোধ রোষানল আওয়ামীলীগের গ্রুপিং নাম দিয়ে যা হয় এসব সম্পূর্ণ নেতাদের দেখাশুনার ঘাটতির কারণে। আর এই ঘাটতি যেই নেতাদের দ্বারা সৃষ্ট সেখানে তৃণমূল থেকে গড়ে উঠা নেতা কি'না, তা নিয়ে আমি নিজে সন্দিহান।  

এবার আসি ঐক্য নিয়ে আলোচনায়। আওয়ামীলীগে ঐক্য মানেই শেখ হাসিনার সিধান্ত।  এটা আস্থা, ভরসা, সম্মান, নেতাভক্ত দলের ভাবমূর্তির উদাহরণ।  ইতিহাস যদি আলোচনা করি তবে ঐক্য না থাকলে পঁচাত্তরের পর আওয়ামীলীগ টিকে থাকতো না। একমাত্র নিজেদের ঐক্যের কারণেই টিকে ছিল। মোটা দাগে যদি নব্বই সালের স্বৈরাচার এরশাদ পতনের কথা বলি তবে বলতে পুরোটাই ছিল গণমুখী ঐক্য। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে গড়ে ওঠা ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির কার্যক্রমে আওয়ামীলীগ বহুমুখী ব্যাপারে নিজেদের অনড় ঐক্যের পরিচয় দিয়েছে। বলা হয়ে থাকে ৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের তৃণমূল ঐক্যের কারণে তারা ক্ষমতায় বসেছিল। ছোট একটা উদাহরণ টানতে পারি। এই মনে করুন একটি নির্বাচনে ডজন ডজন নেতারা মনোনয়ন চান। চাওয়াটা তাদের অধিকার। কিন্তু যখন'ই প্রতীক বরাদ্দ হয়ে যায় তখন এদিক ওদিক আওয়ামীলীগের কর্মীরা ঘুরে তাকান না। কারণ তখন অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন চলে আসে।  আর যখনই কোন রাজনৈতিক দল অস্তিত্বের প্রশ্নে কোন আপোষ করেনা, সে দলকে চূড়ান্ত ঐক্যবদ্ধ দল বলা যায়। ২০০৩ -০৪ সালে যখন ক্ষমতাসীন চার দলীয় জোটের ক্রোধের শিকারে স্বয়ং শেখ হাসিনাও রক্ষা পাননি,  সেই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আওয়ামীলীগের নেতারাই মানবঢাল দেখিয়ে সৃষ্টি করেছিলেন নয়া ইতিহাস। এই আওয়ামীলীগে অনেক কর্মী আছেন অনাহারে ভোগা মানুষ, কিন্তু ছেঁড়া শার্টে এখনো মিছিলে যাবেন। এটাই ঐক্য। 

২০০৫ সালের শেষে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যখন স্বাধীনতা বিরোধীদের বিচরণ তুঙ্গে তখন হাজারও বলয় বা গ্রুপে নিমজ্জিত থাকা ছাত্রলীগের কর্মীরা কি একসাথে কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রী মিলে  মিছিল করেনি? হ্যাঁ করেছেন। শেখ হাসিনাকে জেল থেকে মুক্ত করার জন্য ২০০৭ সালে আন্দোলন করেন নি? করেছেন। তখন কি কেউ পদ চিন্তা করেছেন, বলয় চিন্তা করেছেন? না, করেন নি। এটাই ঐক্য।

বাহাত্তর বছরের পথ চলায় ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা, থানা, পৌরসভা, মহানগর,  জেলা,  কেন্দ্র সব জায়গাতেই গ্রপিং ছিলো, থাকবে। এটি একটি রাজনৈতিক চর্চার প্রতিযোগিতা। আবার মৌলিক বিষয়ে ঐক্যের বিন্দু ফোটা ঘাটতি ছিলো না, থাকবেও না। এটাই আওয়ামীলীগ। তবে ক্রোন্দল নামক শব্দ দিয়ে কখনই যেন কোন বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়। এবং এটাও বিশ্বাস তৃণমূল নেতা কর্মীরা এসবের ধারে কাছেও নেই। এই ত আওয়ামীলীগ। 

লিখেছেনঃ চৌধুরী মারূফ, সাংবাদিক 




মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাউল সাধক চান মিয়া এবং আমার কিছু উপলব্ধি

"রজনী হইসনা অবসান  আজ নিশিতে আসতে পারেবন্ধু কালাচাঁন।। কত নিশি পোহাইলোমনের আশা মনে রইলো রে কেন বন্ধু আসিলোনা জুড়ায়না পরান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। বাসর সাজাই আসার আশেআসবে বন্ধু নিশি শেষে দারূন পিরিতের বিষে ধরিল উজান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। মেঘে ঢাকা আঁধার রাতে কেমনে থাকি একা ঘরে সাধক চাঁনমিয়া কয় কানতে কানতে হইলাম পেরেশান আজ নিশিতে আসতে বন্দু কালাচাঁন।"    গভীর নিশিতে ধ্যান মগ্ন হয়ে কালাচাঁনের অপেক্ষা করছেন সাধক।  সাধক চান মিয়ার শিষ্য বাউল সিরাজউদ্দিনের মতে এটি একটি রাই বিচ্ছেদ। কৃষ্ণের অপেক্ষায় রাধা নিশি বা রাতকে অনুরোধ করছেন 'রাত' যেন না পোহায়  কারণ তার কালা চান যে কোন সময় আসতে পারে। শব্দগুচ্ছ গুলো থেকে সহজেই উপলব্ধি হয় সাধক নিজ দেহকে রাধা আর আত্মাকে কৃষ্ণের সাথে তুলনা করেছেন। দেহ আত্মার মিলন ঘটানোই ছিল সাধকের সাধনা।        বাউল সাধক চান মিয়া উপরোক্ত গানটি রচনা করেছেন। নেত্রকোনা জেলার খাটপুরা গ্রামে ১৩২৫ বঙ্গাব্দে সাধক চান মিয়ার জন্ম। পুরো নাম চান্দেজ্জামান আকন্দ হলেও বা...

বাউল, বাউলতত্ব এবং কিছু কথা

একজন ভদ্র বন্ধু বরের সাথে বাউল সম্প্রদায় নিয়ে বেশ তর্ক হলো রাতে। তর্কের সূত্রপাত ছিল বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী। ভাবলাম "বাউলতত্ত্ব"র আলোকে বাউলরা ভাববাদী নাকি বস্তুবাদী তা নিয়ে যৌক্তিক আলোচনা আবশ্যম্ভাবী। কয়েকটি ধারাবাহিক পর্ব লিখে নিজের মনোভাব বোঝানোর চেষ্টা করব।  শুরুতেই শক্তিনাথ ঝাঁ এর বস্তুবাদী বাউল বই থেকে কিছু কথা লিখতে চাই; বাস্তব জগত ও জীবনকে এরা কোন আনুমানিক যুক্তি বা আলৌকিক যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে নারাজ। জৈব রাসায়নিক ব্যাখায় এরা নারীর রজঃ এবং পুরুষের বিজে জীবন ও জগত সৃষ্টিকে ব্যাখা করে এবং চার ভূতকে প্রাকৃতিক সৃষ্টি মনে করে। এভাবে মানুষে, প্রকৃতিতে তৈরি করে প্রাণ, প্রাণী। অনুমান ভিত্তিক স্বর্গ, নরক, পরলোক, পুনর্জন্মাদি প্রত্যক্ষ প্রমাণাভাবে বাউল আগ্রাহ্য করে। মানুষ ব্যাতিরিক্ত ঈশ্বরও এরা মানে না। সৃষ্টির নিয়মকে জেনে যিনি নিজেকে পরিচালনা করতে শিখেছেন- তিনিই সাঁই। সুস্থ নিরোগ দীর্ঘজীবন এবং আনন্দকে অনুভব করার বাউল সাধনা এক আনন্দমার্গ।।  বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী এর অনেক সূক্ষ বিশ্লেষণ শক্তিনাথের বস্তুবাদী বাউল বইটির মধ্যে আলকপাত করা হয়েছে। সাধারণ সমাজে এ ধা...

ভাইবে রাধারমণ

তখন কলেজের ছাত্র। বাংলা বিভাগের প্রভাষক শ্রদ্ধেয় রেজা স্যারের সাথে খুবই ভালো সম্পর্ক। কলেজের প্রথম দিনই স্যারকে খুব পছন্দ। তারপর স্যারের সাথে গল্প, সমাজ, রাজনীতি, সাহিত্য নিয়ে আলোচনা। রীতিমত ফিজিক্স, বায়োলোজি ক্লাস ফাঁকি দিলেও বাংলা ক্লাস কখনই ফাঁকি দিতাম না। খুব উপভোগ করতাম স্যারের ক্লাস। হোস্টেল সুপার হিসেবে স্যার ( ওহী আলম রেজা) আমাদের সাথেই থাকতেন। আমরা আসার প্রায় নয় মাস পর স্যার এলেন সুপার হিসেবে। প্রতিদিন রাতে খাবার পরেই স্যারের রুমে গিয়ে আড্ডা হত, গানের আসর হত। স্যারের পিসিতে প্রায়ই গান শুনতাম আমরা। একদিন হঠাৎ করেই একটি গান স্যার প্লে করলেন 'আমার বন্ধু দয়াময় তোমারে দেখিবার মনে লয়। তোমারে না দেখলে রাধার জীবন কেমনে রয় বন্ধুরে।। কদম ডালে বইসারে বন্ধু ভাঙ্গ কদম্বের আগা। শিশুকালে প্রেম শিখাইয়া যৌবনকালে দাগা রে।। তমাল ডালে বইসারে বন্ধু বাজাও রঙের বাশি। সুর শুনিয়া রাধার মন হইলো যে উদাসি রে।। ভাইবে রাধা রমন বলে মনেতে ভাবিয়া। নিভা ছিল মনের আগুন কে দিলাই জ্বালাইয়া রে।' গানের কথাগুলো বেশ ভালো লেগে গেলো। পুর গানটি শুনে বুঝলাম গানটি সাধক রাধারম...