সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পৃথিবীর বুক থেকে মুছে যাক জঙ্গিবাদ

বোমা হামলা। শব্দ দুটো শুনলেই আমরা কেঁপে উঠি। বোমা হামলা মানেই রক্তাক্ত নিথর কিছু দেহ পড়ে থাকা, ছড়িয়ে থাকা মানুষের কিছু জুতা, আর শোকে স্তব্দ কিছু এলাকার চিত্র আমাদের চোখে ভাসে। বোমা হামলা মানেই মানুষের আহাজারি, স্বজন হারানো বেদনা, আতঙ্ক ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রতিদিন সকালেই আমরা যখন পত্রিকার পাতা, টেলিভিশনের নিউজ স্ক্রল বা অনালাইন নিউজ পোর্টাল গুলোর ওয়এব পেজের দিকে চোখ পড়ে তখনই কেঁপে উঠি বোমা হামলার সংবাদ পড়ে, চিত্র দেখে। 

এইত দুই দিন আগের একটি ঘটনা বলি। আফগানিস্তানে কোচিং সেন্টারে আত্মঘাতী হামলা, নিহত হলো ৩৪। কি বীভৎস ঘটনা! ভাবলেই শরীর চমকে উঠে। আহত হয়েছেন প্রায় ৬৭ জন। এই ৬৭ জন কি আর সুস্থ স্বাভাবিক জীবন পাবেন কখনই না। শ্চিম কাবুলের শিয়া হাজারা সম্প্রদায় অধ্যুষিত এলাকার ওই কোচিং সেন্টারটিতে নিয়মিত ক্লাস চলার সময়ে এক আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী হেঁটে সেখানে প্রবেশ করে এবং শরীরে বাঁধা বিস্ফোরক বেল্টের বিস্ফোরণ ঘটায়। এই হামলা নিয়ে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, নিহতদের মধে বেশিরভাগই তরুণ। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিতে মাবৌদ একাডেমি নামের ওই কোচিং সেন্টারে ক্লাস করছিল। এ'ত গেলো ইদানিং এর ঘটনা। সিরিয়া, লিবিয়া, ইরাক, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ আক্রান্ত হচ্ছে প্রায় প্রতিদিন। শুধু বোমা হামলা নয় জঙ্গিরা এখন কৌশল বদলিয়ে দিয়েছে। কখনো ভীড়ের মধ্যে গাড়ি চাপা দিয়ে, কখনো জিম্মি করে হত্যা করছে মানুষ। আমাদের বাংলাদেশের হলি আর্টিজেনে, সিলেটের শিববাড়ির আতিয়া মহলে কি না ঘটে গেলো। নিজেই এসব ঘটনার স্বাক্ষী। ২১ আগস্ট ২০০৪। আওয়ামীলীগের সভায় গ্রেনেড হামলা, উদীচীর অনুষ্ঠানে বোমা হামলার কথা আমরা কেউ ভুলে যায়নি। 

জঙ্গি হামলার ঘটনা বললে গেলে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখতে হবে। মূলত একটি দিনের হামলার ঘটনার কথা শেয়ার করতে চাচ্ছি। ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল, দেশের ভয়ানক অবস্থা।দেশের অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে বাচ্চারা কোথাও খেলার জন্য প্র্যাকটিস করতে গেলে তাদের ব্যাগ, অথবা ব্যাডমিন্টন খেলার র‍্যাকেট প্যাকেট খুলে চেক করা হত। মানুষের মনে এতটাই আতঙ্ক ছিল যে পাবলিক বাসে বা ট্রেনে কোন দাড়িওয়ালা ভদ্রলোকের ব্যাগ বা ব্রিফকেস সাথে থাকলেই মানুষজন আতঙ্কে চোখ বাঁকা করে তাকাতো। গোটা বাংলাদেশ ছিল বোমায় প্রকম্পিত। বিএনপি জামায়াতের দুঃশাসন। জামাতুল মুজাহিদীন, হরকাতুল জিহাদ, আব্দুর রহমান, বাংলা ভাই, আতাউর রহমান সানি, মুফতি হান্নানের মত দুর্ধর্ষ জঙ্গীদের উত্থান। কিন্তু তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বাবর, খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান, মোসাদ্দেক ফালু, আরাফাত রহমান কোকরা তখন হাওয়া ভবনে এসির ঠান্ডা হাওয়া খাওয়া গিলাতে সদা ব্যস্ত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী সন্ত্রাসী সংগঠন জামায়াত শিবিরকে কোলে বগলে নেয়া বিএনপি যখন দেশের অবস্থা নিয়ে কথা তুলে তখন আমার হাসি পায়। বেগম খালেদা জিয়া আর তার তারেক কোকো ফালু বাবর দুলু সেদিন কি করেছিল তা কি ভুলে গিয়েছেন! প্রতিহিংসার রাজনীতির কথা যারা তুলেন তারা কি ভুলে গেছেন সেদিনের নৃশংসতার কথা। এক রিপোর্টে তাদের সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী বলেছিলেন, কিছুতেই তৎকালীন সরকার এর দায় এড়াতে পারে না। তাদের দলের, তাদের আমলের মন্ত্রীর কথা থেকেই বলি, এই দায় কার ? সেই প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নয়কি? আপনারা কি বলবেন জানিনা! আমি বলছি সেই দায় নয়, সেই ছক নৃশংস ছক একেছিল খালেদা জিয়ার তৎকালীন মন্ত্রীসভা। কি কারণে বলালাম সেটি নিচে এই হামলার মামলায় অভিযুক্তদের পরিচয় জানলেই বোঝতে পারবেন। 

আজ ১৭ আগস্ট। দেশের ৬৩ জেলায় সিরিজ বোমা হামলার ১৩ বছর আজ ২০১৮ সালের ১৭ আগস্ট।  ২০০৫ সালের এই দিনে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ১১টার মধ্যে দেশের ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলা চালায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। ওই ঘটনার পর কেটে গেছে দীর্ঘ ১১ বছর। এই ঘটনায় সারাদেশে ১৬০টি মামলা দায়ের হলেও বিগত ১১ বছর পরও  নিষ্পত্তির অপেক্ষার রয়েছে ৫১টি মামলা। এদিকে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মতৎপরতার কারণে পুরনো জেএমবির শক্তি কমলেও উত্থান ঘটেছে নব্য জেএমবির। গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলাসহ সাম্প্রতিক কিছু ঘটনাকে নব্য জেএমবি’র কাজ বলেই মনে করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। জঙ্গি দমনে কাজ করছেন এমন পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান,  সাংগঠনিকভাবে সংঘবদ্ধ হতে না পারলেও অপতৎপরতা থেমে নেই জঙ্গিদের। কিন্তু সারাদেশে ঘাপটি মেরে থাকা জঙ্গিরা ছোটছোট গ্রুপে নাশকতার ছক বাস্তবায়নে ছক আঁকছে সারাক্ষণই। ২০০৫ সালে দেশের ৬৩ জেলায় বোমা হামলা চালিয়ে যে সাংগঠনিক কাঠামোয় দাঁড়াতে চেয়েছিল জঙ্গিরা, সেই কাঠামো সম্পূর্ণ ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেন তারা। জঙ্গিবাদ বিরোধী অপারেশনে অংশ নিতে গিয়ে পুলিশ সদস্যরা নিহত'ও হয়েছেন। দেশ এবং সাধারণ মানুষের জন্য আত্মদানকারী এসব পুলিশ সদস্যদের প্রতি আমার ব্যক্তিগত শ্রদ্ধা।

সিরিজ বোমা হামলা নিয়ে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান (বাংলা ট্রিবিউনের নিউজ মারফতে)- আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অব্যাহত তৎপরতার কারণে জেএমবি আর সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় হতে পারেনি। তাদের অনেকেই পরে ছোটছোট সংগঠন গড়ে তোলার চেষ্টা করে। কিন্তু তারাও একের পর এক গোয়েন্দা জালে ধরা পড়তে থাকে। অনেকেই জেএমবি ছেড়ে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমসহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ে। কেউ কেউ নিজেদের আইএস-এর অনুসারী বলেও দাবি করতে থাকে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্টের সিরিজ বোমা হামলার পর একের পর এক আত্মঘাতী বোমা হামলা চালাতে থাকে জঙ্গিরা। এতে দেশব্যাপী চরম নৈরাজ্য শুরু হয়। এসব বর্বরোচিত বোমা হামলায় বিচারক, আইনজীবী, পুলিশ, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ তখন ৩৩ জন প্রাণ হারান। আহত হন চার শতাধিক নারী-পুরুষ। এসব ঘটনায় পরে আরও শতাধিক মামলা হয় সারাদেশে।

জঙ্গিবাদে মদদ দেওয়ার অভিযোগে বিএনপি নেতা ও সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হক, সাবেক উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী আলমগীর কবির, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু, সাবেক এমপি নাদিম মোস্তফা ও শীষ মোহাম্মদের বিরুদ্ধেও মামলা হয়। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে জঙ্গিবাদে মদদ দেওয়ার অভিযোগে ব্যারিস্টার আমিনুল হকের ৩১ বছরের সাজা হয়েছিল।

সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় সারাদেশে ১৬০টি মামলা দায়ের হলেও বিগত ১১ বছরেও এসব মামলার নিষ্পত্তি হয়নি। দেশের বিভিন্ন আদালতে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে আরও ৫১টি মামলা। ‘আল্লাহর আইন কায়েম ও প্রচলিত বিচার পদ্ধতি’ বাতিলের দাবি জানিয়ে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারাদেশের ৬৩ জেলার প্রায় পাঁচশ’ স্পটে বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মপ্রকাশ করে জঙ্গি সংগঠন জামা’তুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)। ওই ঘটনায় দুই জন নিহত ও শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছিলেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ১৬০টি মামলার মধ্যে ৮৮টি মামলার রায় হয়েছে দেশের বিভিন্ন আদালতে। এসব রায়ে শীর্ষ জঙ্গি নেতা শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইসহ ৩৫ জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় ১৩১ জনকে। বিভিন্ন মেয়াদে আরও ১৮৪ জনকে সাজা দেওয়া হয়। খালাস দেওয়া হয় ১১৮ জনকে। ঢাকা মহানগরীর ৩৩ স্পটে বোমার বিস্ফোরণ ঘটনায় ১৮টি মামলা হয়। এর মধ্যে চারটি মামলা আদালতে খারিজ হয়ে যায়।

সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় সারাদেশে ১৬০টি মামলা হয়েছিল। তদন্ত শেষে ১৪৩টি মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়। ফাইনাল রিপোর্ট (চূড়ান্ত প্রতিবেদন) দেওয়া হয় ১৭টি মামলার। ১৬০টি মামলার এজাহারে আসামি করা হয় ২৪২ জনকে। অভিযোগপত্র দেওয়া ১৪৩টি মামলায় আসামি করা হয় এক হাজার ১৫৭ জনকে। এরমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছিল ৯৬০ জনকে।

এদিকে হামলার জন্য মামলাও হয়েছে। সিরিজ বোমা হামলার তিন মাসের মাথায় ১৪ নভেম্বর ঝালকাঠিতে বোমা হামলা চালিয়ে বিচারক জগন্নাথ পাঁড়ে ও সোহেল আহমেদকে হত্যা করে জঙ্গিরা। ঝালকাঠি জেলা ও দায়রা জজ আদালত ২০০৬ সালের ২৯ মে এ মামলার নিষ্পত্তি করে সাত শীর্ষ জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এ মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ রাতে জেএমবি’র শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুর রহমান বাংলা ভাই, আতাউর রহমান সানি, আবদুল আউয়াল, খালেদ সাইফুল্লাহ ও ইফতেখার হাসান আল মামুনের (ল্যাংড়া মামুন) মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে কারা কর্তৃপক্ষ। তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর দেশে জেএমবি’র জঙ্গি তৎপরতা কিছুটা কমে আসে। তবে তাদের ফাঁসির পর হবিগঞ্জের মাওলানা সাইদুর রহমান জেএমবি’র হাল ধরার চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনিও গ্রেফতারের পর পুরনো জেএমবি’র সাংগঠনিক কার্যক্রম আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। 

জঙ্গিবাদ দমনে বসে নেই আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। গঠন করা হয়েছে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট। 

'বাংলা ট্রিবিউন', 'বাংলা নিউজ' নিউজ পোর্টালের নিউজ মারফতে তুলে ধরলাম সিরিজ বোমা হামলার ইতিবৃত্ত। কিন্তু বলতে চাচ্ছি এই সিরিজ বোমা হামলা করেই কি ক্ষান্ত ছিল টেরোরিস্ট গোষ্ঠীরা। একদম নয়। সময়ের সাথে পাল্টে গেছে তাদের হামলার কৌশল। কখনো চা পাতি দিয়ে কুপিয়ে, কখনো ছুরিঘাত করে, কখনো জিম্মি করে হত্যা করেছে সাধারণ মানুষকে। এই ত ক'দিন আগেই সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার শিকার হলেন ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল স্যার। চা পাতির হামলায় প্রাণ দিতে হল অভিজিৎ অনন্তদের। মূলত এসব হামলা একই রকম শুধু হামলার ধরণ ভিন্ন। 

সবশেষে একটি কথাই বলব, জঙ্গিবাদ এর বিরুদ্ধে সচেতন হতে হবে নিজ নিজ জায়গা থেকে। নিজের অবস্থান থেকে জঙ্গিবাদের কুফল তুলে ধরতে হবে আপনার পাশের লোকজনের কাছে। আপনার আমার প্রচেষ্টায় পৃথিবীর বুক থেকে মুছে দিতে পারি জঙ্গিবাদ নামক কলঙ্কিত শব্দকে। জঙ্গিবাদকে না বলুন।  

লিখেছেন- মারূফ অমিত, সংবাদকর্মী


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাউল সাধক চান মিয়া এবং আমার কিছু উপলব্ধি

"রজনী হইসনা অবসান  আজ নিশিতে আসতে পারেবন্ধু কালাচাঁন।। কত নিশি পোহাইলোমনের আশা মনে রইলো রে কেন বন্ধু আসিলোনা জুড়ায়না পরান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। বাসর সাজাই আসার আশেআসবে বন্ধু নিশি শেষে দারূন পিরিতের বিষে ধরিল উজান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। মেঘে ঢাকা আঁধার রাতে কেমনে থাকি একা ঘরে সাধক চাঁনমিয়া কয় কানতে কানতে হইলাম পেরেশান আজ নিশিতে আসতে বন্দু কালাচাঁন।"    গভীর নিশিতে ধ্যান মগ্ন হয়ে কালাচাঁনের অপেক্ষা করছেন সাধক।  সাধক চান মিয়ার শিষ্য বাউল সিরাজউদ্দিনের মতে এটি একটি রাই বিচ্ছেদ। কৃষ্ণের অপেক্ষায় রাধা নিশি বা রাতকে অনুরোধ করছেন 'রাত' যেন না পোহায়  কারণ তার কালা চান যে কোন সময় আসতে পারে। শব্দগুচ্ছ গুলো থেকে সহজেই উপলব্ধি হয় সাধক নিজ দেহকে রাধা আর আত্মাকে কৃষ্ণের সাথে তুলনা করেছেন। দেহ আত্মার মিলন ঘটানোই ছিল সাধকের সাধনা।        বাউল সাধক চান মিয়া উপরোক্ত গানটি রচনা করেছেন। নেত্রকোনা জেলার খাটপুরা গ্রামে ১৩২৫ বঙ্গাব্দে সাধক চান মিয়ার জন্ম। পুরো নাম চান্দেজ্জামান আকন্দ হলেও বা...

বাউল, বাউলতত্ব এবং কিছু কথা

একজন ভদ্র বন্ধু বরের সাথে বাউল সম্প্রদায় নিয়ে বেশ তর্ক হলো রাতে। তর্কের সূত্রপাত ছিল বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী। ভাবলাম "বাউলতত্ত্ব"র আলোকে বাউলরা ভাববাদী নাকি বস্তুবাদী তা নিয়ে যৌক্তিক আলোচনা আবশ্যম্ভাবী। কয়েকটি ধারাবাহিক পর্ব লিখে নিজের মনোভাব বোঝানোর চেষ্টা করব।  শুরুতেই শক্তিনাথ ঝাঁ এর বস্তুবাদী বাউল বই থেকে কিছু কথা লিখতে চাই; বাস্তব জগত ও জীবনকে এরা কোন আনুমানিক যুক্তি বা আলৌকিক যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে নারাজ। জৈব রাসায়নিক ব্যাখায় এরা নারীর রজঃ এবং পুরুষের বিজে জীবন ও জগত সৃষ্টিকে ব্যাখা করে এবং চার ভূতকে প্রাকৃতিক সৃষ্টি মনে করে। এভাবে মানুষে, প্রকৃতিতে তৈরি করে প্রাণ, প্রাণী। অনুমান ভিত্তিক স্বর্গ, নরক, পরলোক, পুনর্জন্মাদি প্রত্যক্ষ প্রমাণাভাবে বাউল আগ্রাহ্য করে। মানুষ ব্যাতিরিক্ত ঈশ্বরও এরা মানে না। সৃষ্টির নিয়মকে জেনে যিনি নিজেকে পরিচালনা করতে শিখেছেন- তিনিই সাঁই। সুস্থ নিরোগ দীর্ঘজীবন এবং আনন্দকে অনুভব করার বাউল সাধনা এক আনন্দমার্গ।।  বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী এর অনেক সূক্ষ বিশ্লেষণ শক্তিনাথের বস্তুবাদী বাউল বইটির মধ্যে আলকপাত করা হয়েছে। সাধারণ সমাজে এ ধা...

ভাইবে রাধারমণ

তখন কলেজের ছাত্র। বাংলা বিভাগের প্রভাষক শ্রদ্ধেয় রেজা স্যারের সাথে খুবই ভালো সম্পর্ক। কলেজের প্রথম দিনই স্যারকে খুব পছন্দ। তারপর স্যারের সাথে গল্প, সমাজ, রাজনীতি, সাহিত্য নিয়ে আলোচনা। রীতিমত ফিজিক্স, বায়োলোজি ক্লাস ফাঁকি দিলেও বাংলা ক্লাস কখনই ফাঁকি দিতাম না। খুব উপভোগ করতাম স্যারের ক্লাস। হোস্টেল সুপার হিসেবে স্যার ( ওহী আলম রেজা) আমাদের সাথেই থাকতেন। আমরা আসার প্রায় নয় মাস পর স্যার এলেন সুপার হিসেবে। প্রতিদিন রাতে খাবার পরেই স্যারের রুমে গিয়ে আড্ডা হত, গানের আসর হত। স্যারের পিসিতে প্রায়ই গান শুনতাম আমরা। একদিন হঠাৎ করেই একটি গান স্যার প্লে করলেন 'আমার বন্ধু দয়াময় তোমারে দেখিবার মনে লয়। তোমারে না দেখলে রাধার জীবন কেমনে রয় বন্ধুরে।। কদম ডালে বইসারে বন্ধু ভাঙ্গ কদম্বের আগা। শিশুকালে প্রেম শিখাইয়া যৌবনকালে দাগা রে।। তমাল ডালে বইসারে বন্ধু বাজাও রঙের বাশি। সুর শুনিয়া রাধার মন হইলো যে উদাসি রে।। ভাইবে রাধা রমন বলে মনেতে ভাবিয়া। নিভা ছিল মনের আগুন কে দিলাই জ্বালাইয়া রে।' গানের কথাগুলো বেশ ভালো লেগে গেলো। পুর গানটি শুনে বুঝলাম গানটি সাধক রাধারম...