সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি চলচ্চিত্রের ভিডিও ফুটেজের ছবিতে ফেঞ্চুগঞ্জ নাম দেখে চোখ লেপ্টে গেলো অখানেই। বেশ অবাক হলাম, কি ব্যাপার ফেঞ্চুগঞ্জ এর নাম এখানে কেন। গত দুদিন থেকে এটা নিয়ে বেশ ঘাঁটাঘাঁটি করে ফলাফল পেয়ে গেলাম। বেশ কিছু ইতিহাস খুঁজে বের করলাম ৭০ এর দশকে সাড়া জাগানো বাংলা ছায়াছবি 'বিনিময়' চলচ্চিত্রের শুটিং হয়েছিল আমাদের ফেঞ্চুগঞ্জ সারকারখানায়। পরবর্তীতে চলচ্চিত্রটি দেখে পুরো কনফার্ম হলাম এই ছায়াছবির প্রায় আশিভাগ শুটিং হয়েছে আমার জন্মস্থান, প্রিয় ফেঞ্চুগঞ্জ এ।
চলচ্চিত্রটি দেখে জানলাম, ফেঞ্চুগঞ্জ সারকারখানা, মনিপুর চা বাগান, উত্তরভাগ চা বাগান, চানভাগ চা বাগান, ফেঞ্চুগঞ্জ সারকারখানার অফিসার্স ক্লাব, ফেঞ্চুগঞ্জ সারকারখানার প্রবেশ পথ পুরান বাজার রেল লাইন, ছায়ানীড় সিনেমা হল,গেস্ট হাউজ এবং ফেঞ্চুগঞ্জ সারখানার ভেতরে অনেক শুট নেওয়া হয়েছে ছবিতে।
ছায়াছবির বায়োডাটা ঘেটে জানা যায়, ফেঞ্চুগঞ্জ সারকারখানার অফিসার্স ক্লাবের সাথে সংশ্লিষ্ট অনেকেই সেখানে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। ফেঞ্চুগঞ্জ সারকারখানায় কর্মরত আমাদের অনেক শ্রমিক বাবা চাচারা তৎকালীন সময়ে ছায়াছবিটির শুটিং এ সহযোগিতা করেছিলেন। ছায়াছবিটির প্রারম্ভে ইপিআইডিসি অর্থাৎ ইস্ট পাকিস্তান ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল ডেভোলাপমেন্ট করপোরেশন ব্যবহার করা হয়েছে কারণ তখন দেশ স্বাধীন হয়নি তখনো, যেহেতু ১৯৭০ সাল ছিল। বর্তমানে আমরা বিআইডিসি অর্থাৎ বাংলাদেশ ডেভোলাপমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিয়াল করপোরেশন বলি। বাংলাদেশ শিল্প মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ক্যামিক্যাল ইন্ড্রাস্টিয়াল করপোরেশন বর্তমানে শাহজালাল সারকারখানা নবনির্মিত, এবং পুরোনো ফেঞ্চুগঞ্জ সারকারখানা (বন্ধ উৎপাদন) দুটোকেই ততত্ত্বাবধান করে আসছে।
এই ছবিটির শুটিং স্পট নিয়ে ঘাটাঘাটি করার এক পর্যায়ে তৎকালীন নাট্যকর্মীরা জানালেন- এটি আমাদের ছায়ানীড় সিনেমা হলের টিকেট কাউন্টার,এটি বিনিময় ছবির একটি দৃশ্য।এই ছবির ৮০ ভাগ শুটিং হয়েছে মনিপুর চা বাগানের গেষ্ট হাউস,মাইজগাঁও এর রাস্তা,ছায়ানীর সিনেমা হল,এবং বি আইডিসি-র বিভিন্ন লোকেশনে।
তৎকালীন সময়ে শুটিং এর সাথে জড়িত প্রবীণ শামসুমানা সুলতানা স্মৃতিচারণ করে বলেন- আমি তখন ওখানে ছিলাম, সুভাস দাদা, হাসমত, দিলিপ দাদা। আমাদের বাসাতে আসতেন সুভাস দা বাবা কে বলে আমাকে নায়িকা হবার কথা।বাবা খুব রেগে গিয়েছিলো, তার পর আর বলবোনা। দিলিপদা চিঠি লিখতেন।
ছবিটির বায়োগ্রাফি থেকে জানলাম,এটি পরিচালনা করেছেন বাংলাদেশের বিখ্যাত পরিচালক সুভাষ দত্ত। ছবিটির দুটি প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন কবরী ও উজ্জল। ক্লাসিক এই ছবিটি সেসময় দারুন জনপ্রিয়তা লাভ করে। উইকিপিডিয়ার তথ্য থেকে জানা যায়,পরিচালক- সুভাষ দত্ত
প্রযোজক- রমলাসাহা,শ্রেষ্ঠাংশে-উজ্জল,কবরী,আনোয়ার হোসেন,সুভাষ দত্ত, সুরকার- সত্য সাহা, পরিবেশক- স্বরলিপি বাণীচিত্র।

তিনি জানান, পুরো সিনেমা টি ইউটিউবে নাই । আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে অফিসার্স ক্লাবের টেনিস কোটে নায়ক উজ্জ্বল টেনিস বল ছুঁড়ে মেরে ছিলেন এবং সেটা ধরেছিলেন নায়িকা কবরী। তাছাড়া ইন্দানগর চা বাগানের গানের শুটিং ও আমি দেখেছি।
আমরা যারা ফেঞ্চুগঞ্জ এর নতুন প্রজন্ম আমরা অনেকেই এ ব্যাপারে জানতাম না। আমি যতটুকু জানলাম, লিপিবদ্ধ করে রাখলাম। ফেঞ্চুগঞ্জ সারকারখানা একটি ঐতিহাসিক তথা বাণিজ্যিক এলাকা সিলেট তথা পুরো বাংলাদেশের। বাংলাদেশে তথা এশিয়ার প্রথম সারকারখানা ন্যাচারাল গ্যাস ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি এখানেই অবস্থিত। পাকিস্তান পরবর্তী স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম লগ্নে দেশের সিংহভাগ শিল্প বাণিজ্য এইবসারকারখার উপর ভিত্তি করে শিল্পের চাকা ঘুরতো, দেশের কৃষিতে লক্ষ লক্ষ টন সারের যোগান দিত।
লিখেছেন- চৌধুরী মারূফ, সাংবাদিক
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন