সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

অনলাইন টিভি লাইভ, কি ভাবছি ?

অসংখ্য লাইভ প্রতিদিন দেখতে হয়। বিশেষ করে অনলাইন টিভি লাইভ। আসলে অনলাইন টিভি কি ? ব্যাপারটা আমি এখনো পরিষ্কার নই! টেলিভিশন সম্প্রচার হলে ত ২৪ ঘন্টা সাত দিন সম্প্রচার থাকবে। অথবা চ্যানেল হলে বা ইউটিউব একাউন্ট হলে শুধু মাত্র ভিডিও ফুটেজ থাকবে। কিন্তু অনলাইন টিভি , না আছে ধারাবাহিক সম্প্রচার, না আছে শুধু মাত্র ভিডিও ফুটেজ! আসলে কি এই অনলাইন টেলিভিশন। একটি সম্প্রচার মাধ্যম করতে হলে ত নির্দিষ্ট গুণগত মান থাকবে, কিছু সম্প্রচার নীতি থাকবে। শুধু মাত্র একটি নিউজ বুম (মাইক্রোফোন) যদি টিভি রিপোর্টিং এর প্রতীক বা আইডেন্টি বা একমাত্র পরিচয় হয়ে যায় , তাহলে আমি আমরা বা আমাদের সমাজ এই মাধ্যম থেকে কতখানি উপকৃত হচ্ছি। 


একটি ঘটনা কিছু দিন আগে দেখলাম। সিলেটের চৌহাট্টা এলাকায় বোমা সাদৃশ্য একটি ড্রিল ম্যাশিন নিয়ে তোলপাড় হলো। এই ঘটনার সর্বশেষ অবস্থা জানাতে হাজারো সাংবাদিকের ভীড় দেখা গেলো। এক নিউজের নামে একাধিক বুম! ব্যাপারটি বোঝলাম না আসলে প্রচার মাধ্যম সমাজের ভূমিকায় নাকি ঘটনা লাইভ টেলিকাস্টের ভূমিকায়। করোনা মহামরির পর থেকে লাইভ শব্দটা বিশাল ভাবে প্রচলিত। হ্যাঁ, লাইভ ভালো, তথ্য ছড়িয়ে দিতে হয় কিন্তু যখন সংবাদ মাধ্যম, টেলিভিশন টেলিকাস্ট প্রসঙ্গ চলে আসে নিশ্চই সেখানে কিছু নিয়ম থাকে, গঠনতান্ত্রিক ব্যাপার থাকে। 


প্রচার মাধ্যমের আমি কোন ভাবেই বিরোধীতা করছিনা, বরং প্রচার মাধ্যমে মুক্ত লেখনি প্রচার রুখতে ডিজিটাল সিকিউরিটি এক্ট নামক যে আইন বাংলাদেশে কালো থাবার মত চেপে আছে সেটার বিরোধী আমি। কিন্তু এই লাইভের মাধ্যমে আমরা কতখানি উপকৃত হচ্ছি। সমাজ রাজনীতি নিইয়ে কতখানি আলোচনা হচ্ছে । ইদানিং দেখা যায়, স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম বিশেষ করে অনলাইন পত্রিকা বা প্রিন্ট পত্রিকার অনলাইন ভার্সন বা ফেসবুক পেইজে বেশ কিছু লাইভ আলোচনা করা হয়।  এট ভালো , কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নির্দিষ্ট কিছু মানুষ ঘুরে ফিরে এক জায়গায়। রাজনীতির কথা বলতে গেলে ক্ষমতাসীন স্থানীয় নেতারা বেশি, বিরোধী পক্ষের কেউ নেই। এক ধারায় আলোচনা, হুজুর হুজুর ঠিক ঠিক, এসব'ই। এসব আলোচনা থেকে সমাজের সমস্যা, রাজনীতির সমস্যা কতখানি নির্ণইয় হয়েছে ? আমার ত মনে হয় এক শতাংশ'ও নয়। এসব জায়গায় সমাধানের তেমন কোন কথায় উঠে আসছে না।


উদাহরণ স্বরূপ বলি, মনে করি সুনামগঞ্জের হাওর অঞ্চলের কোন স্থানীয় নেতা আলোচনায় আসছেন। কিন্তু তিনি মূলত হাওরে কি সমস্যা সেটা তুলে ধরছেন না। শুধু উনারা কতখানি করেছেন তা বলে যাচ্ছেন।  কিন্তু কি সমস্যা রয়েছে তা তুলে ধরছেন না। এখানে দুটি প্রশ্ন আমার মনে, একটি হচ্ছে, যা করেছেন ভালো, কিন্তু এই ভালো দিয়ে মূল সমস্যা এড়িয়ে যাচ্ছেন না'ত? দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে- এই সমস্যা গুলোর সমাধান আদৌতে না হয়ে উনার নিজেকে প্রমোটিং করে যাচ্ছেন না'ত ? 


টেলিকাস্ট ভালো, গণমাধ্যম ভালও। পত্রিকা, অনলাইন জার্নাল, টিভি চ্যানেল বাড়লে ভালো। প্রচার হয় , সম্প্রচার হয়। কিন্তু প্রচার মাধ্যমের নামে যদি নিজে প্রমোটার বা প্রমোটার হয়ে ফায়দা হাসিল হয় তবে সেই প্রচার মাধ্যম আমাদের সমাজের সমস্যা, দেশের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কতখানি ভূমিকা রাখছে, বা রাখতে পারবে।


ব্যক্তিগত চ্যানেল হলে তার ব্যক্তিগত ইস্যু হোক। রাজনৈতিক একমুখী হলে মুখপত্র হোক। কিন্তু যদি সার্বজনীন হয় তবে অবশ্যই সমাজবান্ধব হওয়া উচিৎ। তা না হলে প্রচার মাধ্যম হবে গুজব গুদাম অথবা তৈলাক্ত গুদাম। সাধারন মানুষ হালচালেই থেকে যাবে। 


লিখেছেনঃ চৌধুরী মারূফ, সাংবাদিক      

ছবি, লেখক



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাউল সাধক চান মিয়া এবং আমার কিছু উপলব্ধি

"রজনী হইসনা অবসান  আজ নিশিতে আসতে পারেবন্ধু কালাচাঁন।। কত নিশি পোহাইলোমনের আশা মনে রইলো রে কেন বন্ধু আসিলোনা জুড়ায়না পরান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। বাসর সাজাই আসার আশেআসবে বন্ধু নিশি শেষে দারূন পিরিতের বিষে ধরিল উজান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। মেঘে ঢাকা আঁধার রাতে কেমনে থাকি একা ঘরে সাধক চাঁনমিয়া কয় কানতে কানতে হইলাম পেরেশান আজ নিশিতে আসতে বন্দু কালাচাঁন।"    গভীর নিশিতে ধ্যান মগ্ন হয়ে কালাচাঁনের অপেক্ষা করছেন সাধক।  সাধক চান মিয়ার শিষ্য বাউল সিরাজউদ্দিনের মতে এটি একটি রাই বিচ্ছেদ। কৃষ্ণের অপেক্ষায় রাধা নিশি বা রাতকে অনুরোধ করছেন 'রাত' যেন না পোহায়  কারণ তার কালা চান যে কোন সময় আসতে পারে। শব্দগুচ্ছ গুলো থেকে সহজেই উপলব্ধি হয় সাধক নিজ দেহকে রাধা আর আত্মাকে কৃষ্ণের সাথে তুলনা করেছেন। দেহ আত্মার মিলন ঘটানোই ছিল সাধকের সাধনা।        বাউল সাধক চান মিয়া উপরোক্ত গানটি রচনা করেছেন। নেত্রকোনা জেলার খাটপুরা গ্রামে ১৩২৫ বঙ্গাব্দে সাধক চান মিয়ার জন্ম। পুরো নাম চান্দেজ্জামান আকন্দ হলেও বা...

বাউল, বাউলতত্ব এবং কিছু কথা

একজন ভদ্র বন্ধু বরের সাথে বাউল সম্প্রদায় নিয়ে বেশ তর্ক হলো রাতে। তর্কের সূত্রপাত ছিল বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী। ভাবলাম "বাউলতত্ত্ব"র আলোকে বাউলরা ভাববাদী নাকি বস্তুবাদী তা নিয়ে যৌক্তিক আলোচনা আবশ্যম্ভাবী। কয়েকটি ধারাবাহিক পর্ব লিখে নিজের মনোভাব বোঝানোর চেষ্টা করব।  শুরুতেই শক্তিনাথ ঝাঁ এর বস্তুবাদী বাউল বই থেকে কিছু কথা লিখতে চাই; বাস্তব জগত ও জীবনকে এরা কোন আনুমানিক যুক্তি বা আলৌকিক যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে নারাজ। জৈব রাসায়নিক ব্যাখায় এরা নারীর রজঃ এবং পুরুষের বিজে জীবন ও জগত সৃষ্টিকে ব্যাখা করে এবং চার ভূতকে প্রাকৃতিক সৃষ্টি মনে করে। এভাবে মানুষে, প্রকৃতিতে তৈরি করে প্রাণ, প্রাণী। অনুমান ভিত্তিক স্বর্গ, নরক, পরলোক, পুনর্জন্মাদি প্রত্যক্ষ প্রমাণাভাবে বাউল আগ্রাহ্য করে। মানুষ ব্যাতিরিক্ত ঈশ্বরও এরা মানে না। সৃষ্টির নিয়মকে জেনে যিনি নিজেকে পরিচালনা করতে শিখেছেন- তিনিই সাঁই। সুস্থ নিরোগ দীর্ঘজীবন এবং আনন্দকে অনুভব করার বাউল সাধনা এক আনন্দমার্গ।।  বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী এর অনেক সূক্ষ বিশ্লেষণ শক্তিনাথের বস্তুবাদী বাউল বইটির মধ্যে আলকপাত করা হয়েছে। সাধারণ সমাজে এ ধা...

ভাইবে রাধারমণ

তখন কলেজের ছাত্র। বাংলা বিভাগের প্রভাষক শ্রদ্ধেয় রেজা স্যারের সাথে খুবই ভালো সম্পর্ক। কলেজের প্রথম দিনই স্যারকে খুব পছন্দ। তারপর স্যারের সাথে গল্প, সমাজ, রাজনীতি, সাহিত্য নিয়ে আলোচনা। রীতিমত ফিজিক্স, বায়োলোজি ক্লাস ফাঁকি দিলেও বাংলা ক্লাস কখনই ফাঁকি দিতাম না। খুব উপভোগ করতাম স্যারের ক্লাস। হোস্টেল সুপার হিসেবে স্যার ( ওহী আলম রেজা) আমাদের সাথেই থাকতেন। আমরা আসার প্রায় নয় মাস পর স্যার এলেন সুপার হিসেবে। প্রতিদিন রাতে খাবার পরেই স্যারের রুমে গিয়ে আড্ডা হত, গানের আসর হত। স্যারের পিসিতে প্রায়ই গান শুনতাম আমরা। একদিন হঠাৎ করেই একটি গান স্যার প্লে করলেন 'আমার বন্ধু দয়াময় তোমারে দেখিবার মনে লয়। তোমারে না দেখলে রাধার জীবন কেমনে রয় বন্ধুরে।। কদম ডালে বইসারে বন্ধু ভাঙ্গ কদম্বের আগা। শিশুকালে প্রেম শিখাইয়া যৌবনকালে দাগা রে।। তমাল ডালে বইসারে বন্ধু বাজাও রঙের বাশি। সুর শুনিয়া রাধার মন হইলো যে উদাসি রে।। ভাইবে রাধা রমন বলে মনেতে ভাবিয়া। নিভা ছিল মনের আগুন কে দিলাই জ্বালাইয়া রে।' গানের কথাগুলো বেশ ভালো লেগে গেলো। পুর গানটি শুনে বুঝলাম গানটি সাধক রাধারম...