সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কাজী নজরুলের 'আমার পথ '

দ্রোহ, প্রেম, সাম্য ও সৌন্দর্যের কবি কাজী নজরুল ইসলাম৷ সত্য প্রকাশের দুরন্ত সাহস নিয়ে তিনি বাংলা সাহিত্যে আবির্ভুত হন৷  একহাতে বাঁশি আরেক হাতে রণতূর্য নিয়ে তাঁর অাগমন। 

মূলত কবি হলেও বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় তিনি বিচরণ করেছেন। 

' আমার পথ' প্রবন্ধটি কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত প্রবন্ধগ্রন্থ ' রুদ্র-মঙ্গল ' থেকে সংকলিত। 

এ প্রবন্ধে তিনি মানবমুক্তির অনুসঙ্গে অামিত্বের শক্তিকে জোরালো যুক্তি দিয়ে নিঃসংকোচ প্রকাশ করেছেন। 

প্রাবন্ধিক এখানে অাত্মচেতনার অালোক বর্তিকা। তিনি নিজেই নিজের কর্ণধার। কোনো ভয়ের কাছে মাথা নত না করতে বলেছেন। নিজের চেনা পথ, চেনা বিশ্বাসের পথে চলতে বলেছেন। তিনি বলেছেন, পথ দুটি। অালো এবং অন্ধকার। সত্য মানুষকে অালোর পথে টানে অার মিথ্যা, বিভ্রান্তি অন্ধকারে নিয়ে যায়। কারো দাসত্ব করা যাবে না। ভন্ডামি ত্যাগ করতে হবে। 

গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস বলেছেন, know thyself অর্থাৎ নিজেকে জানো। প্রাবন্ধিক এই দার্শনিক তত্বের অালোকেই যেন পাঠককে জানাতে চান, নিজেকে চিনলে নিজের সত্যকে চেনা যায়। নিজেকে চিনলে অাপনা অাপনি মনের মধ্যে একটা শক্তি অাসে। 

ভুলের মধ্যদিয়েই সত্যের সন্ধান করতে হয়। ' সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই' - এ কথার মর্মই মানুষ ধর্মের মূল সুর। অাসলে মানুষ ধর্মই বড় ধর্ম। মানুষে মানুষে প্রানের মিল হলেই সব ধরনের হিংসা, বৈষম্য, গোড়ামি দূর হবে। এক ধর্মের সাথে অারেক ধর্মের বিরোধ মিটে যাবে। একজন প্রকৃত ধার্মিক ব্যাক্তি অন্য ধর্মকে কটাক্ষ করতে পারে না। 

তিনি বিশ্বাস করেন, নিজের ধর্মে বিশ্বাসী ভারতীয় জাতি নিজেদের দ্বন্ধ বিভেদ ভুলে এক সঙ্গে কাজ করতে পারলে লক্ষে পৌঁছানো সম্ভব। 

মূলত কাজী নজরুল ইসলাম এ প্রবন্ধে সত্য প্রকাশ এবং মিথ্যাকে ঘৃণার পাশাপাশি অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রকাশ করেছেন।


 লিখেছেনঃ অহী আলম রেজা,প্রভাষক, সাংবাদিক



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাউল সাধক চান মিয়া এবং আমার কিছু উপলব্ধি

"রজনী হইসনা অবসান  আজ নিশিতে আসতে পারেবন্ধু কালাচাঁন।। কত নিশি পোহাইলোমনের আশা মনে রইলো রে কেন বন্ধু আসিলোনা জুড়ায়না পরান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। বাসর সাজাই আসার আশেআসবে বন্ধু নিশি শেষে দারূন পিরিতের বিষে ধরিল উজান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। মেঘে ঢাকা আঁধার রাতে কেমনে থাকি একা ঘরে সাধক চাঁনমিয়া কয় কানতে কানতে হইলাম পেরেশান আজ নিশিতে আসতে বন্দু কালাচাঁন।"    গভীর নিশিতে ধ্যান মগ্ন হয়ে কালাচাঁনের অপেক্ষা করছেন সাধক।  সাধক চান মিয়ার শিষ্য বাউল সিরাজউদ্দিনের মতে এটি একটি রাই বিচ্ছেদ। কৃষ্ণের অপেক্ষায় রাধা নিশি বা রাতকে অনুরোধ করছেন 'রাত' যেন না পোহায়  কারণ তার কালা চান যে কোন সময় আসতে পারে। শব্দগুচ্ছ গুলো থেকে সহজেই উপলব্ধি হয় সাধক নিজ দেহকে রাধা আর আত্মাকে কৃষ্ণের সাথে তুলনা করেছেন। দেহ আত্মার মিলন ঘটানোই ছিল সাধকের সাধনা।        বাউল সাধক চান মিয়া উপরোক্ত গানটি রচনা করেছেন। নেত্রকোনা জেলার খাটপুরা গ্রামে ১৩২৫ বঙ্গাব্দে সাধক চান মিয়ার জন্ম। পুরো নাম চান্দেজ্জামান আকন্দ হলেও বা...

বাউল, বাউলতত্ব এবং কিছু কথা

একজন ভদ্র বন্ধু বরের সাথে বাউল সম্প্রদায় নিয়ে বেশ তর্ক হলো রাতে। তর্কের সূত্রপাত ছিল বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী। ভাবলাম "বাউলতত্ত্ব"র আলোকে বাউলরা ভাববাদী নাকি বস্তুবাদী তা নিয়ে যৌক্তিক আলোচনা আবশ্যম্ভাবী। কয়েকটি ধারাবাহিক পর্ব লিখে নিজের মনোভাব বোঝানোর চেষ্টা করব।  শুরুতেই শক্তিনাথ ঝাঁ এর বস্তুবাদী বাউল বই থেকে কিছু কথা লিখতে চাই; বাস্তব জগত ও জীবনকে এরা কোন আনুমানিক যুক্তি বা আলৌকিক যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে নারাজ। জৈব রাসায়নিক ব্যাখায় এরা নারীর রজঃ এবং পুরুষের বিজে জীবন ও জগত সৃষ্টিকে ব্যাখা করে এবং চার ভূতকে প্রাকৃতিক সৃষ্টি মনে করে। এভাবে মানুষে, প্রকৃতিতে তৈরি করে প্রাণ, প্রাণী। অনুমান ভিত্তিক স্বর্গ, নরক, পরলোক, পুনর্জন্মাদি প্রত্যক্ষ প্রমাণাভাবে বাউল আগ্রাহ্য করে। মানুষ ব্যাতিরিক্ত ঈশ্বরও এরা মানে না। সৃষ্টির নিয়মকে জেনে যিনি নিজেকে পরিচালনা করতে শিখেছেন- তিনিই সাঁই। সুস্থ নিরোগ দীর্ঘজীবন এবং আনন্দকে অনুভব করার বাউল সাধনা এক আনন্দমার্গ।।  বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী এর অনেক সূক্ষ বিশ্লেষণ শক্তিনাথের বস্তুবাদী বাউল বইটির মধ্যে আলকপাত করা হয়েছে। সাধারণ সমাজে এ ধা...

ভাইবে রাধারমণ

তখন কলেজের ছাত্র। বাংলা বিভাগের প্রভাষক শ্রদ্ধেয় রেজা স্যারের সাথে খুবই ভালো সম্পর্ক। কলেজের প্রথম দিনই স্যারকে খুব পছন্দ। তারপর স্যারের সাথে গল্প, সমাজ, রাজনীতি, সাহিত্য নিয়ে আলোচনা। রীতিমত ফিজিক্স, বায়োলোজি ক্লাস ফাঁকি দিলেও বাংলা ক্লাস কখনই ফাঁকি দিতাম না। খুব উপভোগ করতাম স্যারের ক্লাস। হোস্টেল সুপার হিসেবে স্যার ( ওহী আলম রেজা) আমাদের সাথেই থাকতেন। আমরা আসার প্রায় নয় মাস পর স্যার এলেন সুপার হিসেবে। প্রতিদিন রাতে খাবার পরেই স্যারের রুমে গিয়ে আড্ডা হত, গানের আসর হত। স্যারের পিসিতে প্রায়ই গান শুনতাম আমরা। একদিন হঠাৎ করেই একটি গান স্যার প্লে করলেন 'আমার বন্ধু দয়াময় তোমারে দেখিবার মনে লয়। তোমারে না দেখলে রাধার জীবন কেমনে রয় বন্ধুরে।। কদম ডালে বইসারে বন্ধু ভাঙ্গ কদম্বের আগা। শিশুকালে প্রেম শিখাইয়া যৌবনকালে দাগা রে।। তমাল ডালে বইসারে বন্ধু বাজাও রঙের বাশি। সুর শুনিয়া রাধার মন হইলো যে উদাসি রে।। ভাইবে রাধা রমন বলে মনেতে ভাবিয়া। নিভা ছিল মনের আগুন কে দিলাই জ্বালাইয়া রে।' গানের কথাগুলো বেশ ভালো লেগে গেলো। পুর গানটি শুনে বুঝলাম গানটি সাধক রাধারম...