সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

উদীয়মান দেশের নারী কর্মজীবী (প্রথম পর্ব)

 যে কর্মের বিনিময়ে রমনীর অর্থ প্রাপ্তি ঘটে কর্মজীবী রমনী তার সাথে সম্পর্কযুক্ত,  না ভিন্নার্থে এর ব্যবহার -এটাই আমার কাছে এখনো এক বিরাট প্রশ্নবোধক চিহ্ন!! কর্মের বিনিময়ে বাস্তবিকই কী অর্থ প্রাপ্তি ঘটে ; না এই অর্থের দায় বাড়ে। 

জীবনের রঙ্গমঞ্চে  সবচে' বড় অভিনয় শিল্পী মহিলা; এঁরা আবার অভিনয় করেন নিজের জন্য নয়, কেবল অন্যের তুষ্টির জন্য -- এটা আরও দুঃখজনক। আর কর্মজীবী হলে অভিনয় শিল্পীর পাশাপাশি আরেক কাঠি সত্ত্বায় যোগ হয় যা হলো হীনমন্যতা। 


হীনমন্যতার বিষয়টা পরিষ্কার করি। কর্মজীবী নারীরা এমন ভান করেন বাড়িতে ফিরে যেন সারাদিন বাইরে  ছিলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অন্যায়টা করার জন্যে। তাই নিজের ক্লান্ত তনুর দিকে দৃকপাত না করে ঝাঁপিয়ে পড়েন তার অনুপস্থিতিতে ঘর-গেরস্থালির যা ক্ষতি হলো তা পূরণে। পাশাপাশি ঘরের সবার মন রক্ষা করে হুড়মুড় করে যখন অফিসে ঢুকেন তখনও অপরাধীর দৃষ্টি নিয়ে সবার দিকে তাকান। অথচ এই পরিস্থিতির জন্যে মহিলাটি নিজে কিন্তু দায়ী নন্ যা তিনি ভুলে যান। এই হীনমন্যতা থেকে বেরুনো জরুরি। এখন অবশ্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিস্থিতির পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়, যা যথেষ্ট নয়।


আমাদের এতদ্অঞ্চলে অবচেতন মনে এখনও কাঁটা খচখচ করে যে মহিলারা হয়তো কম বুঝেন বা কম দক্ষ ও যোগ্য।  তাইতো রাষ্ট্রক্ষমতার সর্বোচ্চ নারী হওয়া সত্ত্বেও  আমার বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখেছি, 

অধিকাংশ অফিসে যেকোনো কমিটির প্রধান পুরুষ। নারী প্রকৃতিগতভাবেই ক্ষমতাধর। কারণ একজন নারীর আলাদাভাবে সংসারের প্রতিটি সদস্যের মন জুগাতে হয়, প্রত্যেকের কথা আলাদাভাবে গুরুত্ব দিয়ে শুনে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হয় হোক তা রান্না,  খাওয়া বা পড়া। 

তদুপরি বাড়ির বাইরে কর্মক্ষেত্র হলে তো কথাই নেই। সংসারের পাশাপাশি সেই ক্যালকুলেশন এবং সামাজিকতা সবকিছু একসাথে মাথায় রেখে চলতে হয়। তাই বুদ্ধিমত্তার চর্চা ও বিকাশে দশভুজাদের বিকল্প কোথায়!!


লেখকঃ হাসিনা ফেরদৌস, সহকারী অধ্যাপক ( গণিত), ২৪ তম বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা), সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাউল সাধক চান মিয়া এবং আমার কিছু উপলব্ধি

"রজনী হইসনা অবসান  আজ নিশিতে আসতে পারেবন্ধু কালাচাঁন।। কত নিশি পোহাইলোমনের আশা মনে রইলো রে কেন বন্ধু আসিলোনা জুড়ায়না পরান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। বাসর সাজাই আসার আশেআসবে বন্ধু নিশি শেষে দারূন পিরিতের বিষে ধরিল উজান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। মেঘে ঢাকা আঁধার রাতে কেমনে থাকি একা ঘরে সাধক চাঁনমিয়া কয় কানতে কানতে হইলাম পেরেশান আজ নিশিতে আসতে বন্দু কালাচাঁন।"    গভীর নিশিতে ধ্যান মগ্ন হয়ে কালাচাঁনের অপেক্ষা করছেন সাধক।  সাধক চান মিয়ার শিষ্য বাউল সিরাজউদ্দিনের মতে এটি একটি রাই বিচ্ছেদ। কৃষ্ণের অপেক্ষায় রাধা নিশি বা রাতকে অনুরোধ করছেন 'রাত' যেন না পোহায়  কারণ তার কালা চান যে কোন সময় আসতে পারে। শব্দগুচ্ছ গুলো থেকে সহজেই উপলব্ধি হয় সাধক নিজ দেহকে রাধা আর আত্মাকে কৃষ্ণের সাথে তুলনা করেছেন। দেহ আত্মার মিলন ঘটানোই ছিল সাধকের সাধনা।        বাউল সাধক চান মিয়া উপরোক্ত গানটি রচনা করেছেন। নেত্রকোনা জেলার খাটপুরা গ্রামে ১৩২৫ বঙ্গাব্দে সাধক চান মিয়ার জন্ম। পুরো নাম চান্দেজ্জামান আকন্দ হলেও বা...

বাউল, বাউলতত্ব এবং কিছু কথা

একজন ভদ্র বন্ধু বরের সাথে বাউল সম্প্রদায় নিয়ে বেশ তর্ক হলো রাতে। তর্কের সূত্রপাত ছিল বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী। ভাবলাম "বাউলতত্ত্ব"র আলোকে বাউলরা ভাববাদী নাকি বস্তুবাদী তা নিয়ে যৌক্তিক আলোচনা আবশ্যম্ভাবী। কয়েকটি ধারাবাহিক পর্ব লিখে নিজের মনোভাব বোঝানোর চেষ্টা করব।  শুরুতেই শক্তিনাথ ঝাঁ এর বস্তুবাদী বাউল বই থেকে কিছু কথা লিখতে চাই; বাস্তব জগত ও জীবনকে এরা কোন আনুমানিক যুক্তি বা আলৌকিক যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে নারাজ। জৈব রাসায়নিক ব্যাখায় এরা নারীর রজঃ এবং পুরুষের বিজে জীবন ও জগত সৃষ্টিকে ব্যাখা করে এবং চার ভূতকে প্রাকৃতিক সৃষ্টি মনে করে। এভাবে মানুষে, প্রকৃতিতে তৈরি করে প্রাণ, প্রাণী। অনুমান ভিত্তিক স্বর্গ, নরক, পরলোক, পুনর্জন্মাদি প্রত্যক্ষ প্রমাণাভাবে বাউল আগ্রাহ্য করে। মানুষ ব্যাতিরিক্ত ঈশ্বরও এরা মানে না। সৃষ্টির নিয়মকে জেনে যিনি নিজেকে পরিচালনা করতে শিখেছেন- তিনিই সাঁই। সুস্থ নিরোগ দীর্ঘজীবন এবং আনন্দকে অনুভব করার বাউল সাধনা এক আনন্দমার্গ।।  বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী এর অনেক সূক্ষ বিশ্লেষণ শক্তিনাথের বস্তুবাদী বাউল বইটির মধ্যে আলকপাত করা হয়েছে। সাধারণ সমাজে এ ধা...

ভাইবে রাধারমণ

তখন কলেজের ছাত্র। বাংলা বিভাগের প্রভাষক শ্রদ্ধেয় রেজা স্যারের সাথে খুবই ভালো সম্পর্ক। কলেজের প্রথম দিনই স্যারকে খুব পছন্দ। তারপর স্যারের সাথে গল্প, সমাজ, রাজনীতি, সাহিত্য নিয়ে আলোচনা। রীতিমত ফিজিক্স, বায়োলোজি ক্লাস ফাঁকি দিলেও বাংলা ক্লাস কখনই ফাঁকি দিতাম না। খুব উপভোগ করতাম স্যারের ক্লাস। হোস্টেল সুপার হিসেবে স্যার ( ওহী আলম রেজা) আমাদের সাথেই থাকতেন। আমরা আসার প্রায় নয় মাস পর স্যার এলেন সুপার হিসেবে। প্রতিদিন রাতে খাবার পরেই স্যারের রুমে গিয়ে আড্ডা হত, গানের আসর হত। স্যারের পিসিতে প্রায়ই গান শুনতাম আমরা। একদিন হঠাৎ করেই একটি গান স্যার প্লে করলেন 'আমার বন্ধু দয়াময় তোমারে দেখিবার মনে লয়। তোমারে না দেখলে রাধার জীবন কেমনে রয় বন্ধুরে।। কদম ডালে বইসারে বন্ধু ভাঙ্গ কদম্বের আগা। শিশুকালে প্রেম শিখাইয়া যৌবনকালে দাগা রে।। তমাল ডালে বইসারে বন্ধু বাজাও রঙের বাশি। সুর শুনিয়া রাধার মন হইলো যে উদাসি রে।। ভাইবে রাধা রমন বলে মনেতে ভাবিয়া। নিভা ছিল মনের আগুন কে দিলাই জ্বালাইয়া রে।' গানের কথাগুলো বেশ ভালো লেগে গেলো। পুর গানটি শুনে বুঝলাম গানটি সাধক রাধারম...