আমার একজন সম্মানিত সহকর্মী আমার পাশে বসে পূর্ববর্তী পর্ব পড়ার এক পর্যায়ে বললেন, চোখে জল এসে গেল- এতটাই চরম বাস্তবতা!!
বাস্তবিকই বাড়ি ফিরে কাপড় না ছেড়ে গৃহকর্মে ঝাঁপিয়ে পড়ার উদাহরণ প্রচুর। বাড়ি ফিরে ঘণ্টাখানেক বিশ্রাম প্রয়োজন। সন্তান ছোট হলে বদলানোর কাপড় এগিয়ে দিক, বড় হলে এর পাশাপাশি ঠান্ডা বা গরম সতেজ পানীয় মাকে দিক। সন্তানকে বুঝতে দিন আপনি ক্লান্ত।
চাকরির সুবাদে বাইরে থাকার কারণে এক মূহুর্ত নিজের শিথিলতার জন্য দিতে কর্মজীবী নারীর চরম অনীহা। আমার কর্মজীবী মা সম্বন্ধে একটা কথা প্রচলিত ছিল, তিনি কেউ অসুস্থ হলে দেখতে যান নয়তো তাকে কর্মক্ষেত্রের বাইরে বেড়াতে দেখা যায় না।
মানসিক প্রশান্তির বড় সহায়ক প্রকৃতির কাছাকাছি বা নিজের পছন্দসই কিছু সময় ব্যয় করা।
ফিজিওথেরাপি সেন্টার বা হাড়ের ডাক্তারের কাছে হাড় ক্ষয় আর বাতের ব্যাথার প্রায় সমস্ত রোগীই নারী। মনে রাখা দরকার, নিয়মিত ব্যায়াম ও সময়মতো খাদ্যাভ্যাস সুস্থ জীবনযাপনের পূর্বশর্ত।
কর্মজীবী নারীর প্রথম গুরুত্বপূর্ণ ধাক্কা আসে সন্তান লালন-পালনে। এদেশে ডে-কেয়ার সেন্টার নেই বললেই চলে।সরকারি ও বেসরকারি এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব উদ্যোগে শিশু সন্তান লালন-পালনের ব্যবস্থা নেয়া যায়। এতে দু'টো লাভ। প্রথমতঃ কর্মজীবী মাকে সন্তান লালনের ভাবনায় অস্থির হতে হবে না, দ্বিতীয়তঃ ডে-কেয়ার সেন্টারে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। শর্ত হলো, অবশ্যই এদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা ও নিজের সন্তান রাখার সুযোগ থাকতে হবে।
উন্নত বিশ্বের নারীদের জীবনাচরণের দিকে তাকালে সামাজিক দৈন্যের প্রকটতা চোখে পড়ে না।সেখানে সবাই সমানভাবে ছুটে ; স্ত্রী ঘর পরিস্কার করলে অন্য সদস্য রান্না সেরে নিচ্ছেন। একজন প্রবাসী এদেশের কথা লিখেছেন, " মোটামুটি ভালো একটা চাকরি করলে যে কেহই কাজের লোক রাখতে পারে "।এবার আসি এই অনির্দিষ্ট বেতনভোগী গৃহকর্মী প্রসঙ্গে - বেশিরভাগ গৃহকর্মী নারী এবং স্বল্প পরিসরে হলেও তিনিও আমার আপনার মতো একই ধরনের অসুবিধার মুখোমুখি হোন, যা অনস্বীকার্য।
কর্মক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তার বিষয়টা কোনভাবেই অবহেলা করার উপায় নেই।
দুর্গম গিরি, কান্তার মরু, দুস্তর পারাবারল লঙ্ঘিতে হবে--
কারণ, বীর ভোগ্যা বসুন্ধরা। বাঁচুন বীরের মতো ; আত্মসম্মানের জায়গাটা করতে হবে পোক্ত নয়তো অঞ্জন দত্তের 'তোমার আমার লাল- নীল সংসার' মনে হতে পারে কেবল ' সাদা-কালো '। তাই আন্তর্জাতিক নারী দিবসে আত্মসম্মানে বলীয়ান হওয়াই হোক নারীর বেগুনি প্রতিজ্ঞা।
লেখকঃ হাসিনা ফেরদৌস, সহকারী অধ্যাপক ( গণিত), ২৪ তম বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা), সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন