সিলেট ৩ আসন। আমার সংসদীয় আসন, এই আসনের একজন ভোটার আমি। ফেঞ্চুগঞ্জ -বালাগঞ্জ-দক্ষিণ সুরমা এই তিন উপজেলা নিয়ে ৩ লক্ষ ২২ হাজার ২৯৩ জন ভোটারের এই আসন নিয়ে আগামীতে হবে উপ নির্বাচন। প্রয়াত সাংসদ মাহমুদ সামাদের মৃত্যুর পর আগামী জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত হবে উপ নির্বাচন।
মাহমুদ সামাদের মৃত্যুর পর পরই প্রার্থীদের দৌড়ঝাপ শুরু নির্বাচন নিয়ে। বিএনপি জামায়াত সমর্থিত বিরোধী দলীয় জোট এ নির্বাঁচনে অংশগ্রহণ করবেন না বলে মূলত আলোচনায় সরকার দলীয় জোটের নেতারা এবং তাদের শরিক জাতীয় পার্টির প্রার্থীরাও।
সিলেট ৩ আসনকে বলা হয় রিভেঞ্জেবল আসন। এখানে আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয়পার্টি, বামপন্থি (ন্যাপ) সব দল থেকেই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন বিভিন্ন সময়ে। সুতরাং এখানে বলা মুশকিল কে বা কোন দল বা জোট পাশ করবে৷ আবার এখানে জোট মহাজোট মেনেও অনেক সময় নির্বাচন হয়নি৷ এই আসনে মহাজোটে শরিক থাকা সত্ত্বেও জাতীয় পার্টি এবং আওয়ামীলীগের দুই দলেরই প্রার্থী ছিলেন ২০০৮ সালের নির্বাচনে।
মাহমুদ উস সামাদের মৃত্যুর পর এখানে রাজনীতির ঘোল পাল্টেছে বেশ জোরেসোরেই। এখানে যেমন অনেকে দীর্ঘদিন থেকে লেগে থাকার পর একটি সুযোগ পেয়েছেন আবার, অনেকে হঠাৎ করেই উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন। এদিক সেদিক ছুটাছুটি করা রাজনীতিতে ডিগবাজি করা কেউ কেউ বলয় খোঁজ এ বেড়াচ্ছেন, অনেকে আবার পূর্বের নির্দিষ্ট বলয়ে থাকা নেতার সাথে থেকে ধৈর্যের পরীক্ষাও দিচ্ছেন।
তথ্য অনুসারে বিভিন্ন সময়ে এখানে গোয়েন্দা বাহিনীর তথ্য অনুসারে ফেঞ্চুগঞ্জে নির্মিত শাহজালাল সারকারখানার কন্সট্রাকশনে ব্যাপক দুর্নীতির কারণে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী অনেকের উপর নারাজ ছিলেন। আবার দীর্ঘ পরিশ্রম এবং দিক নির্দেশনার কারণে বাংলাদেশের অন্যতম বড় এই প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নিজেই। বিগত দিনে সিলেট জেলা এবং মহানগর আওয়ামীলীগের নতুন কমিটি আসার পর দীর্ঘদিন রাজনীতিতে থাকা অনেকেই মাইনাস ফর্মুলায় পড়েছেন বিগত দিনের দুর্নীতি, কর্মী ব্যবসা, শালিস ব্যবসায় মোটা অংকের টাকা খাওয়ার অভিযোগে। আবার অনেকে আস্থাভাজন হয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে গ্রুপ বলয় থেকে বেরিয়ে সবাইকে নিয়ে কাজ করার জন্য।
বিএনপির প্রশ্ন যদি আসে বিস্কুট এবং ত্রাণের টিন লুটপাটের জন্য সাবেক সাংসদ একেবারেই কোণঠাসা হয়েছেন। সাইফুর রহমানের মৃত্যু, এম ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার কারণে বিএনপির কর্মীরাও ছত্র ভঙ্গ। ইলিয়াস আলী গুমের ব্যাপারটা একদম কাম্য নয়, যদিও বিএনপি আওয়ামীলীগকে দোষারূপ করলেও কিছু দিন আগে মির্জা আব্বাসের বক্তব্য নতুন করে সেই আগুনে ঘি ঢেলা হয়েছে৷
এখানের উপজেলা চেয়ারম্যানরা রাজনীতিতে এক একজন ট্রাম কার্ড। দীর্ঘদিনের কথার প্রচলন এখানে অনেক মহাজোট তথা আওয়ামীলীগের নেতা ঘরোয়া ভাবে কাজ করেন জামায়াত ইসলামের সাথে। যদিও এসব লোক মুখের কথা তবুও এর প্রতিফলনও হয়েছে একবার উপজেলা নির্বাচনে।আওয়ামীলীগের দুইজন প্রার্থী, নেতাদের নিরবতার কারণে দক্ষিণ সুরমা এবং ফেঞ্চুগঞ্জে পাশ করেছেন জামায়াত ইসলামের দুইজন নেতা। এসব কিছু সসম্পূর্ণ ভাবে আসছে নির্বাচনে আবার প্রতিয়মান হবে।
শিল্প অঞ্চল ভিত্তিক এই আসনে আসলে কে আসবেন, কে হবেন সাংসদ বলা মুশকিল। তবে এখানে রাজনৈতিক ভাবে মুনাফালোভী, সুবিধাভোগীদের ডিগবাজি চোখে আংগুল দিয়ে অনেক কিছুর জানান দেয়। পূর্বের একটি প্রবাদ আছে- 'মোস্তাক ত আওয়ামীলীগেরই লোক ছিল'। আসলেই তাই।
সিলেট ৩ এই আসনে অনেকেই ইতোমধ্যে প্রার্থীতা ঘোষণা করেছেন। এদের বেশির ভাগই ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের। কয়েকজন আছেন জাতীয় পার্টির। স্বতন্ত্র দুইএকজন ও আছেন। স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম এই আসনে কোন নারী প্রার্থী নির্বাচন করতে ইচ্ছুক। এখানে এমন কিছু প্রার্থী আছেন যারা তৃণমূল থেকে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। ছাত্র রাজনীতি করেছেন, এরশাদ বিরোধী আন্দোলন করেছেন। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে ভোটের হিসেবে তারা অনেকেই পিছিয়ে। আইনজীবী আছেন, আছেন ডাক্তার। সরকারের আমলে বিভিন্ন আমলাতান্ত্রিক কার্যক্রমকে কাজে লাগিয়ে তারাও মনোনয়ন চান আওয়ামীলীগ থেকে। প্রবাসে রাজনীতি করে দীর্ঘদিন দেশে থেকে কাজ করে সুযোগে পিছুপা হতে চাননা কেউ কেউ। বাদ নেই গণমাধ্যম কর্মীও।
সবকিছু ছাঁপিয়ে নির্বাচনী প্রচারণার ধরণ এখন বদলেছে। করোনাকালীন সময়কে কাজে লাগিয়ে লকডাউনে আটকে থাকা নিম্নবিত্ত মানুষদের জন্য প্রতিযোগিতার ভিত্তিকে ত্রাণ বিতরণ হচ্ছে, এটা ভাল দিক। আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে ফেসবুক প্রচারেও নেমেছেন কেউ কেউ। সাথে আছে সৌজন্য সাক্ষাৎকারে প্রচার প্রচারণা।
পরিশেষে নিষ্ঠাবান একজন সাংসদ হয়ে আসুন। এটা হতে পরে প্রথম নারী সাংসদ হিসেবে চমক, হতে পারেন বীর মুক্তিযোদ্ধা অথবা দিনরাত কাজ করে থাকা কর্মীবান্ধব কেউ। তবে আমরা এমন কেউ চাইনা যিনি হঠাৎ করে উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন, কালো টাকার প্রভাবে কিনে নিচ্ছেন কর্মী। এবং আমাদের এটাও মাথায় রাখা উচিৎ আজকে আপনি কালো টাকার বিনিমিয়ে যদি কাজ করেন কারো পক্ষে, ক্ষমতা পেলে সেই টাকা তিনি তুলে নেবেন সুদে আসলে। এটাই প্রকৃতি গত নিয়ম। পক্ষে বিপক্ষে বিভিন্ন মতের মধ্যে যোগ্যতার মাধ্যমে, যোগ্য কেউ আসুক৷ যিনি ক্ষমতায় বসে দুর্ব্যবহার করবেন না, সাধারণ হয়ে, সাধারণের জন্য অসাধারণ কাজ করবেন।
লেখকঃ চৌধুরী মারূফ, সাংবাদিক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন