সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

2016 থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

'এই পৃথিবীর অস্তিত্ববোধ রইবেনা আর হেন'

মন ভালো নেই। চুপচাপ বসে আছি। ঘরের কোণায় পড়ে থাকা পুরনো স্পিকারে একের পর এক গান বেজে চলছে। অন্ধকার ঘরে বাহির থেকে এলিয়ে পড়া নীলাভ আলোগুলো ছড়িয়ে আছে রুমের মেঝেতে।, বিছানার আশেপাশে। বন্ধুর কলে হঠাৎ ঘোর কাটলো। এক মিনিট কয়েক সেকেন্ড কথা বলার পর কেটে দিতেই আবার আপনা আপনি গান প্লে হলো।  এই পৃথিবী যেমনি আছে তেমনি ঠিক রবে সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে সেই নগত তলব তাগিত পত্র নেমে আসবে যবে সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে ।। হোক না কেন যত বড় রাজা-জমিদার পাকা-বাড়ি ঝুঁড়ি-গাড়ি ঘড়ি-ট্রেনজিষ্টার তখন থাকবেনা আর কোন অধিকার বিষয়-বৈভয় ভবে ।। চন্দ্র-সূর্য গ্রহ-তারা আকাশ-বাতাস জল যেমন আছে তেমনি সবি রইবে অবিকল মাত্র আমি আর রইব না কেবল জনপূর্ণ ভবে ।। শব্দ-স্পর্শ রূপ-রস গন্ধ বন্ধ হলে যেন এই পৃথিবীর অস্তিত্ববোধ রইবেনা আর হেন পাগল বিজয় বলে সেই দিন যেন এসে পরবে কবে।।  বেশ ভালো লাগলো কথাগুলো। নির্মম হলেও স্বাভাবিক সত্য শব্দঝঙ্কার গুলো। জন্মিলেই চলে যেতে হবে। হারিয়ে যেতে হবে অসীম অন্ধকারে। জীবন আমাদের  প্রবাহমান। কোথাও উত্থান...

মরিলে কান্দিস না আমার দায় এবং একজন গিয়াস উদ্দিন

বাউল কবিদের গান শুনতে খুবই পছন্দ করি। বাউল ফকিরদের জীবন ধারা পছন্দের। বাউল গানগুলো আমার নিত্যদিনের সঙ্গী। নীলাভ বিষাদ, চাপা দুঃখ, আনন্দ, হৈ- হৈ- হৈ হুল্লোড়ের সময় গানগুলোর সাথে স্বভাবতই মিতালী গড়ি, গানগুলোর সুরের মূর্ছনায় ডুবিয়ে দেই নিজেকে। ফকির লালন সাঁই, শাহ আব্দুল করিম, হাসন রাজা, উকিল মুন্সী, দূরবীন শাহ, বিজয় সরকার, বাউল চান মিয়া সহ অজস্র বাউল ফকিরদের রচিত গানের শ্রোতা আমি। এমন কিছু গান আছে যেগুলো চুপচাপ নিদ্রাহীন একা রাতে নিজেকে নতুন করে গড়তে শিখায়- ভেঙ্গে দেয়, আবার নিজেকে নিজের মত করে গড়তে শিখায়। ছোট্ট একটি ঘটনা বলা যায়, গত কয়েকদিন আগে বিশ্ব বন্ধু দিবসে তরুণ চিত্রশিল্পী আব্দুল বাতিন ভাইয়ের স্কুল অফ লিবারেট আর্ট’এ গিয়েছিলাম আড্ডা দিতে। সেখান থেকে হুটহাট প্লানে চলে গেলাম উনার বাসায়। কবি স্বজল ছত্রী, বাতিন ভাই এবং আমি আড্ডা মারলাম লম্বা সময়। ক্লান্ততা রোধে রাত আনুমানিক তিনটার দিকে যখন উনার বিছানায় বিশ্রাম নিচ্ছি তখন হঠাৎ উনার বেডের ডান পাশের দেয়ালে চোখ পড়তেই থমকে গেলাম। কফিনে শুয়ে থাকা এক মরদেহের ছবি। চারপাশে অন্ধকারে ঘিরে থাকা সামান্য কিছু আলো পড়েছে মৃতদেহের মুখের উপর। ছবিটি অদ্...

সুরে সুরে দেহ আত্মার মিলনে বারী সিদ্দিকী

গভীর নিশিতে ধ্যান মগ্ন হয়ে কালাচাঁনের অপেক্ষা করছেন সাধক।  সাধক চান মিয়ার শিষ্য বাউল সিরাজউদ্দিনের মতে এটি একটি রাই বিচ্ছেদ। কৃষ্ণের অপেক্ষায় রাধা নিশি বা রাতকে অনুরোধ করছেন 'রাত' যেন না পোহায়  কারণ তার কালা চান যে কোন সময় আসতে পারে। শব্দগুচ্ছ গুলো থেকে সহজেই উপলব্ধি হয় সাধক নিজ দেহকে রাধা আর আত্মাকে কৃষ্ণের সাথে তুলনা করেছেন। দেহ আত্মার মিলন ঘটানোই ছিল সাধকের সাধনা।          বন্ধু কালাচাঁনের খোঁজা পুরো গানটি হল--    "রজনী হইসনা অবসান  আজ নিশিতে আসতে পারেবন্ধু কালাচাঁন।। কত নিশি পোহাইলোমনের আশা মনে রইলো রে কেন বন্ধু আসিলোনা জুড়ায়না পরান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। বাসর সাজাই আসার আশেআসবে বন্ধু নিশি শেষে দারূন পিরিতের বিষে ধরিল উজান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। মেঘে ঢাকা আঁধার রাতে কেমনে থাকি একা ঘরে সাধক চাঁনমিয়া কয় কানতে কানতে হইলাম পেরেশান আজ নিশিতে আসতে বন্দু কালাচাঁন।"    অন্য আরেকটি গান খুব দাগ কাটে মনে।  শুয়াচান অর্থাৎ আমি মনে করি শুয়ে থাকা চাঁদ। উকিল মুন্সীর ...

ছবিতে হাকালুকি হাওর

ভাইবে রাধারমণ

তখন কলেজের ছাত্র। বাংলা বিভাগের প্রভাষক শ্রদ্ধেয় রেজা স্যারের সাথে খুবই ভালো সম্পর্ক। কলেজের প্রথম দিনই স্যারকে খুব পছন্দ। তারপর স্যারের সাথে গল্প, সমাজ, রাজনীতি, সাহিত্য নিয়ে আলোচনা। রীতিমত ফিজিক্স, বায়োলোজি ক্লাস ফাঁকি দিলেও বাংলা ক্লাস কখনই ফাঁকি দিতাম না। খুব উপভোগ করতাম স্যারের ক্লাস। হোস্টেল সুপার হিসেবে স্যার ( ওহী আলম রেজা) আমাদের সাথেই থাকতেন। আমরা আসার প্রায় নয় মাস পর স্যার এলেন সুপার হিসেবে। প্রতিদিন রাতে খাবার পরেই স্যারের রুমে গিয়ে আড্ডা হত, গানের আসর হত। স্যারের পিসিতে প্রায়ই গান শুনতাম আমরা। একদিন হঠাৎ করেই একটি গান স্যার প্লে করলেন 'আমার বন্ধু দয়াময় তোমারে দেখিবার মনে লয়। তোমারে না দেখলে রাধার জীবন কেমনে রয় বন্ধুরে।। কদম ডালে বইসারে বন্ধু ভাঙ্গ কদম্বের আগা। শিশুকালে প্রেম শিখাইয়া যৌবনকালে দাগা রে।। তমাল ডালে বইসারে বন্ধু বাজাও রঙের বাশি। সুর শুনিয়া রাধার মন হইলো যে উদাসি রে।। ভাইবে রাধা রমন বলে মনেতে ভাবিয়া। নিভা ছিল মনের আগুন কে দিলাই জ্বালাইয়া রে।' গানের কথাগুলো বেশ ভালো লেগে গেলো। পুর গানটি শুনে বুঝলাম গানটি সাধক রাধারম...

বাউল সাধক চান মিয়া এবং আমার কিছু উপলব্ধি

"রজনী হইসনা অবসান  আজ নিশিতে আসতে পারেবন্ধু কালাচাঁন।। কত নিশি পোহাইলোমনের আশা মনে রইলো রে কেন বন্ধু আসিলোনা জুড়ায়না পরান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। বাসর সাজাই আসার আশেআসবে বন্ধু নিশি শেষে দারূন পিরিতের বিষে ধরিল উজান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। মেঘে ঢাকা আঁধার রাতে কেমনে থাকি একা ঘরে সাধক চাঁনমিয়া কয় কানতে কানতে হইলাম পেরেশান আজ নিশিতে আসতে বন্দু কালাচাঁন।"    গভীর নিশিতে ধ্যান মগ্ন হয়ে কালাচাঁনের অপেক্ষা করছেন সাধক।  সাধক চান মিয়ার শিষ্য বাউল সিরাজউদ্দিনের মতে এটি একটি রাই বিচ্ছেদ। কৃষ্ণের অপেক্ষায় রাধা নিশি বা রাতকে অনুরোধ করছেন 'রাত' যেন না পোহায়  কারণ তার কালা চান যে কোন সময় আসতে পারে। শব্দগুচ্ছ গুলো থেকে সহজেই উপলব্ধি হয় সাধক নিজ দেহকে রাধা আর আত্মাকে কৃষ্ণের সাথে তুলনা করেছেন। দেহ আত্মার মিলন ঘটানোই ছিল সাধকের সাধনা।        বাউল সাধক চান মিয়া উপরোক্ত গানটি রচনা করেছেন। নেত্রকোনা জেলার খাটপুরা গ্রামে ১৩২৫ বঙ্গাব্দে সাধক চান মিয়ার জন্ম। পুরো নাম চান্দেজ্জামান আকন্দ হলেও বা...

মানবপ্রেমের বন্দনা: বাউলরা বাঁচুক, বাউল আসর টিকে থাকুক

সাম্প্রতিককালে বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশেও মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ, আঞ্চলিকতাবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা চরম সংকট তৈরি করেছে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় কেঁপে উঠেছে বাংলাদেশ তথা সারা বিশ্ব। ধর্মের দোহাই দিয়ে সিরিয়া, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিনের মাটি আজ রক্তাক্ত, বোমায় প্রকম্পিত বিশ্বের অনেক অঞ্চল। হাজার হাজার ভিন্ন মতালম্বী, সাধারণ মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে সিরিয়ার বুকে। সেখানে নিকৃষ্ট ভাবে হত্যা করা হয়েছে অবুঝ শিশুদের। অনেকে প্রাণের ভয়ে ছেড়েছে দেশ। সাম্প্রদায়িক হামলায় ধ্বংস প্রাপ্ত হয়েছে রামুর বুদ্ধ মন্দিরের মত দেশ, বিদেশের হাজারো দর্শনীয় স্থান। জাত ধর্মের অবমাননার দোহাই দিয়ে জঙ্গীদের হিংস্র হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন দেশের অনেক লেখক, প্রকাশক। ধর্মীয় উস্কানি দিয়ে সাধারণ গ্রামীণ মানুষদের কাছে এসব হত্যাকাণ্ড জায়েজ করার চেষ্টায় ও লিপ্ত একদল কুচক্রী মহল। নিঃসন্দেহেই একটি প্রশ্ন থেকে যায়, কেন বা কি কারণে এসব মৌলবাদী গোষ্ঠী মাথা ঝাড়া দিয়ে বারবার উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিংবা কোন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের অভাবে বার বার মৌলবাদীদের মরণ ছোবল । আজ গ্রাম গঞ্জে যাত্রা, পালা , ঘাটু গান হয় না ব...

বাউল, বাউলতত্ব এবং কিছু কথা

একজন ভদ্র বন্ধু বরের সাথে বাউল সম্প্রদায় নিয়ে বেশ তর্ক হলো রাতে। তর্কের সূত্রপাত ছিল বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী। ভাবলাম "বাউলতত্ত্ব"র আলোকে বাউলরা ভাববাদী নাকি বস্তুবাদী তা নিয়ে যৌক্তিক আলোচনা আবশ্যম্ভাবী। কয়েকটি ধারাবাহিক পর্ব লিখে নিজের মনোভাব বোঝানোর চেষ্টা করব।  শুরুতেই শক্তিনাথ ঝাঁ এর বস্তুবাদী বাউল বই থেকে কিছু কথা লিখতে চাই; বাস্তব জগত ও জীবনকে এরা কোন আনুমানিক যুক্তি বা আলৌকিক যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে নারাজ। জৈব রাসায়নিক ব্যাখায় এরা নারীর রজঃ এবং পুরুষের বিজে জীবন ও জগত সৃষ্টিকে ব্যাখা করে এবং চার ভূতকে প্রাকৃতিক সৃষ্টি মনে করে। এভাবে মানুষে, প্রকৃতিতে তৈরি করে প্রাণ, প্রাণী। অনুমান ভিত্তিক স্বর্গ, নরক, পরলোক, পুনর্জন্মাদি প্রত্যক্ষ প্রমাণাভাবে বাউল আগ্রাহ্য করে। মানুষ ব্যাতিরিক্ত ঈশ্বরও এরা মানে না। সৃষ্টির নিয়মকে জেনে যিনি নিজেকে পরিচালনা করতে শিখেছেন- তিনিই সাঁই। সুস্থ নিরোগ দীর্ঘজীবন এবং আনন্দকে অনুভব করার বাউল সাধনা এক আনন্দমার্গ।।  বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী এর অনেক সূক্ষ বিশ্লেষণ শক্তিনাথের বস্তুবাদী বাউল বইটির মধ্যে আলকপাত করা হয়েছে। সাধারণ সমাজে এ ধা...