সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কখনও সিটি কলেজের পাশে 'রসুই'


রঙ নাম্বারে কথা বলে পরিচয় । পরিচয়ের কয়েক মাস পর হুট করে একদিন দ্যাখা হওয়া । মাসে বার কয়েক কথা ।


এভাবে বছর খানেক । ঢাকায় এসে বেকার জীবন । ততদিনে কথা বলার পরিমাণ বেড়েছে । অনুভবটা স্ফীত হয়েছে । দ্যাখা না হলে খারাপ লাগাটা তখনও তৈরি হয়নি ।
শেওরা পাড়া থেকে ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজে আসার মত টাকাও অনেক সময় থাকত না। কখনও হেটেও এসেছি । ফুচকাটাও সুমির টাকাতেই ।

প্রচণ্ড জ্বর নিয়ে একদিন ঢাকা ছাড়লাম । ফিরলাম মাস তিনেক পর। চাকুরী পেলাম একটা। কুমিল্লা যেতে হল । সেখানেই থাকতে হবে । ফোন করার মত টাকার অভাব নেই । তাই কথা অবিরাম । মাসে দু তিনবার ঢাকা আসা শুরু হল । এরপর প্রতি সপ্তাহে । শুক্রবারে । ২০০৮ সালের ১২ আগস্ট এমনি এক শুক্রবারে আহসান মঞ্জিলে । কেন যেন আর 'তুই' বলতে পারছিলাম না।

কুমিল্লা ছেড়ে এলাম নারায়ণগঞ্জে । প্রতি বৃহস্পতিবার ঢাকা । শনিবারে ফিরি । টিচার্স ট্রেনিং কলেজের ছাত্রী হোস্টেলের গেটে নিয়মিত অপেক্ষা ।

রপর রাজশাহী । মাসে তিনবার ঢাকা । ছাত্রী হোস্টেলের গেট লাগিয়ে দিলে সন্ধ্যায় রাস্তার ওপারে লাটিমী আর জাহান ম্যনশনের নিচে দাঁড়িয়ে এপারের কাঠ বাদামের ফাঁক গলে তিন তলার জানালায় তাকিয়ে ঘণ্টা খানেক ফোনে কথা ।

আশ্রয় হল সিলেটে । প্রায়ই বৃহস্পতিবারের উপবন ট্রেনে ঢাকা । সিট না পেলে দাঁড়িয়ে । সকালে কমলাপুরে নেমে সোজা সাইন্সল্যাব । টিচার্স ট্রেনিং কলেজের ছাত্রী হোস্টেলে খিচুড়ি, বেগুন ভাজা, ছোলা রেডি ।

দুপুরে নীলক্ষেতে মামা হোটেল কিংবা ৪০ টাকার তেহারি । কখনও সিটি কলেজের পাশে 'রসুই' ।

সুমির মাস্টার্স শেষ হল । বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য চাপ । আমি তো উড়নচণ্ডী । কিন্তু পরিস্থিতি এমন যে, কয়েকদিনের নোটিশে বিয়ে । কোন প্রস্তুতি নেই । বন্ধু, স্বজন, শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছে ধার দেনা করে বিয়ে । 


সাল ২০১২ , তারিখ ২ নভেম্বর ।
আমরা ভাল থাকার চেষ্টায় আছি । বন্ধু পরিজন সবাইকে নিয়ে । সবাই ভাল থাকুন । 

লিখেছেন, সামিউল্লাহ সমরাট, উনার শুভ বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষে।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাউল সাধক চান মিয়া এবং আমার কিছু উপলব্ধি

"রজনী হইসনা অবসান  আজ নিশিতে আসতে পারেবন্ধু কালাচাঁন।। কত নিশি পোহাইলোমনের আশা মনে রইলো রে কেন বন্ধু আসিলোনা জুড়ায়না পরান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। বাসর সাজাই আসার আশেআসবে বন্ধু নিশি শেষে দারূন পিরিতের বিষে ধরিল উজান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। মেঘে ঢাকা আঁধার রাতে কেমনে থাকি একা ঘরে সাধক চাঁনমিয়া কয় কানতে কানতে হইলাম পেরেশান আজ নিশিতে আসতে বন্দু কালাচাঁন।"    গভীর নিশিতে ধ্যান মগ্ন হয়ে কালাচাঁনের অপেক্ষা করছেন সাধক।  সাধক চান মিয়ার শিষ্য বাউল সিরাজউদ্দিনের মতে এটি একটি রাই বিচ্ছেদ। কৃষ্ণের অপেক্ষায় রাধা নিশি বা রাতকে অনুরোধ করছেন 'রাত' যেন না পোহায়  কারণ তার কালা চান যে কোন সময় আসতে পারে। শব্দগুচ্ছ গুলো থেকে সহজেই উপলব্ধি হয় সাধক নিজ দেহকে রাধা আর আত্মাকে কৃষ্ণের সাথে তুলনা করেছেন। দেহ আত্মার মিলন ঘটানোই ছিল সাধকের সাধনা।        বাউল সাধক চান মিয়া উপরোক্ত গানটি রচনা করেছেন। নেত্রকোনা জেলার খাটপুরা গ্রামে ১৩২৫ বঙ্গাব্দে সাধক চান মিয়ার জন্ম। পুরো নাম চান্দেজ্জামান আকন্দ হলেও বা...

বাউল, বাউলতত্ব এবং কিছু কথা

একজন ভদ্র বন্ধু বরের সাথে বাউল সম্প্রদায় নিয়ে বেশ তর্ক হলো রাতে। তর্কের সূত্রপাত ছিল বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী। ভাবলাম "বাউলতত্ত্ব"র আলোকে বাউলরা ভাববাদী নাকি বস্তুবাদী তা নিয়ে যৌক্তিক আলোচনা আবশ্যম্ভাবী। কয়েকটি ধারাবাহিক পর্ব লিখে নিজের মনোভাব বোঝানোর চেষ্টা করব।  শুরুতেই শক্তিনাথ ঝাঁ এর বস্তুবাদী বাউল বই থেকে কিছু কথা লিখতে চাই; বাস্তব জগত ও জীবনকে এরা কোন আনুমানিক যুক্তি বা আলৌকিক যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে নারাজ। জৈব রাসায়নিক ব্যাখায় এরা নারীর রজঃ এবং পুরুষের বিজে জীবন ও জগত সৃষ্টিকে ব্যাখা করে এবং চার ভূতকে প্রাকৃতিক সৃষ্টি মনে করে। এভাবে মানুষে, প্রকৃতিতে তৈরি করে প্রাণ, প্রাণী। অনুমান ভিত্তিক স্বর্গ, নরক, পরলোক, পুনর্জন্মাদি প্রত্যক্ষ প্রমাণাভাবে বাউল আগ্রাহ্য করে। মানুষ ব্যাতিরিক্ত ঈশ্বরও এরা মানে না। সৃষ্টির নিয়মকে জেনে যিনি নিজেকে পরিচালনা করতে শিখেছেন- তিনিই সাঁই। সুস্থ নিরোগ দীর্ঘজীবন এবং আনন্দকে অনুভব করার বাউল সাধনা এক আনন্দমার্গ।।  বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী এর অনেক সূক্ষ বিশ্লেষণ শক্তিনাথের বস্তুবাদী বাউল বইটির মধ্যে আলকপাত করা হয়েছে। সাধারণ সমাজে এ ধা...

ভাইবে রাধারমণ

তখন কলেজের ছাত্র। বাংলা বিভাগের প্রভাষক শ্রদ্ধেয় রেজা স্যারের সাথে খুবই ভালো সম্পর্ক। কলেজের প্রথম দিনই স্যারকে খুব পছন্দ। তারপর স্যারের সাথে গল্প, সমাজ, রাজনীতি, সাহিত্য নিয়ে আলোচনা। রীতিমত ফিজিক্স, বায়োলোজি ক্লাস ফাঁকি দিলেও বাংলা ক্লাস কখনই ফাঁকি দিতাম না। খুব উপভোগ করতাম স্যারের ক্লাস। হোস্টেল সুপার হিসেবে স্যার ( ওহী আলম রেজা) আমাদের সাথেই থাকতেন। আমরা আসার প্রায় নয় মাস পর স্যার এলেন সুপার হিসেবে। প্রতিদিন রাতে খাবার পরেই স্যারের রুমে গিয়ে আড্ডা হত, গানের আসর হত। স্যারের পিসিতে প্রায়ই গান শুনতাম আমরা। একদিন হঠাৎ করেই একটি গান স্যার প্লে করলেন 'আমার বন্ধু দয়াময় তোমারে দেখিবার মনে লয়। তোমারে না দেখলে রাধার জীবন কেমনে রয় বন্ধুরে।। কদম ডালে বইসারে বন্ধু ভাঙ্গ কদম্বের আগা। শিশুকালে প্রেম শিখাইয়া যৌবনকালে দাগা রে।। তমাল ডালে বইসারে বন্ধু বাজাও রঙের বাশি। সুর শুনিয়া রাধার মন হইলো যে উদাসি রে।। ভাইবে রাধা রমন বলে মনেতে ভাবিয়া। নিভা ছিল মনের আগুন কে দিলাই জ্বালাইয়া রে।' গানের কথাগুলো বেশ ভালো লেগে গেলো। পুর গানটি শুনে বুঝলাম গানটি সাধক রাধারম...