সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

করোনা পজিটিভ ও করোনার পজিটিভ

পৃথিবী চুপচাপ! নীরব আতঙ্কে চুপ হয়ে গেছে শক্তি প্রদর্শনের জায়গা এ পৃথিবী! করোনা নামক অতি ক্ষুদ্র একটা ভাইরাস সুবিশাল পৃথিবীর শক্তিশালী অস্ত্রগুলোতে জং ধরিয়ে দিয়েছে। পারমানবিক শব্দটাও কাগজের পাতায় ঠাই পায়না বহু দিন। বিশ্বের মত বাংলাদেশেও অপরাধ প্রবণতা কমে এসেছে বহুলাংশে। এসব করোনার পজিটিভ। কিন্তু করোনা পজিটিভ হয়ে মহা বিপদেই পড়ছেন মানুষজন। আজ শুধু বাংলাদেশ নিয়েই বলি। বাস্তবিক ভাবেই আমরা গরীব দেশের নাগরিক। আমাদের সীমাবদ্ধতা খুব বেশি। মানুষ মৌলিক অধিকার পাওয়ার অধিকারই হয়ে গেছে উচ্চশ্রেণীর। উচ্চশ্রেণীর লোকজন যখন সাধারণ চেকআপ করাতেই বিদেশে উড়াল দেন তখন আমাদের স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থার অবস্থার উপর আস্থা রেখে নাস্তানাবুদ হয়ে রাস্তা হারানোর মত দুরবস্থা হয়।

এবার এই করোনা প্রকাশ করে দিল আমাদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনার কত চিত্র। চিত্র বিচিত্র স্বপ্ন দেখা আমরা জানলাম দায়িত্বশীল বড় বড় অধিদপ্তরের দাপ্তরিক কত সমন্বয়হীনতা! করোনা ঠেকাবার প্রস্তুতির বাক্য-ঝুরি শুনে আশ্বস্ত হওয়া আমরা পরাস্ত হলাম অব্যবস্থাপনার খেয়ালি-পনায়! করোনা দরজায় ঠুকা দেওয়ার পর, আক্রমণ করার পর আমরা জানলাম করোনা যুদ্ধের অস্ত্র আমাদের নাই! পরীক্ষার কিট তো নাইই তার উপর করোনার ব্যাপারে কয়েকজনের বক্তব্যে যে করোনা বধ হয়ে গেল! হাফ-ছেড়ে বাচা গেলো না। করোনা হাসফাস করে তার শক্তি দেখাতে শুরু করলো। এ গেল করোনার নেগেটিভ অংশ বিশেষ। আসি করোনার পজিটিভ অংশে। আমরা যখন দেখলাম করোনা যোদ্ধা ডাক্তাররাই পিপিই এর জন্য অসহায় হয়ে পড়ছেন। আমরা সতর্ক হওয়া শুরু করলাম। প্রথম দিকে করোনা পরীক্ষার কিট সংকট! আমরা নিজেকে নিরাপদ রাখতে আরও সতর্ক হলাম। একই সাথে যখন মাস্ক সহ অন্যান্য সুরক্ষা সামগ্রীর দাম হুহু করে বাড়তে থাকলো আমরা ধীরে ধীরে গৃহমুখই হলাম। হ্যাঁ, অপ্রস্তুতি,সমন্বয়হীনতা,অপর্যাপ্ত ব্যবস্থা কোনটাই কাম্য নয় কিন্তু তাৎক্ষণিক আকাশের চাঁদ ধরে আনা সম্ভবও ছিল না।

এদিকটায় আমরা পজিটিভ ভাবেই শিখেছি। কোন দুর্যোগে দপ্তর ব্যর্থ হলে বা ভুল পদক্ষেপ নিলে ব্যক্তি হিসাবে নিজেকে কি ভাবে দুর্যোগের দুর্ভোগ থেকে দুরে রাখতে হয়। বাংলাদেশে করোনা যখন শিশুকাল কাঠিয়ে কৈশোরে গেল। শুরু হলও লক-ডাউন। আমরা আড্ডাবাজ বাঙ্গালীরা গৃহবন্দী হত বাধ্য হলাম। দুর্যোগে নিজেকে বন্দি রাখার একটা প্রশিক্ষণ হলও। এটা আমার কাছে পজিটিভই। হ্যাঁ দুর্যোগে নেগেটিভ মানে খারাপ দিকগুলো তো থাকবেই। ব্যবসা বাণিজ্য অফিস আদালত কার্যক্রম আটকে যাবে কিন্তু বাস্তবিক ভাবে যখন কিছু করার নাই তখন নেগেটিভ থেকেই পজেটিভিটি খোজে নেওয়াই উত্তম। যা হোক, করোনা যুব হলও, জোর আক্রমণ চালালও,বহু মানুষ মারাও গেল! মৃতদের জান্নাত কামনা করা ছাড়া কিছু করার নাই ছিলও না।

অন্যদিকে করোনা আক্রান্ত না হয়েও করোনা কি জিনিস না জেনেও মহা দুর্যোগে পড়লো নিত্য খেটে-খাওয়া মানুষগুলো! কাজ নাই খাবারও নাই! এখানে আমি আরেকটা পজিটিভটি পেলাম। এসব মানুষদের সাহায্য করতে সমাজের বিত্তশালীরা বিশাল চিত্ত নিয়ে পাশে দাঁড়ালেন। প্রবাসীরা দিলখোশে দান পাঠাতে লাগলেন। আলহামদুলিল্লাহ এখনো পর্যন্ত অভুক্ত পরিবারের খোজ অন্তত আমি পাইনি। করোনা আমাদের রিপেয়ার করে দিল মনে করিয়ে দিল মানুষ মানুষের জন্যই। সম্প্রতি লক-ডাউন শিথিল হলেও সে শিক্ষা ও প্রয়োগ চলমান। এখনো মানুষ মানুষের খোজ নেন। পাশে দাঁড়ান। করোনা মরে না গেলেও আজ বা কাল বৃদ্ধ হবে, শক্তি হারাবে কিন্তু আমরা যেন করোনার থেকে শিখা শিক্ষা না হারাই।

লেখক: ফরিদ উদ্দিন, সাংবাদিক
The author is a local journalist, and social worker 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাউল সাধক চান মিয়া এবং আমার কিছু উপলব্ধি

"রজনী হইসনা অবসান  আজ নিশিতে আসতে পারেবন্ধু কালাচাঁন।। কত নিশি পোহাইলোমনের আশা মনে রইলো রে কেন বন্ধু আসিলোনা জুড়ায়না পরান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। বাসর সাজাই আসার আশেআসবে বন্ধু নিশি শেষে দারূন পিরিতের বিষে ধরিল উজান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। মেঘে ঢাকা আঁধার রাতে কেমনে থাকি একা ঘরে সাধক চাঁনমিয়া কয় কানতে কানতে হইলাম পেরেশান আজ নিশিতে আসতে বন্দু কালাচাঁন।"    গভীর নিশিতে ধ্যান মগ্ন হয়ে কালাচাঁনের অপেক্ষা করছেন সাধক।  সাধক চান মিয়ার শিষ্য বাউল সিরাজউদ্দিনের মতে এটি একটি রাই বিচ্ছেদ। কৃষ্ণের অপেক্ষায় রাধা নিশি বা রাতকে অনুরোধ করছেন 'রাত' যেন না পোহায়  কারণ তার কালা চান যে কোন সময় আসতে পারে। শব্দগুচ্ছ গুলো থেকে সহজেই উপলব্ধি হয় সাধক নিজ দেহকে রাধা আর আত্মাকে কৃষ্ণের সাথে তুলনা করেছেন। দেহ আত্মার মিলন ঘটানোই ছিল সাধকের সাধনা।        বাউল সাধক চান মিয়া উপরোক্ত গানটি রচনা করেছেন। নেত্রকোনা জেলার খাটপুরা গ্রামে ১৩২৫ বঙ্গাব্দে সাধক চান মিয়ার জন্ম। পুরো নাম চান্দেজ্জামান আকন্দ হলেও বা...

বাউল, বাউলতত্ব এবং কিছু কথা

একজন ভদ্র বন্ধু বরের সাথে বাউল সম্প্রদায় নিয়ে বেশ তর্ক হলো রাতে। তর্কের সূত্রপাত ছিল বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী। ভাবলাম "বাউলতত্ত্ব"র আলোকে বাউলরা ভাববাদী নাকি বস্তুবাদী তা নিয়ে যৌক্তিক আলোচনা আবশ্যম্ভাবী। কয়েকটি ধারাবাহিক পর্ব লিখে নিজের মনোভাব বোঝানোর চেষ্টা করব।  শুরুতেই শক্তিনাথ ঝাঁ এর বস্তুবাদী বাউল বই থেকে কিছু কথা লিখতে চাই; বাস্তব জগত ও জীবনকে এরা কোন আনুমানিক যুক্তি বা আলৌকিক যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে নারাজ। জৈব রাসায়নিক ব্যাখায় এরা নারীর রজঃ এবং পুরুষের বিজে জীবন ও জগত সৃষ্টিকে ব্যাখা করে এবং চার ভূতকে প্রাকৃতিক সৃষ্টি মনে করে। এভাবে মানুষে, প্রকৃতিতে তৈরি করে প্রাণ, প্রাণী। অনুমান ভিত্তিক স্বর্গ, নরক, পরলোক, পুনর্জন্মাদি প্রত্যক্ষ প্রমাণাভাবে বাউল আগ্রাহ্য করে। মানুষ ব্যাতিরিক্ত ঈশ্বরও এরা মানে না। সৃষ্টির নিয়মকে জেনে যিনি নিজেকে পরিচালনা করতে শিখেছেন- তিনিই সাঁই। সুস্থ নিরোগ দীর্ঘজীবন এবং আনন্দকে অনুভব করার বাউল সাধনা এক আনন্দমার্গ।।  বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী এর অনেক সূক্ষ বিশ্লেষণ শক্তিনাথের বস্তুবাদী বাউল বইটির মধ্যে আলকপাত করা হয়েছে। সাধারণ সমাজে এ ধা...

ভাইবে রাধারমণ

তখন কলেজের ছাত্র। বাংলা বিভাগের প্রভাষক শ্রদ্ধেয় রেজা স্যারের সাথে খুবই ভালো সম্পর্ক। কলেজের প্রথম দিনই স্যারকে খুব পছন্দ। তারপর স্যারের সাথে গল্প, সমাজ, রাজনীতি, সাহিত্য নিয়ে আলোচনা। রীতিমত ফিজিক্স, বায়োলোজি ক্লাস ফাঁকি দিলেও বাংলা ক্লাস কখনই ফাঁকি দিতাম না। খুব উপভোগ করতাম স্যারের ক্লাস। হোস্টেল সুপার হিসেবে স্যার ( ওহী আলম রেজা) আমাদের সাথেই থাকতেন। আমরা আসার প্রায় নয় মাস পর স্যার এলেন সুপার হিসেবে। প্রতিদিন রাতে খাবার পরেই স্যারের রুমে গিয়ে আড্ডা হত, গানের আসর হত। স্যারের পিসিতে প্রায়ই গান শুনতাম আমরা। একদিন হঠাৎ করেই একটি গান স্যার প্লে করলেন 'আমার বন্ধু দয়াময় তোমারে দেখিবার মনে লয়। তোমারে না দেখলে রাধার জীবন কেমনে রয় বন্ধুরে।। কদম ডালে বইসারে বন্ধু ভাঙ্গ কদম্বের আগা। শিশুকালে প্রেম শিখাইয়া যৌবনকালে দাগা রে।। তমাল ডালে বইসারে বন্ধু বাজাও রঙের বাশি। সুর শুনিয়া রাধার মন হইলো যে উদাসি রে।। ভাইবে রাধা রমন বলে মনেতে ভাবিয়া। নিভা ছিল মনের আগুন কে দিলাই জ্বালাইয়া রে।' গানের কথাগুলো বেশ ভালো লেগে গেলো। পুর গানটি শুনে বুঝলাম গানটি সাধক রাধারম...