সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

'বাবা বঙ্গবন্ধুকে চিনিয়েছেন'

 ছোট বেলা থেকেই বাবার মুখে মুজিববাদ শব্দটি শুনে আসছি। ছোট  বেলা বাবার সাথে কোথাও গেলেই বাবা আমাকে আদর করে জিজ্ঞেস করতেন - "বাবা বলোতো আমাদের মার্কা কি? আমি কুটুস কুটুস করে বলতাম নৌকা।"

তখন আমার বয়স তিন বা চার হবে। আমার বাবার মুখ থেকে শেখা নৌকা শব্দটা কোন রাজনৈতিক স্ট্যান্ডবাজি নয়। এটা আমাকে দেশের অস্তিত্ব শিক্ষা দেবার একটি প্রয়োগ মাত্র। বাবা সেটাই করেছেন। আমাদের বসার ঘরে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিটা আজ থেকে নয়। সেটা সেই অনেক কাল থেকেই। তবে আগে পুরোনো একটি ছবি ছিলো। অনেক আগে থেকেই। এই ছবিটি ঘরে রাখার বাবার দুটি উদ্দেশ্য।  একটি উদ্দেশ্য বাবা এই ছবিটাকে এবং বঙ্গবন্ধুকে অনেক অনেক ভালোবাসেন। বাবার একটাই কথা - 'চলমান রাজনীতি ত অনেক দূরের ব্যাপার, এই লোকটা (বঙ্গবন্ধু) আমাদেরকে দেশ উপহার দিয়েছেন। নিজের জীবনকে জেলে বিসর্জন দিয়ে দেশ দিয়েছেন, এই লোকের ছবি থাকবে না'ত কার থাকবে'। বাবার এমন সহজ কথা অনেক কঠিন বিশ্লেষণে আমাকে ভাবিয়েছে, এখনো ভাবায়। এই ভাবনা আমাকে এই মহান মানুষ (বঙ্গবন্ধু) এর প্রতি এতো ভালোবাসা জন্মিয়েছে৷ দ্বিতীয় উদ্দেশ্য ছিল, আমি যেন কোন ভাবে আদর্শচ্যুত না হই শিশু বেলায়। একটি শিশুর সামনে যদি সর্বক্ষণ একজনের ছবি থাকে তবে অবশ্যই সেই লোককে শিশুটি জানার চেষ্টা করবে, চিন্তা করার চেষ্টা করবে। হ্যাঁ,  বাবার এই উদ্দেশ্য এককভাবে সফল হয়েছে। 


'কে বলে রে মুজিব নাই, মুজিব আছে বাংলায়' এই শ্লোগানটি আমার খুব পছন্দের একটি শ্লোগান। স্কুল জীবনে প্রথম আওয়ামীলীগ মতাদর্শে বলিয়ান, বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠপুত্র শেখ রাসেলের নামানুসারে 'শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদ' এর সাথে যুক্ত ছিলাম। পরবর্তীতে সভাপতি ছিলাম স্কুল কমিটির। এর পর সরাসরি ছাত্রলীগে। রাজনৈতিক কারণে এই শ্লোগান মিছিলে দিতে হতো। আমার বাবা ছোট বেলা থেকেই আমাকে বলতেন যে - একজন মানুষ সশরীরে চলে গেলেও, উনার কথা, কর্ম, উনার জীবন ধারণ,  চিন্তা এসব নিজের মধ্যে বা সমাজ এ প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্য নিয়ে যারা কাজ করেন তারাই এই শ্লোগান দেন, এবং উনার আদর্শ প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমেই উনাকে আমাদের মাঝে জীবিত রাখতে হবে। বলছিলাম ছবির কথা। দেয়ালে জুড়ানো বঙ্গবন্ধুর এই ছবিটি পরবর্তীকালে মেরামত করা হয়। কিন্তু ছবিটি পুরোনো হয়ে একবারে নষ্ট হয়ে যাবার কারণে, বাবা ছবিটাকে উনার ফাইলে রেখে দিয়েছিলেন, কিন্তু ফেলে দেন নি। শুধু ফ্রেমের অংশ টা বাদ দিয়ে দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে শ্রাবণ প্রকাশনী থেকে নতুন ছবিটা এনে টানিয়ে দিলাম আমি নিজে। আমার এইছবিটি সংস্কার বাবার মত দুটি উদ্দেশ্য ছিলো। 


প্রথমত,  আমার ছোট ভাই বড় হচ্ছিল। যদিও সে আমার রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত।  কিন্তু আমি চেয়েছি সব সময় তার সামনে যদি এই ছবিটা যদি থাকে তবে সেজানবে বোঝবে। কিন্তু সে কখনোই কোন প্রশ্ন করে নি আমাদের। আপনা আপনি সে জেনে বোঝে স্টাডি করেই রাজনীতিতে জড়িয়ে গেছে। সে ছোটবেলা সবসময় একটি কথা বলতো,বয়স ২ হবে তখন তার। কিছু বললেই বলতো, 'বঙ্গবন্ধু নাকি তার বন্ধু', তাকে মারলে বিচার দেবে উনার কাছে'। ২য় কথা হচ্ছে, এই ছবিটি নতুন করে লাগানোর আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে মায়ের কথায়। মা সব সময় বলতেন 'মহান লোকদের ছবি দেখলে নাকি মন বড় হয়'।  মায়ের এই কথা চিন্তা করলে সবচেয়ে মহান ব্যক্তির ছবিটা দেয়ালে জুড়িয়ে দিলাম। 

সবশেষে কথা হচ্ছে তাই, একটি ছবি রাজনৈতিক মাঠের ফালতু লোক দেখানো স্ট্যান্ডবাজি হতে পারেনা। আমাদের কাছে বঙ্গবন্ধুর ছবি মানে আগ্রহ, সম্মান, স্পৃহা, দ্রোহের আয়না। ৪৬ তম শাহাদাত বার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবার বর্গের প্রতি শ্রদ্ধা। বিদেশে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনীদের ফিরিয়ে এনে মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করা হোক।বঙ্গবন্ধু আমাদের কাছে কোন রাজনৈতিক ভেলকিবাজির ইস্যু নন। বঙ্গবন্ধুর মুজিববাদ আমাদের রাজনৈতিক ফিল্টার। এই ফিল্টারে টিকে যেতে পারলে আপনি আমার আদর্শের বন্ধু, এখানে এমন কোন ধরনের যুক্তিতর্ক দিয়ে আপনি যদি বাংলাদেশ বিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে যান, তবে রুখে দাঁড়ানো হবে। এবং আমি মনে করি বর্তমান সরকারের সমালোচনা করার নামে বঙ্গবন্ধুকে দলীয় করণ করার স্বাধীনতা বিরোধী এবং বঙ্গবন্ধুর খুনিদের প্রমোট করার নামান্তর।


লেখকঃ চৌধুরী মারূফ, সাংবাদিক 



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাউল সাধক চান মিয়া এবং আমার কিছু উপলব্ধি

"রজনী হইসনা অবসান  আজ নিশিতে আসতে পারেবন্ধু কালাচাঁন।। কত নিশি পোহাইলোমনের আশা মনে রইলো রে কেন বন্ধু আসিলোনা জুড়ায়না পরান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। বাসর সাজাই আসার আশেআসবে বন্ধু নিশি শেষে দারূন পিরিতের বিষে ধরিল উজান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। মেঘে ঢাকা আঁধার রাতে কেমনে থাকি একা ঘরে সাধক চাঁনমিয়া কয় কানতে কানতে হইলাম পেরেশান আজ নিশিতে আসতে বন্দু কালাচাঁন।"    গভীর নিশিতে ধ্যান মগ্ন হয়ে কালাচাঁনের অপেক্ষা করছেন সাধক।  সাধক চান মিয়ার শিষ্য বাউল সিরাজউদ্দিনের মতে এটি একটি রাই বিচ্ছেদ। কৃষ্ণের অপেক্ষায় রাধা নিশি বা রাতকে অনুরোধ করছেন 'রাত' যেন না পোহায়  কারণ তার কালা চান যে কোন সময় আসতে পারে। শব্দগুচ্ছ গুলো থেকে সহজেই উপলব্ধি হয় সাধক নিজ দেহকে রাধা আর আত্মাকে কৃষ্ণের সাথে তুলনা করেছেন। দেহ আত্মার মিলন ঘটানোই ছিল সাধকের সাধনা।        বাউল সাধক চান মিয়া উপরোক্ত গানটি রচনা করেছেন। নেত্রকোনা জেলার খাটপুরা গ্রামে ১৩২৫ বঙ্গাব্দে সাধক চান মিয়ার জন্ম। পুরো নাম চান্দেজ্জামান আকন্দ হলেও বা...

বাউল, বাউলতত্ব এবং কিছু কথা

একজন ভদ্র বন্ধু বরের সাথে বাউল সম্প্রদায় নিয়ে বেশ তর্ক হলো রাতে। তর্কের সূত্রপাত ছিল বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী। ভাবলাম "বাউলতত্ত্ব"র আলোকে বাউলরা ভাববাদী নাকি বস্তুবাদী তা নিয়ে যৌক্তিক আলোচনা আবশ্যম্ভাবী। কয়েকটি ধারাবাহিক পর্ব লিখে নিজের মনোভাব বোঝানোর চেষ্টা করব।  শুরুতেই শক্তিনাথ ঝাঁ এর বস্তুবাদী বাউল বই থেকে কিছু কথা লিখতে চাই; বাস্তব জগত ও জীবনকে এরা কোন আনুমানিক যুক্তি বা আলৌকিক যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে নারাজ। জৈব রাসায়নিক ব্যাখায় এরা নারীর রজঃ এবং পুরুষের বিজে জীবন ও জগত সৃষ্টিকে ব্যাখা করে এবং চার ভূতকে প্রাকৃতিক সৃষ্টি মনে করে। এভাবে মানুষে, প্রকৃতিতে তৈরি করে প্রাণ, প্রাণী। অনুমান ভিত্তিক স্বর্গ, নরক, পরলোক, পুনর্জন্মাদি প্রত্যক্ষ প্রমাণাভাবে বাউল আগ্রাহ্য করে। মানুষ ব্যাতিরিক্ত ঈশ্বরও এরা মানে না। সৃষ্টির নিয়মকে জেনে যিনি নিজেকে পরিচালনা করতে শিখেছেন- তিনিই সাঁই। সুস্থ নিরোগ দীর্ঘজীবন এবং আনন্দকে অনুভব করার বাউল সাধনা এক আনন্দমার্গ।।  বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী এর অনেক সূক্ষ বিশ্লেষণ শক্তিনাথের বস্তুবাদী বাউল বইটির মধ্যে আলকপাত করা হয়েছে। সাধারণ সমাজে এ ধা...

ভাইবে রাধারমণ

তখন কলেজের ছাত্র। বাংলা বিভাগের প্রভাষক শ্রদ্ধেয় রেজা স্যারের সাথে খুবই ভালো সম্পর্ক। কলেজের প্রথম দিনই স্যারকে খুব পছন্দ। তারপর স্যারের সাথে গল্প, সমাজ, রাজনীতি, সাহিত্য নিয়ে আলোচনা। রীতিমত ফিজিক্স, বায়োলোজি ক্লাস ফাঁকি দিলেও বাংলা ক্লাস কখনই ফাঁকি দিতাম না। খুব উপভোগ করতাম স্যারের ক্লাস। হোস্টেল সুপার হিসেবে স্যার ( ওহী আলম রেজা) আমাদের সাথেই থাকতেন। আমরা আসার প্রায় নয় মাস পর স্যার এলেন সুপার হিসেবে। প্রতিদিন রাতে খাবার পরেই স্যারের রুমে গিয়ে আড্ডা হত, গানের আসর হত। স্যারের পিসিতে প্রায়ই গান শুনতাম আমরা। একদিন হঠাৎ করেই একটি গান স্যার প্লে করলেন 'আমার বন্ধু দয়াময় তোমারে দেখিবার মনে লয়। তোমারে না দেখলে রাধার জীবন কেমনে রয় বন্ধুরে।। কদম ডালে বইসারে বন্ধু ভাঙ্গ কদম্বের আগা। শিশুকালে প্রেম শিখাইয়া যৌবনকালে দাগা রে।। তমাল ডালে বইসারে বন্ধু বাজাও রঙের বাশি। সুর শুনিয়া রাধার মন হইলো যে উদাসি রে।। ভাইবে রাধা রমন বলে মনেতে ভাবিয়া। নিভা ছিল মনের আগুন কে দিলাই জ্বালাইয়া রে।' গানের কথাগুলো বেশ ভালো লেগে গেলো। পুর গানটি শুনে বুঝলাম গানটি সাধক রাধারম...