সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আমার অভিজ্ঞতায় আফগানিস্তানের জনসাধারণ

 আফগান জনসাধারণের সাথে পরিচয় ফ্রান্সে এসেই। ফ্রান্সে ইমিগ্রেশন, প্রোটেকশন এবং ন্যাশনাল কোর্ট অব এজাইলাম সবচেয়ে বেশি আশ্রয় প্রদান করে আফগানদের। ফ্রান্সে অতিরিক্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা পদ্ধতিতে সবচেয়ে বেশি সুরক্ষায় পায় আফগান জনগোষ্ঠীরা। এজাইলাম ইউরোপ সংস্থার তথ্য থেকে পাওয়া পরিসংখ্যান থেকে আশ্রয়ের প্রায় ৬০ শতাংশ আফগানিস্তান জনসাধারণ পেয়ে থাকেন ফ্রান্সে৷ ২০১৫ সাল থেকে ২০২১ সালে তা ১.৭ গড়ে বেড়েছে। শুধু মাত্র ২০২০ সালে ৮ হাজার ৮ শ ৮৬ জন সরাসরি আশ্রয় আবেদন করেছেন। এছাড়া কাজের মাধ্যমে সরকারকে ট্যাক্স পেমেন্ট,  পারিবারিক পুনর্মিলনী এবং শিশুদের স্কুল ব্যবস্থার মাধ্যমে নিয়মিত পেপার্স হোল্ডার আফগানি ত আছেন'ই। 

মূলত এসব নয়, বাস্তব অভিজ্ঞতায় আফগানিরা কেমন সেটি বলতে চাচ্ছি।  এটা আমার একদম বাস্তব অভিজ্ঞতা। সরাসরি বলতে গেলে এখন পর্যন্ত যতজন আফগানিস্তানের মানুষ দেখেছি শতকার ৮৯ ভাগই ভালো লাগেনি। আসলে ভালো না লাগার কারণ কি ইচ্ছাকৃত। না, একদম নয়। সাধারণ ভাবে আফগানিস্তানের মানুষের এসব জনসাধারণের ব্যবহার একদম ভালো নয়৷ বেশির ভাগ, সবাই নন। মেট্রোপলিটন ফ্রান্স অঞ্চলে যারা বাস করেন, মোটা দাগে যদি বলি- ৯৩ পোস্টাল কোড এরিয়ায় যারা বসবাস করেন তারা জানেন আফগানিস্তানের লোকজনের  উৎপাত। চুরি, ছিনতাই, পকেট মার, গাঁজা বিক্রি, অবৈধ ট্যাক্স বিহীন সিগারেট বিক্রিতে আফগানিদের অবস্থান দুই নম্বর। প্রথম অবস্থানে আছে আলজেরিয়ার লোকজন। প্যারিস জোনে লাশাপিল নামক একটি এরিয়া আছে। যেখানে শ্রীলঙ্কান এবং আফগানিস্তানের লোকজনের চলাচল বেশি। এসব এলাকায় যদি আপনার চলাচল করতে হয়, তাহলে নজর নিজের পকেটে অন্তত তিনবার মিনিটে হাত রেখে খেয়াল রাখতে হবে মোবাইল বা মানি পার্স ঠিক আছে কিনা! শুধু তাই নয়, এখানে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্থানীয় পুলিশ রেড করা মানেই আলজেরিয়ান বা আফগানি কাউকে নিশ্চিত আটক করবে। এটা আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা,  প্রায় প্রতিদিনের অভিজ্ঞতা।  

সাংস্কৃতিক নিজস্ব কালচারের কথা বলি তবে আফগানিস্তানের লোকজন শ'তে নব্বই পাবে। আফগান নারী পুরুষ উভয়ই কোন না কোন ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময় এমন কোন অলংকার, হাতের ব্যান্ড, পাগড়ি, জুব্বা বা কাবুলি ব্যবহার করবেন যেখানে আফগানিস্তানের পতাকার চিহ্ন থাকবেই থাকবে। 

এটা আফগানিদের একটি চলমান কালচার। দ্বিতীয় আরেকটি দিক হচ্ছে, অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর লোকজন এখানে ফরাসী কথা টুকটাক পারেন বা না'ই পারেন বলার চেষ্টা করবেন। কিন্তু আফগানিরা তাদের মাতৃভাষা পাশতু দিয়েই শুরু করবে। ভাষাগত ভাবে এদিকটা তাদের অনড়।  

অন্যদিকে, এরা চুরি করে আবার কঠোর ভাবে ধর্মীয় রীতি অনুসারে নামাজও পড়ে। এক আফগানিস্তানের লোকের সাথে আমার পরিচয় ক্যানেল সেইন্ট ডেনিস এলাকায়। মদ (বিয়ার) খাচ্ছিলো বসে বসে। অনেকক্ষণ কথা বললাম। হঠাৎ হুটহাট উঠে গেলো কথা বলার ফাঁকে। পাশের পার্ক থেকে অযু করে এসে সুন্দর জায়নামাজ পেতে নামাজ আদায় করলো। পরে আবার এসে যখন বসলো গল্প করতে, তাকে জিজ্ঞেস করলাম- 'ইসলাম ধর্মের নিয়ম অনুসারে মদ সম্পূর্ণ হারাম, আপনি কেন মদ খেলেন আবার নামাজো পড়লেন? ' উত্তরে সে মুচকি হেসে বললো একটা স্বভাব অন্যটা নেশা। আসলে সে কি বোঝাতে চাইলো আর তর্ক করলাম না। কিন্তু মনে হলো স্বভাবের দোষ কিন্তু অভাব ঘুছানোর ইচ্ছা এমন টাইপ।

ফ্রান্সের জনসংখ্যা পরিসংখ্যানের বরাতে বলছি, এশিয়া বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার লোকদের মধ্যে এখানে সবচেয়ে বেশি আফগানিস্তানের লোকজন। ২০২০ সালে এখানে পার্মানেন্টলি বসবাসের অনুমতি পেয়েছেন প্রায় ৬ হাজার। আবেদন করেছিলেন ৮ হাজার ৮শ ছিয়াশি। ফ্রান্সেএ রাজধানী প্যারিসে তাদের বৈধ ব্যবসা খুব'ই কম। একমাত্র জেন্টস সেলুন ব্যবসা ছাড়া আর তেমন কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চোখে পড়বেনা আফগানি মালিকানার। এই হচ্ছে কাটাকাটির জীবন তাদের।

আফগানিদের বিশেষ পছন্দের কোন কারণ নেই আমার, আবার অপছন্দের কারণ'ও নেই। কিন্তু সামাজিক চলাফেরার মানদণ্ডে একদম অপছন্দ তাদের। হাউকাউ করে মারামারি করে বেড়ানো জাতিগোষ্ঠীকে সহজেই কেউ পছন্দ যেমন করবেনা, স্বভাবসুলভ ভাবে আমিও নই। যাই হোক,আসলে দেশ তাদের মাথা ব্যাথা তাদের। কিন্তু মানবিক বিপর্যয় দেখে আমার মানুষের মন কেঁদে উঠে। আবার তাদের চলাফেরা দেখে মনে হয়, কর্মের দোষে গর্তে পড়া অকাল কুষ্মাণ্ডের লক্ষণ। এই হলো আফগানিদের বাস্তবতা।

লেখক : চৌধুরী মারূফ অমিত 




মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাউল সাধক চান মিয়া এবং আমার কিছু উপলব্ধি

"রজনী হইসনা অবসান  আজ নিশিতে আসতে পারেবন্ধু কালাচাঁন।। কত নিশি পোহাইলোমনের আশা মনে রইলো রে কেন বন্ধু আসিলোনা জুড়ায়না পরান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। বাসর সাজাই আসার আশেআসবে বন্ধু নিশি শেষে দারূন পিরিতের বিষে ধরিল উজান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। মেঘে ঢাকা আঁধার রাতে কেমনে থাকি একা ঘরে সাধক চাঁনমিয়া কয় কানতে কানতে হইলাম পেরেশান আজ নিশিতে আসতে বন্দু কালাচাঁন।"    গভীর নিশিতে ধ্যান মগ্ন হয়ে কালাচাঁনের অপেক্ষা করছেন সাধক।  সাধক চান মিয়ার শিষ্য বাউল সিরাজউদ্দিনের মতে এটি একটি রাই বিচ্ছেদ। কৃষ্ণের অপেক্ষায় রাধা নিশি বা রাতকে অনুরোধ করছেন 'রাত' যেন না পোহায়  কারণ তার কালা চান যে কোন সময় আসতে পারে। শব্দগুচ্ছ গুলো থেকে সহজেই উপলব্ধি হয় সাধক নিজ দেহকে রাধা আর আত্মাকে কৃষ্ণের সাথে তুলনা করেছেন। দেহ আত্মার মিলন ঘটানোই ছিল সাধকের সাধনা।        বাউল সাধক চান মিয়া উপরোক্ত গানটি রচনা করেছেন। নেত্রকোনা জেলার খাটপুরা গ্রামে ১৩২৫ বঙ্গাব্দে সাধক চান মিয়ার জন্ম। পুরো নাম চান্দেজ্জামান আকন্দ হলেও বা...

বাউল, বাউলতত্ব এবং কিছু কথা

একজন ভদ্র বন্ধু বরের সাথে বাউল সম্প্রদায় নিয়ে বেশ তর্ক হলো রাতে। তর্কের সূত্রপাত ছিল বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী। ভাবলাম "বাউলতত্ত্ব"র আলোকে বাউলরা ভাববাদী নাকি বস্তুবাদী তা নিয়ে যৌক্তিক আলোচনা আবশ্যম্ভাবী। কয়েকটি ধারাবাহিক পর্ব লিখে নিজের মনোভাব বোঝানোর চেষ্টা করব।  শুরুতেই শক্তিনাথ ঝাঁ এর বস্তুবাদী বাউল বই থেকে কিছু কথা লিখতে চাই; বাস্তব জগত ও জীবনকে এরা কোন আনুমানিক যুক্তি বা আলৌকিক যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে নারাজ। জৈব রাসায়নিক ব্যাখায় এরা নারীর রজঃ এবং পুরুষের বিজে জীবন ও জগত সৃষ্টিকে ব্যাখা করে এবং চার ভূতকে প্রাকৃতিক সৃষ্টি মনে করে। এভাবে মানুষে, প্রকৃতিতে তৈরি করে প্রাণ, প্রাণী। অনুমান ভিত্তিক স্বর্গ, নরক, পরলোক, পুনর্জন্মাদি প্রত্যক্ষ প্রমাণাভাবে বাউল আগ্রাহ্য করে। মানুষ ব্যাতিরিক্ত ঈশ্বরও এরা মানে না। সৃষ্টির নিয়মকে জেনে যিনি নিজেকে পরিচালনা করতে শিখেছেন- তিনিই সাঁই। সুস্থ নিরোগ দীর্ঘজীবন এবং আনন্দকে অনুভব করার বাউল সাধনা এক আনন্দমার্গ।।  বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী এর অনেক সূক্ষ বিশ্লেষণ শক্তিনাথের বস্তুবাদী বাউল বইটির মধ্যে আলকপাত করা হয়েছে। সাধারণ সমাজে এ ধা...

ভাইবে রাধারমণ

তখন কলেজের ছাত্র। বাংলা বিভাগের প্রভাষক শ্রদ্ধেয় রেজা স্যারের সাথে খুবই ভালো সম্পর্ক। কলেজের প্রথম দিনই স্যারকে খুব পছন্দ। তারপর স্যারের সাথে গল্প, সমাজ, রাজনীতি, সাহিত্য নিয়ে আলোচনা। রীতিমত ফিজিক্স, বায়োলোজি ক্লাস ফাঁকি দিলেও বাংলা ক্লাস কখনই ফাঁকি দিতাম না। খুব উপভোগ করতাম স্যারের ক্লাস। হোস্টেল সুপার হিসেবে স্যার ( ওহী আলম রেজা) আমাদের সাথেই থাকতেন। আমরা আসার প্রায় নয় মাস পর স্যার এলেন সুপার হিসেবে। প্রতিদিন রাতে খাবার পরেই স্যারের রুমে গিয়ে আড্ডা হত, গানের আসর হত। স্যারের পিসিতে প্রায়ই গান শুনতাম আমরা। একদিন হঠাৎ করেই একটি গান স্যার প্লে করলেন 'আমার বন্ধু দয়াময় তোমারে দেখিবার মনে লয়। তোমারে না দেখলে রাধার জীবন কেমনে রয় বন্ধুরে।। কদম ডালে বইসারে বন্ধু ভাঙ্গ কদম্বের আগা। শিশুকালে প্রেম শিখাইয়া যৌবনকালে দাগা রে।। তমাল ডালে বইসারে বন্ধু বাজাও রঙের বাশি। সুর শুনিয়া রাধার মন হইলো যে উদাসি রে।। ভাইবে রাধা রমন বলে মনেতে ভাবিয়া। নিভা ছিল মনের আগুন কে দিলাই জ্বালাইয়া রে।' গানের কথাগুলো বেশ ভালো লেগে গেলো। পুর গানটি শুনে বুঝলাম গানটি সাধক রাধারম...