সুভাষ মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন, ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত। আসলে তিনি কোন কারণে বলেছিলেন সেটা তিনি ভালো জানবেন, কারণ কবিদের মনের ভাষা বোঝা বড় কষ্টসাধ্য ব্যাপার। কিন্তু আমিও একমত, আজ'ই বসন্ত।
ছয় ঋতুর ক্রমাগত ঘূর্ণিপাকে প্রকৃতিতে বসন্ত এসেছে। গাছে ফুল ফুটবে, রঙিন হবে চারপাশ, মৌমাছি সংগ্রহ করবে মধু। এ'ত গেলো প্রকৃতির বসন্ত। কিন্তু বাংলাদেশের চলমান সামাজিক পরিস্থিতির 'বসন্ত' কি আদৌ আসবে, এসেছিলো কি কখনো? পত্রিকার পাতা খুলতেই প্রতিদিন হাজারো সংবাদে মনে হয় ক্রমাগত আমাদের ধেয়ে আসছে কালবৈশাখী। দুই যুগেও হয়তো ফাগুন আসেনি। কখনো যদি পরিস্থিতিতে একটু ফাগুনের ছোঁয়া লাগে, নিমিষেই তা ঢাকা পড়ে কালো মেঘের নতুন কোনও ঝড়ে।
কাঠামোগত দিক থেকে আমাদের বাংলাদেশে যে বসন্ত সেই দুই হাজার দশ সালের পর থেকে তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু আমার মানসিকতার মানদন্ড, আমাদের সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধ, আমাদের ধর্মগত উদারতার কতখানি রঙিন হয়েছে। শুধুমাত্র বর্তমানে আমাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, যেমন- ফেইসবুক এবং ইউটিউবের কমেন্ট কন্টেন্টগুলো পড়ে দেখি তাহলেই অতি সহজেই নির্ণয় করা যাবে আমাদের সামাজিকরণ ফাগুনে কতটুকু ফুল ফুঁটলো! আমি কোন সমাজবিজ্ঞানী বা রাষ্ট্রের চিন্তাবিদ নই। শুধু মাত্র আমি আমাকে এবং আমার চারপাশ নিয়েই ভাবি। এবং এই ভাবনায় আমার নিজের সংকীর্ণতা যে কি পরিমাণ তা রন্ধ্রে রন্ধ্রে আমি অনুধাবন করতে পারি।
বর্তমান সারা বিশ্বই আজ জরাজীর্ণ, চৈত্রির খাঁ খাঁ দুপুরের তপ্ত মাঠের মত আজ সারা বিশ্বেই হাহাকার। কোভিড ১৯ ভাইরাসে গত বছর থেকেই বিশ্ব স্থবির। সেই স্থবিরতায় বাংলাদেশ যতখানি না স্থবির, তার চেয়েও বেশি অস্থির আমাদের উদ্ভট চিন্তায়। যেমনঃ এই ভ্যাক্সিনের কথাই তুলে ধরি। ভ্যাক্সিন পাওয়া থেকে পৌছানো, পৌছানো থেকে প্রয়োগ এই প্লাটফর্মতে মনে হয় কালবৈশাখের ঝড় যাচ্ছে। পাড়াপাড়ি, অহেতুক তর্ক বিতর্ক, সবশেষে সমাধীন অবস্থায় নতুন ইস্যুতে আবার লেগে যাও, এই যা। মাঝেমধ্যে মনে হয়, রিমঝিম বর্ষায় কোন কর্দমাক্ত রাস্তা পাড়ি দিচ্ছে বাংলাদেশ।
যাই হোক, আজ বসন্ত, পহেলা ফাগুন। জাতীয় সংগীতের সেই কথাটা সবার জীবনে ফুঁটে উঠুক ফাগুনে আমের বনের ঘ্রাণে পাগল হোক জীবন। 'ও মা ফাগুনে তর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে_____' বাজতে থাকুক বাংলার প্রতিটি আনাচে কানাচে। রঙিন হোক বাংলাদেশ, বসন্ত নামুক পৃথিবীতে।
লেখকঃ চৌধুরী মারূফ, সাংবাদিক
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন