আজ পহেলা ফালগুন-১৪২৭ বঙ্গাব্দ। বিপুল ঐশ্বর্যের অধিকারী ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় আজি দখিন-দুয়ার খোলা/ এসো হে, এসো হে, এসো হে আমার বসন্ত এসো…। প্রেমের কবি নজরুলের উচ্চারণ এলো খুনমাখা তূণ নিয়ে/ খুনেরা ফাগুন…। অদ্ভুত এক শিহরণ এখন। মনে তো বটে। সেইসঙ্গে বনেও। রূপ লাবণ্যে জেগে উঠেছে প্রকৃতি, রঙিন চারপাশ। বৃরে নবীন পাতায় আলোর নাচন! গোলাপ, জবা, পারুল, পলাশ, পারিজাতের হাসি। ঘরছাড়া মৌমাছি। কোকিলের কুহুতান। সবই জানিয়ে দিচ্ছে আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে…।
আমাদের বাইল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম গেয়ে ওঠেন বসন্ত বাতাসে সই গো/ বসন্ত বাতাসে/ বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে…। এভাবে বসন্ত এলে উচাটন হয়ে ওঠে মন। পুরনো বেদনা, হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি ভালবেসে এর পেছনে ছুটতে ইচ্ছে করে। তবে শুধু মানুষের জীবনে নয়, পাখিরাও প্রণয়ী খোঁজে এ সময়। নতুন ঘর বাঁধে। মৌমাছিরা মধুর খোঁজে হন্যে হয়। এক ফুল থেকে অন্য ফুলে ছোটে। সব মিলিয়ে অনন্য এক ঋতুরাজ বসন্ত।
কবি সুভাস মুখোপাধ্যায়ের কবিতার খাতায় তাই উঠে আসে-‘ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক আজ বসন্ত-’র মতো কবিতা।
যুগ যুগ ধরে প্রেমপাগল মানব-মানবী, তরুণ-তরুণী বসন্তকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে। ভিন্ন ভিন্ন অনুভূতি আর আয়োজনে দিনটিকে বরণ করে বসন্তের সংগীত গায় প্রেমিক-প্রেমিকা। প্রেমিকার মতোই বসন্ত আলোড়ন তোলে, ঢেউ খেলে, নোঙর ফেলে কবির হৃদয়ে। তাই কবি সে মধুময় আবেগের কথা তুলে ধরেন কবিতার ছন্দে।
এমনি দিনে হয়তো বিভোর কোনো গভীর দাগও হয়তো টলে যায় এ মাতাল সমীরণে। রবীন্দ্র্রনাথ তাইতো গেয়ে ওঠেন, ‘আজ বসন্তের এই মাতাল সমীরণে আজ জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে’।
রবীন্দ্রনাথ তো বর্ষা আর বসন্ত নিয়ে তৈরি করেছেন একটা বিশাল জগত। সেই প্রাচীনকাল থেকেই কবিরা যেন বসন্তরানীর কাছে নিজেকে সমর্পণ করে দিয়েছেন। আর এ দিনটিতে হাজার বছরের বাঙালি জীবনে ভালোবাসার দেবতা ও বসন্তের প্রভাব অনিবার্য, অলঙ্ঘনীয়। বেদনা বিরহে ব্যাকুল হয়ে ওঠাও এ বসন্তেই দেখা যায়। কবিগুরুর ভাষায়, ‘সুখে আছে যারা, সুখে থাক তারা / সুখের বসন্ত সুখে হোক হারা / দুখিনী নারীর নয়নের নীড় / সুখীজনে যেন দেখিতে না পায়’ এ গান হৃদয়ের অন্তিম আকুতিকে তুলে আনে সামনে এ বসন্তেই। কবি মহাদেব সাহা লিখেছেন, বসন্তকে আমি বলি কবি, তার হাতে রচিত হয় / পৃথিবীর প্রেমের কবিতা।
সিলেটে যা আয়োজন বসন্ত বরণে সিলেটে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠন এ উৎসবকে বরণ করতে ইতিমধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। বিশেষ করে সিলেট শিল্পকলা একাডেমী ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় পূর্ব শাহী ঈদগাহ শিল্পকলা একাডেমী প্রাঙ্গণে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
লেখকঃ অহী আলম রেজা, সাংবাদিক, প্রভাষক
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন