সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বাংলাদেশ ক্রিকেট এবং সমসাময়িক কথা


"বাংলাদেশ ক্রিকেট", শব্দ দুটো শুনলেই আমাদের প্রাণে যেন একধরনের আশার সঞ্চার হয়, চোখে ভাসতে থাকে লাল সবুজ রঙের জার্সি পরা  মাশরাফি মুশফিক সাকিবের মুখের প্রতিচ্ছবি। তৈরি হয় অন্য রকম এর আবেগ। কিকেটাররা যখন মাঠে থাকেন তখন প্রায় ১৭ কোটি মানুষের চোখ থাকে ২২ গজের দিকে। যখন কোন ম্যাচে বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম জিতে যায় তখন সংবাদ মাধ্যম গুলোতে চোখ বুলাতে অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে।

আমরা যারা প্রবাসে থাকি, বিভিন্ন দেশে যারা ঘুরে বেড়াই অন্য কোন দেশ জাতির সাথে পরিচয় দিতে সবার আগে ক্রিকেট দিয়ে পরিচয় দেই। বিশ্বব্যাপী আমাদের এই ৫৬ হাজার বর্গমাইল ভূখন্ডকে মানুষ চিনেছে'ই বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য। লাল সবুজের জাতির পরিচয় পর্বের অন্যতম একটি দিক হচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট এবং সেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাথে যদি বিশেষ একটি নাম উচ্চারণ হয় সেটি হচ্ছে সাকিব আল হাসান।

ইদানিং বাংলাদেশ ক্রিকেট খুব সুখকর অবস্থার মধ্য দিয়ে সময় পার করছে না। একের পর এক ঝামেলা। গত ২১ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে ১১ দফা দাবী নিয়ে ধর্মঘটের ডাক দিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। দাবী গুলোর প্রথমটিতে ছিল "ক্রিকেটাররা সম্মান পান না"। বাংলাদেশে বিভিন্নভাবে যত মানুষ স্কলার আছেন তাদের মধ্যে আমাদের ক্রিকেটরা অন্যতম । ব্যাট বলের এই সন্তানদের জন্য ভালোবাসার কমতি নেই মানুষের। কিন্তু ক্রিকেটরা দাবী করেছেন তারা সম্মান পান না! তার মানে কি এই দাঁড়ায় না, বোর্ড তাদের সম্মান দিতে পারেনা অথবা বোর্ডের সাথে তাদের সম্পর্ক খুব একটা ভালো নয়। ক্রিকেটারদের প্রতি এপ্রোচের ব্যাপারে প্রশ্ন রয়েই গেলো! অন্য দিকে যদি আমি বলি, তবে বলতে হবে, কোন ম্যাচ হেরে যাবার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক বা ইউটিউবে খেলা সংক্রান্ত পোস্ট গুলোর কমেন্ট বক্সে চোখ ঘুরালেই বোঝা যাবে তাদের এ দাবী কতখানি যৌক্তিক।

কিন্তু এই দাবী গুলোর মধ্যে যেটি সবচেয়ে বেশী আমার নজর কেড়েছে সেটি হচ্ছে, গ্রাউন্ডস-ম্যানদের বেতন ভাতা নিয়ে। মাঠ সাজাতে, পর্দার আড়ালে থেকে সেই কঠোর পরিশ্রমী মানুষজন কতখানি তাদের ন্যায্য অধিকার পাচ্ছেন! প্রশ্ন রয়েই গেলো। আমি একটি কথা সোজা সাপটা বোঝই- এই গ্রাউন্ডস-ম্যানরা অবশ্যই আমাদের ক্রিকেটের অংশ।  ক্রিকেটাররা এভাবে একে একে ১১ টা দাবী দিয়েছেন। বিসিবি এবং ক্রিকেটারদের বৈঠকে এসব দাবী দাওয়ার কিছুটা সুরাহা হয়েছে।     

এই ঝামেলা শেষ হতেই পারলো না আমাদের সামনে চলে এলো সবচেয়ে বড় একটি দুঃসংবাদ। আমাদের সুপার হিরো সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে আইসিসি এন্টি করাপশন কোডের অধীনে এলো নিষেধাজ্ঞা। আইসিসি এক বছরের স্থগিত নিষেধাজ্ঞাসহ দুই বছরের জন্য সব রকমের ক্রিকেটীয় কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ করলো বাংলাদেশ টেস্ট ও টি-টুয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে। তিনবার জুয়াড়িদের কাছ থেকে ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পেলেও আইসিসির দুর্নীতি বিরোধী ইউনিটকে না জানানোয় এই শাস্তি পেতে হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট তারকাকে।

সাকিব এই শাস্তি মেনেও নিয়েছেন। কিন্তু কথা হচ্ছে সাকিবের এই সংবাদ কোন ভাবেই আমাদের জন্য সুখকর নয়। এখানে সাকিব না হয়ে যদি অন্য কেউ নিষিদ্ধ হতেন তবে পক্ষে বিপক্ষে অনেক যুক্তি তর্ক সৃষ্টি হতো, কিন্তু সাকিব হওয়ার কারণে আমরা সেটা মেনে নিতে পারছিনা।

এই ঘটনার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখলাম কেউ কেউ একতরফা ভাবে বিসিবি, বিশেষ করে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনকে দোষারোপ করছেন। অনেকে বলছেন চক্রান্ত করে এসব করা হয়েছে। কিন্তু এখানে আমার কাছে উত্তর হচ্ছে দুটো, প্রথমত, সাকিব এই আইনের কথা জানতেন যে- এরকম কু-প্রস্তাব পেলে অবশ্যই আইসিসির দুর্নীতি বিরোধী ইউনিটকে জানাতে হবে। কিন্তু সেটা তিনি কেন জানালেন না, তিনিই জানেন! সেজন্য তিনি গোপন করার জন্য শাস্তিও মেনে নিয়েছেন। দ্বিতীয়ত বিসিবির কথা যদি বলি, তবে বলতে হবে- বোর্ড অবশ্যই এসব ব্যাপারে খেলোয়াড়দের ট্রিটমেন্ট করেনি। যদি করতো তবে ২০১৮ সালে চার মাসের মধ্যে তিনবার জুয়াড়ির কাছ থেকে প্রস্তাব পাওয়া একজন খেলোয়াড়ের খবর তারা কেন রাখতে পারলো না! নিশ্চয়ই তাদের ট্রিটমেন্ট এর অভাব ছিল এতে ।

এখানে আমার কিছু মতামত আছে, প্রথমত হচ্ছে সাকিবকে আমরা এক বছরের জন্য খেলার মাঠে হারিয়েছি, কিন্তু অবশ্যই উচিৎ এই একবছর সম্পূর্ণ ভাবে সাকিবকে দেখাশোনা এবং সাপোর্ট করে একজন জ্বলন্ত সাকিবকে মাঠে ফিরিয়ে আনা অবশ্যই বোর্ডের দায়িত্ব। অপরদিকে সাকিব বিহীন বাংলাদেশ ক্রিকেট দল কতটা শক্তিশালী তা দেখার উৎকৃষ্ট সময় এখনি। কেউ কেউ বলে থাকেন- সাকিব ছাড়া বাংলাদেশ জিতবে না। আমার মতামত হচ্ছে, একজন খেলোয়াড়ের উপর ভর করে যদি একটি ক্রিকেট দল মুভমেন্ট করতে চায় তাহলে এর থেকে লজ্জা আর কিছু হতে পারেনা। ২২ গজে ১১ জন খেলোয়াড় ১১ ভাবেই পারফেক্ট হতে হবে।

সবশেষে, ক্রিকেট আমাদের আবেগ, আমাদের ঘোষিত পরিচয়য়, অঘোষিত পরিচয়পত্র। আমরা চাই সাকিব মাঠে ফিরে আসুক ২০২০ সালের অক্টোবরে। ক্রিকেটের উপর থেকে মুছে যাক কালো ছায়া, ক্রিকেট বোর্ডের ব্যবহার স্টিম-রুলার টাইপ না হয়ে হোক সংবেদনশীল। কালোছায়া মুছে গিয়ে ভালো থাকুক বাংলাদেশ ক্রিকেট। 

লিখেছেন- চৌধুরী মারূফ, সাংবাদিক


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাউল সাধক চান মিয়া এবং আমার কিছু উপলব্ধি

"রজনী হইসনা অবসান  আজ নিশিতে আসতে পারেবন্ধু কালাচাঁন।। কত নিশি পোহাইলোমনের আশা মনে রইলো রে কেন বন্ধু আসিলোনা জুড়ায়না পরান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। বাসর সাজাই আসার আশেআসবে বন্ধু নিশি শেষে দারূন পিরিতের বিষে ধরিল উজান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। মেঘে ঢাকা আঁধার রাতে কেমনে থাকি একা ঘরে সাধক চাঁনমিয়া কয় কানতে কানতে হইলাম পেরেশান আজ নিশিতে আসতে বন্দু কালাচাঁন।"    গভীর নিশিতে ধ্যান মগ্ন হয়ে কালাচাঁনের অপেক্ষা করছেন সাধক।  সাধক চান মিয়ার শিষ্য বাউল সিরাজউদ্দিনের মতে এটি একটি রাই বিচ্ছেদ। কৃষ্ণের অপেক্ষায় রাধা নিশি বা রাতকে অনুরোধ করছেন 'রাত' যেন না পোহায়  কারণ তার কালা চান যে কোন সময় আসতে পারে। শব্দগুচ্ছ গুলো থেকে সহজেই উপলব্ধি হয় সাধক নিজ দেহকে রাধা আর আত্মাকে কৃষ্ণের সাথে তুলনা করেছেন। দেহ আত্মার মিলন ঘটানোই ছিল সাধকের সাধনা।        বাউল সাধক চান মিয়া উপরোক্ত গানটি রচনা করেছেন। নেত্রকোনা জেলার খাটপুরা গ্রামে ১৩২৫ বঙ্গাব্দে সাধক চান মিয়ার জন্ম। পুরো নাম চান্দেজ্জামান আকন্দ হলেও বা...

বাউল, বাউলতত্ব এবং কিছু কথা

একজন ভদ্র বন্ধু বরের সাথে বাউল সম্প্রদায় নিয়ে বেশ তর্ক হলো রাতে। তর্কের সূত্রপাত ছিল বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী। ভাবলাম "বাউলতত্ত্ব"র আলোকে বাউলরা ভাববাদী নাকি বস্তুবাদী তা নিয়ে যৌক্তিক আলোচনা আবশ্যম্ভাবী। কয়েকটি ধারাবাহিক পর্ব লিখে নিজের মনোভাব বোঝানোর চেষ্টা করব।  শুরুতেই শক্তিনাথ ঝাঁ এর বস্তুবাদী বাউল বই থেকে কিছু কথা লিখতে চাই; বাস্তব জগত ও জীবনকে এরা কোন আনুমানিক যুক্তি বা আলৌকিক যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে নারাজ। জৈব রাসায়নিক ব্যাখায় এরা নারীর রজঃ এবং পুরুষের বিজে জীবন ও জগত সৃষ্টিকে ব্যাখা করে এবং চার ভূতকে প্রাকৃতিক সৃষ্টি মনে করে। এভাবে মানুষে, প্রকৃতিতে তৈরি করে প্রাণ, প্রাণী। অনুমান ভিত্তিক স্বর্গ, নরক, পরলোক, পুনর্জন্মাদি প্রত্যক্ষ প্রমাণাভাবে বাউল আগ্রাহ্য করে। মানুষ ব্যাতিরিক্ত ঈশ্বরও এরা মানে না। সৃষ্টির নিয়মকে জেনে যিনি নিজেকে পরিচালনা করতে শিখেছেন- তিনিই সাঁই। সুস্থ নিরোগ দীর্ঘজীবন এবং আনন্দকে অনুভব করার বাউল সাধনা এক আনন্দমার্গ।।  বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী এর অনেক সূক্ষ বিশ্লেষণ শক্তিনাথের বস্তুবাদী বাউল বইটির মধ্যে আলকপাত করা হয়েছে। সাধারণ সমাজে এ ধা...

ভাইবে রাধারমণ

তখন কলেজের ছাত্র। বাংলা বিভাগের প্রভাষক শ্রদ্ধেয় রেজা স্যারের সাথে খুবই ভালো সম্পর্ক। কলেজের প্রথম দিনই স্যারকে খুব পছন্দ। তারপর স্যারের সাথে গল্প, সমাজ, রাজনীতি, সাহিত্য নিয়ে আলোচনা। রীতিমত ফিজিক্স, বায়োলোজি ক্লাস ফাঁকি দিলেও বাংলা ক্লাস কখনই ফাঁকি দিতাম না। খুব উপভোগ করতাম স্যারের ক্লাস। হোস্টেল সুপার হিসেবে স্যার ( ওহী আলম রেজা) আমাদের সাথেই থাকতেন। আমরা আসার প্রায় নয় মাস পর স্যার এলেন সুপার হিসেবে। প্রতিদিন রাতে খাবার পরেই স্যারের রুমে গিয়ে আড্ডা হত, গানের আসর হত। স্যারের পিসিতে প্রায়ই গান শুনতাম আমরা। একদিন হঠাৎ করেই একটি গান স্যার প্লে করলেন 'আমার বন্ধু দয়াময় তোমারে দেখিবার মনে লয়। তোমারে না দেখলে রাধার জীবন কেমনে রয় বন্ধুরে।। কদম ডালে বইসারে বন্ধু ভাঙ্গ কদম্বের আগা। শিশুকালে প্রেম শিখাইয়া যৌবনকালে দাগা রে।। তমাল ডালে বইসারে বন্ধু বাজাও রঙের বাশি। সুর শুনিয়া রাধার মন হইলো যে উদাসি রে।। ভাইবে রাধা রমন বলে মনেতে ভাবিয়া। নিভা ছিল মনের আগুন কে দিলাই জ্বালাইয়া রে।' গানের কথাগুলো বেশ ভালো লেগে গেলো। পুর গানটি শুনে বুঝলাম গানটি সাধক রাধারম...