সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ভালোবাসার ফেঞ্চুগঞ্জ (প্রথম পর্ব)

আকাশে রূপালী চাঁদের ভরা পূর্ণিমা। টিলাঘেরা ফেঞ্চুগঞ্জ সারকারখানার পাশেই মনিপুর চা বাগানের ব্রিজে কত রাত পার হয়েছে আড্ডা হৈ হুল্লোড়ে।  সারকারখানার মাঠের পাশের প্যাভিলিয়নে সন্ধ্যা ৭ অথবা ৮ টা অব্দি আড্ডা। কিছুক্ষণ পর বন্ধু কোমল নিয়ে আসলো গিটার, কল করে বন্ধু প্রদ্বীপকে বললাম দ্রুত চলে আয় গানের আসর হবে৷ বাজারের মসজিদের কোণায় দুলালের চায়ের দোকান। সেখান থেকে ঢু মেরে এসে বাগানের ব্রিজে বা মাঠের কোণায়। রাত ক'টা বাজে সেদিকে কোন খেয়াল নেই, চলছে আসর।একে একে মুহিত, জিহান, পল্লব, শিপন সাইফুল, রিজন,  শুভ, ফয়সল, সমর, ছোট ভাই মাজহারুল, ফাহিম সহ অনেকেই এসে হাজির। একের পর এক বাউল গানে মাতোয়ারা সবাই।

স্মৃতি কাতর হয়ে ডুবে গিয়েছিলাম আমার শৈশব,কিশোর যৌবনের সাক্ষী সেই চা পাতার ভীড়ে। এই চা বাগানের প্রতিটি ধূলিকণার সাথে কথা বলেছি, মিশেছি। ভালো না লাগা মানেই চা বাগানে লক্কু দাদার টং দোকানে। সেখানে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা। চা বাগানের মন্দিরের সামনে থাকা টং দোকান গুলোর আড্ডা প্রতি বিকেলেই ভীষণ অনুভব করি। ঈদ বা পূজার ছুটিতে স্কুলের বন্ধু বান্ধব সবাই একসাথে বাগানের চা ফ্যাক্টরির পাশের পুকুরে দাপাদাপি। চোখের সামনে ভেসে যাচ্ছে সময় গুলো।

"সকাল বেলা উঠে আমাদের দম ফালানোর সময় নাই। খাইলাম কি না খাইলাম তার দিকে চউক যায় না। আটটার মধ্যে হাজিরা না দিলে বড় বাবু আমাদের ফিরিয়্যা দেয়, সারাদিনের হাজিরার টাকা যায়। তাই দৌড়াইয়া গিয়া হাজিরা দেই আগে।" দূরে থেকে বসে বসে ক্ষোভ, বিষাদ এবং অবসাদ মাখা চা শ্রমিক গংগা মনির কথা গুলো এখনো কানে ভাসে।

চা বাগানের শ্রমিক গুলোর গায়ের ঘ্রাণ যেন আমি এখানে বসে পাই। ঘাম ঝরা নয় এদের দেহের ঘ্রাণে যেন একরকম সবুজ সজীবতার সুগন্ধ আছে। তাদের আচার ব্যবহারে অন্যরকম পবিত্রতা খুঁজে পাই আমি। বাগানের শফিক মেম্বার বাবলু বা রাজনদের চলাফেরায় অন্যরকম মার্জিত ভাব আছে। বিদ্যুৎ গ্যাস সভ্যতার সুবিধা থেকে বঞ্চিত বাবলু মাদ্রাজি যখন প্রথম বিভাগে বি.এ পাশ করে নিয়মিত ডায়েরি লিখে নিজের মনের আকুতি গুলো লেপন করে যায় অপ্রকাশিত পৃষ্ঠায় তখন ১৩ হাজার মাইল আমি চা বাগানে স্মৃতি খুঁজে বেড়াব এটাই স্বাভাবিক।

আজ এতটুকুই.....
লিখেছেন- চৌধুরী মারূফ, সাংবাদিক

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাউল সাধক চান মিয়া এবং আমার কিছু উপলব্ধি

"রজনী হইসনা অবসান  আজ নিশিতে আসতে পারেবন্ধু কালাচাঁন।। কত নিশি পোহাইলোমনের আশা মনে রইলো রে কেন বন্ধু আসিলোনা জুড়ায়না পরান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। বাসর সাজাই আসার আশেআসবে বন্ধু নিশি শেষে দারূন পিরিতের বিষে ধরিল উজান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। মেঘে ঢাকা আঁধার রাতে কেমনে থাকি একা ঘরে সাধক চাঁনমিয়া কয় কানতে কানতে হইলাম পেরেশান আজ নিশিতে আসতে বন্দু কালাচাঁন।"    গভীর নিশিতে ধ্যান মগ্ন হয়ে কালাচাঁনের অপেক্ষা করছেন সাধক।  সাধক চান মিয়ার শিষ্য বাউল সিরাজউদ্দিনের মতে এটি একটি রাই বিচ্ছেদ। কৃষ্ণের অপেক্ষায় রাধা নিশি বা রাতকে অনুরোধ করছেন 'রাত' যেন না পোহায়  কারণ তার কালা চান যে কোন সময় আসতে পারে। শব্দগুচ্ছ গুলো থেকে সহজেই উপলব্ধি হয় সাধক নিজ দেহকে রাধা আর আত্মাকে কৃষ্ণের সাথে তুলনা করেছেন। দেহ আত্মার মিলন ঘটানোই ছিল সাধকের সাধনা।        বাউল সাধক চান মিয়া উপরোক্ত গানটি রচনা করেছেন। নেত্রকোনা জেলার খাটপুরা গ্রামে ১৩২৫ বঙ্গাব্দে সাধক চান মিয়ার জন্ম। পুরো নাম চান্দেজ্জামান আকন্দ হলেও বা...

বাউল, বাউলতত্ব এবং কিছু কথা

একজন ভদ্র বন্ধু বরের সাথে বাউল সম্প্রদায় নিয়ে বেশ তর্ক হলো রাতে। তর্কের সূত্রপাত ছিল বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী। ভাবলাম "বাউলতত্ত্ব"র আলোকে বাউলরা ভাববাদী নাকি বস্তুবাদী তা নিয়ে যৌক্তিক আলোচনা আবশ্যম্ভাবী। কয়েকটি ধারাবাহিক পর্ব লিখে নিজের মনোভাব বোঝানোর চেষ্টা করব।  শুরুতেই শক্তিনাথ ঝাঁ এর বস্তুবাদী বাউল বই থেকে কিছু কথা লিখতে চাই; বাস্তব জগত ও জীবনকে এরা কোন আনুমানিক যুক্তি বা আলৌকিক যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে নারাজ। জৈব রাসায়নিক ব্যাখায় এরা নারীর রজঃ এবং পুরুষের বিজে জীবন ও জগত সৃষ্টিকে ব্যাখা করে এবং চার ভূতকে প্রাকৃতিক সৃষ্টি মনে করে। এভাবে মানুষে, প্রকৃতিতে তৈরি করে প্রাণ, প্রাণী। অনুমান ভিত্তিক স্বর্গ, নরক, পরলোক, পুনর্জন্মাদি প্রত্যক্ষ প্রমাণাভাবে বাউল আগ্রাহ্য করে। মানুষ ব্যাতিরিক্ত ঈশ্বরও এরা মানে না। সৃষ্টির নিয়মকে জেনে যিনি নিজেকে পরিচালনা করতে শিখেছেন- তিনিই সাঁই। সুস্থ নিরোগ দীর্ঘজীবন এবং আনন্দকে অনুভব করার বাউল সাধনা এক আনন্দমার্গ।।  বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী এর অনেক সূক্ষ বিশ্লেষণ শক্তিনাথের বস্তুবাদী বাউল বইটির মধ্যে আলকপাত করা হয়েছে। সাধারণ সমাজে এ ধা...

ভাইবে রাধারমণ

তখন কলেজের ছাত্র। বাংলা বিভাগের প্রভাষক শ্রদ্ধেয় রেজা স্যারের সাথে খুবই ভালো সম্পর্ক। কলেজের প্রথম দিনই স্যারকে খুব পছন্দ। তারপর স্যারের সাথে গল্প, সমাজ, রাজনীতি, সাহিত্য নিয়ে আলোচনা। রীতিমত ফিজিক্স, বায়োলোজি ক্লাস ফাঁকি দিলেও বাংলা ক্লাস কখনই ফাঁকি দিতাম না। খুব উপভোগ করতাম স্যারের ক্লাস। হোস্টেল সুপার হিসেবে স্যার ( ওহী আলম রেজা) আমাদের সাথেই থাকতেন। আমরা আসার প্রায় নয় মাস পর স্যার এলেন সুপার হিসেবে। প্রতিদিন রাতে খাবার পরেই স্যারের রুমে গিয়ে আড্ডা হত, গানের আসর হত। স্যারের পিসিতে প্রায়ই গান শুনতাম আমরা। একদিন হঠাৎ করেই একটি গান স্যার প্লে করলেন 'আমার বন্ধু দয়াময় তোমারে দেখিবার মনে লয়। তোমারে না দেখলে রাধার জীবন কেমনে রয় বন্ধুরে।। কদম ডালে বইসারে বন্ধু ভাঙ্গ কদম্বের আগা। শিশুকালে প্রেম শিখাইয়া যৌবনকালে দাগা রে।। তমাল ডালে বইসারে বন্ধু বাজাও রঙের বাশি। সুর শুনিয়া রাধার মন হইলো যে উদাসি রে।। ভাইবে রাধা রমন বলে মনেতে ভাবিয়া। নিভা ছিল মনের আগুন কে দিলাই জ্বালাইয়া রে।' গানের কথাগুলো বেশ ভালো লেগে গেলো। পুর গানটি শুনে বুঝলাম গানটি সাধক রাধারম...