সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সাংবাদিকতা আলোকপাত

সাংবাদিকতা পেশা চ্যালেঞ্জিং একটি পেশা । এই পেশার সাথে যারা জড়িত তাদেরকে সাংবাদিক বা সংবাদ কর্মী বলা হয়। সাংবাদিক এবং সংবাদকর্মীদের মধ্যে মূল তফাৎ অন্যদিন আলোচনা করব। কিন্তু আজকে আলোচনার মূল বিষইয় হচ্ছে সংবাদের ধরন। দেশের মফস্বল অঞ্চলের সাংবাদিকরা অনেক সময় কোন প্রতিবেদন তৈরি করতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে যান, কিভাবে একটি সংবাদ তৈরি করবেন বা একটি সংবাদ তৈরি করতে গেলে কি কি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হইয়। বিভিন্ন পত্রিকা, অনলাইন সংবাদ মাধ্যাম বা টিভি চ্যানেলের উপজেলা প্রতিনিধিরা সংবাদ নিউজরুমে বা বার্তা বিভাগে পাঠাতে গিয়ে সংবাদের গুণগত মান নিয়ে সম্পাদক বা বার্তা সম্পাদকের কাছে প্রশ্নের সম্মুখীন হইয়ে থাকেন। নিচের এই আলোচনা পাঠের মূল উদ্দেশ্য'ই হলো একটি প্রতিবেদন তৈরি করার সময় কি কি সাধারণ বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে সেগুলোর উপর আলোচনা করা। প্রথমেই বলে রাখি নিচের পুরো কন্টেন্ট টি CHANGE WE NEED BLOG থেকে সিসি না কার্বন কপি নেওয়া হয়েছে।


চলমান জীবনের প্রতিদিনের ইতিহাস গ্রথিত হয় সাংবাদিকতার বৈচিত্র্যময় ধারায়। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নাগরিক সভ্যতাও বিকশিত হয় সাংবাদিকতার বৈচিত্র্যময় ধারায়। ইতিহাস যেন গাছের শেকড়ের মত জাতির জীবনে অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িয়ে থাকে। ইতিহাস হয়ে ওঠে জাতির ভবিষ্যৎ জীবনের পথ প্রদর্শক। ইতিহাসের দলিল থেকেই খুঁজে পাওয়া যায় ভবিষ্যতের রসদ। আজ একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে মুদ্রণ, বেতার ও বৈদ্যুতিন মাধ্যমের ওপর ভর করে জীবনের ঘটনাপ্রবাহও যে সাংবাদিকতার মাধ্যমে জনমানসে প্রতিফলিত হয়, তার ক্রমবিকাশও ঘটেছে ইতিহাসের সূত্র মেনে। মানব সভ্যতার ইতিহাস আর সাংবাদিকতার ইতিহাস তো পরস্পর বিচ্ছিন্ন ঘটনার পরম্পরা নয়। আবার সেই ইতিহাস শুধুই ঘটনাপ্রবাহ নয়। সেই ইতিহাস রাষ্ট্রিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক জীবনের নানা সংঘাত, নানা দ্বন্দ্বকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে। বিশ শতকের শুরুতে সাংবাদিকতা পেশা এক নতুন মোড় নেয়। জাতীয়বাদী আন্দোলন, মুসলিম জাতীয়তাবাদের উত্থান, প্রথম ও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ এবং প্রতিনিধিত্বমূলক সরকারের সূচনা প্রভৃতি কারণে সংবাদপত্রসমূহের চাহিদা ও পাঠকসংখ্যা দ্রুত বিস্তার লাভ করে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগ এবং পূর্ববাংলার রাজধানী হিসেবে ঢাকার উত্থান সাংবাদিকতার বিস্তারের ক্ষেত্রে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে ভূমিকা পালন করে। গত এক দশকে বিস্তৃত হয়েছে সাংবাদিকতা পেশা গ্রহণের পরিসর। সাংবাদিকতাকে এখন শুধু সংবাদ পরিবেশন মাঝে সীমাবদ্ধ না রেখে ওই সংবাদ এর ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষন এ পরিনত করা হয়েছে। এসব দিক থেকে এখন প্রতিবেদন কে বিভিন্ন ভাবে ভাগ করে ফেলা হয়েছে। সংবাদপত্রে প্রতিদিন যে খবর পরিবেশন করা হয় তার মধ্যে অনেক খবর অনেক ভাবে ভাগ করা হয়ে থাকে। এভাবে সংবাদ বা প্রতিবেদন কে আর ভালোভাবে উপস্থাপন করা যায়। চারিত্রিক বিবেচনায় প্রতিবেদনকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।

নিচে তা দেখানো হলঃ
উপরিতল প্রতিবেদন (Surface reporting)
গভীর প্রতিবেদন (Depth reporting)


                                    উপরিতল প্রতিবেদনঃ                                                                                           

আমরা প্রতিদিন সংবাদ পত্রে যে সব খবর পড়ে থাকি তার বেশিরভাগ উপরিতল প্রতিবেদন। কোন ঘটনা ঘটার পর তার ভুপর নির্ভর কপ্রে যে খবর তৈরি করা হয় এককথায় বলা যেতে পারে যে, প্রতিবেদক নিজে যা প্রত্যক্ষ করেন বা নির্ভরযোগ্য সুত্র থেকে যে সংবাদ লাভ করেন তার বর্ণনা উপস্থাপন করেন। এগুলো হয় ঘটনা নির্ভর ও সংবাদের স্বীয় চরিত্র বিবেচনায় সরল ও সাদামাটা সংবাদ। এ ধরনের প্রতিবেদন তরতাজা খবর নিয়ে তৈরি হয়। তথ্যের জন্য পাঠকের যে প্রাথমিক চাহিদা অর্থাৎ তথ্য জানা তা মেটানোই এ প্রতিবেদনের লক্ষ্য।

               গভীর প্রতিবেদন বা ইন-ডেপ্‌থ নিউজ

কোন ঘটনা ঘটার পর বা এমন কোন বিষয় যা নিয়ে অনেকদিন ধরে আলোচনা চলছে এরকম কোন বিষয় নিয়ে যে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। অর্থাৎ বোঝা যাচ্ছে যে কোন বিষয় এর উপর বা সেই বিষয় এর পুর্নাঙ্গ আলোচনা কে গভীর প্রতিবেদন বলা হয়। British Dictionary তে In-depth (adjective) অর্থ দেয়া আছে, carefully worked out, detailed and thorough। অর্থাৎ যত্নসহকারে সম্পাদিত, বিস্তারিত, নিখুঁত ও পূর্ণাংগ। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, ইন-ডেপ্‌থ নিউজের চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য। In-Depth reporting is, larger and more thoroughly researched. এটি সাধারণ সংবাদের থেকে আলাদা, দীর্ঘ। অন্তরালের ঘটনা এতে উঠে আসে। ডেপ্‌থ নিউজে ঘটনার উপরিতলের উপস্থিত তথ্যাদির গভীরে প্রবেশ করে পাঠককে বিস্তারিত পটভূমি ও তথ্যাবলীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া, তথ্য/ঘটনা ও পটভূমির পালোকে ব্যাখ্যা প্রদান ও বিশ্লেষন প্রদান করা হয়।যেমন রাস্তায় প্রতিদিন যাঞ্জত হয় এতা নিয়ে খবর হতে পারে সাধারনত কিন্তু যখন এই যাঞ্জতের কারপন কি, কেন যাঞ্জট নিয়ন্ত্রন করা যাচ্ছে না তা নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করা হয় তখন তা গভঈর প্রতিবেদন এ পরিনত হয়।

                                      বিশ্লেষণ

একটি উধাহরন এর সাহায্যে বলা যেতে পারে, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রকাশিত পরিসখ্যান লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, দরিদ্র জনগন বৃদ্ধি পাচ্ছে।দরিদ্র সীমার নীচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা কিভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তা উপরিতল প্রতিবেদন এর মাধ্যমে বের করা সম্ভব না। অন্যভাবে বললে, যখন এই কিভাবে এর দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে এবং প্রতিবেদন এর মুখ্য বিষয়ই হচ্ছে ওই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া তখনই তা হয়ে উঠেছে গভীর প্রতিবেদন।

ডেপ্‌থ নিউজ হল, ষড় ‘ক’ (5 W 1 H) এর বিস্তারিত উপস্থাপন। কেন এবং কীভাবে ডেপ্‌থ নিউজের অন্যতম উপজীব্য। যেমন, প্রতিদিনের দূর্ঘটনা সাদামাটা সংবাদ। কিন্তু যখন এটি আর কোন বিচ্ছিন্ন ঘটোনা থাকেনা, এর পেছনে কোন নির্দিষ্ট কারণ থাকে তখন তা ডেপ্‌থ নিউজ করা হয়। ‘কেন’ রোজ দূর্ঘটনা হচ্ছে এর পেছনের কারণ খোঁজা হয়। আবার পথশিশুরা ‘কিভাবে’ অপরাধ কর্মে লিপ্ত হচ্ছে তার ব্যাখ্যা দিয়ে সংবাদ হতে পারে। এ রিপোর্টিং এর ক্ষেত্রে ডেডলাইন শিথিল থাকে। যেহেতু বিস্তর গবেষণা ও সময় প্রয়োজন সেহেতু এটি যখন পুরোপুরি তৈরি হয় তখনি প্রকাশ করা করা হয়। তবে যারা বড় ধরণের রাজনৈতিক এজেন্ডা নিয়ে কাজ করে তারা একটি ডেডলাইন ঠিক করে নেয়। যেমনঃ নির্বাচনের সময় কোন একজন প্রার্থীকে নিয়ে ‘series of report’ প্রকাশ করা হয়। দীর্ঘদিন পর্যবেক্ষণ করা হয়, অনেক সাক্ষাতকার গ্রহণ, প্রচুর সোর্সের কাছে তথ্য নেয়া, পরিসখ্যাংন ও সংবাদপত্র ঘাটাঘাটি প্রয়োজন। ডেপ্‌থ রিপোর্টিং কে এক কথায় সঙ্গায়িত করা দুরূহ। তবু বলা যায়, ‘’ঘটনার পেছনের ঘটনাকে, তথ্যের পেছনের তথ্যকে, উপরিতলের নিচে লুকানো মর্মার্থকে খুঁজে বের করবার প্রতিবেদন।‘’ সেন্ট পিটার্সবার্গ টাইমস এর নির্বাহী সম্পাদক এর বক্তব্য তুলে ধরা হল, ‘’We regard depth reporting as telling the reader all the essentials facts about the subjects, the whens and the whereof of it, as many sides of it as we can get and plenty of background.’’ মার্কিনী সাংবাদিক লয়েড ওয়েগুটের মতে, ‘’ Depth reporting means expanding the ‘what’ of the story- supplying background details that make the event fall into place as a meaningful part of the history. It means careful attention to the ‘why’- explaining important motivations of the people involved.’’



                 ডেপ্থ নিউজের ধরণ (Type of depth news)



অনুসন্ধানী সংবাদ (Investigative News)
ব্যাখ্যামূলক সংবাদ (Interpretative News)




                  অনুসন্ধানী সংবাদ (Investigative News)     

সাধারণ সাংবাদিকতা থেকে এটি ভিন্ন। সাংবাদিক সমাজের ওয়াচডগ হিসেবে ভূমিকা পালন করে। আর অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা এ দায়িত্বকে যথাযথ পালন করে।



’৮০ এর দশকে প্রথম ‘’Investigative Journalism’’ টার্মটি জনপ্রিয় হয়। অনুসন্ধানী রিপোর্টে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট তথ্য যেগুলো গোপন করে রাখা হয়েছে তা বের করে আনা হয়। সাধারনত তথ্য ২ ভাবে গোপন করা হয়।

ইচ্ছাকৃত
অনিচ্ছাকৃত
এসব গোপন তথ্য বের করে আনা ও রিপোর্ট তৈরি করা একটি দীর্ঘ ও সুশৃখল প্রক্রিয়া। অনুসন্ধানী প্রতিবেদনকে ‘’বুদ্ধিভিত্তিক প্রক্রিয়া’’ বা ‘’Intelligent Process’’ বলা হয়।

Paul N. Williams এর ভাষায়, ‘’ Investigative reporting is an intelligent process. It is a business of gathering and sorting ideas and facts; building patterns, analyzing options and making decision based on logic rather than emotions including the decisions to say no to at any several stages.’’

                          অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার শুরুঃ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের পদত্যাগের কারণ সবারই জানা। এ ওয়াটারগেইট কেলেঙ্কারির(জুন ১৭, ১৯৭২) মাধ্যমে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সূচনা ঘটে মূলত। ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক বব উডোয়ার্ড ও কার্ল বার্নস্টেইনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ওয়াটারগেইট কেলেঙ্কারী উন্মোচিত করে দিয়েছিলেন। বর্তমানকালে এর পরিসর বেড়েছে অনেক। অভিনবত্ব এসেছে প্রক্রিয়ায়। তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়ন এ ধরণের সাংবাদিকতায় আশীর্বাদ হয়ে কাজ করেছে।



                     অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার উপাদানসমূহঃ



একটি ইস্যু বা ঘটনাকে খুঁড়ে বের করাঃ ‘আগামী মাসে সোনাপুর গ্রামে একটি মেলা হবে। এতে কোন’ – এ সংবাদটি অনুসন্ধানী হবে না।
ইস্যুটি হতে হবে অবশই জনস্বার্থের জন্যঃ অর্থাৎ, তথ্যটি না জানলে জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে এমন আশঙ্কা রয়েছে। অথবা, তথ্যটি জানলে জনগণ উপকৃত হুবে।
এটি একটী প্রক্রিয়া, কোন ইভেন্ট বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নাঃ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা কখনো তাতক্ষণিক ঘটনা নিয়ে কাজ করে না। এটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোয়। সর্বোচ্চ নির্ভুলতা ও প্রমাণসাপেক্ষে রিপোর্ট তৈরি করে।
এটি মৌলিক এবং প্রো-এক্টিভঃ এটি সাংবাদিক ও তার টিমের নিজস্ব কাজ। এটির শুরুতে হাইপোথিসিস তৈরি করতে করতে এবং সে অনুযায়ী এগুতে হবে। নিজের কাছে প্রশ্ন করতে হবে। প্রয়োজনীয় সকল সোর্সের কাছে নিশ্চিত হতে হবে এবং প্রমাণ যোগাড় করতে হবে।

এটি সম্পূর্ণ নতুন কোন তথ্য হতে হবে অথবা পুরানা অনেক গুলো ঘটনার সন্নিবেশ যার নিজের কোন নতুন তাৎপর্য আছে।
রিপোর্টটি মাল্টি সোর্স্‌ড হতে হবে। অর্থাৎ, শুধু একজনের কাছে তথ্যের শুধু একটি দিক উঠে আসার সম্ভাবনা থাকে। বাকি দিকগুলো অজানাই থেকে যেতে পারে। তাই মানুষ, নথি, সব ধরণের সোর্সের কাছে যেতে হবে।
এ রিপোর্টের প্রকৃতির কারণেই সাধারণ বা কনভেনশনাল রিপোর্টিং এর থেকে এতে বেশি রিসোর্স প্রয়োজন হয়। বেশী সময়, একটি পরিশ্রমী ও দক্ষ টিম, আর্থিক সাহায্যের দরকার পরিলক্ষিত হয়।


           অনুসন্ধানী বা ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং এর কৌশলসমূহ



কনভেনশনাল রিপোর্টিং এ তথ্য জোগাড় করা সহজ। পুলিশ, সরকার, কর্তৃপক্ষ সবাই তথ্য সরবরাহ করে। কিন্তু অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে কেউই তথ্য দিতে চাইবে না। গোপন করে রাখার প্রবণতা থাকে। তথ্য জোগাড় করা কষ্টসাধ্য কাজ। রিপোর্টারকে অনেক দক্ষ হতে হবে। সকল বাধা বিপত্তি জয় করে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং কে ‘’Enterprise Reporting’’ বলা হয়। কারণ, সবটাই রিপোর্টারের নিজের করতে হয়।সকল দায়ভার ও তার। হয় সে প্রশংসিত হবে নয়তো নিন্দিত।
রিপোর্টারকে সর্বোচ্চ মাত্রায় সন্দেহবাতিক হতে হবে।
5-W 1-H এর সবগুলোর ব্যাখ্যা দেয়া হয়।
5-W 1-H এখানে বিস্তৃত রুপ লাভ করে। ‘কে’ এর উত্তর আর শুধু একজনের নামে সীমিত থাকেনা, ব্যক্তিত্ব হয়ে যায়। ঘটনার সাথে সেই ব্যক্তিত্বর সম্পর্ক গুরুত্বপুর্ণ তথ্য হয়ে দাঁড়ায়।
‘কখন’ ও শুধুমাত্র বর্তমান সময়টাতে সীমিত থাকেনা। আজকের দিনের সাথে ইতিহাসের কোন যোগ আছে কিনা তা দেখা হয়।
‘কি’ এর উত্তরে কারণ অ ফলাফলগুলো আসবে। সামনে কী ঘটতে পারে তাও অনুসন্ধানে আসবে।


                   অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরির প্রক্রিয়া

এটি একটি সুশৃংখল প্রক্রিয়া। এর অন্যতম গুরুত্বপুর্ণ অংশ হল এর সূচনা। সঠিক সূচনার জন্য একটি ধারণা, ইঙ্গিত বা আভাস দরকার যা হাইপোথিসিসের আগের ধাপ। অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের একটু পাগ্লাটে হওয়াই বোধ হয় জরুরী। তা না হলে বাড়াবাড়ি করা সম্ভব না যা এই ক্ষেত্রে বিশেষ উপযোগী। রিপোর্ট সফল করতে অসম্ভব কাজকে তোয়াক্কা না করে তা সম্পন্ন করার উদ্যোগ নিতে হবে। শুরুতেই দরকার একটি আভাস। যার জন্য অবশ্যই রিপোর্টারের সন্দেহবাতিকতা ও sniffing capacity থাকতে হবে। সিক্সথ সেন্স কাজে লাগাতে হবে। বাইরের কেউ কেউ কখনও আভাস দিতে পারে। এদের Whistle blower বলা হয়। এছাড়া, পুরানা সংবাদপত্রও আভাস দিতে পারে। দ্বিতীয়ত, আভাস ও প্রাপ্ত তথ্য থেকে Hypothesis দাঁড় করাতে হবে। তৃতীয়ত, হাইপোথিসিস অনুযায়ী পরিকল্পনা করতে হবে। ঘটনার সাথে কারা জড়িত, কার কাছে গেলে তথ্য পাওয়া যাবে এসব পরিকল্পনা করতে হবে। এরপর, পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে যা যা লাগবে যেমন, গোপন ক্যামেরা, ভয়েস রেকর্ডার ইত্যাদি অফিসকে বলতে হবে. মানবিক ও লিখিত এই দুই ধরণের সূত্রই ব্যবহার করতে হয়। এ দুটি ছাড়াও আর যেভাবে খবর সংগ্রহ করা যায়-



নজর রাখা (Surveillance)
ভেক ধরা (Impersonation)
অনুপ্রবেশ (Infiltration)
প্রচ্ছন্ন চাপ (Squeeze)
ঘনিষ্ঠতা তৈরি করা


                       রচনা কৌশল                                                                                                                   



Investigative প্রতিবেদন রচনার কাজটি পুরো প্রক্রিয়ার মাঝে সবচেয়ে ব্যক্তিগত পর্যায়। লেখার শুরুতে ভেবে নিতে হবে কোন তথ্যগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কোন গুলো তথ্য রাখতে চান, কোনগুলো আগে থাকবে কোন গূলো পরে। বিষয় ও চাহিদা এবং প্রতিবেদকের প্রকৃতি ও ধরণ অনুযায়ী লেখার ধরণ তৈরি করে নিতে হবে। প্রতিটি রিপোর্টই নিজস্ব বৈষিষ্ট অনুযায়ী সাজাতে হবে।



Lowel Brandle এর ভাষায় বলতে গেলে, ‘’each story is an individual thing with its own identity, its own architecture.’’ প্রথমেই মাথায় রাখতে হবে এটি পাঠককে মুগ্ধ করার জন্য লেখা নয়। যতটা সহজে পাঠকের সাথে যোগাযোগ করা যায় তত্ সফল হবে রিপোর্ট। সুস্পষ্টতা সবচেয়ে জরুরী। শব্দচয়নে নজর দিতে হবে। প্রাণ্‌জল ও সহজ শব্দ ব্যবহার করতে হবে। বাক্য হবে ছোট, সরল। বিশেষণের ব্যবহার একদম কম হবে। আর কর্তৃবাচ্য বেশি তাড়াতাড়ি পাঠকের কাছে পৌঁছায় তাই এটিকে প্রাধান্য দিতে হবে। প্রতিবেদনকে মানবীয় (Humanize) করার জন্য সচেষ্ট থাকতে হবে। রুপক কখনো জরুরী হলেও এর আধিক্য একদম বর্জনীয়।প্রত্যেক্টি বিষয় ভালোভাবে যাচাই করে সাজিয়ে নিতে হবে। একটি কাঠামো (Outline) তৈরি করলে ভালো হয়। Neal Coppel তাঁর Depth Reporting: An approach to Journalism গ্রন্থে সাজিয়ে নেয়ার উপর গুরত্ব দিয়ে লিখেছেন, ‘’ In some way or other he is going to have to get organized, and since this is the newspaper business, next week won’t do; nor probably, will the old pyramid style.’’ David weir ও Dan Noyes তাদের Raising Hell বইয়ে কাঠামো তৈরির কথা উল্লেখ করেছেন। পুলিৎজার বিজয়ী নিউ ইয়র্ক টাইমস্‌ এর রিপোর্টার এন্থনি লিউইস বলেছেন, ‘’In writing any serious story, I think about the whole story before writing it at least to decide what points I should cover and in what order. If there is time I may jot down an outline.’’



কাঠামো ছাড়াও একটি লক্ষ্যবিন্দু তৈরি করতে হবে যাকে কেন্দ্র করে রিপোর্টটি আবর্তিত হবে।

মেরী বেনেডিক্ট দুটি বিষয়ের কথা বলেছেন—

ফোকাস (Focus)
প্রেক্ষাপট (Perspective)


লেখা শেষ হবার পর একাধিক বিষয় পুনরায় লক্ষ্য করা জরুরী। রিপোর্টের ট্রানজিশনগুলা আবার খেয়াল করতে হবে যাতে তা পড়তে সুবিধাজনক, সুস্পষ্ট ও সহজবোধ্য হয়।



                   অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের প্রতিবন্ধকতাসমূহ



মালিকপক্ষের বাধা (Proprietorial interference)
মিডিয়া গেটকিপার (Media gatekeepers)
রাজনৈতিক বাধা (Political interference)
অর্থনৈতিক বাধা (Economic constraints)
প্রযুক্তিগত বাধা (Technological limitations)
দক্ষ প্রতিবেদকের অভাব (Limited skilled manpower)
তথ্যপ্রাপ্তির অভাব (Limited access to information)
জীবনের হুমকি (Threats to life)


বিভিন্ন বিষয়ের উপর ভিত্তি করে কনভেনশনাল এবং ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং এর মাঝে তুলনা

তুলনার বিষয়ঃ গবেষণা (Research)           

কনভেনশনাল:

তথ্য সংগ্রহের জন্য বাধাধরা নিয়ম বা ছন্দ আছে। ডেইলি বেসিসে তথ্য নেয়া হয়। নির্দিষ্ট সময় কাঠামো থাকে।
সহজেই গবেষণার কাজ শেষ হয়। রিপোর্ট তৈরির পর আর কোন গবেষণার প্রয়োজন হয়না।
শুধু প্রয়োজনীয় তথ্য গুলোই নেয়া হয়.
সংক্ষিপ্ত ( সময় এবং আকার)
ডকুমেন্ট এর বদলে ব্যক্তি্র বক্তব্য সোর্স হতে পারে।
ইনভেস্টিগেটিভ:

রিপোর্ট সম্পুর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তা প্রকাশ করা যাবেনা। নির্দিষ্ট সময় কাঠামো নেই। সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয়.
রিপোর্ট শেষ হওয়া অব্দি গবেষণার কাজ চলে এমনকি প্রকাশ করার পরও চলতে পারে।
সর্বোচ্চ প্রাপ্য তথ্যাদির উপর ভিত্তি করেই রিপোর্ট তৈরি হয়। রিপোর্টারের সন্তুষ্টির উপর তথ্য গ্রহণ নির্ভর করে তবে সন্তুষ্টি কখনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
দীর্ঘ (সময় এবং আকার)
প্রমাণের জন্য ডকুমেন্ট থাকা জরুরী।


তুলনার বিষয়ঃ (Source)

কনভেনশনাল:

ভেরিফিকেশন ছাড়া সোর্শ কে বিশ্বাস করে রিপোর্টার
অফিশিয়াল সোর্স থাকে। নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ তথ্য সরবরাহ করে।
অফিশিয়াল বক্তব্য গ্রহণ করবে। যা বলা হয়েছে শুধু তাই উল্লেখ করবে রিপোর্টার।
প্রায় সবসময়ই সোর্সের নাম প্রকাশিত থাকে।


ইনভেস্টিগেটিভ:

আগে থেকে সোর্স কে বিশ্বাস করা যাবেনা
অফিশিয়াল তথ্য গোপন করা থাকে রিপোর্টারের কাছ থেকে।
অন্যদের বক্তব্য থাকবে তবে রিপোর্টারের নিজস্ব অনুধাবন তুলে ধরবে নিজের ভাষায়।
নাম প্রকাষে অনিচ্ছুক বলে অনেক তথ্য ছাপা হয় তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে।


তুলনার বিষয়ঃ পরিণতি বা ফলাফল

কনভেনশনাল:

ঘটনা যা তারই হুবুহু প্রতিফলন হয় রিপোর্টে।
সোর্সের সাথে রিপোর্টারের ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকেনা।
রিপোর্টারের অবস্থান বস্তুনিষ্ঠ থাকে।কোন পক্ষের প্রতি বায়াস্‌ড থাকেনা।
ভুল হতে পারে। যেমনঃ বানান ভুল। তবে তত গুরুত্বের সাথে নেয়া হয়না।


ইনভেস্টিগেটিভ:

রিপোর্টের মাধ্যমে গৎবাধা ব্যবস্থাকে একটা ধাক্কা দেয়া
ব্যক্তিগত সম্বন্ধ ছাড়া কোন স্টোরিই সম্ভব নয়।
রিপোর্টার তার মতামত, রায়, বিচার দিতে পারে।
ভুল করার কোন সুযোগ নাই। রিপোর্টারকে সমস্ত দোষের দায়ভার নিতে হবে।


             ব্যাখ্যামুলক প্রতিবেদন Interpretative / Interpretive News



এ প্রতিবেদনে পাঠক কে কোন বিষয়ে ব্যাখা বিশ্লেষন প্রদান করা হয়।

মার্কিন কলামিস্ট রস্কো ড্রামন্ড বলেন, ‘’interpretative journalism is setting today’s event against yesterday’s background to tomorrows meaning’’

যেকোন ঘটনা একটি প্রক্রিয়া এবং একটি ব্যবস্থার অংশ; ব্যাখ্যামূলক প্রতিবেদন ঐ প্রক্রিয়া ও ব্যবস্থাকে তুলে ধরে। অনুসন্ধানী প্রতিবেদন যেমন সমাজের অসঙ্গতি তুলে ধরে এবং তা সংশোধনের জন্য তাগিদ দেয় তেমনি ব্যাখ্যামূলক প্রতিবেদন বর্তমান ঘটনা প্রবাহের আলোকে সম্ভাব্য ভবিষ্যতকে নির্দেশ করার মধ্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট জনকে সজাগ করে তুলতে চেষ্টা করে।



আলাদা আলাদা ঘটনার যোগে একটি mutual pattern বের করা হয়। এরপর তা প্রতিবেদনের একটি বিষয় হয়ে ওঠে। এ প্রতিবেদনে চুড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত উপস্থাপন করা হয়না। একাধিক মতামতের শক্তিশালী উপাদানগুলোকে তুলে ধরা ও ব্যাখা করা হয়।



                      ব্যাখ্যামূলক প্রতিবেদনের কাঠামো



কোন সুনির্দিষ্ট কাঠামো না থাকলেও কিছু পদ্ধতি বা কন্সেপ্ট অনুসরণ করা হয়। রিপোর্টার তার নিজস্ব ইচ্ছা এবং সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী কাঠামো তৈরী করে নেন। একজন ভাস্কর যেমন মাটি অনুযায়ি তার কাঠামো তৈরী করেন তেমনি রিপোর্টার তার তথ্য অনুযায়ি কাঠামো তৈরী করে থাকেন। তবে প্রচলিত কয়েকটি পদ্ধতির কথা তুলে ধরা হল।



চারটি পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে।



তথ্য, পরিসঙ্খ্যান, পটভূমি, বিশেষজ্ঞের উদ্ধৃতি এমনভাবে সাজিয়ে লিখতে হবে যেন তা একটি উপসংহারের দিকে যায়। পাঠক নিজেই বুঝে যাবে উপসংহার ইতিবাচক নাকি নেতিবাচক।


কোন বিশেষ ঘটনার/ সিদ্ধান্তের অর্থ খোঁজার চেষ্টা করা হয়। মানুষের সামনে ঘটনা/ সিদ্ধান্ত, তার তাৎপর্য এবং তার ফলাফল তুলে ধরা।


কোন বিশেষ ঘটনার ঐতিহাসিক পটভূমি তুলে ধরা যাতে পাঠক বোঝে কেন এ বিশেষ ঘটনাটটি ঘটলো। পাঠককে একটি নির্দিষ্ট দিকে ধাবিত করা হয়। কারণ, রিপোর্টার নিজের ব্যাখ্যাকে পাঠকের মাঝে


প্রতিষ্ঠিত করতে চায় এ প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে।


Opinion Survey মাধ্যমে সাধারণ বা বিশেষ জনগোষ্ঠীর মতামত সংগ্রহ করা হয় এবং ঐ মত গড়ে ওঠার কারণ ব্যাখ্যা করা হয়।




Prophesy Phase
ভবিষদ্বানী দশা
Factual or fact-gathering phase
তথ্য সংগ্রহ দশা
ব্যাখ্যামূলক প্রতিবেদনের তিনটি দশা,
Interpretation Phase
Three phases in Int. reporting
ব্যাখ্যাদানমূলক দশা


Alito Malinao এর Journalism For Filipinos বইয়ে এই দশা ৪ টির উল্লেখ রয়েছে। তথ্য সংগ্রহ দশাঃ প্রথম দশা। এটি যেকোন প্রতিবেদনের জন্য ভিত্তিস্বরুপ। বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা, ক্রস চেক করা হয় এবং স্টোরিটি যে করা হবে তা মোটামুটি নিশ্ছিত হয় এই দশায়ই। ভবিষদ্বানী দশাঃ এ দশায় একটি ‘’Educated Guess’’ করা হয় যাকে হাইপোথিসিস বলে। তথ্যের উপর ভিত্তি করে এ হাইপোথিসিস করা হয়। ব্যাখ্যামূলক দশাঃ এটি হল আগের দুটি দশার ‘ফল’ (Fruit)। রিপোর্টার পুরো রিপোর্ট্ এর অর্থ, তাৎপর্য ও প্রভাবের উপর ভিত্তি করে উপসংহার টানে এই দশাতেই।



                        ব্যাখ্যামূলক প্রতিবেদনের সফলতা



সাংবাদিকের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতে বিচরণ ক্ষমতা থাকতে হিবে। অন্তর্দৃষ্টি থাকতে হবে। জ্ঞান ও বিশ্লেষনী দক্ষতা থাকা জরুরী। সাংবাদিকের নিজের একটি আর্কাইভ থাকবে। প্রয়োজনমত সেখান থেকে সে তথ্য গ্রহণ করবে। এক্টি ভুল ধারণা আছে যে, শুধু তথ্য দ্বারাই এ ধরনের রিপোর্টিং করা সম্ভব। এটি ভুল। তথ্যকে জীবন্ত করে তুলতে পারে একটি ঘটনা। ঘটনাকে ব্যবহার করে ব্যাখ্যামুলক প্রতিবেদন তৈরি করলে পাঠক এর তাৎপর্য আরো ভালো বুঝতে পারবে।





                                     লেখার ধরন

সঠিকতা বা accuracy হল এই প্রতিবেদনের প্রানবস্তু। কোন প্রতিবেদনে ভুল তথ্য পরিবেশন হলে ওই প্রতিবেদক ও সংবাদ-মাধ্যমের উপর পাঠকের আস্থা কমে যায়। সাদামাঠা বা উপরিতল প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে সঠিকতা নিরুপন করা খুব সহজ হলেও গভীর প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে সঠিকতার বিষয়টি এত সহজে নিরুপন করা যায় না। ইনভার্টেড পিরামিড ফরম্যাট এ লেখা যায়। তবে এর সমালোচনা আছে। এ ফরম্যাট এ, শুরুতেই মূল কথা বলে দেয়া হয় বলে Biasness তৈরি হবার সম্ভাবনা থেকে। এম্নিতেই এ রিপোর্টিং এ সাব্জেক্টিভিটি বিদ্যমান।

ব্যবহৃত তথ্যের সুত্রসমূহ এবং বিশেষজ্ঞের পরিচয় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। কেননা সুত্রের বিশ্বাসযোগ্যতা না থাকলে পাঠকের কাছে তা গ্রহণযোগ্য হবেনা।

গবেষণায় দেখা গেছে, ৫ টি বৈশিষ্ট্য দিয়ে ব্যক্তিকে মূল্যায়ন করা হয়। এগুলো—



খ্যাতি (prominence)
আকর্ষণী ক্ষমতা (attractiveness)
বিশ্বাসযোগ্যতা (Trustworthiness)
সণচরণশীলতা (Dynamism)
যোগ্যতা (Competence)


পাঠকের চাহিদা পূরণের জন্য এসব বৈশিষ্টের অন্তত একটি মাপকাঠিতে সুত্রগুলোকে যাচাই করে হাজির করা।

সম্পাদকীয় ও ব্যাখ্যামূলক প্রতিবেদনের এক নয়।

ব্যাখ্যামূলক প্রতিবেদনে মত প্রকাশের সুযোগ থাকলেও এর সাথে সম্পাদকীয় এর কোন মিল নেই। দুটি সম্পুর্ণ ভিন্ন। এ প্রতিবেদন বিভিন্ন মতের প্রতিফলন ঘটীয়ে, অথ্যকে বিশ্লেষণ করে, বিভিন্ন মতের ব্যাখ্যা হাজির করে; অন্যদিকে সম্পাদকীয় সংবাদপত্রের নীতি অনুযায়ী বিভিন্ন ইস্যুতে নিজস্ব মতামত প্রকাশ করে। ঐ মতকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য যা যা তথ্য লাগে এর বেশি দেবার সুযোগ সম্পাদকীয়তে নেই।



              ইন-ডেপ্‌থ রিপোর্টিং এর ক্ষেত্রসমূহ



পরিবেশ (Environment beat)
মানবাধিকার (Human Right)
ব্যবসা-বাণিজ্য(Business)
কৃষি (Agricultural beat)
শিক্ষা (Educational beat)
রাজনীতি (Political Beat)
অপরাধ (Crime beat)
দুর্যোগ ও বিপর্যয় (Disasters)
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ( Science and Technology)
সংস্কৃতি (cultural beat)


                           পরিবেশ (Environment beat)



১) বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ এই দুটি নদীর মাঝখানে রাজধানী ঢাকা কিন্তু কলকারখানা বিশেষ করে টেক্সটাইল মিলগুলার বজ্য পদার্থ, অপরিকল্পিত ময়লার স্তুপ,নদী ভরাট করে ঢাকার আয়তন বৃদ্ধির ফলে এই নদী দুইটা তাদের যৌবন হারিয়ে ফেলেছে। এটা নিয়ে রিপোর্ট করা যেতে পারে।

২) নগরায়ন এর ফলে ঢাকার চারপাশে অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে উঠেছে ইট ভাটা, কেটে ফেলা হচ্ছে গাছ। এর ফলে বায়ু দুষন এর পরিমান বেড়ে গেছে। এটা নিয়ে রিপোর্ট করা যেতে পারে।

সোর্সঃ

বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এর সচিব, মন্ত্রী
ফরেস্ট ডিপার্ট্মেন্ট
চিফ ফরেস্ট কন্সারভেটোর বা, প্রধান বন সংরক্ষক
কৃষি অ বন অফিসার্স
এন,জি,ও
পানি উন্নয়ন বোর্ড
ঢাকার মেয়র






                                     মানবধিকার                                     



১) সামাজিক যোগাযোগ এর মাধ্যমে কাউকে হেয় করা, সাম্প্রদায়িক বা স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে উস্কানি মূলক বক্তব্য দেওয়া, মোবাইল ফোন এ গোপনে ভিডিও ধারন এবং মানসিক নির্যাতন এর ঘটনা অহরহ ঘটে চলছে। কিন্তু এই অপরাধ গুলোরে জন্য কোন কঠোর শাস্তি না থাকায় এটা আরও খারাপ রুপ ধারন করতে পারে। এটা নিয়ে প্রতিবেদন করা যেতে পারে।

২) নারী নির্যাতন বা নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা। দেশের বিভিন্ন জেলার ভিন্ন ভিন্ন গ্রামগুলাতে নারীর প্রতি নির্যাতন, যৌতুক দাবি, মেয়েদের কে কম বয়সে বিয়েতে রাজি করানো এর ফলে অপরিকল্পিত পরিবার গঠন, জন্ম নিয়ন্ত্রন হ্রাস এমন অনেক বিষয় যেটা নিয়ে প্রতিবেদন করা যেতে পারে।



সোর্সঃ

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ
উইমেন ফর উইমেন
মানবাধিকার কমিশন
আইন ও সালিশ কেন্দ্র
হিউম্যান রাইটস এসোসিয়েশন ফর চিল্ড্রেন
মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ
আইনবিদ


                                         শিক্ষা                               



১) প্রতি বছর জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটছে। প্রত্যেক বছর অযোগ্য অনেক শিক্ষার্থী ভালো রেজাল্ট করে পরবর্তীতে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে। এ বছর এ ফাঁসের ঘটনা অতীতের সবগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে। পরীক্ষা বাতিলের আন্দোলন করেও কোন লাভ হয়নি। শিক্ষামন্ত্রী তার সিদ্ধান্তে অটল যা নানা গুজব ও সন্দেহের বীজ তৈরি করেছে তার বিপক্ষে। দেশের জন্য একটি বিশাল ক্ষতি ডেকে আনলো এদেশের ভেঙ্গে পড়া, ঘুণে ধরা সিস্টেম। প্রতি বছর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটছে। প্রত্যেক বছর অযোগ্য অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে মেডিকেল কলেজে। আবার স্বাস্থমন্ত্রিকে নিয়ে ধোঁয়াশা, আসলে কে বা কারা জড়িত এ ফাঁসের সাথে, তাদের স্বার্থ, ভর্তি কোচিং গুলোর প্রশ্নফাঁসের আখড়াতে পরিণত হওয়া, তাদের লিঙ্ক কাদের সাথে এসব নিয়ে অনুসন্ধানী রিপোর্ট হতে পারে।

২) দেশে পাবলিক বা সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় এর সংখ্যা বেড়ে চলছে। নতুন করে খোলা হচ্ছে বিভিন্ন বিভাগ তবে দেখা যায় যে পুর্নাঙ্গ সুযোগ সুবিধা না নিয়েই এই বিভাগ গুলা খোলা হয় এতে করে প্রথম দিকে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ক্ষতি সীমাহীন থাকে। বিভিন্ন সময় এটা নিয়ে বাজেট করা হলেও তা সঠিকভাবে সঠিক ক্ষাতে প্রয়োগ করা হয় না। আবার আধুনিকায়ন এর এই সময়ে সবচেয়ে বড় বিষয় হল বিজ্ঞান আর একে প্রসারিত করার জন্য দরকার বিজ্ঞান কারখানা যা দেশের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া আর কোন বিশ্ববিদ্যালয় এ নেই এতে করে পিছিয়ে যাচ্ছে সময়ের সাথে তাল মেলানো। এটা নিয়ে প্রতিবেদন করা যেতে পারে।



সোর্সঃ

মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা
শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সচিবালয়।
শিক্ষাভবন, আব্দুল গণি সড়ক ঢাকা।
কারিগরি শিক্ষাবোর্ড, আগারগাঁও
শিক্ষা অধিদপ্তর,
পরিদর্শন ও অডিট অধিদপ্তর ,
শিক্ষাবিদ ,
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়,
মেডিকেল এসোসিয়েশন


                             ব্যাবসা-বানিজ্য                                               



১) গার্মেন্টস শ্রমিকদের সাথে মালিক পক্ষের রেশারেশির কারণ, বেতনের অনিয়ম, কম বেতন দিয়ে শ্রম কেনা, মালিকের উচ্চ মুনাফার আশা, অপরিকল্পিতভাবে গার্মেন্টস গড়ে উঠার ফলে বিভিন্ন সময়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা এর ফলে পোশাক রপ্তানিতে ধস। এটা নিয়ে প্রতিবেদন করা যেতে পারে।

২) শেয়ার বাজার এ ধস এর কারন কি এর পেছনে কারা জড়িত এটা নিয়ে প্রতিবেদন করা যেতে পারে।



সোর্সঃ

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়,
ট্রেড ইনফরমেশন সেন্টার,
প্রধান আমদানী-রপ্তানী নিয়ন্ত্রক,
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ,
শিল্প ও বণিক সমিতি,
বিনিয়োগ বোর্ড।


                           রাজনীতি, নির্বাচন, সংসদ



১) সংবিধান সংশোধন এর পর নির্বাচন এর ক্ষেত্রে তত্বাবধায়ক সরকার বাতিল ও অভ্যান্তরীন সরকার এর হস্তক্ষেপে নির্বাচন ও ভোট গ্রহন কতখানি যুক্তিসঙ্গত আর এই প্রসঙ্গে বিশিষ্ট নাগরিক এর মতামত, আবার ভোট গ্রহন এর সময় কারচুপি, প্রার্থী বাছায় এ অনিয়ম এটা নিয়ে নিউজ হতে পারে।

২) জামায়েত ইসলামী এর দলীয় অবস্থান, আভ্যন্তরীন ব্যাপার, আন্দোলন কর্মসূচী আছে কিনা, দল কী সক্রিয় নাকি নিষ্ক্রিয় আচরণ করছে, সরকার এই দল নিয়ে কি মত পোষন করে সবকিছু নিয়ে রিপোর্ট হতে পারে।



সোর্সঃ

স্বরাষ্ট্র মন্তণালয়, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্তণালয়
বিভিন্ন রাজনৈতিক সঙ্গঠন।


                                 অপরাধ



ঢাকার প্রবেশপথ গুলোতে পুলিশের সার্জেন্ট এর ঘুষ এর বিনিময়ে অবৈধ জিনিসপত্র ঢাকাতে ঢুকতে দেওয়া। বিশেষ করে বলতে গেলে দেখা যায় যে নেশা জাতীয় দ্রব্যের প্রপ্যতা। প্রতিদিন ঢাকাতে বিভিন্ন পন্য বাজারজাত করা হয় আর এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ড্রাগ যা অবৈধ ভাবে ঢাকায় ঢুকে থাকে আর এর পেছনে সবচেয়ে বড় দায় হিসেবে কাজ করে ঢাকার প্রবেশ পথ যেখানে পুলিশের সার্জেন্ট সামান্য টাকার বিনিময়ে মাল চালান করে থাকে। এর পেছনে একটি বড় সিন্ডিকেট কাজ করে আর এই ব্যাপারে প্রতিবেদন হতে পারে।
২) সাধারন মৃত্যুর নিশ্চয়তা। গত দুই-তিন বছরের পরিসখ্যাংন পর্যবেক্ষন করলে দেখা যাবে সারাদেশে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়েছে বিজ্ঞান্মনস্ক লেখকদের। যেখানে জীবনের নিরাপত্তা খুবই কম হয়ে পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যামগুলোতে নিজের মত প্রকাশ করলে জীবনের হুমকি নেমে আসে আর এই বিষয়ে সরকার এর পদক্ষেপ বা খুনীকে শাস্তির আওতায় আনার প্রবণতা খুব কম বা সরকার বিফল এই ব্যাপারে প্রতিবেদন করা যেতে পারে।



সোর্সঃ

পুলিশ হেডকোয়ার্টার,
মাদক নিয়ন্ত্রন বিভাগ,
দুর্নীতি দমন ব্যুরো,
বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার এসোসিয়েশন,
পুলিশ কমিশনার অফিস,
ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্সপেকশন


                                          কৃষি



১) নগরায়নের এই শহর থকে দিন দিন হারিয়ে গেছে প্রকৃতি তবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে ঢাকার অনেক এলাকায় বাড়ির ছাদে চলছে কৃষি কাজ। অনেক বাড়ির মালিকেরা শখবশত ছাদে বিভিন্ন ধরনের সবজী ,ফুল এর চাষ করে থাকেন এবং পরবর্তীতে তা ফার্ম এ পরিনত হয়। এক্ষেত্রে ফরমালিন মুক্ত খাবার পাওয়া যায়। বাসার ছাদে এই রকম কৃষিকাজ এ স্তানীয় সরকারি সুযোগ সুবিধা বাড়ালে তা কেমন হবে বা বাইরের দেশগুলর মত ছাদে চাষ করার প্রবনতা বাড়ানো এর ক্ষেত্রে সরকারের ভুমিকা এটা নিয়ে প্রতিবেদন করা যেতে পারে।

২) দেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকের মাঝে সার বিতরন এর প্রক্রিয়া, সার নিয়ে সিন্ডিকেট, কম দামের সার কৃষককে দুইগুন বেশি দামে কিনতে হওয়া আর এর পেছনে কাদের ভুমিকা বেশি, কেন সারের দাম সঠিক মুল্য থেকে বেশি দামে কৃষকদের ক্রয় করতে হচ্ছে এটা নিয়ে প্রতিবেদন করা যেতে পারে।





সোর্সঃ

কৃষি মন্ত্রণালয়, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট, ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।


                                 খেলাধুলা



১) ক্রিকেটের তুলনায় ফুটবল এ অনেক পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। প্রতিবছর কোচ বদল হয় আবার দেখা যায় বাইরের অনেক বেশি বেতন ভুক্ত কোচ নিয়ে আসা হয় তারপরও উন্নতি হচ্ছে না ফুটবল দলের। এর পেছনে কারন কি, কেন ফুটবল কে ক্রিকেটের পর্যায়ে তুলে আনা যাচ্ছে না, দিন দিন ফুটবলের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। ক্রিকেটে মুশফিক,সাকিব এর মত বিশ্ব মাতানো খেলোয়াড় থাকলেও ফুটবল এ তা নেই। এক্ষেত্রে কি বাফুফের প্রচেষ্টা কম না দেশি খেলোয়ার এর মান ভালো করার অন্য কোন উপায় আছে এটা নিয়ে প্রতিবেদন করা যেতে পারে।

২) অলেম্পিকে বাংলাদেশের অবস্থান। প্রতি চার বছর পর পর অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় খেলাধুলার আসর অলেম্পিক আর এখন বাংলাদেশ থেকেও বিভিন্ন ইভেন্ট এ যোগদান করে খেলোয়াড় তবে তাদের পারফরম্যান্স এর খাতা নেই বললেই চলে। এক্ষেত্রে কি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশ কে পাদপ্রদীপ এর আলোয় আনার ক্ষেত্রে আরও কি কি ভুমিকা রাখা দরকার বাংলাদেশ অলেম্পিক কমিটির এটা নিয়ে প্রতিবেদন করা যেতে পারে।



সোর্সঃ

যুব ও ক্রীড়া মন্তণালয়,
যুব অধিদপ্তর,
ক্রীড়া সংগঠন,
বিকেএসপি,




সহায়ক গ্রন্থঃ

অনুসন্ধানী ও ব্যাখ্যামূলক সাংবাদিকতা- আলী রিয়াজ।


লেখা এবং প্রতিবেদন বিষয়ক কন্টেন্ট সংগ্রহ -
চৌধুরী মারূফ, সাংবাদিক এবং অনলাইন এক্টিভিস্ট 


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাউল সাধক চান মিয়া এবং আমার কিছু উপলব্ধি

"রজনী হইসনা অবসান  আজ নিশিতে আসতে পারেবন্ধু কালাচাঁন।। কত নিশি পোহাইলোমনের আশা মনে রইলো রে কেন বন্ধু আসিলোনা জুড়ায়না পরান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। বাসর সাজাই আসার আশেআসবে বন্ধু নিশি শেষে দারূন পিরিতের বিষে ধরিল উজান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। মেঘে ঢাকা আঁধার রাতে কেমনে থাকি একা ঘরে সাধক চাঁনমিয়া কয় কানতে কানতে হইলাম পেরেশান আজ নিশিতে আসতে বন্দু কালাচাঁন।"    গভীর নিশিতে ধ্যান মগ্ন হয়ে কালাচাঁনের অপেক্ষা করছেন সাধক।  সাধক চান মিয়ার শিষ্য বাউল সিরাজউদ্দিনের মতে এটি একটি রাই বিচ্ছেদ। কৃষ্ণের অপেক্ষায় রাধা নিশি বা রাতকে অনুরোধ করছেন 'রাত' যেন না পোহায়  কারণ তার কালা চান যে কোন সময় আসতে পারে। শব্দগুচ্ছ গুলো থেকে সহজেই উপলব্ধি হয় সাধক নিজ দেহকে রাধা আর আত্মাকে কৃষ্ণের সাথে তুলনা করেছেন। দেহ আত্মার মিলন ঘটানোই ছিল সাধকের সাধনা।        বাউল সাধক চান মিয়া উপরোক্ত গানটি রচনা করেছেন। নেত্রকোনা জেলার খাটপুরা গ্রামে ১৩২৫ বঙ্গাব্দে সাধক চান মিয়ার জন্ম। পুরো নাম চান্দেজ্জামান আকন্দ হলেও বা...

বাউল, বাউলতত্ব এবং কিছু কথা

একজন ভদ্র বন্ধু বরের সাথে বাউল সম্প্রদায় নিয়ে বেশ তর্ক হলো রাতে। তর্কের সূত্রপাত ছিল বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী। ভাবলাম "বাউলতত্ত্ব"র আলোকে বাউলরা ভাববাদী নাকি বস্তুবাদী তা নিয়ে যৌক্তিক আলোচনা আবশ্যম্ভাবী। কয়েকটি ধারাবাহিক পর্ব লিখে নিজের মনোভাব বোঝানোর চেষ্টা করব।  শুরুতেই শক্তিনাথ ঝাঁ এর বস্তুবাদী বাউল বই থেকে কিছু কথা লিখতে চাই; বাস্তব জগত ও জীবনকে এরা কোন আনুমানিক যুক্তি বা আলৌকিক যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে নারাজ। জৈব রাসায়নিক ব্যাখায় এরা নারীর রজঃ এবং পুরুষের বিজে জীবন ও জগত সৃষ্টিকে ব্যাখা করে এবং চার ভূতকে প্রাকৃতিক সৃষ্টি মনে করে। এভাবে মানুষে, প্রকৃতিতে তৈরি করে প্রাণ, প্রাণী। অনুমান ভিত্তিক স্বর্গ, নরক, পরলোক, পুনর্জন্মাদি প্রত্যক্ষ প্রমাণাভাবে বাউল আগ্রাহ্য করে। মানুষ ব্যাতিরিক্ত ঈশ্বরও এরা মানে না। সৃষ্টির নিয়মকে জেনে যিনি নিজেকে পরিচালনা করতে শিখেছেন- তিনিই সাঁই। সুস্থ নিরোগ দীর্ঘজীবন এবং আনন্দকে অনুভব করার বাউল সাধনা এক আনন্দমার্গ।।  বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী এর অনেক সূক্ষ বিশ্লেষণ শক্তিনাথের বস্তুবাদী বাউল বইটির মধ্যে আলকপাত করা হয়েছে। সাধারণ সমাজে এ ধা...

ভাইবে রাধারমণ

তখন কলেজের ছাত্র। বাংলা বিভাগের প্রভাষক শ্রদ্ধেয় রেজা স্যারের সাথে খুবই ভালো সম্পর্ক। কলেজের প্রথম দিনই স্যারকে খুব পছন্দ। তারপর স্যারের সাথে গল্প, সমাজ, রাজনীতি, সাহিত্য নিয়ে আলোচনা। রীতিমত ফিজিক্স, বায়োলোজি ক্লাস ফাঁকি দিলেও বাংলা ক্লাস কখনই ফাঁকি দিতাম না। খুব উপভোগ করতাম স্যারের ক্লাস। হোস্টেল সুপার হিসেবে স্যার ( ওহী আলম রেজা) আমাদের সাথেই থাকতেন। আমরা আসার প্রায় নয় মাস পর স্যার এলেন সুপার হিসেবে। প্রতিদিন রাতে খাবার পরেই স্যারের রুমে গিয়ে আড্ডা হত, গানের আসর হত। স্যারের পিসিতে প্রায়ই গান শুনতাম আমরা। একদিন হঠাৎ করেই একটি গান স্যার প্লে করলেন 'আমার বন্ধু দয়াময় তোমারে দেখিবার মনে লয়। তোমারে না দেখলে রাধার জীবন কেমনে রয় বন্ধুরে।। কদম ডালে বইসারে বন্ধু ভাঙ্গ কদম্বের আগা। শিশুকালে প্রেম শিখাইয়া যৌবনকালে দাগা রে।। তমাল ডালে বইসারে বন্ধু বাজাও রঙের বাশি। সুর শুনিয়া রাধার মন হইলো যে উদাসি রে।। ভাইবে রাধা রমন বলে মনেতে ভাবিয়া। নিভা ছিল মনের আগুন কে দিলাই জ্বালাইয়া রে।' গানের কথাগুলো বেশ ভালো লেগে গেলো। পুর গানটি শুনে বুঝলাম গানটি সাধক রাধারম...