সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

প্রসঙ্গঃ খালেদা জিয়ার মুক্তি

আতাউর রহমান,লেখক

কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কি প্যারোলে মুক্তি পাচ্ছেন? খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে, তারা তাকে বিদেশ নিয়ে চিকিৎসা করাতে চান। এ ক্ষেত্রে প্যারোলে হলেও খালেদা জিয়ার মুক্তি চান তারা। খালেদা জিয়ারও প্যারোলের বিষয়ে আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন তারা।

প্যারোল নিয়ে বিএনপি নেতারা দ্বিধাবিভক্ত হলেও নেত্রীকে মুক্ত করতে সব রকম চেষ্টা করছে তার দল। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথমে প্যারোলের আবেদনের বিষয়ে বিএনপি কিছু জানে না বললেও পরে জানান– মানবিক বিবেচনায় খালেদা জিয়ার মুক্তি চান তারা। তিনি বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি না করে সরকার ও ক্ষমতাসীন দলকে ইতিবাচকভাবে ভাববার আহ্বান জানান।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে– খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি কতটা সম্ভব? বিএনপি নেতারা বলছেন, এ ক্ষেত্রে সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছুই। তবে সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতাদের বক্তব্যে খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে কৌশলী অবস্থান ফুটে ওঠে।

যেমন শনিবার ময়মনসিংহের ভালুকায় এক অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেছেন, কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তি চেয়ে প্যারোলের আবেদন করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে ‘আন্তরিক থাকবেন’। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া জেলখানায় আছেন, উনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। সংবিধানের দৃষ্টিতে সব নাগরিক সমান সুযোগ পাবেন, বেগম জিয়া যেহেতু একটি দলের প্রধান এবং উনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী তার ব্যাপারে রাষ্ট্র অত্যন্ত আন্তরিক।

এদিকে খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে বিএনপি রাজনীতি করছে অভিযোগ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন– খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য দুটি পথ খোলা আছে। একটি হলো– তাকে আইনি প্রক্রিয়ায় লড়াই করে জামিন নিতে হবে। অন্যটি হলো– প্যারোলে মুক্তির জন্য সরকারের কাছে আবেদন করতে হবে। ওনারা সেটি (প্যারোল) করেননি। উল্টো তারা খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে নোংরা রাজনীতি করে যাচ্ছেন।

খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির আবেদন নিয়ে সরকার যে কৌশলী অবস্থান নিয়েছে, সেটি বোঝা যায়– আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের একটি বক্তব্যে। তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়ার পরিবারের বরাত দিয়ে এক ধরনের কথা, আবার দলের পক্ষ থেকে আরেক ধরনের কথা বলা হচ্ছে। একদিকে আন্দোলনের ডাক, অন্যদিকে আমাদের সাধারণ সম্পাদককে ফোনে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়ার অনুরোধ করে তারা আসলে কী চান– সেটি এখনও স্পষ্ট করতে পারেননি।

তিনি বলেন, প্যারোল হচ্ছে– খালেদা জিয়া অপরাধ ও শাস্তি মেনে নিয়ে মুক্তির আবেদন করবেন। এমতাবস্থায় বিএনপি প্যারোলে মুক্তির আবেদন করবে কিনা সেটিও একটি বড় প্রশ্ন।

বিএনপি নেতাদের বর্তমান অবস্থান হচ্ছে– তারা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে আবারও আইনি প্রক্রিয়ায় হাঁটবেন। একই সঙ্গে কৌশলে রাজনৈতিকভাবে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। খালেদা জিয়ার পরিবার চাইলে প্যারোলে মুক্তির আবেদন এখনই করতে চাচ্ছে না বিএনপি।

এদিকে খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকেও এখনও পর্যন্ত প্যারোলে মুক্তির আবেদন করা হয়নি। এমনটি নিশ্চিত করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, খালেদা জিয়ার স্বজনরা চিকিৎসকদের কাছে আবেদন করেছেন৷ কিন্তু এ বিষয়ে চিকিৎসকরা কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না। তারা যদি প্যারোলে চান, তা হলে আদালতে আবেদন করতে হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও আবেদন করতে পারেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমার টেবিলে এমন কোনো আবেদন নেই। এখন আবেদন না করলে অগ্রগতি তো বলা যাবে না।

বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া। সেখানকার মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. জিলন মিয়া সরকার পাঁচ সদস্যের এই বোর্ডের প্রধান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্যের বরাত দিয়ে ডয়েচে ভেলে জানিয়েছে, প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি মেডিকেল বোর্ড সুপারিশ করতে পারে না। খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদনের পর মেডিকেল এখন পর্যন্ত কোনো বৈঠক করেনি। মেডিকেল বোর্ড মনে করছে, বিএনপি নেত্রী স্বাস্থ্য স্থিতিশীল রয়েছে।

এমতাবস্থায় বিষয়টি স্পষ্ট যে, মেডিকেল বোর্ডের কাছ থেকে বিএনপি কিংবা খালেদা জিয়ার পরিবার প্যারোলের সুপারিশ পাবে না। বিষয়টি হয় রাজনৈতিকভাবে কিংবা আদালতের মাধ্যমে ফয়সালা করতে হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তো বলেই দিয়েছেন যে, প্যারোলের সুপারিশ করার এখতিয়ার মেডিকেল বোর্ডের নেই।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম স্পষ্টই বলে দিয়েছেন যে, খালেদা জিয়াকে মুক্তি পেতে হলে আদালতের মাধ্যমেই পেতে হবে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাউল সাধক চান মিয়া এবং আমার কিছু উপলব্ধি

"রজনী হইসনা অবসান  আজ নিশিতে আসতে পারেবন্ধু কালাচাঁন।। কত নিশি পোহাইলোমনের আশা মনে রইলো রে কেন বন্ধু আসিলোনা জুড়ায়না পরান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। বাসর সাজাই আসার আশেআসবে বন্ধু নিশি শেষে দারূন পিরিতের বিষে ধরিল উজান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। মেঘে ঢাকা আঁধার রাতে কেমনে থাকি একা ঘরে সাধক চাঁনমিয়া কয় কানতে কানতে হইলাম পেরেশান আজ নিশিতে আসতে বন্দু কালাচাঁন।"    গভীর নিশিতে ধ্যান মগ্ন হয়ে কালাচাঁনের অপেক্ষা করছেন সাধক।  সাধক চান মিয়ার শিষ্য বাউল সিরাজউদ্দিনের মতে এটি একটি রাই বিচ্ছেদ। কৃষ্ণের অপেক্ষায় রাধা নিশি বা রাতকে অনুরোধ করছেন 'রাত' যেন না পোহায়  কারণ তার কালা চান যে কোন সময় আসতে পারে। শব্দগুচ্ছ গুলো থেকে সহজেই উপলব্ধি হয় সাধক নিজ দেহকে রাধা আর আত্মাকে কৃষ্ণের সাথে তুলনা করেছেন। দেহ আত্মার মিলন ঘটানোই ছিল সাধকের সাধনা।        বাউল সাধক চান মিয়া উপরোক্ত গানটি রচনা করেছেন। নেত্রকোনা জেলার খাটপুরা গ্রামে ১৩২৫ বঙ্গাব্দে সাধক চান মিয়ার জন্ম। পুরো নাম চান্দেজ্জামান আকন্দ হলেও বা...

বাউল, বাউলতত্ব এবং কিছু কথা

একজন ভদ্র বন্ধু বরের সাথে বাউল সম্প্রদায় নিয়ে বেশ তর্ক হলো রাতে। তর্কের সূত্রপাত ছিল বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী। ভাবলাম "বাউলতত্ত্ব"র আলোকে বাউলরা ভাববাদী নাকি বস্তুবাদী তা নিয়ে যৌক্তিক আলোচনা আবশ্যম্ভাবী। কয়েকটি ধারাবাহিক পর্ব লিখে নিজের মনোভাব বোঝানোর চেষ্টা করব।  শুরুতেই শক্তিনাথ ঝাঁ এর বস্তুবাদী বাউল বই থেকে কিছু কথা লিখতে চাই; বাস্তব জগত ও জীবনকে এরা কোন আনুমানিক যুক্তি বা আলৌকিক যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে নারাজ। জৈব রাসায়নিক ব্যাখায় এরা নারীর রজঃ এবং পুরুষের বিজে জীবন ও জগত সৃষ্টিকে ব্যাখা করে এবং চার ভূতকে প্রাকৃতিক সৃষ্টি মনে করে। এভাবে মানুষে, প্রকৃতিতে তৈরি করে প্রাণ, প্রাণী। অনুমান ভিত্তিক স্বর্গ, নরক, পরলোক, পুনর্জন্মাদি প্রত্যক্ষ প্রমাণাভাবে বাউল আগ্রাহ্য করে। মানুষ ব্যাতিরিক্ত ঈশ্বরও এরা মানে না। সৃষ্টির নিয়মকে জেনে যিনি নিজেকে পরিচালনা করতে শিখেছেন- তিনিই সাঁই। সুস্থ নিরোগ দীর্ঘজীবন এবং আনন্দকে অনুভব করার বাউল সাধনা এক আনন্দমার্গ।।  বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী এর অনেক সূক্ষ বিশ্লেষণ শক্তিনাথের বস্তুবাদী বাউল বইটির মধ্যে আলকপাত করা হয়েছে। সাধারণ সমাজে এ ধা...

ভাইবে রাধারমণ

তখন কলেজের ছাত্র। বাংলা বিভাগের প্রভাষক শ্রদ্ধেয় রেজা স্যারের সাথে খুবই ভালো সম্পর্ক। কলেজের প্রথম দিনই স্যারকে খুব পছন্দ। তারপর স্যারের সাথে গল্প, সমাজ, রাজনীতি, সাহিত্য নিয়ে আলোচনা। রীতিমত ফিজিক্স, বায়োলোজি ক্লাস ফাঁকি দিলেও বাংলা ক্লাস কখনই ফাঁকি দিতাম না। খুব উপভোগ করতাম স্যারের ক্লাস। হোস্টেল সুপার হিসেবে স্যার ( ওহী আলম রেজা) আমাদের সাথেই থাকতেন। আমরা আসার প্রায় নয় মাস পর স্যার এলেন সুপার হিসেবে। প্রতিদিন রাতে খাবার পরেই স্যারের রুমে গিয়ে আড্ডা হত, গানের আসর হত। স্যারের পিসিতে প্রায়ই গান শুনতাম আমরা। একদিন হঠাৎ করেই একটি গান স্যার প্লে করলেন 'আমার বন্ধু দয়াময় তোমারে দেখিবার মনে লয়। তোমারে না দেখলে রাধার জীবন কেমনে রয় বন্ধুরে।। কদম ডালে বইসারে বন্ধু ভাঙ্গ কদম্বের আগা। শিশুকালে প্রেম শিখাইয়া যৌবনকালে দাগা রে।। তমাল ডালে বইসারে বন্ধু বাজাও রঙের বাশি। সুর শুনিয়া রাধার মন হইলো যে উদাসি রে।। ভাইবে রাধা রমন বলে মনেতে ভাবিয়া। নিভা ছিল মনের আগুন কে দিলাই জ্বালাইয়া রে।' গানের কথাগুলো বেশ ভালো লেগে গেলো। পুর গানটি শুনে বুঝলাম গানটি সাধক রাধারম...