সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বিলেতের বাঙালিদের কমজাত বেশীজাত !

করোনা কালীন কোয়ারেন্টাইন,  নির্বিঘ্ন ছিলনা, তবে নিরিবিলি  ছিল খুব।  সুহৃদ,  স্বজন,  দেশে বিদেশে অনেকেই খোঁজ খবর নিয়েছেন। দেশে মা বাবার সাথে রুটিন করে প্রতিদিন ভিডিও কলে কথা চলছে।   এই সুযোগে  শশুর বাড়ির লোকজনের  সাথে ও নতুন করে আত্মীয়তা  জ্বালাই হচ্ছে। কিন্তু সেই নিরিবিলি জীবন যাপনে হানা দিলেন মাহি ফেরদৌস জলিল। 

মাহি ফেরদৌস জলিল  সাহেব  ব্যবসায়ী মানুষ। বেশ টাকা পয়সার মালিক। মাহি ফেরদৌস  নিয়ে বহু সমালোচনা  আছে। তিনি জেল খাটা মানুষ। তার  বিভিন্ন আর্থিক কেলেংকারী  নিয়ে সমালোচনা  আছে। বিবিসি এই নিয়ে একটা দীর্ঘ সাক্ষাতকার  ছাপিয়েছিল। তিনি সেখানে আত্মপক্ষ  সমর্থন করে উত্তর দিয়েছিলেন।
কিন্ত উনি যে কারণে  বেশী আলোচিত  সমালোচিত  সেটি হলো উনার টেলিভিশন  চ্যানেল ,  চ্যানেল এস এর কারণে।  আর দ্বিতীয়ত  উনার মুখের কারণে।  আবেগ দিয়ে বিচার হয়না, এই বিষয়টা হয়তো উনি মনে রাখেন না।
 তিনি নিজেই মাঝে মাঝে লাইভে ও বলেন " আমি  দুধে ধোয়া তুলসীপাতা  না "।  রিয়েলিটি  উইথ মাহি  ব্রিটেনে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে  খুবই জনপ্রিয় অনুষ্ঠান। তাকে পছন্দ করুন আর না করুন। যারা বাংলা টেলিভিশন দেখেন,  সেটি বলতে হবে। অন্যদিকে আরেক সমস্যা  হচ্ছে, লন্ডনে সিলেটি নন সিলেটি ইস্যু। মাহি জলিল  এক তরফা ভাবে  সিলেটি ইজম প্র‍্যাকটিস করেন।  এই ইস্যুটা লন্ডনে খুবই প্রকট।  বলা যায় ব্রিটিশ বাংলাদেশি মুসলিম না বাঙালি আত্মপরিচয় সংকটের মতোই সিলেটি নন সিলেটি আত্মপরিচয় সংকট ও  বিদ্যমান।  এই কারণে নন সিলেটি সহ সিলেটি অনেকেরও বিরাগভাজন মাহি জলিল।

সম্প্রতি করোনা মহামারী  সময়ে কোবিড ১৯ শিরোনামে  নিয়মিত  একটা অনুষ্ঠান করেন  তিনি। সেখানে তার সাহসী অনুসন্ধানী উপস্থাপন, দেশে বিদেশে  খুবই  সমাদৃত হয়। মুনাফাখোর ব্রিটিশ  বাংলাদেশী  ব্যবসায়ীদের  মুখোশ উন্মোচন  করে দেন তিনি।  তখন আপনারা  কেউ প্রতিবাদ করেন নি।  সবাই বাহবা দিয়েছেন। তার সেই অনুষ্ঠানের ভিডিও  ছড়িয়ে দিয়েছেন দেশে বিদেশে। কেউ বলার প্রয়োজন মনে করেন নি, যে জনাব মাহি সাহেব, আপনি যে ভাষায় ব্যবসায়ীদের আক্রমণ করছেন সেটি ঠিক নয়। পেশাদার সাংবাদিকতা বা উপস্থাপনার সাথে এইটা যায় না।

সর্বশেষ,  গত ৩মে,  এক লাইভ টকশোতে সেই মুনাফা খোরদের চরিত্র বিশ্লেষণ  করতে তিনি বলেছেন,  হিন্দুইজম নিয়ে যারা কমজাত লন্ডনে এসেছেনে তারাই পানের দাম বাড়িয়েছে।
বক্তব্যটি ছিল,  হিন্দুইজম রক্ত কমজাতোর রক্ত… রক্ত যদি ভালা থাকে তে পরিচয় পাইলাইবা মাতোর মাঝে❜।
আমাকে ব্যাক্তিগত ভাবে  কম হলে ও ২০ জন ফোন করেছেন। মাহি ফেরদৌস জলিলের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানানোর জন্য। আর ফেইস বুক  হোয়াটস আপ ইনবক্স তো বাদই দিলাম। আমি অবাক হয়েছি!  প্রতিবাদের জন্য আমি কেন?? 
জন্মগত ভাবে আমি সনাতন ধর্মাবলম্বী বলে? কিন্তু আমি তো  শুধু মানুষ হিসাবে পরিচিত হতে চাই । কিন্তু আপনি জোর করে আমাকে ধর্মে ফিরিয়ে নিবেন। উগ্র ধর্মীয় চেতনা জাগিয়ে তুলতে চাইবেন।   আমি তো হিন্দু মুসলমান পরিচয়ে পরিচিত হতে চাই না।
ধরে নিলাম আপনি হিন্দু হিসাবে আমাকে প্রতিবাদের জন্য বলছেন। কিন্তু সেই প্রতিবাদ টা আপনি ও করতে পারেন। আমাকে যদি আঘাত করা হয়, আমি তো ভিকটিম। এ যেন ধর্ষিতার কাছে জবানবন্দী নেয়ার মতো অবস্থা।  আমাকে আঘাত টা কাটিয়ে উঠার সুযোগ বা সেই সুশ্রুষা করেন। আর সেটি হলো আপনার প্রতিবাদ।
ধন্যবাদ জানাই সেইসব শুভাকাঙ্ক্ষী  বন্ধুদের যারা সাহস করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সেই সব এক্টিভিস্টদের যারা ক্যাম্পেইন করেছেন।  প্রতিবাদ হয়েছে বলেই হয়তো মাহি ফেরদৌস জলিল দুই দুইবার লাইভে এসে নিশঃর্ত ক্ষমা চেয়েছেন। চ্যানেল এস বিশেষ ক্ষমাপ্রার্থনা  শিরোণামে একটি ভিডিও নির্মাণ করেছে।  যেখানে মাহি ফেরদৌস  জলিল  করজোড়ে  ক্ষমা প্রার্থনা  করেছেন। সংবাদ মাধ্যমে চ্যানেল এস এর পক্ষ থেকে ক্ষমা চাওয়া হয়েছে। মাহি ফেরদৌস জলিল এবং চ্যানেল এস এখানেই তাদের স্বকীয়তা  দেখিয়েছে। 

যে কোন প্রতিবাদ বা দাবী আদায়ের যে প্রক্রিয়া সেখানে হয় কিছু নির্দিষ্ট দাবী দাওয়া থাকে,  অথবা অন্য প্রক্রিয়া হলো আইনী ভাবে সাজা নিশ্চিত করা।  মাহি  জলিলের ক্ষমা প্রার্থনার মধ্য দিয়ে প্রথম ধাপটি সম্পন্ন হয়ে গেছে।  এখন বাকী রইলো দ্বিতীয় ধাপ।  অফিসিয়ালি মাহি জলিল এবং চ্যানেল এস ভিন্ন স্বত্তা। আমি জানি না আদৌ তিনি কোন পদে আছেন কী না। অফকম যে কাজটা করবে সেটি হয়তো মাহি জলিল আর কোন অনুষ্ঠান নিয়ে পর্দায় আসতে পারবেন না, এই জাতীয় নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে। এখন চ্যানেল এস বা মাহি জলিলের কাছে আপনাদের দাবীগুলো পরিস্কার করুন।এইভাবে নিশঃর্ত ক্ষমা চাইবার পর  যদি ক্ষুব্ধ থাকেন তাহলে আইনী ভাবে যেতে পারেন। যেহেতু বাংলাদেশ নয় এটি ব্রিটেন। চাইলে ও চ্যানেল এস অফিস  ভাংচুর করতে পারবেন না।  এই দেশে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে জ্বালাও পুড়াও করার ও সুযোগ নেই। তাই মাহি জলিলের সাজা নাকী চ্যানেল এস এর বিনাশ?  এই দুইটা জিনিস বিবেচনায় নিয়ে আন্দোলন করতে হবে।

শুধু হিন্দু ইজম বলায়, কমজাত বলায়  গেল গেল বলে আওয়াজ তুলেছেন। এমন কোন ওয়াজ মাহাফিল আছে যেখানে সকাল বিকাল হিন্দু ধর্ম,  পূজা, সংস্কৃতিকে ধর্ষণ করেন না আমাদের দেশের  ওয়াজী গণ।  কাফের ইহুদি নাশারা সারা কোন বক্তব্য সুম্পূর্ণ হয় না।  একটা প্রাণী কে দেখি না প্রতিবাদ জানাতে। না কাউকে ক্ষমা প্রার্থানা করাতে পেরেছেন কোনদিন। বাংলাদেশে সেটা সম্ভব ও না। 
 কারণ বাংলাদেশে সংখ্যাগুরু অংশ এই সাম্প্রাদায়িকতায় বিশ্বাস করেন। এবং সেটিকে তাদের অধিকার হিসাবে বিবেচনা  করেন।  প্রতিটা মানুষ জন্মগত ভাবেই সম্প্রদায়িক,  খুব ব্যাতিক্রম হয় কিছু মানুষ। সারা জীবন নাস্তিকতার চর্চা করে  শেষ বয়সে এসে  হজ্ব করে তওবা করে ধর্মীয় জীবন যাপন করেন। বাংলাদেশে   যার মুখোশ যত সুন্দর সে ততো বেশী সুশীল, প্রগতিশীল। মাহি জলিল মুখ ফসকে সেই সত্য কথাটা বলে দিয়েছেন।  যারা প্রতিবাদ করছেন আমি প্রতিটা স্ট্যাটাসের মন্তব্যগুলো পড়ে দেখলাম, সেখানে ও ভিকটিম ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বক্তব্যই বেশী।
অনেকেই আবার ভারতের উদাহরণ নিয়ে আসছেন সেখানে। তো এই ধর্মীয়  প্রতিযোগীতার বাজারে  আপনি বিচার করবেন কি দিয়ে, মানবতা দিয়ে না ধর্ম দিয়ে? নাকী বাংলাদেশ ইন্ডিয়া দিয়ে? 

আজকের মতো ঘরে ঘরে ফেইস বুক টেলিভিশন  সেদিন ছিল না। চ্যানেল এস বাংলাদেশি ও বাঙালির  বহু অর্জনের সাথে জড়িয়ে থাকা একটি নাম। কিন্তু  শুধু চ্যানেল এস এর কারণে মাহি জলিল যা খুশি তা বলতে পারেন না, সেইটা ও তো সত্য। কিন্তু এই যে আমরা তাকে বলতে দিয়েছি বারবার। যার জন্য এই ভুলটা তিনি করেছেন। সেটা ঐচ্ছিক বা অনৈচ্ছিক হউক।  কেউ কোনদিন প্রতিবাদ করেন নি।

 আমি হলফ করেই বলতে পারি বাঙালি কোন মিডিয়া  এ নিয়ে টু শব্দ উচ্চারণ করবে না। লন্ডনের কোন সাংবাদিক এইটা নিয়ে কোন টু শব্দ করবেন না। করেন ও নাই। কারণ মাহি ফেরদৌস জলিলের আশীর্বাদ  তাদের দরকার।  কেউ তার বিরাগ ভাজন হতে রাজী না। বাংলাদেশে পান থেকে চুন খসলেই যাদের স্ট্যাটাস আর লিংক শেয়ারের টুং টুং শব্দে রাতের নীরবতা খান খান হয়ে যায়।  সব বিপ্লবী দেখলাম চুপচাপ। আবার আমি যখন আজকে হিন্দুদের মানুষের  ধর্মীয় ইস্যুতে কথা বলব, তখন তাঁদের কাছেই আমি সাম্প্রদায়িক হিসাবে বিবেচিত হব। আবার কালকে যখন কোন মোল্লার ওয়াজ নিয়ে কথা বলব তখন আমি ইসলাম বিদ্বেষী হয়ে যাব।  এর আগে ব্রিটেনের এক  নামী দামী কারী ব্যবসায়ীকে  পুলিশ আটক করেছিল,  কোন টেলিভিশন বা পত্রিকা সেই সংবাদ করে নাই এড়িয়ে গেছেন সবাই। তো এই বান্দা বাংলাদেশে সেই সংবাদ দেয়ার কারণে তার বিরাগভাজন হয়ে যাই! 
ব্রিটেনে টেলিভিশন চ্যানেলে দিনরাত  মোল্লারা চাঁদাবাজী করে,  সংস্কৃতি গেল গেল বলে যারা সাহিত্য সংস্কৃতির ধারক বাহক হিসাবে  নিজেদের অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন৷ তারাই আবার গোপনে  চ্যারেটি সংগঠন রেজিষ্ট্রেশন  করে  হুজুরদের দিয়ে টেলিভিশনে চাঁদাবাজী করেন!!
বিলেতের প্রায় সকল সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠন সব সময় তাদের অনুষ্ঠানের জন্য   একটা বড় চাঁদা ধরে রাখে মাহি জলিলের নামে। অনুষ্ঠানের  প্রচারের জন্য ফ্রি বিজ্ঞাপন অথবা প্রমোশনাল অনুষ্ঠান তো আছেই।  তো চাইলেই তো তাকে অস্বীকার করতে পারবেন না আপনারা।

মাহি জলিলের  দ্বিতীয় দিনের ব্যাখাটা  ভাল ছিল!  ছোটলোক হিন্দু গুলোই সব ধর্মান্তরিত  হয়ে মুসলমান হয়েছে। কোন ভদ্রলোক ধর্মান্তরিত  হয়নি। উচ্চ বংশ কেউ ধর্মান্তরিত  হয়নি।  তে যে সব হিন্দু বাংলাদেশে তেলাপোকার  মতো  এখনো ঠিকে আছেন,  বা ব্রিটেনে আছেন  আপনাদের তো বেশীজাত হিসাবে  গর্বিত হওয়া উচিত ছিল বলে আমি মনে করি। প্রতিবাদ করার কথা ছিল কমজাত মুসলমান ব্যবসায়ী যারা তাদের।  কিন্তু ঘটে গেল  ঠিক উল্টা।

গীতার ৪র্থ অধ্যায়ের ১৩ নং শ্লোক এ বলা হয়েছে "চাতুর্বণ্যং ময়া সৃষ্টং গুণকর্মবিভাগশঃ
 অনুবাদ - আমি গুণ ও কর্ম অনুসারে ব্রাম্মণ ,ক্ষত্রিয়,বৈশ্য,শূদ্র - এই চার বর্ণ  সৃষ্টি করেছি। অতএব গীতাকে স্বীকার করলে  মানুষ নিজে কোন বর্ণ  তৈরি করেনি। ভগবান যার যার গুণ  অনুযায়ী  সৃষ্টি করে এক এক বর্ণে পাঠিয়েছেন । আর সনাতন ধর্মে তো জন্মান্তরবাদের বিষয়টি আছেই।  অতএব কমজাত বা বেশীজাত ও  ইশ্বরের ইচ্ছায়।  এতে মনক্ষুণ্ণ হওয়ার কিছু নাই।

খুব কাকতালীয়  ভাবেই  আজকেই একটা লেখা পড়লাম,  পাকিস্তানের মন্ত্রী ছিলেন তিনি যোগেন মন্ডল।  যিনি ভারতে আশ্রয় নিয়ে, সেখানে বসে পাকিস্তানে তার পদত্যাগ পত্র পাঠিয়েছিলেন।
সেখানে খুব বিস্তারিত ভাবে তিনি উল্লেখ করেছেন কেন তিনি পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন। নিম্নবর্ণের হিন্দুদের নেতা ছিলেন যোগেন মন্ডল। কিন্তু  কমজাত হওয়াতে  বড়জাতের সাথে আপোষ করে করে কিভাবে  নিম্নবর্ণের হিন্দুদের নির্যাতনের বলি করেছেন সেই সব দীর্ঘ ফিরিস্তি দিয়েছেন।  সেই বিষবাষ্প তো এখনো বইছে।  এই মানুষদের সাথেই তো আমাদের বাস করতে হবে। হিংসা দিয়ে তো শুধু হিংসাই বাড়বে। যে ধর্মীয় হিংসার চাষাবাদ উপমহাদেশে  সুদীর্ঘ কাল থেকে চলে আসছে এর থেকে নিস্তার পাওয়ার পথ আদৌ আছে বলে মনে হয় না।  ভেবছিলাম করোনা পরবর্তী পৃথিবী ধর্মীয় থেকে মানবিক হবে। কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি।

মাহি জলিলের ক্ষমাপ্রার্থনার মধ্য দিয়ে শুভ বোধের উদয় হউক আমাদের সকলের।   ধর্মীয় বিভাজন,  সিলেটি অসিলেটি বিভাজন বিলুপ্ত করে বাঙালি কমিউনিটির অর্জন ও গৌরবের ঐতিহ্য নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামনে এগিয়ে যাই। কেউ ভুল করলে সেই ভুলটা ধরিয়ে দেই।  ভুল বুঝে ক্ষমা চাইলে ক্ষমা করা ও মানুষেরই ধর্ম। হিংসা,নয় একমাত্র ক্ষমাই পারে সুন্দর পৃথিবী গড়তে।  কমজাত বেশীজাত বিড়ম্বনা কাটিয়ে একজাত হই। 
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম তিথিতে তাঁর বাণী দিয়েই শেষ করছি -

ক্ষমিতে পারিলাম না যে
            ক্ষমো হে মম দীনতা
                  পাপজনশরণ প্রভু!
          মরিছে তাপে মরিছে লাজে
            প্রেমের বলহীনতা—
               ক্ষমো হে মম দীনতা।

লেখকঃ জুয়েল রাজ, সাংবাদিক

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাউল সাধক চান মিয়া এবং আমার কিছু উপলব্ধি

"রজনী হইসনা অবসান  আজ নিশিতে আসতে পারেবন্ধু কালাচাঁন।। কত নিশি পোহাইলোমনের আশা মনে রইলো রে কেন বন্ধু আসিলোনা জুড়ায়না পরান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। বাসর সাজাই আসার আশেআসবে বন্ধু নিশি শেষে দারূন পিরিতের বিষে ধরিল উজান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। মেঘে ঢাকা আঁধার রাতে কেমনে থাকি একা ঘরে সাধক চাঁনমিয়া কয় কানতে কানতে হইলাম পেরেশান আজ নিশিতে আসতে বন্দু কালাচাঁন।"    গভীর নিশিতে ধ্যান মগ্ন হয়ে কালাচাঁনের অপেক্ষা করছেন সাধক।  সাধক চান মিয়ার শিষ্য বাউল সিরাজউদ্দিনের মতে এটি একটি রাই বিচ্ছেদ। কৃষ্ণের অপেক্ষায় রাধা নিশি বা রাতকে অনুরোধ করছেন 'রাত' যেন না পোহায়  কারণ তার কালা চান যে কোন সময় আসতে পারে। শব্দগুচ্ছ গুলো থেকে সহজেই উপলব্ধি হয় সাধক নিজ দেহকে রাধা আর আত্মাকে কৃষ্ণের সাথে তুলনা করেছেন। দেহ আত্মার মিলন ঘটানোই ছিল সাধকের সাধনা।        বাউল সাধক চান মিয়া উপরোক্ত গানটি রচনা করেছেন। নেত্রকোনা জেলার খাটপুরা গ্রামে ১৩২৫ বঙ্গাব্দে সাধক চান মিয়ার জন্ম। পুরো নাম চান্দেজ্জামান আকন্দ হলেও বা...

বাউল, বাউলতত্ব এবং কিছু কথা

একজন ভদ্র বন্ধু বরের সাথে বাউল সম্প্রদায় নিয়ে বেশ তর্ক হলো রাতে। তর্কের সূত্রপাত ছিল বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী। ভাবলাম "বাউলতত্ত্ব"র আলোকে বাউলরা ভাববাদী নাকি বস্তুবাদী তা নিয়ে যৌক্তিক আলোচনা আবশ্যম্ভাবী। কয়েকটি ধারাবাহিক পর্ব লিখে নিজের মনোভাব বোঝানোর চেষ্টা করব।  শুরুতেই শক্তিনাথ ঝাঁ এর বস্তুবাদী বাউল বই থেকে কিছু কথা লিখতে চাই; বাস্তব জগত ও জীবনকে এরা কোন আনুমানিক যুক্তি বা আলৌকিক যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে নারাজ। জৈব রাসায়নিক ব্যাখায় এরা নারীর রজঃ এবং পুরুষের বিজে জীবন ও জগত সৃষ্টিকে ব্যাখা করে এবং চার ভূতকে প্রাকৃতিক সৃষ্টি মনে করে। এভাবে মানুষে, প্রকৃতিতে তৈরি করে প্রাণ, প্রাণী। অনুমান ভিত্তিক স্বর্গ, নরক, পরলোক, পুনর্জন্মাদি প্রত্যক্ষ প্রমাণাভাবে বাউল আগ্রাহ্য করে। মানুষ ব্যাতিরিক্ত ঈশ্বরও এরা মানে না। সৃষ্টির নিয়মকে জেনে যিনি নিজেকে পরিচালনা করতে শিখেছেন- তিনিই সাঁই। সুস্থ নিরোগ দীর্ঘজীবন এবং আনন্দকে অনুভব করার বাউল সাধনা এক আনন্দমার্গ।।  বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী এর অনেক সূক্ষ বিশ্লেষণ শক্তিনাথের বস্তুবাদী বাউল বইটির মধ্যে আলকপাত করা হয়েছে। সাধারণ সমাজে এ ধা...

ভাইবে রাধারমণ

তখন কলেজের ছাত্র। বাংলা বিভাগের প্রভাষক শ্রদ্ধেয় রেজা স্যারের সাথে খুবই ভালো সম্পর্ক। কলেজের প্রথম দিনই স্যারকে খুব পছন্দ। তারপর স্যারের সাথে গল্প, সমাজ, রাজনীতি, সাহিত্য নিয়ে আলোচনা। রীতিমত ফিজিক্স, বায়োলোজি ক্লাস ফাঁকি দিলেও বাংলা ক্লাস কখনই ফাঁকি দিতাম না। খুব উপভোগ করতাম স্যারের ক্লাস। হোস্টেল সুপার হিসেবে স্যার ( ওহী আলম রেজা) আমাদের সাথেই থাকতেন। আমরা আসার প্রায় নয় মাস পর স্যার এলেন সুপার হিসেবে। প্রতিদিন রাতে খাবার পরেই স্যারের রুমে গিয়ে আড্ডা হত, গানের আসর হত। স্যারের পিসিতে প্রায়ই গান শুনতাম আমরা। একদিন হঠাৎ করেই একটি গান স্যার প্লে করলেন 'আমার বন্ধু দয়াময় তোমারে দেখিবার মনে লয়। তোমারে না দেখলে রাধার জীবন কেমনে রয় বন্ধুরে।। কদম ডালে বইসারে বন্ধু ভাঙ্গ কদম্বের আগা। শিশুকালে প্রেম শিখাইয়া যৌবনকালে দাগা রে।। তমাল ডালে বইসারে বন্ধু বাজাও রঙের বাশি। সুর শুনিয়া রাধার মন হইলো যে উদাসি রে।। ভাইবে রাধা রমন বলে মনেতে ভাবিয়া। নিভা ছিল মনের আগুন কে দিলাই জ্বালাইয়া রে।' গানের কথাগুলো বেশ ভালো লেগে গেলো। পুর গানটি শুনে বুঝলাম গানটি সাধক রাধারম...