সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

হবিগঞ্জ যেন মগের মুল্লুক!


আইসিটি আইনে গ্রেফতার করা হয়েছে হবিগঞ্জ থেকে প্রকাশিত দৈনিক আমার হবিগঞ্জ পত্রিকার  প্রকাশক ও সম্পাদক সুশান্ত দাশ গুপ্তকে।
সকাল থেকেই আসলে বিক্ষপ্ত অবস্থায়।  লিখবো কি লিখবো না খুবই  দ্বিধান্বিত ছিলাম। কারণ পক্ষে বিপক্ষে অনেকেই লেখছেন।  তাঁর মুক্তি দাবী করছেন দেশে বিদেশে অনেকেই। পুলিশের কাজ পুলিশ করেছে। অপরাধ করলে আটক করবে সেটাই স্বাভাবিক নিয়ম।

মাত্রই দুইদিন আগে এক টেলিভিশন টকশোতে আইসিটি আইন নিয়ে কথা বলছিলাম, আমার সহ আলোচক এইটি কালো আইন, বাতিল করতে হবে এই দাবীতে কথা বলছিলেন।
আমি বলেছিলাম যারা  সংসদে আইন প্রণয়ণ করেন তাঁরা নিশ্চয় দেশ এবং জাতির কল্যাণের জন্যই আইনগুলো  পাশ করেন। তবে ভয়ের জায়গাটা হচ্ছে এর প্রয়োগ নিয়ে। উদাহরণ হিসাবে গুজব এবং সমালোচনার বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছিল। গুজব প্রতিরোধে এই জাতীয় একটা আইনের হয়তো প্রয়োজনীয়তা রয়ে গেছে কিন্ত সমালোচনার জন্য নিশ্চয় এই আইনটি ব্যবহার হবে না। দুইদিন না যেতেই সেই অপপ্রয়োগটা দেখতে পেলাম আবারো।

মামলার আবেদন এবং আদালতে দেয়া পুলিশের প্রতিবেদনগুলোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আসলে জানতে চাইছিলাম আমার হবিগঞ্জ পত্রিকার অপরাধ কি? কিন্তু এজেহার পড়ে বিভ্রান্ত হয়ে যাই। আওয়ামী লীগ কি হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের কাছে বিক্রি হয়েছে, না  প্রেসক্লাব হবিগঞ্জ  আওয়ামী লীগের কাছে বিক্রি হয়েছে আমার ঠিক বোধগম্য হয় নাই। নাকী মামলাটি আগেই সাজানো ছিল, লেখা ছিল  স্বয়ং এমপি সাহেব বা তার প্রতনিধি কেউ মামলা করবে বলে। পরে ভুল করে প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দস্তখত  করেছেন!  কারণ পুরো বক্তব্যই হবিগঞ্জ আওয়ামী লীগের বক্তব্য।

মামলার মূল যে বক্তব্য এবং বাদী সংবাদ মাধ্যমে যে বক্তব্য দিয়েছেন,  তিনি বলেছেন, হবিগঞ্জ- ৩ আসনের সাংসদ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু জাহির হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের একজন সম্মানিত আজীবন সদস্য। সম্প্রতি সুশান্ত দাশ গুপ্তের সম্পাদনায় দৈনিক আমার হবিগঞ্জ পত্রিকায় সাংসদের বিরুদ্ধে একাধিক অসত্য সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। আমি মনে করি সাংসদের পাশপাশি হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সম্মান ক্ষুন্ন হয়েছে। তাই আমি সংক্ষুব্ধ হয়ে এই মামলা করেছি।পৃথিবীর সাংবাদিকতার ইতিহাসে এমন মামলার নজির আছে বলে আমার জানা নেই।

যে চারটি সংবাদ মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে এবং সংযুক্ত করা হয়েছে তার প্রত্যেকটি সংবাদই দেশব্যাপী আলোচিত হয়েছে। নারীসহ একজন এপিপি আদালত বন্ধের দিনে গ্রেফতার হয়েছেন।

মলাই কান্ডে তোলপাড়, যিনি যুবদল থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে লাখাইয়ে চেয়ারম্যান হয়েছেন এবং প্রধানমন্ত্রীর ঈদ সহায়তার দূর্নীতি নিয়ে সারা দেশে তোলপাড় হয়েছে। যুদ্ধাপরাধী পরিবারের সদস্যের আওয়ামী লীগে যোগদান নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন। সেখানে স্বাভাবিক নিয়মেই বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির প্রসঙ্গ এসেছে এবং তাঁর বক্তব্যও সেই সব সংবাদে ছাপা হয়েছে। বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকাও সেই সংবাদগুলো প্রচার করেছে। কিন্তু মামলার আসামী শুধুমাত্র আমার হবিগঞ্জ পত্রিকা! এবং মামলায় আমার হবিগঞ্জ পত্রিকার কর্মরত সকল সাংবাদিকই আসামী। যার মূল উদ্দেশ্য, যাতে করে পত্রিকাটি আর প্রকাশিত না হতে পারে। শুধুমাত্র প্রকাশক সম্পাদককে আটক করেই ক্ষান্ত দেন নাই। আরো অনেককেই গং হিসাবে রাখা হয়েছে। এই লেখার পর যদি আমার নামও সেখানে অন্তর্ভুক্ত হয় অবাক হওয়ার কিছু নেই! সেই আবেদনে আবার এমপি সাহেবের মানহানীর মূল্য নির্ধাারণ করেছেন ১০০ কোটি টাকা। এডভোকেট আবু জাহিরের মতো বর্ণাঢ্য রাজনীতিবিদকে ১০০ কোটি টাকায় বিক্রি করে দিলে চামচার দল। আমার এক সাংবাদিক বন্ধু মজা করেই যদি বলেছেন, চলেন  ঐ এমপিকে কিনতে একটা প্রতিকী নিলাম  করি,  দেখি অবস্থা কি হয়।

ব্রিটিশ আন্দোলনের প্রবাদ প্রতিম নেতা বিপিন চন্দ্র পালের জন্ম মাটি এই হবিগঞ্জ। প্রেসক্লাবের সম্পাদক সাহেব মনে হয় জানেন না বিপিন পাল ১৯০৬ সালে বন্দেমাতরম নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করে ছিলেন। ১৯০৮ সালে বিলেত এসেও তিনি স্বরাজ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেন।  আপনার তোষণ ও চোষণের কারণে সাংবাদিকতার ঐতিহ্যময় গর্বিত সেই স্বর্ণালী ইতিহাসকে কলংকিত করে দিলেন। সাংবাদিকদের তোষণ, চোষন নীতি কোন পর্যায়ে গেলে,  কতোটা মেরুদন্ডহীন হলে হবিগঞ্জের মতো,  জেলা পর্যায়ের একটা প্রেসক্লাবের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক স্থানীয় এমপির পক্ষ হয়ে মামলা করতে পারেন!  এবং সেই মামলার বাদী পুরো প্রেসক্লাব!!

ডিজিটাল বাংলাদেশের যে ডিজিটাল আইনে সুশান্ত দাস গুপ্ত গ্রেফতার হয়েছেন। এই ডিজিটাল বাংলাদেশ কনসেপ্টের সাথে যারা শুরুর দিকে জড়িত ছিলেন তাদের একজন ছিলেন তিনি। তার ভাল গুণ যেমন আছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগও আছে।  কিন্ত এতো বেশী কাজের সাথে জড়িত, তাই ভুলের পরিমাণও হয়তো বা বেশী। শত্রুর পরিমাণ এর থেকেও বেশী।

সুশান্ত দাস গুপ্তকে চিনি জানি দীর্ঘদিন, আত্মীয়তার গন্ডি পেরিয়ে যে সম্পর্ক একটা আদর্শিক জায়গায় শক্ত অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে। কাছ থেকে দেখা একসাথে বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করার সুবাধে জানি। সে ছাড় দিতে জানেনা। তার মেধা এবং দক্ষতা ছাত্রজীবনের মতো কর্মক্ষেত্রেও উজ্জ্বল  তিনি। সুশান্ত দাস গুপ্তের বুকের পাটা সম্পর্কে হয়তো মানিনীয় এমপি মহোদয়েরও সঠিক ধারণা নেই। সে ভাঙবে কিন্ত মচকাবে না। হাতে ছুরি নিয়ে আসা শত্রুও যদি তার দুয়ারে আসে সে বুকে টেনে নেয়। ভয় দেখিয়ে চুপ করানো যাবে না তাকে। বহু ঘটনায় বড় বড় ব্যাক্তিগত বা আর্থিক  ক্ষতি সে মেনে নিয়েছে কিন্তু ছাড় দেয়নি।

সবচেয়ে অবাক করার বিষয় মামলার স্বাক্ষী হিসাবে যাদের রাখা হয়েছে তাঁদের নাম। এডভোকেট আবু জাহির এম পি হবিগঞ্জ ৩, মোতাচ্ছিরুল ইসলাম হবিগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান, মশিউল আলম আহাদ,  লাখাই উপজেলা চেয়ারম্যান। আব্দুর রশীদ তালুকদার ইকবাল শায়েস্তাগঞ্জ  উপজেলা চেয়ারম্যান, মিজানুর রহমান মেয়র হবিগঞ্জ পৌরসভা, সালেক মিয়া মেয়র শায়েস্তাগঞ্জ  পৌরসভা,
ইসমাইল হোসেন  হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি, শেখ ফরহাদ হোসেন কলি সাধারণ সম্পাদক হবিগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থা।

এই বিশেষ স্বাক্ষীগণের তালিকা দেখলে মামলার উদ্দেশ্যটি সহজেই অনুমেয়।  এবং সুশান্ত দাস গুপ্তকে যে প্রক্রিয়ায়  রকেট গতিতে আটক করা হয়েছে এবং গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এই দ্রুততায় যদি বাংলাদেশের আইন আদালত চলে তাহলে বাংলাদেশে আর কোন মামলা জট থাকবে না।  সকাল ৬ টায় থানায় নিয়ে এসে সেখানে বসিয়ে রেখে মামলা ফাইল করে,  তদন্ত প্রতিবেদন দিয়ে আদালতে প্রেরণ করা পর্যন্ত সর্ব সাকুল্য সময় লেগেছে মাত্র ৪ ঘন্টা। সব ইঁদুর এক হয়েছে, বিড়াল মারতে সেই  গল্পের মতোই অবস্থা মনে হচ্ছে। যাতে করে ভবিষ্যতে কেউ তাঁদের রাজনৈতিক স্বেচ্ছাচারীতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে না পারে। শুরুতেই সেই কন্ঠ রোধের প্রয়াস।

এই কুরুক্ষেত্রের ময়দানে  অভিমূন্য বুহ্যের মতো প্রবেশ করেছেন কী না জানি না। বের হয়ে আসার রাস্তা কি আদৌ জানেন সুশান্ত দাস গুপ্ত!  যারা মামলার স্বাক্ষী হয়েছেন তাঁদের নাম পদবীগুলো দেখলে ঐক্যের জায়গাটা খুব পরিস্কার ভাবেই বুঝা যায়।
প্রথম আলোর মতো পত্রিকা হবিগঞ্জের প্রতিনিধি থাকার পরেও সিলেট প্রতিনিধির বরাত দিয়ে সংবাদ ছাপতে হয়েছে। প্রথম আলো প্রতিনিধির সেই সাহসটুকো নেই নিজের নামে  সুশান্ত দাস গুপ্তের গ্রেফতারের সংবাদটুকো করার।

সত্যমিথ্যা জানিনা, হাতি নাকী বড় কানের জন্য তার শরীরের পিছনের অংশ দেখতে পায় না। যার জন্য হাতি নিজের শক্তি সম্পর্কে অবগত নয়। আবু জাহির সাহেবেরও বড় দুটি কান দরকার এখন। হবিগঞ্জের রাজনীতিতে আপনি হাতির মতো বৃহত এবং শক্তিশালী হয়েছেন। তাই বড় কানের এই বাধাটুকো থাকলে আপনার ক্ষমতার অপব্যবহার হবে না।  উদাহরণটি রুপক অর্থে ব্যবহার করেছি,  কেউ আবার হাতি বলার অপরাধে মামলা দিলে বিপদে পড়ে যাব।

একজন আবু জাহির একদিনে তৈরী হন নাই। আবু জাহির আওয়ামী লীগের হাইব্রিড নেতাও না। তাহলে উনার ভয় কিসের?  আবু জাহিরের নেতৃত্ব নিয়েতো পত্রিকাটি প্রশ্ন তুলেনি। আবু জাহিরের কোন দুর্নীতি নিয়ে কোন প্রতিবেদন করেনি। যা করেছে জামায়াত বিএনপি তাঁর হাত ধরে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করেছে।  সেটি রাজনৈতিক সমালোচনা এবং প্রতিটা সংবাদে এম পি ও সংশ্লিষ্ট অভিযুক্ত ব্যাক্তির বক্তব্য প্রকাশ করেছে পত্রিকাটি।  এই সমালোচনার জবাব আমার হবিগঞ্জ পত্রিকার মাধ্যমেই তিনি দিতে পারতেন। একজন আবু জাহির রাজনীতির ময়দানে ছাত্রলীগের পতাকা তুলে যৌবনের, তারুণ্যের অনেক সোনালী দিন জলাঞ্জলি দিয়ে,  জেল জুলুম নির্যাতন বোমা হামলায় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসে আজকের হবিগঞ্জের মুকুট বিহীন সম্রাট হয়েছেন। হবিগঞ্জের রাজনীতিতে চাইলেই তাকে অস্বীকার করা যাবে না। ঠিক তেমনি ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে তরুণ প্রজন্মকে উদ্ধুদ্ধ করতে,  ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী ছাত্র রাজনীতিতে ওয়ান এলিভেনে  একজন সুশান্ত দাশ গুপ্তকে বাংলাদেশে অস্বীকার করা যাবে না।

কিন্তু বর্তমান অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে৷ গণমানুষের রাজনীতি থেকে ক্রমেই দূরে সরে গেছেন জনাব আবু জাহির। পরিবর্তন এসেছে  তাঁর মানসে। সেবক থেকে শাসকে পরিনত হয়েছেন তিনি। হবিগঞ্জকে তাই নিজের তাল্লুক মনে করেন।  বা তার সভা সদ যারা আছেন।  মধুর লোভে যারা নিত্য পদলেহন করে চলছে৷ তারা  আবু জাহিরকে এই ধারণাই দিচ্ছেন।  আপনি এই তাল্লুকের মালিক,  আপনার আদেশই  সর্বশেষ সিদ্ধান্ত।
জয়নাল হাজারী থেকে শুরু করে বহু কিংবদন্তী নক্ষত্রের পতন দেখেছি আমরা।  রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই।  হবিগঞ্জও এর বাইরে নয় নিশ্চয়। মগের মুল্লুকও নয়।এই অন্ধকার থাকবে না নিশ্চয় ।

লেখকঃ জুয়েল রাজ,  কবি ও সাংবাদিক 



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাউল সাধক চান মিয়া এবং আমার কিছু উপলব্ধি

"রজনী হইসনা অবসান  আজ নিশিতে আসতে পারেবন্ধু কালাচাঁন।। কত নিশি পোহাইলোমনের আশা মনে রইলো রে কেন বন্ধু আসিলোনা জুড়ায়না পরান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। বাসর সাজাই আসার আশেআসবে বন্ধু নিশি শেষে দারূন পিরিতের বিষে ধরিল উজান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। মেঘে ঢাকা আঁধার রাতে কেমনে থাকি একা ঘরে সাধক চাঁনমিয়া কয় কানতে কানতে হইলাম পেরেশান আজ নিশিতে আসতে বন্দু কালাচাঁন।"    গভীর নিশিতে ধ্যান মগ্ন হয়ে কালাচাঁনের অপেক্ষা করছেন সাধক।  সাধক চান মিয়ার শিষ্য বাউল সিরাজউদ্দিনের মতে এটি একটি রাই বিচ্ছেদ। কৃষ্ণের অপেক্ষায় রাধা নিশি বা রাতকে অনুরোধ করছেন 'রাত' যেন না পোহায়  কারণ তার কালা চান যে কোন সময় আসতে পারে। শব্দগুচ্ছ গুলো থেকে সহজেই উপলব্ধি হয় সাধক নিজ দেহকে রাধা আর আত্মাকে কৃষ্ণের সাথে তুলনা করেছেন। দেহ আত্মার মিলন ঘটানোই ছিল সাধকের সাধনা।        বাউল সাধক চান মিয়া উপরোক্ত গানটি রচনা করেছেন। নেত্রকোনা জেলার খাটপুরা গ্রামে ১৩২৫ বঙ্গাব্দে সাধক চান মিয়ার জন্ম। পুরো নাম চান্দেজ্জামান আকন্দ হলেও বা...

বাউল, বাউলতত্ব এবং কিছু কথা

একজন ভদ্র বন্ধু বরের সাথে বাউল সম্প্রদায় নিয়ে বেশ তর্ক হলো রাতে। তর্কের সূত্রপাত ছিল বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী। ভাবলাম "বাউলতত্ত্ব"র আলোকে বাউলরা ভাববাদী নাকি বস্তুবাদী তা নিয়ে যৌক্তিক আলোচনা আবশ্যম্ভাবী। কয়েকটি ধারাবাহিক পর্ব লিখে নিজের মনোভাব বোঝানোর চেষ্টা করব।  শুরুতেই শক্তিনাথ ঝাঁ এর বস্তুবাদী বাউল বই থেকে কিছু কথা লিখতে চাই; বাস্তব জগত ও জীবনকে এরা কোন আনুমানিক যুক্তি বা আলৌকিক যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে নারাজ। জৈব রাসায়নিক ব্যাখায় এরা নারীর রজঃ এবং পুরুষের বিজে জীবন ও জগত সৃষ্টিকে ব্যাখা করে এবং চার ভূতকে প্রাকৃতিক সৃষ্টি মনে করে। এভাবে মানুষে, প্রকৃতিতে তৈরি করে প্রাণ, প্রাণী। অনুমান ভিত্তিক স্বর্গ, নরক, পরলোক, পুনর্জন্মাদি প্রত্যক্ষ প্রমাণাভাবে বাউল আগ্রাহ্য করে। মানুষ ব্যাতিরিক্ত ঈশ্বরও এরা মানে না। সৃষ্টির নিয়মকে জেনে যিনি নিজেকে পরিচালনা করতে শিখেছেন- তিনিই সাঁই। সুস্থ নিরোগ দীর্ঘজীবন এবং আনন্দকে অনুভব করার বাউল সাধনা এক আনন্দমার্গ।।  বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী এর অনেক সূক্ষ বিশ্লেষণ শক্তিনাথের বস্তুবাদী বাউল বইটির মধ্যে আলকপাত করা হয়েছে। সাধারণ সমাজে এ ধা...

ভাইবে রাধারমণ

তখন কলেজের ছাত্র। বাংলা বিভাগের প্রভাষক শ্রদ্ধেয় রেজা স্যারের সাথে খুবই ভালো সম্পর্ক। কলেজের প্রথম দিনই স্যারকে খুব পছন্দ। তারপর স্যারের সাথে গল্প, সমাজ, রাজনীতি, সাহিত্য নিয়ে আলোচনা। রীতিমত ফিজিক্স, বায়োলোজি ক্লাস ফাঁকি দিলেও বাংলা ক্লাস কখনই ফাঁকি দিতাম না। খুব উপভোগ করতাম স্যারের ক্লাস। হোস্টেল সুপার হিসেবে স্যার ( ওহী আলম রেজা) আমাদের সাথেই থাকতেন। আমরা আসার প্রায় নয় মাস পর স্যার এলেন সুপার হিসেবে। প্রতিদিন রাতে খাবার পরেই স্যারের রুমে গিয়ে আড্ডা হত, গানের আসর হত। স্যারের পিসিতে প্রায়ই গান শুনতাম আমরা। একদিন হঠাৎ করেই একটি গান স্যার প্লে করলেন 'আমার বন্ধু দয়াময় তোমারে দেখিবার মনে লয়। তোমারে না দেখলে রাধার জীবন কেমনে রয় বন্ধুরে।। কদম ডালে বইসারে বন্ধু ভাঙ্গ কদম্বের আগা। শিশুকালে প্রেম শিখাইয়া যৌবনকালে দাগা রে।। তমাল ডালে বইসারে বন্ধু বাজাও রঙের বাশি। সুর শুনিয়া রাধার মন হইলো যে উদাসি রে।। ভাইবে রাধা রমন বলে মনেতে ভাবিয়া। নিভা ছিল মনের আগুন কে দিলাই জ্বালাইয়া রে।' গানের কথাগুলো বেশ ভালো লেগে গেলো। পুর গানটি শুনে বুঝলাম গানটি সাধক রাধারম...