সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মুক্ত গণমাধ্যম?


বাংলাদেশে গণমাধ্যম কিংবা এর কর্মীরা কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে সেটা নিয়ে আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক বেশ পুরনো। ২০১৯ সালে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস নামে একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সেখানে ১৮০ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এর আগের বছরের তুলনায় চার ধাপ নেমে ১৫০এ দাঁড়িয়েছে। ২০২০ সালে আরেক ধাপ পিছিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫১ তম।
২০১৯ সালে  লন্ডনে বিবিসির সাথে এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যম খোদ ব্রিটেনের গণমাধ্যমের চেয়েও স্বাধীন।


সাংবাদিক দম্পতি সাগর রুনির কথা মনে আছে।  নৃশংস সেই হত্যাকাণ্ডের ৪৮ ঘন্টায় বিচার হবে বলেছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন৷ আজ অব্দি বিচার হয়েছে হয়নি।  সাগর রুনি হত্যাকাণ্ড বাদ দিলাম আসি বর্তমান পরিস্থিতি কোভিড ১৯ এর খবর নিয়ে৷ এখন পর্যন্ত স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে প্রায় ৪২ জন সাংবাদিক হামলা এবং হেনস্তার শিকার হয়েছেন।  বছর-খানেক আগেই ঢাকার দুটি নামকরা গণমাধ্যমের অনলাইন সংস্করণ সাময়িকভাবে বন্ধ হবার ঘটনা ঘটে। এর একটি বিডি নিউজ টুয়েন্টিফোর, অন্যটি প্রথম আলো। এরও কিছুদিন আগে ঢাকা থেকে একজন সংবাদকর্মী রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হবার দু'মাস পর তাকে পাওয়া যায় নারায়ণগঞ্জে। কিন্তু এসব ঘটনা কার নির্দেশে কিংবা কিভাবে ঘটছে, তা কখনোই স্পষ্ট হয়না।


একটি বাস্তব ঘটনা তুলে ধরি। শিশু নির্যাতন নিয়ে একটি রিপোর্ট করেছিলেন একজন স্থানীয় সাংবাদিক। একটি স্বনাম ধন্য অনলাইন গণমাধ্যমে সেটি প্রকাশ হবার তাকে এলাকা ছাড়া করা হলো। কেন করা হলো? অনেক প্রশ্ন! কারণ স্থানীয় সাংসদের ছত্রছায়ার লোকছিলেন তিনি। হুমকি দেওয়া হলো তাকে, দফায় দফায় প্রাণনাশের চেষ্টা। এত কিছুর পরও তিনি গণমাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছিলেন। শেষ রেহাই হলো না তার। অন্য একটি নিউজের জেরে তাকে তথ্য প্রযুক্তি আইনের মিথ্যা কালো মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হলো। দফায় দফায় তার বাড়িতে তল্লাশী।


আরেকজন সাংবাদিকের জবান বন্দি--
আমাদেরকে একটা কথা বলারও সুযোগ দেয়নি। এলোপাথাড়ি পেটাতে থাকলো, আমার হাত ভাঙলো, মাথা ফেটে গেল । রক্তারক্তি অবস্থা" - এ হচ্ছে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে যাওয়া একজন সাংবাদিকের অভিজ্ঞতা।


আসি বাংলা ট্রিবিউনের মনসুরের কথায়। রাজধানীর বনানী এলাকায় নিজ গৃহে তার লাশ পাওয়া গেলো আজ পর্যন্ত মিললো না তার হদিস। ইদানিং এর ঘটনায় আসি, কুড়িগ্রামের ডিসি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় কিভাবে একজন স্থানীয় সংবাদ প্রতিনিধিকে হেনস্তা করা হলো, বলার অপেক্ষা রাখেনা আমাদের গণমাধ্যনের কতখানি টুটি চেপে ধরা হয়েছে।
সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরী মানব জমিনের সম্পাদক প্রায়ই একটি কথা বলে থাকেন। আসলে কোন সরকার, বা কোন দেশের ক্ষমতাসীনরা মুক্ত গণমাধ্যমে বিশ্বাসী৷ কত পার্সেন্ট হবেন? দুই বা তিন, এর থেকে বেশি নয়। এশিয়া মহাদেশ বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা,  আফগানিস্তান, নেপাল কোন দেশের সরকার প্রধানরাই মুক্ত গণমাধ্যমে বিশ্বাসী নয়৷ হোক তিনি উদারপন্থী বা কট্টরপন্থী।

আসলে উনার কথাগুলো আমি প্রায় শ'ই ভাবি। পক্ষে লিখলে আপনি ভালো, বিপক্ষে লিখলে হয় জেলের খাচা নইলে চিরতরে হারিয়ে যাও 'গুম' নামক লাল খাতার পৃষ্ঠায়। এটাই বাস্তবতা এবং ঘটে চলছে।


লিখেছেন- চৌধুরী মারূফ, সাংবাদিক, ব্লগার


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাউল সাধক চান মিয়া এবং আমার কিছু উপলব্ধি

"রজনী হইসনা অবসান  আজ নিশিতে আসতে পারেবন্ধু কালাচাঁন।। কত নিশি পোহাইলোমনের আশা মনে রইলো রে কেন বন্ধু আসিলোনা জুড়ায়না পরান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। বাসর সাজাই আসার আশেআসবে বন্ধু নিশি শেষে দারূন পিরিতের বিষে ধরিল উজান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। মেঘে ঢাকা আঁধার রাতে কেমনে থাকি একা ঘরে সাধক চাঁনমিয়া কয় কানতে কানতে হইলাম পেরেশান আজ নিশিতে আসতে বন্দু কালাচাঁন।"    গভীর নিশিতে ধ্যান মগ্ন হয়ে কালাচাঁনের অপেক্ষা করছেন সাধক।  সাধক চান মিয়ার শিষ্য বাউল সিরাজউদ্দিনের মতে এটি একটি রাই বিচ্ছেদ। কৃষ্ণের অপেক্ষায় রাধা নিশি বা রাতকে অনুরোধ করছেন 'রাত' যেন না পোহায়  কারণ তার কালা চান যে কোন সময় আসতে পারে। শব্দগুচ্ছ গুলো থেকে সহজেই উপলব্ধি হয় সাধক নিজ দেহকে রাধা আর আত্মাকে কৃষ্ণের সাথে তুলনা করেছেন। দেহ আত্মার মিলন ঘটানোই ছিল সাধকের সাধনা।        বাউল সাধক চান মিয়া উপরোক্ত গানটি রচনা করেছেন। নেত্রকোনা জেলার খাটপুরা গ্রামে ১৩২৫ বঙ্গাব্দে সাধক চান মিয়ার জন্ম। পুরো নাম চান্দেজ্জামান আকন্দ হলেও বা...

বাউল, বাউলতত্ব এবং কিছু কথা

একজন ভদ্র বন্ধু বরের সাথে বাউল সম্প্রদায় নিয়ে বেশ তর্ক হলো রাতে। তর্কের সূত্রপাত ছিল বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী। ভাবলাম "বাউলতত্ত্ব"র আলোকে বাউলরা ভাববাদী নাকি বস্তুবাদী তা নিয়ে যৌক্তিক আলোচনা আবশ্যম্ভাবী। কয়েকটি ধারাবাহিক পর্ব লিখে নিজের মনোভাব বোঝানোর চেষ্টা করব।  শুরুতেই শক্তিনাথ ঝাঁ এর বস্তুবাদী বাউল বই থেকে কিছু কথা লিখতে চাই; বাস্তব জগত ও জীবনকে এরা কোন আনুমানিক যুক্তি বা আলৌকিক যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে নারাজ। জৈব রাসায়নিক ব্যাখায় এরা নারীর রজঃ এবং পুরুষের বিজে জীবন ও জগত সৃষ্টিকে ব্যাখা করে এবং চার ভূতকে প্রাকৃতিক সৃষ্টি মনে করে। এভাবে মানুষে, প্রকৃতিতে তৈরি করে প্রাণ, প্রাণী। অনুমান ভিত্তিক স্বর্গ, নরক, পরলোক, পুনর্জন্মাদি প্রত্যক্ষ প্রমাণাভাবে বাউল আগ্রাহ্য করে। মানুষ ব্যাতিরিক্ত ঈশ্বরও এরা মানে না। সৃষ্টির নিয়মকে জেনে যিনি নিজেকে পরিচালনা করতে শিখেছেন- তিনিই সাঁই। সুস্থ নিরোগ দীর্ঘজীবন এবং আনন্দকে অনুভব করার বাউল সাধনা এক আনন্দমার্গ।।  বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী এর অনেক সূক্ষ বিশ্লেষণ শক্তিনাথের বস্তুবাদী বাউল বইটির মধ্যে আলকপাত করা হয়েছে। সাধারণ সমাজে এ ধা...

ভাইবে রাধারমণ

তখন কলেজের ছাত্র। বাংলা বিভাগের প্রভাষক শ্রদ্ধেয় রেজা স্যারের সাথে খুবই ভালো সম্পর্ক। কলেজের প্রথম দিনই স্যারকে খুব পছন্দ। তারপর স্যারের সাথে গল্প, সমাজ, রাজনীতি, সাহিত্য নিয়ে আলোচনা। রীতিমত ফিজিক্স, বায়োলোজি ক্লাস ফাঁকি দিলেও বাংলা ক্লাস কখনই ফাঁকি দিতাম না। খুব উপভোগ করতাম স্যারের ক্লাস। হোস্টেল সুপার হিসেবে স্যার ( ওহী আলম রেজা) আমাদের সাথেই থাকতেন। আমরা আসার প্রায় নয় মাস পর স্যার এলেন সুপার হিসেবে। প্রতিদিন রাতে খাবার পরেই স্যারের রুমে গিয়ে আড্ডা হত, গানের আসর হত। স্যারের পিসিতে প্রায়ই গান শুনতাম আমরা। একদিন হঠাৎ করেই একটি গান স্যার প্লে করলেন 'আমার বন্ধু দয়াময় তোমারে দেখিবার মনে লয়। তোমারে না দেখলে রাধার জীবন কেমনে রয় বন্ধুরে।। কদম ডালে বইসারে বন্ধু ভাঙ্গ কদম্বের আগা। শিশুকালে প্রেম শিখাইয়া যৌবনকালে দাগা রে।। তমাল ডালে বইসারে বন্ধু বাজাও রঙের বাশি। সুর শুনিয়া রাধার মন হইলো যে উদাসি রে।। ভাইবে রাধা রমন বলে মনেতে ভাবিয়া। নিভা ছিল মনের আগুন কে দিলাই জ্বালাইয়া রে।' গানের কথাগুলো বেশ ভালো লেগে গেলো। পুর গানটি শুনে বুঝলাম গানটি সাধক রাধারম...