সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আমাদের আশার আলো "হাইড্রোক্সেক্লোরোকুইন"

করোনা ভাইরাসে জর্জরিত দেশগুলোর মধ্যে আশার আলো দেখেয়িছে চীন। সর্বশেষ ৪৮ ঘন্টায় নতুন কেউ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হননি। এর মধ্যে নতুন আশার আলো দেখালো ফ্রান্স। গত সোমবার ফ্রান্সের একটি হাসপাতালে হাইড্রোক্সেক্লোরোকুইন নামক ওষুধ ট্রায়াল থেকে পজেটিভ ফলাফলের পরে করোনাভাইরাস বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এর সম্ভাব্য ব্যবহার অনেকের কাছে আশার উৎস  হয়ে দাঁড়িয়েছে।  ফ্রান্স টুয়েন্টফোর এর একটি সংবাদের মাধ্যমে জানা যায়, ফ্রান্সের অন্যতম বৃহত্তম শহর মার্সেইতে গত ১৬ মার্চ করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য হাইড্রোক্সাইক্লোরোকুইনের সফল পরীক্ষা-নিরীক্ষা এই বর্ধমান মহামারির মধ্যে উচ্চ প্রত্যাশা তৈরি করেছে।

কোভিড ১৯ ভাইরাসে স্তব্দ ফ্রান্স।  সবধরনের পাব্লিক প্লেস বন্ধ। আন্তর্জাতিক সীমানাগুলো সিলগালা। আতঙ্কিত জনসাধারণ। ফ্রান্স সরকারের তরফ থেকে বারবার নিজ নিজ বাসভবনে অবস্থানের আহ্বান জানিয়েছে ফ্রান্স সরকার। গত ১৪ মার্চ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড ফিলিপের নির্দেশনা অনুযায়ী কেবল ফার্মেসি, গ্রোসারি শপ, টোব্যাকো শপ, পোস্ট অফিস, ব্যাংক ও সরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছেন।

২১ মার্চ পর্যন্ত ফ্রান্স স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৫৬২ জন, এখন পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন ৬ হাজার ১ শ ৭২ জন। করোনা আক্রান্ত দেশ গুলোর মধ্যে ফ্রান্স তৃতীয় বিপদজনক দেস হিসেবে চিহ্নিত।

মার্সেইয়ের একটি বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের ইনস্টিটিউটের পরিচালক দিদিয়ের রাউল্ট জানিয়েছেন, "তিনি একটি ক্লিনিকাল ট্রায়াল করেছিলেন যার মধ্যে তিনি হাইড্রোক্সাইক্লোরোকুইনযুক্ত 25 কোভিড -19 রোগীর চিকিৎসা করেছিলেন। ছয় দিন পর তিনি বলেছিলেন, এই ড্রাগটি গ্রহণকারী রোগীদের মধ্যে মাত্র 25 শতাংশের শরীরে ভাইরাস রয়েছে। বিপরীতে, 90% যারা হাইড্রোক্সিলোরোকুইন গ্রহণ করেন নি তাদের কোভিড -19 বহন করা অবিরত ছিল।"

এদিকে দিদিয়ের রাউল্টের এই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে, ফরাসী ওষুধ জায়ান্ট সানোফি পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়ার জন্য লক্ষ লক্ষ প্লাকুইনিল (হাইড্রোক্সাইক্লোরোকুইনের একটি ব্যবসায়ের নাম) অনুদানের প্রস্তাব দিয়েছিল এবং  “আশাব্যঞ্জক ফলাফল” বলে প্রশংসা করে ক্লিনিকাল ট্রায়াল সম্প্রসারণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ফরাসী সরকারের মুখপাত্র সিবেথ এনদিয়ে।

তার এই ঘোষণার পর বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগের অধ্যাপক রবিন মে উল্লেখ করেছেন,  "যখনই কোনও নতুন ভাইরাস দেখা দেয় তখনই এই ড্রাগটি নিয়মিত সম্ভাব্য সমাধান হিসাবে বিবেচিত হয়। একটি "সম্ভাবনা হ'ল ক্লোরোকুইন কোনও স্থানে হোস্ট কোষের বাইরের সাথে সংযোগ স্থাপনের ভাইরাসটির ক্ষমতাকে পরিবর্তন করতে পারে।"
তবে ফরাসী সরকারের মুখপাত্র সিবেথ এনদিয়ে এই বিষয়টি হাইলাইট করেছেন এবং হাইড্রোক্সাইক্লোরোকুইনের কার্যকারিতা সম্পর্কে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর চেষ্টা করার আগে আরও বৃহত্তর আকারে বিচারের গুরুত্বকে জোর দিয়েছেন।

করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ১৩ মার্চ শুক্রবার জাতির উদ্দেশে ভাষণে বর্তমান পরিস্থিতিকে ফ্রান্সের ১০০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বিপদজনক ও প্রতিকূল পরিস্থিতি হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। ১৬ মার্চ থেকে পরবর্তী নির্দেশনা পর্যন্ত সব বিদ্যাপীঠ বন্ধ ও সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থা ঘোষণা দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার ভেতর প্রধানমন্ত্রী এই দ্বিতীয় দফা নির্দেশনা দিয়েছেন।

উল্লেখ্য,হাইড্রোক্সেক্লোরোকুইন প্রায় 70 বছর ধরে ম্যালেরিয়া, বাতজনিত অবস্থার এবং অন্যান্য রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়।

তথ্য সূত্র- ফ্রান্স টুয়েন্টিফোর জার্নাল
সংকলন- মারূফ অমিত, সাংবাদিক, অনলাইন এক্টিভিস্ট




মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাউল সাধক চান মিয়া এবং আমার কিছু উপলব্ধি

"রজনী হইসনা অবসান  আজ নিশিতে আসতে পারেবন্ধু কালাচাঁন।। কত নিশি পোহাইলোমনের আশা মনে রইলো রে কেন বন্ধু আসিলোনা জুড়ায়না পরান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। বাসর সাজাই আসার আশেআসবে বন্ধু নিশি শেষে দারূন পিরিতের বিষে ধরিল উজান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। মেঘে ঢাকা আঁধার রাতে কেমনে থাকি একা ঘরে সাধক চাঁনমিয়া কয় কানতে কানতে হইলাম পেরেশান আজ নিশিতে আসতে বন্দু কালাচাঁন।"    গভীর নিশিতে ধ্যান মগ্ন হয়ে কালাচাঁনের অপেক্ষা করছেন সাধক।  সাধক চান মিয়ার শিষ্য বাউল সিরাজউদ্দিনের মতে এটি একটি রাই বিচ্ছেদ। কৃষ্ণের অপেক্ষায় রাধা নিশি বা রাতকে অনুরোধ করছেন 'রাত' যেন না পোহায়  কারণ তার কালা চান যে কোন সময় আসতে পারে। শব্দগুচ্ছ গুলো থেকে সহজেই উপলব্ধি হয় সাধক নিজ দেহকে রাধা আর আত্মাকে কৃষ্ণের সাথে তুলনা করেছেন। দেহ আত্মার মিলন ঘটানোই ছিল সাধকের সাধনা।        বাউল সাধক চান মিয়া উপরোক্ত গানটি রচনা করেছেন। নেত্রকোনা জেলার খাটপুরা গ্রামে ১৩২৫ বঙ্গাব্দে সাধক চান মিয়ার জন্ম। পুরো নাম চান্দেজ্জামান আকন্দ হলেও বা...

বাউল, বাউলতত্ব এবং কিছু কথা

একজন ভদ্র বন্ধু বরের সাথে বাউল সম্প্রদায় নিয়ে বেশ তর্ক হলো রাতে। তর্কের সূত্রপাত ছিল বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী। ভাবলাম "বাউলতত্ত্ব"র আলোকে বাউলরা ভাববাদী নাকি বস্তুবাদী তা নিয়ে যৌক্তিক আলোচনা আবশ্যম্ভাবী। কয়েকটি ধারাবাহিক পর্ব লিখে নিজের মনোভাব বোঝানোর চেষ্টা করব।  শুরুতেই শক্তিনাথ ঝাঁ এর বস্তুবাদী বাউল বই থেকে কিছু কথা লিখতে চাই; বাস্তব জগত ও জীবনকে এরা কোন আনুমানিক যুক্তি বা আলৌকিক যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে নারাজ। জৈব রাসায়নিক ব্যাখায় এরা নারীর রজঃ এবং পুরুষের বিজে জীবন ও জগত সৃষ্টিকে ব্যাখা করে এবং চার ভূতকে প্রাকৃতিক সৃষ্টি মনে করে। এভাবে মানুষে, প্রকৃতিতে তৈরি করে প্রাণ, প্রাণী। অনুমান ভিত্তিক স্বর্গ, নরক, পরলোক, পুনর্জন্মাদি প্রত্যক্ষ প্রমাণাভাবে বাউল আগ্রাহ্য করে। মানুষ ব্যাতিরিক্ত ঈশ্বরও এরা মানে না। সৃষ্টির নিয়মকে জেনে যিনি নিজেকে পরিচালনা করতে শিখেছেন- তিনিই সাঁই। সুস্থ নিরোগ দীর্ঘজীবন এবং আনন্দকে অনুভব করার বাউল সাধনা এক আনন্দমার্গ।।  বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী এর অনেক সূক্ষ বিশ্লেষণ শক্তিনাথের বস্তুবাদী বাউল বইটির মধ্যে আলকপাত করা হয়েছে। সাধারণ সমাজে এ ধা...

ভাইবে রাধারমণ

তখন কলেজের ছাত্র। বাংলা বিভাগের প্রভাষক শ্রদ্ধেয় রেজা স্যারের সাথে খুবই ভালো সম্পর্ক। কলেজের প্রথম দিনই স্যারকে খুব পছন্দ। তারপর স্যারের সাথে গল্প, সমাজ, রাজনীতি, সাহিত্য নিয়ে আলোচনা। রীতিমত ফিজিক্স, বায়োলোজি ক্লাস ফাঁকি দিলেও বাংলা ক্লাস কখনই ফাঁকি দিতাম না। খুব উপভোগ করতাম স্যারের ক্লাস। হোস্টেল সুপার হিসেবে স্যার ( ওহী আলম রেজা) আমাদের সাথেই থাকতেন। আমরা আসার প্রায় নয় মাস পর স্যার এলেন সুপার হিসেবে। প্রতিদিন রাতে খাবার পরেই স্যারের রুমে গিয়ে আড্ডা হত, গানের আসর হত। স্যারের পিসিতে প্রায়ই গান শুনতাম আমরা। একদিন হঠাৎ করেই একটি গান স্যার প্লে করলেন 'আমার বন্ধু দয়াময় তোমারে দেখিবার মনে লয়। তোমারে না দেখলে রাধার জীবন কেমনে রয় বন্ধুরে।। কদম ডালে বইসারে বন্ধু ভাঙ্গ কদম্বের আগা। শিশুকালে প্রেম শিখাইয়া যৌবনকালে দাগা রে।। তমাল ডালে বইসারে বন্ধু বাজাও রঙের বাশি। সুর শুনিয়া রাধার মন হইলো যে উদাসি রে।। ভাইবে রাধা রমন বলে মনেতে ভাবিয়া। নিভা ছিল মনের আগুন কে দিলাই জ্বালাইয়া রে।' গানের কথাগুলো বেশ ভালো লেগে গেলো। পুর গানটি শুনে বুঝলাম গানটি সাধক রাধারম...