সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আইনে অমর্যাদাকর দণ্ড প্রদান নিষিদ্ধ

যশোরের মনিরামপুরে মুখে মাস্ক না পরায় তিন বৃদ্ধকে কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখার ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে শুক্রবার (২৭ মার্চ) রাতে। সাইয়েমা হাসান নামের সহকারী কমিশনার (ভূমি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে শুক্রবার বিকেলে উপজেলার চিনাটোলা বাজারে মাস্ক না পরায় বয়োবৃদ্ধ তিনজনকে এই দণ্ডাদেশ দেন। এই দণ্ডাদেশ দেয়ার সময়ে তিনি তার নিজের মুঠোফোনে এ ঘটনার ছবিও তুলেন।
এতে করে দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বেশ কিছু অনলাইন পত্রিকায় এ নিয়ে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। সামাজিক মাধ্যমে সরব হন অসংখ্য মানুষ। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাষ্ট্রের নাগরিকদের এমন অমানবিক শাস্তি দিতে পারেন কি না এ নিয়েও কথা উঠে সর্বত্র।
আইনে এ ধরনের অননুমোদিত শাস্তি দেয়ারও কোন বিধান নেই। বাংলাদেশে বলবত ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৫৩ ধারা অনুযায়ী ৬ ধরনের শাস্তিকে আইনে অনুমোদিত শাস্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আইনে অনুমোদিত এই শাস্তিগুলো হলো - মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, দ্বীপান্তর (বর্তমানে বাতিল), কারাদণ্ড সশ্রম/বিনাশ্রম, সম্পত্তি বাজেয়াপ্তি ও অর্থদণ্ড।
কাউকে কান ধরে ওঠবস করানো সম্পূর্ণ বেআইনি, অসাংবিধানিক, মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকার পরিপন্থী। বিচার ও দণ্ড সম্পর্কে রক্ষণ সম্পর্কে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৫(৫) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কান ধরে ওঠবস করানোর মতো অমর্যাদাকর দণ্ড প্রদান নিষিদ্ধ।
সংবিধানের এই অনুচ্ছেদের উপ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে - কোন ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাইবে না কিংবা নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনার দণ্ড দেওয়া যাইবে না কিংবা কাহারও সহিত অনুরূপ ব্যবহার করা যাইবে না। এতেকরে বলা যায় কোনো অজুহাতেই রাষ্ট্রের কোন নাগরিককে এমন অশোভন, অমর্যাদাকর, লাঞ্ছনার দণ্ড প্রদান করার এখতিয়ার দেশের দেশের সর্বোচ্চ আইন বাংলাদেশের সংবিধান সমর্থন করে না। এধরনের শাস্তি দেয়ার এখতিয়ার তো কোন আদালতেরই নেই।
প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারীর দেশের বয়োবৃদ্ধ নাগরিকদের এই ধরনের আইনে অননুমোদিত শাস্তি প্রদান খুবই দুঃখজনক।
  • অ্যাডভোকেট দেবব্রত চৌধুরী লিটন: আইনজীবী 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাউল সাধক চান মিয়া এবং আমার কিছু উপলব্ধি

"রজনী হইসনা অবসান  আজ নিশিতে আসতে পারেবন্ধু কালাচাঁন।। কত নিশি পোহাইলোমনের আশা মনে রইলো রে কেন বন্ধু আসিলোনা জুড়ায়না পরান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। বাসর সাজাই আসার আশেআসবে বন্ধু নিশি শেষে দারূন পিরিতের বিষে ধরিল উজান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। মেঘে ঢাকা আঁধার রাতে কেমনে থাকি একা ঘরে সাধক চাঁনমিয়া কয় কানতে কানতে হইলাম পেরেশান আজ নিশিতে আসতে বন্দু কালাচাঁন।"    গভীর নিশিতে ধ্যান মগ্ন হয়ে কালাচাঁনের অপেক্ষা করছেন সাধক।  সাধক চান মিয়ার শিষ্য বাউল সিরাজউদ্দিনের মতে এটি একটি রাই বিচ্ছেদ। কৃষ্ণের অপেক্ষায় রাধা নিশি বা রাতকে অনুরোধ করছেন 'রাত' যেন না পোহায়  কারণ তার কালা চান যে কোন সময় আসতে পারে। শব্দগুচ্ছ গুলো থেকে সহজেই উপলব্ধি হয় সাধক নিজ দেহকে রাধা আর আত্মাকে কৃষ্ণের সাথে তুলনা করেছেন। দেহ আত্মার মিলন ঘটানোই ছিল সাধকের সাধনা।        বাউল সাধক চান মিয়া উপরোক্ত গানটি রচনা করেছেন। নেত্রকোনা জেলার খাটপুরা গ্রামে ১৩২৫ বঙ্গাব্দে সাধক চান মিয়ার জন্ম। পুরো নাম চান্দেজ্জামান আকন্দ হলেও বা...

বাউল, বাউলতত্ব এবং কিছু কথা

একজন ভদ্র বন্ধু বরের সাথে বাউল সম্প্রদায় নিয়ে বেশ তর্ক হলো রাতে। তর্কের সূত্রপাত ছিল বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী। ভাবলাম "বাউলতত্ত্ব"র আলোকে বাউলরা ভাববাদী নাকি বস্তুবাদী তা নিয়ে যৌক্তিক আলোচনা আবশ্যম্ভাবী। কয়েকটি ধারাবাহিক পর্ব লিখে নিজের মনোভাব বোঝানোর চেষ্টা করব।  শুরুতেই শক্তিনাথ ঝাঁ এর বস্তুবাদী বাউল বই থেকে কিছু কথা লিখতে চাই; বাস্তব জগত ও জীবনকে এরা কোন আনুমানিক যুক্তি বা আলৌকিক যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে নারাজ। জৈব রাসায়নিক ব্যাখায় এরা নারীর রজঃ এবং পুরুষের বিজে জীবন ও জগত সৃষ্টিকে ব্যাখা করে এবং চার ভূতকে প্রাকৃতিক সৃষ্টি মনে করে। এভাবে মানুষে, প্রকৃতিতে তৈরি করে প্রাণ, প্রাণী। অনুমান ভিত্তিক স্বর্গ, নরক, পরলোক, পুনর্জন্মাদি প্রত্যক্ষ প্রমাণাভাবে বাউল আগ্রাহ্য করে। মানুষ ব্যাতিরিক্ত ঈশ্বরও এরা মানে না। সৃষ্টির নিয়মকে জেনে যিনি নিজেকে পরিচালনা করতে শিখেছেন- তিনিই সাঁই। সুস্থ নিরোগ দীর্ঘজীবন এবং আনন্দকে অনুভব করার বাউল সাধনা এক আনন্দমার্গ।।  বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী এর অনেক সূক্ষ বিশ্লেষণ শক্তিনাথের বস্তুবাদী বাউল বইটির মধ্যে আলকপাত করা হয়েছে। সাধারণ সমাজে এ ধা...

ভাইবে রাধারমণ

তখন কলেজের ছাত্র। বাংলা বিভাগের প্রভাষক শ্রদ্ধেয় রেজা স্যারের সাথে খুবই ভালো সম্পর্ক। কলেজের প্রথম দিনই স্যারকে খুব পছন্দ। তারপর স্যারের সাথে গল্প, সমাজ, রাজনীতি, সাহিত্য নিয়ে আলোচনা। রীতিমত ফিজিক্স, বায়োলোজি ক্লাস ফাঁকি দিলেও বাংলা ক্লাস কখনই ফাঁকি দিতাম না। খুব উপভোগ করতাম স্যারের ক্লাস। হোস্টেল সুপার হিসেবে স্যার ( ওহী আলম রেজা) আমাদের সাথেই থাকতেন। আমরা আসার প্রায় নয় মাস পর স্যার এলেন সুপার হিসেবে। প্রতিদিন রাতে খাবার পরেই স্যারের রুমে গিয়ে আড্ডা হত, গানের আসর হত। স্যারের পিসিতে প্রায়ই গান শুনতাম আমরা। একদিন হঠাৎ করেই একটি গান স্যার প্লে করলেন 'আমার বন্ধু দয়াময় তোমারে দেখিবার মনে লয়। তোমারে না দেখলে রাধার জীবন কেমনে রয় বন্ধুরে।। কদম ডালে বইসারে বন্ধু ভাঙ্গ কদম্বের আগা। শিশুকালে প্রেম শিখাইয়া যৌবনকালে দাগা রে।। তমাল ডালে বইসারে বন্ধু বাজাও রঙের বাশি। সুর শুনিয়া রাধার মন হইলো যে উদাসি রে।। ভাইবে রাধা রমন বলে মনেতে ভাবিয়া। নিভা ছিল মনের আগুন কে দিলাই জ্বালাইয়া রে।' গানের কথাগুলো বেশ ভালো লেগে গেলো। পুর গানটি শুনে বুঝলাম গানটি সাধক রাধারম...