সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

চা বাগানের স্মৃতিঃ ভালোবাসার ফেঞ্চুগঞ্জ ৩

দিনের সূর্য তখন মাঝ আকাশে। বেলা করে ঘুম থেকে উঠে পিছনের বারান্দা ঘেঁষা ছোট বাগানে দাঁড়িয়ে রাস্তার দিয়ে চলে যাওয়া গাড়ি দেখেছি অনেক সময়। রাস্তা দিয়ে পরিচিত কেউ দেখলে ডাক ছেড়েছি, কথা বলেছি৷ দুপুর ১২ টা নাগাদ দুলালের চায়ের দোকানে। চা খেয়ে কতখন দুলালের দোকানে আড্ডা, ছোট ভাই কেউ আসলে তাকে নিয়ে সোজা চা বাগানের ব্রিজে। আনসার ক্যাম্পের পাশে এই ব্রিজ আমার যৌবনের স্বাক্ষী। শীতের মিঠা রোদের আলোর সাথে কথা বলেছি, গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুরে বসে লিটারের পর লিটার ঠান্ডা কোমল পানীয় পানের সেই দিনগুলো আজ নেই। মিশে গেছে স্মৃতির পাতায়৷
  (ছবি- ২০১৭)
মনিপুর চা বাগানের কোন চা শ্রমিক গেলেই বলছে " দাদা নমষ্কার বা সালাম। কেমন আছো কি করছো।" কাছে পেলেই চা শ্রমিকরা ভাবতো যেন তাদের'ই কাউকে যেন কাছে পেয়েছে। বলছে তাদের সুখ দুঃখের কথা বলেই যাচ্ছে। স্কুল ফাঁকি দিয়ে বাবার চোখের যাতে না পড়ি সে জন্য চা বাগানের নীরব কোন টিলায় চলে যেতাম। আড্ডা দিতাম।  কখনো বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলে স্কুল সহপাঠীদের নিয়ে বনভোজন মানেই চা বাগানের টিলা ঘেঁষা কোন এক জায়গায়।
(ছবি-- ২০১৬)
একসময় চা বাগানে স্কুল ছিলো না, আজ স্কুল হয়েছে। ভাঙ্গা টিনের ঘরের সেই স্কুল আর নাই, মেরামত হয়েছে। সুন্দর ক্লাসরুম হয়েছে। ২০১৬ সাল থেকেই মুটামুটি ভালো চলছে। দূর দেশে বসে নিবিড়ে নির্ভৃতে খুঁজে বেড়াই সেইসব ফেলে আসা স্মৃতি। সন্ধ্যায় টিম টিম করে জ্বলা প্রদীপের আলোয় সন্টু বৈদ্যের টং দোকানের চা আর গরম পেঁয়াজু পৃথিবীর কয়েক বিলিয়ন খরচ করে গড়ে উঠা ফাইফ স্টারের চেয়েও অনেক দামী.....




লিখেছেন- চৌধুরী মারূফ (Chowdhury Maruf), সাংবাদিক (Journalist)
(এটি একটি স্মৃতিময় লেখা, শিশুদের ছবি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য ব্যবহারে নয়)
(This is a memorable text, not used for commercial purposes by children's pictures)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাউল সাধক চান মিয়া এবং আমার কিছু উপলব্ধি

"রজনী হইসনা অবসান  আজ নিশিতে আসতে পারেবন্ধু কালাচাঁন।। কত নিশি পোহাইলোমনের আশা মনে রইলো রে কেন বন্ধু আসিলোনা জুড়ায়না পরান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। বাসর সাজাই আসার আশেআসবে বন্ধু নিশি শেষে দারূন পিরিতের বিষে ধরিল উজান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। মেঘে ঢাকা আঁধার রাতে কেমনে থাকি একা ঘরে সাধক চাঁনমিয়া কয় কানতে কানতে হইলাম পেরেশান আজ নিশিতে আসতে বন্দু কালাচাঁন।"    গভীর নিশিতে ধ্যান মগ্ন হয়ে কালাচাঁনের অপেক্ষা করছেন সাধক।  সাধক চান মিয়ার শিষ্য বাউল সিরাজউদ্দিনের মতে এটি একটি রাই বিচ্ছেদ। কৃষ্ণের অপেক্ষায় রাধা নিশি বা রাতকে অনুরোধ করছেন 'রাত' যেন না পোহায়  কারণ তার কালা চান যে কোন সময় আসতে পারে। শব্দগুচ্ছ গুলো থেকে সহজেই উপলব্ধি হয় সাধক নিজ দেহকে রাধা আর আত্মাকে কৃষ্ণের সাথে তুলনা করেছেন। দেহ আত্মার মিলন ঘটানোই ছিল সাধকের সাধনা।        বাউল সাধক চান মিয়া উপরোক্ত গানটি রচনা করেছেন। নেত্রকোনা জেলার খাটপুরা গ্রামে ১৩২৫ বঙ্গাব্দে সাধক চান মিয়ার জন্ম। পুরো নাম চান্দেজ্জামান আকন্দ হলেও বা...

বাউল, বাউলতত্ব এবং কিছু কথা

একজন ভদ্র বন্ধু বরের সাথে বাউল সম্প্রদায় নিয়ে বেশ তর্ক হলো রাতে। তর্কের সূত্রপাত ছিল বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী। ভাবলাম "বাউলতত্ত্ব"র আলোকে বাউলরা ভাববাদী নাকি বস্তুবাদী তা নিয়ে যৌক্তিক আলোচনা আবশ্যম্ভাবী। কয়েকটি ধারাবাহিক পর্ব লিখে নিজের মনোভাব বোঝানোর চেষ্টা করব।  শুরুতেই শক্তিনাথ ঝাঁ এর বস্তুবাদী বাউল বই থেকে কিছু কথা লিখতে চাই; বাস্তব জগত ও জীবনকে এরা কোন আনুমানিক যুক্তি বা আলৌকিক যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে নারাজ। জৈব রাসায়নিক ব্যাখায় এরা নারীর রজঃ এবং পুরুষের বিজে জীবন ও জগত সৃষ্টিকে ব্যাখা করে এবং চার ভূতকে প্রাকৃতিক সৃষ্টি মনে করে। এভাবে মানুষে, প্রকৃতিতে তৈরি করে প্রাণ, প্রাণী। অনুমান ভিত্তিক স্বর্গ, নরক, পরলোক, পুনর্জন্মাদি প্রত্যক্ষ প্রমাণাভাবে বাউল আগ্রাহ্য করে। মানুষ ব্যাতিরিক্ত ঈশ্বরও এরা মানে না। সৃষ্টির নিয়মকে জেনে যিনি নিজেকে পরিচালনা করতে শিখেছেন- তিনিই সাঁই। সুস্থ নিরোগ দীর্ঘজীবন এবং আনন্দকে অনুভব করার বাউল সাধনা এক আনন্দমার্গ।।  বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী এর অনেক সূক্ষ বিশ্লেষণ শক্তিনাথের বস্তুবাদী বাউল বইটির মধ্যে আলকপাত করা হয়েছে। সাধারণ সমাজে এ ধা...

ভাইবে রাধারমণ

তখন কলেজের ছাত্র। বাংলা বিভাগের প্রভাষক শ্রদ্ধেয় রেজা স্যারের সাথে খুবই ভালো সম্পর্ক। কলেজের প্রথম দিনই স্যারকে খুব পছন্দ। তারপর স্যারের সাথে গল্প, সমাজ, রাজনীতি, সাহিত্য নিয়ে আলোচনা। রীতিমত ফিজিক্স, বায়োলোজি ক্লাস ফাঁকি দিলেও বাংলা ক্লাস কখনই ফাঁকি দিতাম না। খুব উপভোগ করতাম স্যারের ক্লাস। হোস্টেল সুপার হিসেবে স্যার ( ওহী আলম রেজা) আমাদের সাথেই থাকতেন। আমরা আসার প্রায় নয় মাস পর স্যার এলেন সুপার হিসেবে। প্রতিদিন রাতে খাবার পরেই স্যারের রুমে গিয়ে আড্ডা হত, গানের আসর হত। স্যারের পিসিতে প্রায়ই গান শুনতাম আমরা। একদিন হঠাৎ করেই একটি গান স্যার প্লে করলেন 'আমার বন্ধু দয়াময় তোমারে দেখিবার মনে লয়। তোমারে না দেখলে রাধার জীবন কেমনে রয় বন্ধুরে।। কদম ডালে বইসারে বন্ধু ভাঙ্গ কদম্বের আগা। শিশুকালে প্রেম শিখাইয়া যৌবনকালে দাগা রে।। তমাল ডালে বইসারে বন্ধু বাজাও রঙের বাশি। সুর শুনিয়া রাধার মন হইলো যে উদাসি রে।। ভাইবে রাধা রমন বলে মনেতে ভাবিয়া। নিভা ছিল মনের আগুন কে দিলাই জ্বালাইয়া রে।' গানের কথাগুলো বেশ ভালো লেগে গেলো। পুর গানটি শুনে বুঝলাম গানটি সাধক রাধারম...