সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কুড়িগ্রামের সাংবাদিকরা কী মাথা বেচা দিলেন?



বাংলাদেশে এখন অনেক চমৎকার চিন্তার সরকারি কর্মকর্তা আছেন। এরা কুড়িগ্রামের বিতর্কিত জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনের মতো জুলুমবাজ, শয়তান কিসিমের নন। তরুন, জনবান্ধব, সৎ সরকারি কর্মকর্তারা এলাকায় এলাকায় পুরনো আমলা ধাচের সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যাপারে প্রচলিত ধারনা পাল্টে দিচ্ছেন। এখন কৃষক যখন ফসলের দাম পায় না, এলাকায় এলাকায় বাল্য বিবাহ সহ নানা অন্যায়ের ঘটনায় জনপ্রতিনিধির চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজনের কাছে ছুটে যান এসব সরকারি কর্মকর্তা। একজন সরকারি কর্মকর্তা আমার কাছে একবার কিছু স্বেচ্ছাসেবক চাইলেন। তাঁর এলাকার স্কুলগুলো পরিচ্ছন্ন রাখার মতো লোকবল নেই। সে কারনে এলাকার তরুন স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে স্কুলগুলো পরিচ্ছন্ন স্বাস্থ্যসম্মত রাখার পথ খুঁজছিলেন। তরুন প্রজন্মের সরকারি কর্মকর্তারা এখন যেমন এলাকায় এলাকায় বিপ্লব ঘটাচ্ছেন, তেমনি কুড়িগ্রামের সুলতানা পারভিনদের মতো শয়তান মহিলারা সেই বিপ্লবীদের মানুষের কাছে খাটো করে।
কুড়িগ্রামের এই সুলতানা পারভিন সরকারি টাকায় পুকুর খনন করিয়ে সেটির নামকরন ‘সুলতানার সরোবর’ করে কুড়িগ্রামে অমর হবার খায়েশ করেছিলেন! বাংলা ট্রিবিউনের সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যানকে সাজানো মামলায় সাজা দিয়ে জব্দ করতে চেয়েছিলেন। মধ্যরাতে আধা বোতল মদ আর গাজার ব্যবস্থা করে একজন তরুন অতি সাধারন মফঃস্বল সাংবাদিককে জব্দ করতে চেয়েছিলেন এই শয়তান কর্মকর্তা। জেদ মেটাতে বিবস্ত্র করে তাঁকে পিটানোও হয়। এরপর মধ্যরাতের নজিরবিহীন মোবাইল কোর্ট  মামলায় জেলে পাঠানো হয় আমার প্রিয় প্রজন্ম আরিফকে। খবর শুনে বিদেশে বসে অসহায়ভাবে শুধু কাঁদলাম। বাংলাদেশের মফঃস্বল সাংবাদিকদের পেশা-জীবনযাপনের সবকিছুতেই নাজুক অবস্থা। তারা জীবনযাপনের উপযোগী মজুরিও পাননা, সুলতানা পারভিনের মতো শয়তান কর্মকর্তার বদনজরে পড়লে পত্রিকা কর্তৃপক্ষের ছত্রছায়াও সব সময় পাননা। বাংলা ট্রিবিউন এক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী ভূমিকা নিয়ে আরিফের পক্ষে দাঁড়িয়েছে।
অতএব সুলতানা পারভিনের শয়তানির প্রতিবাদে দেশজুড়ে ফুঁসে ওঠে সাংবাদিক সমাজ। সারাদেশের মানুষও এই ইস্যুতে একজন শয়তান কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের পক্ষে দাঁড়ায়। বলা চলে অনেক দিন পর এভাবে একজন মফঃস্বল সাংবাদিকের পক্ষে দাঁড়ালো দেশের মানুষ।  এখন সারাদেশের মানুষের প্রতিবাদের মুখে সুলতানা পারভিন তথা প্রথাগত আমলাতন্ত্রের পিঠ বাঁচানোর উদ্যোগ নিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়! সুলতানা পারভিনকে কুড়িগ্রাম থেকে ক্লোজড করে মন্ত্রণালয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে! গুরুতর অপরাধ স্বত্ত্বেও তিনি এখন বসে বসে কাজ না করে বেতন পাবেন! বাংলাদেশের রাজনীতিকদের নানা অপরাধে বিচার হয়। আর আমলাদের এমন অপরাধ স্বত্ত্বেও বসে বসে বেতন খাওয়ার বিধান আমলারা জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে পাশ করিয়ে নিয়েছে!
এ দিকে মানুষের প্রতিবাদের পর্যায়ে রবিবার রকেটের গতিতে আরিফকে জামিনে মুক্তি দেয়া হয়েছে! এই জামিন প্রক্রিয়ায় আবার মাথা বিক্রি করা হয়েছে আরেক সাংবাদিকের! কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি জেনে অথবা না জেনে এই মাথা বেচা দিয়েছেন! কারাগারে থাকা আরিফের কাছ থেকে প্রতারনামূলক অথবা জোরপূর্বক ওকালতনামায় স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে! এরপর এই জামিন প্রক্রিয়ায় জড়ানো হয়েছে কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতিকে! একজন উকিল আর প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদকের জিম্মায় ২৫ হাজার টাকার মুচলেকায় দেয়া হয়েছে জামিন! এভাবে জামিন মানে মিথ্যা অভিযোগের মামলাটিকে স্বীকার করা! এরমানে আরিফের বাড়িতে সেই আধা বোতল মদ আর গাজা পাওয়া গিয়েছিল! কুড়িগ্রাম থেকে যাবার আগে এভাবে সেখানকার সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে শেষ শয়তানিটা করে গেলেন সুলতানা পারভিন!
কুড়িগ্রামে রাজু মুস্তাফিজ নামের আমার খুব প্রিয় একজন সাংবাদিক আছেন। জনকন্ঠে আমরা একসঙ্গে অনেক সরেজমিন রিপোর্ট করেছি। সারাদেশে ঘুরে ঘুরে রিপোর্ট করায় মাঠ পর্যায়ের সাংবাদিকদের কান্না আমি শুনতে পাই। রবিবার রাজুকে ফোন দিয়ে বললাম বহুদিন পর বাংলাদেশ এভাবে একজন মফঃস্বল সাংবাদিকের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। কেউ যদি রিপোর্টের ব্যাপারে সৎ থাকে তাঁর পক্ষে এভাবে মানুষ দাঁড়ায়। রাজুকে বললাম আপনারা আন্দোলনে। কিন্তু প্রেসক্লাবের সভাপতি এভাবে যে মাথা বেচা দিলেন তা কী জেনে? না, না জেনে?
আরিফের বিরুদ্ধে দায়ের করা সাজানো মামলাটি দ্রুত  প্রত্যাহার করতে হবে। রাজু মুস্তাফিজকে একটা রিপোর্টের জন্যে অনুরোধ করলাম। ওই আধা বোতল মদ কোন কর্মকর্তার খাওয়া বা কিভাবে সংগ্রহ করা, মদ-গাজা সংগ্রহের এর বৃত্তান্ত নিয়ে একটি রিপোর্ট করতে হবে। প্রিয় প্রজন্ম আরিফকে অভিনন্দন। অনেক ভালো থাকিসরে ভাই। কিন্তু তোমার দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেলো। মানুষের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা অটুট রাখতে চাইলে এভাবে সততা নিয়ে রিপোর্ট করতে হবে। কুড়িগ্রামের সেই জুলুমবাজ সাবেক জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভিনের প্রতি ঘৃনা রইলো। তার প্রতি ঘৃনা কেনো জানেন? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে নারীর ক্ষমতায়নের নানান উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর সুযোগে প্রশাসনে অনেক মেয়েরা ভালো করছেন। কিন্তু সুলতানা পারভিনের  মতো শয়তান কর্মকর্তাদের কারনে নারীর ক্ষমতায়ন হয়না। ঘৃনার সৃষ্টি হয়। শুধু মন্ত্রণালয়ে ক্লোজড নয়। একজন সাংবাদিককে এভাবে নিগ্রহের মাধ্যমে সরকারকে বিব্রত করায় সুলতানা পারভিনকে গ্রেফতার ও বিচারের সম্মুখিন করতে হবে।

লেখক- ফজলুল বারী (Fazlul Bari), সাংবাদিক (journalist)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাউল সাধক চান মিয়া এবং আমার কিছু উপলব্ধি

"রজনী হইসনা অবসান  আজ নিশিতে আসতে পারেবন্ধু কালাচাঁন।। কত নিশি পোহাইলোমনের আশা মনে রইলো রে কেন বন্ধু আসিলোনা জুড়ায়না পরান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। বাসর সাজাই আসার আশেআসবে বন্ধু নিশি শেষে দারূন পিরিতের বিষে ধরিল উজান। আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।। মেঘে ঢাকা আঁধার রাতে কেমনে থাকি একা ঘরে সাধক চাঁনমিয়া কয় কানতে কানতে হইলাম পেরেশান আজ নিশিতে আসতে বন্দু কালাচাঁন।"    গভীর নিশিতে ধ্যান মগ্ন হয়ে কালাচাঁনের অপেক্ষা করছেন সাধক।  সাধক চান মিয়ার শিষ্য বাউল সিরাজউদ্দিনের মতে এটি একটি রাই বিচ্ছেদ। কৃষ্ণের অপেক্ষায় রাধা নিশি বা রাতকে অনুরোধ করছেন 'রাত' যেন না পোহায়  কারণ তার কালা চান যে কোন সময় আসতে পারে। শব্দগুচ্ছ গুলো থেকে সহজেই উপলব্ধি হয় সাধক নিজ দেহকে রাধা আর আত্মাকে কৃষ্ণের সাথে তুলনা করেছেন। দেহ আত্মার মিলন ঘটানোই ছিল সাধকের সাধনা।        বাউল সাধক চান মিয়া উপরোক্ত গানটি রচনা করেছেন। নেত্রকোনা জেলার খাটপুরা গ্রামে ১৩২৫ বঙ্গাব্দে সাধক চান মিয়ার জন্ম। পুরো নাম চান্দেজ্জামান আকন্দ হলেও বা...

বাউল, বাউলতত্ব এবং কিছু কথা

একজন ভদ্র বন্ধু বরের সাথে বাউল সম্প্রদায় নিয়ে বেশ তর্ক হলো রাতে। তর্কের সূত্রপাত ছিল বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী। ভাবলাম "বাউলতত্ত্ব"র আলোকে বাউলরা ভাববাদী নাকি বস্তুবাদী তা নিয়ে যৌক্তিক আলোচনা আবশ্যম্ভাবী। কয়েকটি ধারাবাহিক পর্ব লিখে নিজের মনোভাব বোঝানোর চেষ্টা করব।  শুরুতেই শক্তিনাথ ঝাঁ এর বস্তুবাদী বাউল বই থেকে কিছু কথা লিখতে চাই; বাস্তব জগত ও জীবনকে এরা কোন আনুমানিক যুক্তি বা আলৌকিক যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে নারাজ। জৈব রাসায়নিক ব্যাখায় এরা নারীর রজঃ এবং পুরুষের বিজে জীবন ও জগত সৃষ্টিকে ব্যাখা করে এবং চার ভূতকে প্রাকৃতিক সৃষ্টি মনে করে। এভাবে মানুষে, প্রকৃতিতে তৈরি করে প্রাণ, প্রাণী। অনুমান ভিত্তিক স্বর্গ, নরক, পরলোক, পুনর্জন্মাদি প্রত্যক্ষ প্রমাণাভাবে বাউল আগ্রাহ্য করে। মানুষ ব্যাতিরিক্ত ঈশ্বরও এরা মানে না। সৃষ্টির নিয়মকে জেনে যিনি নিজেকে পরিচালনা করতে শিখেছেন- তিনিই সাঁই। সুস্থ নিরোগ দীর্ঘজীবন এবং আনন্দকে অনুভব করার বাউল সাধনা এক আনন্দমার্গ।।  বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী এর অনেক সূক্ষ বিশ্লেষণ শক্তিনাথের বস্তুবাদী বাউল বইটির মধ্যে আলকপাত করা হয়েছে। সাধারণ সমাজে এ ধা...

ভাইবে রাধারমণ

তখন কলেজের ছাত্র। বাংলা বিভাগের প্রভাষক শ্রদ্ধেয় রেজা স্যারের সাথে খুবই ভালো সম্পর্ক। কলেজের প্রথম দিনই স্যারকে খুব পছন্দ। তারপর স্যারের সাথে গল্প, সমাজ, রাজনীতি, সাহিত্য নিয়ে আলোচনা। রীতিমত ফিজিক্স, বায়োলোজি ক্লাস ফাঁকি দিলেও বাংলা ক্লাস কখনই ফাঁকি দিতাম না। খুব উপভোগ করতাম স্যারের ক্লাস। হোস্টেল সুপার হিসেবে স্যার ( ওহী আলম রেজা) আমাদের সাথেই থাকতেন। আমরা আসার প্রায় নয় মাস পর স্যার এলেন সুপার হিসেবে। প্রতিদিন রাতে খাবার পরেই স্যারের রুমে গিয়ে আড্ডা হত, গানের আসর হত। স্যারের পিসিতে প্রায়ই গান শুনতাম আমরা। একদিন হঠাৎ করেই একটি গান স্যার প্লে করলেন 'আমার বন্ধু দয়াময় তোমারে দেখিবার মনে লয়। তোমারে না দেখলে রাধার জীবন কেমনে রয় বন্ধুরে।। কদম ডালে বইসারে বন্ধু ভাঙ্গ কদম্বের আগা। শিশুকালে প্রেম শিখাইয়া যৌবনকালে দাগা রে।। তমাল ডালে বইসারে বন্ধু বাজাও রঙের বাশি। সুর শুনিয়া রাধার মন হইলো যে উদাসি রে।। ভাইবে রাধা রমন বলে মনেতে ভাবিয়া। নিভা ছিল মনের আগুন কে দিলাই জ্বালাইয়া রে।' গানের কথাগুলো বেশ ভালো লেগে গেলো। পুর গানটি শুনে বুঝলাম গানটি সাধক রাধারম...